মহাকবি কালিদাস জীবনী: Kalidas Biography In Bengali

মহাকবি কালিদাসের জীবনী অর্থাৎ সংস্কৃত কাব্য জগতে কালিদাসের ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা কর। মহাকবি কালিদাসের কাব্য গুলি বর্ণিত হল । সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে মহাকবি কালিদাসের রচনাগুলির গুরুত্ব প্রতিপাদন । কালিদাসের কবি প্রতিভা আলোচিত হল । মহাকবি কালিদাস (টীকা) রচনা কর । মহাকবি কালিদাসের জীবন পরিচয়-( Kalidas Biography In Bengali) ।

মহাকবি কালিদাস

Table of Contents

সংস্কৃত সাহিত্যের আকাশে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হলেন মহাকবি কালিদাস । তিনি শুধু সংস্কৃত সাহিত্যে নয় , বিশ্ব সাহিত্যে ভারতের শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি । সত্যই তিনি ব্যাস ও বাল্মীকির তুল্য মর্যাদার কবীকুল চূড়ামনি মহাকবি ।

জন্ম খ্রিষ্টীয় চতুর্থ
বা পঞ্চম শতাব্দী
মৃত্যুখ্রিষ্টীয় চতুর্থ
বা পঞ্চম শতাব্দী
জন্মস্থানউজ্জয়িনী
ভাষা সংস্কৃত, প্রাকৃত
রচনাবলী অভিজ্ঞানশকুন্তলম্
বিক্রমোর্বশীয়ম্
মালবিকাগ্নিমিত্রম্
রঘুবংশম্
কুমারসম্ভবম্
মেঘদূতম্
ঋতুসংহারম্
বিষয় মহাকাব্য , পুরাণ
সংস্কৃত সাহিত্য
পত্নী কোন এক রাজকন্যা
Kalidas Biography In Bengali

মহাকবি কালিদাসের জীবনী ও কবি প্রতিভা-(Kalidas Biography In Bengali)

মহাকবি কালিদাস প্রাচীন কবিদের মধ্যে বাল্মীকি ও বেদব্যাসের পরের স্থান হল কবি কালিদাসের। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের পন্ডিতগণ কালিদাস সম্পর্কে একমত হয়েছেন যে পৃথিবীতে যত কবি আবির্ভূত হয়েছেন মহাকবি কালিদাস হলেন প্রথম সারিতে । কালিদাসের রচনা গুলি এই গৌরবের অধিকারী করেছে। সংস্কৃত সাহিত্যে মহাকবি কালিদাস জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করা হল ।

সংস্কৃত কাব্য জগতে কালিদাসের ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা কর

ব্যাস, বাল্মীকির পরেই ভারতবর্ষে যে কবির নাম পরম শ্রদ্ধায় উচ্চারিত হয়, যাঁর রচিত কাব্য ও নাটকে সংস্কৃত সাহিত্য বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত। তিনি ভারতের কবিকূলচূড়ামণি বাণীর পুত্র মহাকবি কালিদাস। ইংরেজি সাহিত্যের সাথে যেমন শেক্সপিয়রের নাম জড়িয়ে আছে, বাংলা সাহিত্যের সাথে জড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথের নাম, তেমনি সংস্কৃত সাহিত‍্যের সাথে কালিদাসের নাম চিরগ্রথিত। দেশ ও কালের সীমা ছাড়িয়ে তাঁর রচনা বিশ্ব সাহিত্যসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করেছে।

মহাকবি কালিদাসের জীবন পরিচয়- Kalidas Biography In Bengali

সংস্কৃত সাহিত্যের অন্যতম প্রতিভাধর শ্রেষ্ঠ কবি হলেন কালিদাস। কালিদাস বলতেন শুধু এক ব্যক্তিকে নয় প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের এক সুবর্ণ যুগকে বোঝায়। যে যুগের সংস্কৃতের মূর্ত প্রতীক মহাকবি কালিদাস। কিন্তু দুঃখের বিষয় দেশ, কাল ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বিশেষ কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য আমরা পাইনা। তাই পরবর্তী যুগের মানুষ তাঁকে নিয়ে কতগুলো আজগুবি কল্পনার জাল বুনেছেন। সৃষ্টি হয়েছে তাঁর সম্বন্ধে বিভিন্ন কিংবদন্তি।

