পুরাণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য বিস্তারিত জানুন। পুরাণ বলতে কি বোঝ ? পুরাণের সংখ্যা কয়টি ও কী কী ? পুরাণের লক্ষণ গুলি কী কী ? পুরাণের বৈশিষ্ট সম্পর্কে আলোচনা কর।পুরাণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব গুলি আলোচনা করা হয়েছে ।
পুরাণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য
এখানে সমস্ত তথ্য পেয়ে যাবেন।
1. পুরাণ বলতে কি বোঝ ?
পুরাণ শব্দের অর্থ হল প্রাচীন কথা। শাস্ত্রে আছে -“যস্মাৎ পুরাহি আসীৎ ইদং তৎ পুরাণম্” অর্থাৎ ,যেখানে প্রাচীন কথা বর্ণিত হয়েছে তাই পুরাণ। পুরাকালের সৃষ্টি, ধর্ম, আচার, ধর্ম, প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনার সংকলনকে সাধারন ভাষায় পুরাণ বলে।
2. পুরাণ সাহিত্য কয় ভাগে বিভক্ত ও কি কি ?
“পুরাণ” সাহিত্যকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
¡) মহাপুরাণ এবং ¡¡) উপপুরাণ।
তবে বর্তমান পুরাণ সাহিত্যে প্রধান পুরাণ বলতে মহাপুরাণকেই বোঝায়।
মহাপুরাণ
১৮টি। যথা -১) ব্রহ্ম, ২)পদ্ম, ৩) বিষ্ণু, ৪) শিব, ৫) ভাগবত, ৬) নারদীয়, ৭) মার্কন্ডেয়,৮) অগ্নি, ৯) ভবিষ্য, ১০) ব্রহ্মবৈবর্ত, ১১) লিঙ্গ, ১২) বরাহ, ১৩) স্কন্দ, ১৪) বামন,১৫) কূর্ম, ১৬) মৎস্য, ১৭) গরুড় এবং ১৮) ব্রহ্মান্ড।
মহাভারতের স্বর্গারোহন পর্বে এবং হরিবংশে এই অষ্টাদশ পুরাণের উল্লেখ আছে।
মহাপুরাণ গুলিকে গুণ অনুসারে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যথা-
- ¡} সাত্তিকপুরাণ,
- ¡¡) রাজসিক
- ¡¡¡) তামসিকপুরাণ।
(১) সাত্তিক পুরাণ
এই পুরাণগুলিতে সত্ত্ব গুণ প্রাধাণ্য পেয়েছে। এই পুরাণ গুলির প্রধাণ দেবতা বিষ্ণু। ভাগবত, নারদীয়, গরুর , পদ্ম, বরাহ, এবং বিষ্ণু- প্রভৃতি পুরাণগুলি সাত্তিক পুরাণের অন্তর্গত।
(২) রাজসিক পুরাণ
সমস্ত রাজসিক গুনগুলি এই পুরাণে প্রাধাণ্য পেয়েছে। এই পুরাণের প্রধাণ দেবতা ব্রহ্ম। ব্রহ্ম, ব্রহ্মান্ড, ব্রহ্মবৈবর্ত, মার্কন্ডেয়, ভবিষ্য, এবং বামন প্রভৃতি পুরাণগুলি রাজসিক পুরাণের অন্তর্গত।
(৩) তামসিক পুরাণ
তম: গুন সম্পন্ন এই পুরাণগুলিতে ভগবান শিবের দেবত্ব প্রাধাণ্য পেয়েছে। শিব, লিঙ্গ, স্কন্দ, অগ্নি, মৎস, এবং কূর্ম – প্রভৃতি পুরাণগুলি তামসিক পুরাণের অন্তর্গত।
3. পুরাণের লক্ষণ কি ?
