‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ নাটক অবলম্বনে দুষ্যন্তের চরিত্রটি বর্ণনা করো। অথবা, প্রেমিক, রাজা এবং নায়ক হিসেবে দুষ্যন্তের চরিত্র অঙ্কন করো।
Table of Contents
অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ নাটক অবলম্বনে প্রেমিক, রাজা এবং নায়ক হিসেবে দুষ্যন্তের চরিত্রটি বর্ণনা করো
উ:- সূচনা:- পুরবংশের প্রদীপ রাজা দুষ্যন্ত মহাকবি কালিদাসের অপরা সৃষ্টি ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ নাটকের নায়ক। কালিদাস মহারাজ দুষ্যন্তকে একজন আদর্শ রাজা, যথার্থবীর এবং উৎকৃষ্ট প্রেমিকরূপে তাঁর নাটকে চিত্রিত করেছেন। তিনি ছিলেন সংযমী মহানুভব সাহসী বিনয়ী নম্র বিচক্ষণ ন্যায় পরায়ণ এবং ধার্মিক পুরুষ। একজন ধীরোদাত্ত নায়কের মধ্যে এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায়। তাই দুষ্যন্ত একজন আদর্শ ধীরোদাত্ত নায়ক।
মহাবীর দুষ্যন্ত :-
দুষ্মন্ত ছিলেন একজন মহাপরাক্রমশালী মহারাজ তারপর আমি মাত্র মর্তলোকে বিস্তৃত ছিল না প্রয়োজনে দেবরাজ ইন্দ্র তার মহা সাহায্য প্রার্থনা করতেন দরিদ্রতার অসাধারণ দক্ষতা ছিল সারথি তাকে পিনাক-পাণির মহাদেবের সঙ্গে তুলনা করেছেন – ” মৃগানুসারিণং সাক্ষাৎ পশ্যামীব পিণাকীনম্।” সেনাপতি তাঁকে পার্বত্য হস্তীর সঙ্গে তুলনা করেছেন- ” গিরিচর ইব নাগ প্রাণসারং বিভর্তি।”
আদর্শরূপবান্ পুরুষ:-
দুষ্মন্ত একজন পুরুষ তার ব্যক্তিত্ব ছিল আকর্ষণীয় তাকে দেখে তাপস কন্যারা প্রভাবিত হয়েছে এবং তার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে সপ্ত মন্ত্রীর মহিষ প্রথমে অদ্বিতীয় দুশমনদের সুগঠিত দেহের প্রশংসা করেছে আর বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়েও তিনি কোন প্রজাপতি রাজার করেননি তিনি সর্বদা বর্ণাশ্রম ধর্ম রক্ষা করতেন তিনি স্বতন্ত্র প্রেমে অনুভূত হলেও তার আদেশ পালনে অবহেলা করেননি।
আদর্শ প্রেমিক:-
প্রেমিকরূপে দুষ্যন্ত এক অনন্য চরিত্র। মধুর ও চতুর আলাপে তিনি রমনীমোহন। শকুন্তলাকে প্রথম দেখেই দুষ্যন্ত তার রূপে মুগ্ধ হয়েছেন। রাজ অন্তঃপুরে একাধিক পত্নী থাকা সত্ত্বেও তিনি সকলকে সমান মর্যাদা দিয়েছেন।
শকুন্তলার প্রতি তার প্রেম ছিল দিব্য ও পবিত্র। তাই মারীচ মুনির আশ্রমে বিরহ কাতরা শকুন্তলাকে দেখে তিনি নতজানু হয়ে শকুন্তলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
আদর্শরাজা:-
রাজা হিসাবে দুষ্যন্ত ছিলেন আদর্শ নরপতি। কর্তব্যপরায়ণতা তাঁর চরিত্রের বড়ো গুন। তিনি সর্বদা প্রজাদের সুখী করতেন এবং তাদের কথা ধৈর্য্য সহকারে শুনতেন। বিচারক হিসেবেও তিনি ছিলেন সুদক্ষ শাসক। অন্যান্য রাজাদের মতো প্রজাদের সম্পত্তি ভোগ করা তার স্বভাব বিরুদ্ধ ছিল। ধনমিত্র নামে বণিকের মৃত্যুর কথা শুনে, তিনি অপুত্রক জেনেও তার ধনসম্পত্তি রাজকোষে গ্রহণের আদেশ না দিয়ে ধনমিত্রের অন্য কোনো পত্নী সন্তানসম্ভবা আছে কিনা তার অনুসন্ধান করতে সেনাপতিকে আদেশ দেন। এক্ষেত্রে রাজা হিসাবে দুষ্যন্তের দূরদর্শিতা ও নিরপেক্ষ বিচার বুদ্ধি প্রশংসার যোগ্য।
আদর্শ নায়ক:-
শাস্ত্রমতে নী ধাতু থেকে নায়ক শব্দটি উৎপন্ন হয়েছে। নী ধাতুর অর্থ হল নিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ যিনি নাটকীয় বিষয়বস্তুকে ফলপ্রাপ্তির দিকে নিয়ে যান, তিনিই হলেন নায়ক। নায়কের লক্ষণ সম্বন্ধে বলা হয়- ” নেতা বিনীত মধুরঃ ত্যাগী দক্ষঃ প্রিয়ংবদা রক্তলোকঃ শুচিরশ্মীরূঢ় বংস্থিঢ়ার যুবাঃ।” ভারতের নাট্য সাহিত্যে দৃষ্টিতে নায়ক চার প্রকার। যথা ধীরললিত, ধীরপ্রশান্ত, ধীরোদাত্ত এবং ধীরোস্বত। দুষ্যন্তের চরিত্রের মধ্যে মহানুভবতা, ক্ষমা, গাম্ভীর্য, সাহস, বিনয়, কর্তব্যনিষ্টা, সহিষ্ণুতা প্রভৃতি গুনাবলী গুলি পরিলক্ষিত হওয়ায় তিনি একজন আদর্শ ধীরোদাত্ত নায়ক হয়ে উঠেছেন।
উপসংহার:-
মহাভারত-এর বনপর্বে অবস্থিত শকুন্তলা উপাখ্যান এর সংক্ষিপ্ত কাহিনীকে গ্রহণ করে নিজের হৃদয়ের আবেগ মিশিয়ে মহাকবি কালিদাস অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ নাটকটি রচনা করেছেন। নায়ক দুষ্যন্তকে এক আদর্শ রাজচরিত্র রূপে কবি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। দুর্বাসার অভিশাপের মাধ্যমে রাজা দুষ্যন্তের চরিত্রের সকল কালিমা মোচন করেছেন। কালিদাসের লেখনীর যাদুস্পর্শে দুষ্যন্ত চরিত্রটি একাধারে আদর্শ রাজা, যথার্থবীর, ধার্মিক, সুদক্ষ বিচারক এবং আদর্শ প্রেমিকরূপে সত্যই মহিমামণ্ডিত হয়ে উঠেছে।