মহাকবি কালিদাসের কিংবদন্তি

কিংবদন্তি অনুসারে মহাকবি কালিদাসের প্রথম জীবনে নিতান্ত মূর্খ ছিলেন। তার নিজের পত্নী বিদুষী বিদ্যাবতী তার মুর্খতা নিয়ে হাসি তামাশা করত। স্ত্রী কর্তৃক অপমানিত হয়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কথিত আছে এমতাবস্থায় তিনি দস্যু রত্নাকর এর মতো কালী দেবীর মতান্তরে সরস্বতীর আশীর্বাদ পেয়েছিলেন। এতেই মূর্খ কালিদাস হয়ে উঠলেন মহাকবি কালিদাস।

কালিদাসের ব্যক্তিগত জীবন ও আবির্ভাব কাল সম্পর্কে বিশেষ কিছু জন যে নয় । কালিদাস সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তি প্রচলিত। কেবল কিংবদন্তি নির্ভর করে কোন মানুষের জীবনকাহিনী জানা সম্ভব নয় ।

মূর্খ কালিদাসের মহাকবি হয়ে ওঠার গল্প

মূর্খ কালিদাসের মহাকবি হয়ে ওঠার গল্প
মূর্খ কালিদাসের মহাকবি হয়ে ওঠার গল্প বা জীবনী (কাঠ কাটার কাহিনী ) ছবি- roar.media

ছোটবেলায় মাতৃ পিতৃ হারা হন কালিদাস। শিশু কালিদাসকে লালন-পালন করেন একজন রাখাল । সেই জনন্য কালিদাসের পড়াশুনা হয়নি । তিনি দেখতে ছিলেন রাজপুত্রের মতো। এক সুন্দরী রাজকন্যার সঙ্গে তার বিয়ে হয় । একটি কিংবদন্তী ঘটনা আছে রাজকন্য রাজার খুবই অবাধ্য ছিলেন, তাই রাজা তাকে শায়েস্তা করার জন্য কালিদাসের সাথে বিবাহ দিয়েছিলেন ।

কালিদাস ছিলেন এক মূর্খ যুবক। তিনি এতই মূর্খ ছিলেন যে কাঠ দরকার হলে কালিদাস গাছে উঠে যে ডালে বসে আছেন সেই ডালটিই কাটতে শুরু করলেন। তখন এক পথিক কালিদাসের এই বোকামি দেখে কি ভাবে ডাল কাটতে হবে তা বলে দিলেন, কিন্তু কালিদাস এতই মূর্খ ছিলেন যে, তা বুজতে পারলেন না । ফলে কালিদাস নিজে নিচে পড়ে আহত হন। এই বোকামি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ।

কালিদাস এজন্য স্ত্রীর কাছে প্রতিদিন বকা-ঝকা শুনতেন। স্ত্রীর কাছ থেকে অপমানে কালিদাস রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে, অপমানে আত্মহত্যা করার জন্য নদীতে ঝাপ দিলেন। কিন্তু নদী থেকে তাকে উদ্ধার করলেন দেবী কালি, (মতান্তরে সরস্বতী) তখন তিনি হয়ে গেলেন দেবীর ‘কালি’র দাস। সে অনুসারেই তার নাম হল কালিদাস। দেবী কালি (মতান্তরে সরস্বতী) তাকে বুদ্ধির আশীর্বাদ দেন ফলে মূর্খ কালিদাস হয়ে উঠলেন মহাকবি কালিদাস । দস্যু রত্নাকর থেকে বাল্মীকি হয়ে ওঠার গল্পের মতো কালিদাস মূর্খ থেকে হয়ে উঠলেন মহাকবি। তার নামে আজও প্রচলিত আছে হাজার হাজার জটিল ধাঁধাঁ। তিনি হয়ে উঠলেনসংস্কৃত সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি ও নাট্যকার।

মহাকবি কালিদাসের আবির্ভাবকাল

প্রাচ্য-পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা মহাকবি কালিদাসের আবির্ভাব কাল এবং আবির্ভাস্থান নিয়ে বহু আলোচনা করলেও কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। তাই রবীন্দ্রনাথ আক্ষেপ করে বলেছেন –

