অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকে দুটি তপোবনের তুলনামূলক আলোচনা

অভিজ্ঞান শকুন্তলম নাটকে কটি তপোবন উল্লেখ আছে? দুটি তপোবনের তুলনামূলক আলোচনা কর।

অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকে দুটি তপোবনের তুলনামূলক আলোচনা কর

উ:- বাণীর বরপুত্র মহাকবি কালিদাস তার অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকে দুটি তপোবনের উল্লেখ করেছেন। প্রথমটি হল-মহর্ষি কণ্বের তপোবন এবং দ্বিতীয়টি হল মহর্ষি মারীচের তপোবন। এই দুটি তপোবনের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্যও লক্ষ্য করা যায়।

কণ্বর তপোবনের বর্ণনা

অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকের প্রথম অঙ্কে মহর্ষি কণ্বের তপোবনের পরিচয় পায়। কণ্বের তপোবন মর্ত‍্যভূমিতে মালিনী নদীর তীরে অবস্থিত। কণ্বের তপোবনে প্রকৃতি রাজ্যের সঙ্গে মানুষের অন্তরঙ্গ আত্মীয়তার সম্পর্ক দেখা যায়। কণ্ব ঋষি হলেও মানুষ। তাঁর আশ্রমে তপস‍্যার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মেরও প্রাধান্য বর্তমান। এই তপোবনে পশুপাখিরা নির্ভয় বাস করে। আশ্রমের তপস্বীরা তাদের সন্তানস্নেহে প্রতিপালন করে, এমনকি বৃক্ষলতাগুলিকেও  তারা যত্নসহকারে পালন করে।

মারীচ তপোবনের বর্ণনা

মারীচ মুনির তপোবনটি হেমকূট পর্বতে অবস্থিত- যা স্বর্গের অংশ। এই তপোবনের পরিবেশ নাগরিক কলাহল বর্জিত। মারীচ  তপোবনের ঋষিগণ রিসিভ হয়ে ও দেবতা এখানে কঠোর তপশ্চর্যার মাধ্যমে একজন ঋষি যেন সংযোগের প্রতিমূর্তি – ‘ অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ ‘ নাটকের সপ্তম অঙ্কে আমরা এই তপোবনের বর্ণনা পাই। এখানে রাজা দুষ্যন্তের সঙ্গে সপুত্রক শকুন্তলার পুনর্মিলন করেছিল। এই তপোবনের সরোবরগুলি স্বর্ণপদ্মে পরিপূর্ণ ছিল। রত্নখচিত বেদিমধ‍্যে  মুনিঋষিরা তপস‍্যায় রত থাকতেন।

দুটি তপোবনের সাদৃশ‍্য

এই দুটি তপোবনের কার্যগত ও আদর্শগত কিছু ঐক‍্য লক্ষ‍্য করা যায়-

  • i) উভয় তপোবনেই তপস‍্যার মূলক্ষেত্র এবং তপোবনেদুটি বৃক্ষলতা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল।
  • ii) উভয় তপোবনেই তপস‍্যারত মুনিঋষিরা বাস করতেন।
  • iii) দুটি তপোবনেই নারী-পুরুষ উভয় ঋষিরাই তপস‍্যা করতেন।
  • iii) দুটি তপোবনেই নারী-পুরুষ উভয় ঋষিরাই তপস‍্যা করতেন।
  • iv) উভয় তপোবনেই বন‍্য জীবজন্তুরা নির্ভয়ে বিচরন করত।

দুটি তপোবনের বৈসাদৃশ‍্য

অনেক ক্ষেত্রে সাদৃশ্য থাকলেও এই দুটি তপোবনের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য দেখা যায়-

  • i) কণ্বের তপোবনেটি মর্তলোকে প্রকৃতির কোলে অবস্থিত। অপরদিকে,  মহর্ষি মারীচের তপোবনেটি হেমকূট পর্বতের শিখরদেশে তথা স্বর্গলোকে অবস্থিত।
  • ii) কণ্বাশ্রমে গার্হস্থ‍্য আশ্রম পালন করা হয়। অর্থাৎ এখানে স্নেহ প্রেম প্রীতি মায়া-মমতা প্রভৃতি দেখা যায়, কিন্তু মারীচ আশ্রমে দয়ামায়া থাকলেও প্রেমের কোনো স্থান নেই।
  • iii) কণ্বমুনির তপোবনে শকুন্তলার পতিগৃহে যাত্রা কালে আশ্রম বাসীদের অশ্রু বিসর্জন দেখা যায়। কিন্তু মারীচ মুনির তপোবন এই সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে।
  • iv) কণ্বাশ্রমে ঋষিগণ দেহত‍্যাগের পর স্বর্গলাভের জন্য তপস্যা করেন।  কিন্তু মারীচ আশ্রমের ঋষিরা পরমব্রহ্মের ধ‍্যানে মগ্ন থাকেন।

দুটি তপোবনের নাটকীয় তাৎপর্য

এই দুটি তপবনের যথেষ্ট নাটকীয় তাৎপর্য রয়েছে।  মহাকবি কালিদাস দুষ‍্যন্তের সঙ্গে শকুন্তলার কামজ মিলনের জন্যই শান্ত পরিবেশ যুক্ত কণ্বাশ্রমের চিত্র অঙ্কন করেছিলেন। অপরদিকে দুষ‍্যন্তের সঙ্গে শকুন্তলার পুনর্মিলনের জন্য মারীচাশ্রম ছিল অপরিহার্য। কারণ এই মিলন ছিল স্বর্গীয়। তাই স্বর্গতুল্য স্থান প্রয়োজন।

কালিদাস (कालिदास)দেহজ ও কামজ প্রেমকে স্বর্গীয় প্রেমে পরিণত করার জন্যই দ্বিতীয় প্রসিদ্ধ কবি গ‍্যায়েটর অভিজ্ঞানশকুন্তলম্  সম্বন্ধে বলেছেন-

“কেহ যদি তরুণ বৎসরের ফুল এবং পরিণত বৎসরের ফল, কেহ যদি স্বর্গ ও মর্ত্য একত্রে দেখিতে চান,  তবে শকুন্তলায় তাহা পাইবেন।”

অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটক হতে অন্যান্য পোস্টগুলি

Comments
Facebook