“হায়রে কবে কেটে গেছে কালিদাসের কাল
পণ্ডিতেরা বিবাদ করে লয়ে তারিখ সাল।।”

ভারতের ইতিহাসের এক সুবর্ণ যুগের প্রতিনিধি স্বরূপ বাণীর বরপুত্র মহাকবি। কিন্তু তিনি কোন সময়ে কোন জনপদে তার আবির্ভাব সে বিষয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে নানা মত পার্থক্য আছে ।

কালিদাসের আবির্ভাব কাল নিয়ে দুটি মত প্রচলিত।

  • ১. মহাকবি কালিদাস খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে জন্মগ্রহণ করেন । (কালিদাস রচিত  মালবিকাগ্নিমিত্রম্ নাটকে শুঙ্গবংশীয় রাজা নায়ক অগ্নিমিত্র (খ্রিষ্টপূর্ব ১৮৫-৪৮ অব্দ)।
  • ২. মহাকবি কালিদাস খ্রিস্টীয় চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতকের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন । গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের  (রাজত্বকাল: ৩৭৫ খ্রিষ্টাব্দ-৪১৫ খ্রিষ্টাব্দ) সভাকবি ছিলেন ।


মহাকবি কালিদাসের আবির্ভাব কাল বা জীবনী সম্পর্কে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে

  • i) কালিদাসের রচনা রূপে প্রচলিত ‘জ্যোতির্বিদাভরণ’ নামক গ্রন্থ একটি শ্লোকে(২ শ্লোক) কালিদাসকে বিক্রমাদিত্যের সভার নবরত্নের অন্যতম রত্ন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এক সম্প্রদায়ের মতে, কালিদাসের আবির্ভাবকাল ৫৭ খ্রীঃ। তাদের মত অনুসারে , কালিদাস খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে উজ্জয়িনী রাজা শকারি বিক্রমাদিত‍্যের রাজত্বকালেই কালিদাসের আবির্ভাব কাল। কিন্তু নবরত্নের বরাহমিহির ষষ্ঠ শতকের লোক। অমরসিংহও পরবর্তীকালের। অতএব ‘জ্যোতির্বিদ্যাভরণ’ আদৌ কালিদাসের রচনা নয়।
  • ii) কিথ্ মনে করেন বিক্রমাদিত্য হলেন সমুদ্রগুপ্তের পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের ছেলে কুমার গুপ্তকে নিয়েই মনে হয় কালিদাসের ‘কুমারসম্ভবম্’ মহাকাব্যের রচনা। সমুদ্রগুপ্তের রাজত্বকাল খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের শেষভাগ হতে পঞ্চম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত। অতএব, কালিদাস এই সময়ের কবি। কালিদাস অশ্বঘোষ এর পূর্ববর্তী কবি। অশ্বঘোষ কণিষ্কের সভাকবি ছিলেন। খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দী কনিষ্কের রাজত্বকাল। অতএব, কালিদাস তার পরবর্তী যুগের কবি।
  • iii) কালিদাস তাঁর ‘মালবিকাগ্নিমিত্রম্’ নাটকে ভাসের নাম উল্লেখ করেছেন। ভাসের আবির্ভাবকাল যদি খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতক ধরা হয় তাহলে কালিদাসের আবির্ভাব কাল পরবর্তী খ্রিস্টীয় চতুর্থ অথবা পঞ্চম শতক। অতএব ভাসের পরবর্তীকালে কালিদাসের আবির্ভাব। আবার সপ্তম শতাব্দীর গদ‍্য প্রণেতা বানভট্ট কালিদাসের উল্লেখ করেছেন। অতএব তিনি বানভট্টের পূর্ববর্তী কবি।
  • iv) দ্বিতীয় পুলকেশীর আইহোল শিলালিপিতে কালিদাসের নাম উল্লেখ আছে। লিপিটি ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দের জৈন কীর্তির রচনা। এই শিলালেখে ভারবির কথা আছে। “স বিজয়তাং রবিকীর্তিঃ কবিতাশ্রিত কালিদাস ভারবিকীর্তিঃ“। ভারবি কালিদাসের পরবর্তী কবি এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। ভারবি ষষ্ঠ শতকের কবি। সুতরাং, কালিদাসের আবির্ভাব কাল তার পূর্বে।
  • v) কার্ণ ও ভান্ডারকর নবরত্ন মতবাদ গ্রহণ করে বলেছেন, বরাহমিহির ও কালিদাস সমসাময়িক ছিলেন। বরাহমিহিরের সময় ৫৮৭ খ্রিস্টাব্দ। সুতরাং, তাঁর বন্ধু কালিদাস খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতকে বর্তমান ছিলেন।কালিদাসের আবির্ভাব কাল সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ থাকলেও গুপ্তযুগেই ভারতীয় সংস্কৃতির গৌরবময় পুনরুদ্ধার ঘটে। কালিদাস তাঁর কাব্য মধ্যে যে সকল গুপ্ত রাজাদের নাম আকারে-ইঙ্গিতে উল্লেখ করেছেন, তা থেকে বোঝা যায় গুপ্তযুগেই তাঁর আবির্ভাব কাল।

মহাকবি কালিদাসের জন্মস্থান

কালিদাস কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তা নিয়ে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য মনীষীদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। তাই এবিষয়ে কতগুলো অনুমানের উপর নির্ভর করতে হয়-

  • i) মহাকবি কালিদাস যে আগ্রহ নিয়ে মহাকালের মন্দির, শিপ্রানদী ও উজ্জয়িনীর নানা স্থানের বর্ণনা করেছেন, তা থেকে মনে হয় তিনি উজ্জয়নী অধিবাসী ছিলেন।
  • ii) কবির নাম দেখে অনেকে মনে করেন তিনি বাঙালি। তাঁর জন্মস্থান সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপের কোনো স্থান।
  • iii) অনেকের মতে, তাঁর জন্মস্থান কাশ্মীর। কারণ তিনিই একমাত্র সংস্কৃত কবি যিনি জাফরান ফুলের বর্ণনা করেছেন, যা কাশ্মীরেই পাওয়া যায়।
  • iv) হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, প্রাচীন মালব দেশের সান্দাসার নগরীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
  • v) অনেকে মনে করেন, উজ্জয়িনীর সঙ্গে কবির ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল, কিন্তু তাঁর শিক্ষা ও কর্মস্থান কাশ্মীর। আর গ্রন্থাদি রচনা করেন উজ্জয়িনীতে।

সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে মহাকবি কালিদাসের রচনা তথা কাব্য গুলির গুরুত্ব প্রতিপাদন তথা কাব্য তথা গ্রন্থ পরিচিতি

মহাকবি কালিদাসের নামে প্রচলিত কাব্য গ্রন্থের সংখ্যা ত্রিশের অধিক হলেও মহাকবির কবিমানসিকতার গৌরবোজ্জ্বল পরিচয় নিহিত আছে তাঁর ৭টি কবিকৃতির মধ্যে। এই সাতটি রচনাই কালিদাসের লেখনীপ্রসূত বলে পন্ডিতের সিদ্ধান্ত।

এই কবিকৃতি হল- ঋতুসংহারম্ ও মেঘদূতম্ -এই দুটি হল খন্ডকাব‍্য বা গীতিকাব‍্য, কুমারসম্ভবম্রঘুবংশম্ – নামক দুটি মহাকাব‍্য এবং তিনটি দৃশ‍্যকাব‍্য- মালবিকাগ্নিমিত্রম্ , বিক্রমোর্বশীয়ম্ এবং অভিজ্ঞানশকুন্তলম্

এছাড়া  শৃঙ্গাররসাষ্টক, শৃঙ্গারতিলক, পুষ্পবাণবিলাস নামক কাব্য, নলোদয় ও দ্বাদশ-পুত্তলিকা নামে দুটি আখ্যানকাব্য মহাকবি কালিদাসের কাব্য বলে অনেকে মনে করেন ।

কালিদাসের রচনা শ্রেণী
মালবিকাগ্নিমিত্রম্নাটক
অভিজ্ঞানমশকুন্তলম্নাটক
বিক্রমোর্বশীয়ম্নাটক
মেঘদূতম্ খন্ডকাব‍্য বা গীতিকাব‍্য
কুমারসম্ভবম্ মহাকাব‍্য
রঘুবংশম্ মহাকাব‍্য
ঋতুসংহার খন্ডকাব‍্য বা গীতিকাব‍্য
মহাকবি কালিদাসের কাব্য তথা কবি প্রতিভা

মহাকবি কালিদাসের রচনাশৈলী

কালিদাসের রচনার মধ্যে যেসব বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় তা হল-

  • i) কালিদাসের কাব্যের প্রধান গৌরব ব্যঞ্জনা। বাহুল্য প্রবেশ না করে দু-একটি কথায় ধ্বনির মাধ্যমে তা ব্যক্ত করেছেন। বাংলা সাহিত্যে যেমন রবীন্দ্রনাথ, সংস্কৃত সাহিত‍্যে তেমনি কালিদাস।
  • ii) ভারতীয় পণ্ডিতরা কালিদাসকে উপমার কবি বলে থাকেন-“উপমা কালিদাসস‍্য“। উপমা রচনায় তিনি সিদ্ধহস্ত। প্রতিটি উপমা সাবলীল, কষ্টকল্পনার স্থান তাতে নেই।
  • iii) মহাকবি কালিদাসের রচনাশৈলী আরেকটি গুন হল এর অপূর্ব শব্দবিন্যাস।
  • iv) কালিদাসের বর্ণনা শক্তি ও অতুলনীয়।
  • v) কালিদাস চরিত্র সৃষ্টিও অনুপম। সর্বতন্ত্র- স্বতন্ত্র কালিদাস প্রয়োজনে বিষয়বস্তু উৎস থেকে সরে আসতে দ্বিধা করেননি। ফলে প্রতিটি চরিত্রেই এসেছে অভিনবত্ব, সংযোজিত হয়েছে বিশেষ মাত্রা।

কালিদাসের কবি প্রতিভা

কালিদাস মুখ্যতঃ কবি। কালিদাসের কবি প্রতিভা সম্বন্ধে মধুসূদন বলেছেন-

“কবিতা নিকুঞ্জে তুমি পিককুলপতি।
কার গো না মজে মনঃ ও মধুর সূর।।”

শ্রুতি, স্মৃতি, পুরাণ, দর্শন, কামশাস্ত্র, অর্থশাস্ত্র, সঙ্গীত, কলা, চিত্রবিদ‍্যা, ছন্দঃ, ব‍্যাকরণ, জ‍্যোতিষ প্রভৃতি শাস্ত্রে কবির স্বচ্ছন্দ বিচরণশীলতা পতিত হয়। তাঁর রচনা থেকে বৈদর্ভী রীতির কবি কালিদাসের উপমা অলংকারের প্রতি আকর্ষণ অধিক ছিল। তাই এই প্রবাদ প্রচলিত আছে-” উপমা কালিদাসস‍্য”। তাঁর প্রতিটি রচনায় প্রতিফলিত হয়েছে কল্যাণ ধর্ম ও ত্যাগের মাধুর্য, সত্য-শিব ও সুন্দরের আদর্শ,ভারতীয় সভ‍্যতার আত্মিকরূপ। তাঁর কাব্য সমূহ কেবলমাত্র সমকালই নয়, চিরকালই কবি সাহিত্যিক ও পাঠকদের কাছে অনুপ্রেরণার বস্তুঃ ।

রবীন্দ্রনাথকে তাই অনুসরণ করে বলি -“রহিলে মানসলোকে তুমি চিরকবি।

কালিদাস সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য (FAQ)

কালিদাস কাব্য না নাট্য রচনায় শ্রেষ্ঠ ?

মহাকবি নাট্য রচনায় শ্রেষ্ঠ ।

কালিদাস কে ছিলেন?

কালিদাস ছিলেন একজন বিখ্যাত ভারতীয় কবি।

মহাকবি কালিদাসের কাহিনী উল্লেখ আছে কোন পুরানে ?

কোন পুরাণে উল্লেখ নেই ।

মহাকবি কালিদাসের কোন সম্রাটের সভাকবি ছিলেন ?

বিক্রমাদিত্য নামে পরিচিত গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সভাকবি ছিলেন ।

আরো পড়ুন -মহাকবি কালিদাস সম্পর্কে পোস্ট গুলি

কালিদাস পন্ডিতের উক্তি

জলেতে জন্ম যার, জলে ঘর বাড়ী ফকির নহে, ওঝা নহে, মুখেতে দাড়ী

কালিদাস

উত্তর কমেন্ট করে জানান ।

Comments