পুরাণের পাঁচটি লক্ষণ হল:-
“সর্গশ্চ প্রতি সর্গশ্চ বংশো মন্বন্তরানি চ
বংশানুচরিতঞ্চৈব পুরাণং পঞ্চলক্ষণম্।।”
অর্থাৎ,
- ¡) সর্গ – প্রথম সৃষ্টি।
- ¡¡) প্রতিসর্গ – সৃষ্টির পর আবার সৃষ্টি।
- ¡¡¡) বংশ – দেবতা ও ঋষিদের বংশপরিচয়।
- iv) মন্বন্তর – মনুদের রাজত্বকাল এবং
- v) বংশানুচরিত – বিভিন্ন প্রাচীন রাজাদের বংশাবলীর পরিচয়।
4. পুরানের বৈশিষ্ট্য কি?
পুরানগুলি সৃষ্টি, প্রলয়ের পর নতুন সৃষ্টি, ঋষি ও দেবগনের বংশাবলী, মনুদের রাজত্বকাল এবং প্রাচীন রাজবংশাবলীর ইতিহাস নিয়ে রচিত হয়েছিল। এছাড়াও দানধর্মবিধি, শ্রাদ্ধকল্প, বর্ণাশ্রমবিভাগ, ইষ্টাপূর্ত ও দেবপ্রতিষ্টা প্রভৃতি বিষয়গুলির কথাও পুরাণগুলিতে আলোচিত হয়েছে। ভূগোল, পদার্থবিদ্যা, জ্যোতিষ, শারীরবিদ্যা, ব্যাকরণ, চিকিৎসাশাস্ত্র, অস্ত্রবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনাও পুরাণগুলিতে স্থান পেয়েছে। পুরাণগুলিতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর-এই তিনজন দেবতার উপসনাই প্রাধান্য পেয়েছে। পুরানগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল- এক একটি পুরাণে একটি বিশেষ দেবতার উপস্থিতি দেখা যায়। কোনো কোনো পুরাণে দর্শন, অলংকার, ব্যাকরণ, ছন্দ ও ধর্মশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
5. পুরাণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব গুলি
পুরাণগুলির ঐতিহাসিক মূল্য অবিস্মরণীয়। প্রাচীনকাল থেকে অযোধ্যার রাজা পরীক্ষিতের রাজ্যাভিষেক পর্যন্ত সময়ের ইতিহাস জানতে হলে পুরানগুলিই আমাদের একমাত্র অবলম্বন। পুরাণগুলিতে প্রাচীন ভারতবর্ষের যে সমস্ত তথ্য পাওয়া যায় অন্য কোথাও তার সন্ধান মেলে না। দেবতা, ঋষি ও মহানরাজাদের বংশপরিচয় ও তাদের কর্ম সম্বন্ধে সঠিক বিবরন সংরক্ষণ করে রাখাই ছিল পুরাণ সাহিত্যের উদ্দেশ্য। প্রাচীন রাজাদের মধ্যে শিশুনাগ, নন্দ, মৌর্য, শুঙ্গ ও গুপ্তযুগের বিভিন্ন কাহিনী পুরাণগুলিতে পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও বিম্বিসার, অজাতশত্রু, চন্দ্রগুপ্ত প্রভৃতি রাজাদের ইতিহাসেও পুরাণসাহিত্যে স্থান পেয়েছে।সুতরাং, ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনায় পুরাণগুলির অবদান অনস্বীকার্য ।
উপসংহার:-
ধর্মীয় জীবন ও পুরাণগুলি যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে। শৈব এবং বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রধান গ্রন্থ হল পুরাণ। “মার্কণ্ডেয়” পুরাণের অন্তর্গত “চণ্ডী” নামক দেবীমাহাত্ম্য হিন্দুধর্মের অতি পরিচিত ধর্মগ্রন্থ। পরিশেষে বলা যায়, ভারতীয় ধর্ম,সমাজ ও সংস্কৃতি যুগযুগ ধরে পুরাণগুলি থেকে মূল্যবান উপাদান সংগ্রহ করে অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে।
পুরাণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ এই তথ্যগুলি জানতে পারেন
পুরাণের রচয়িতা হলেন বেদব্যাস ।
অষ্টাদশ পুরাণের নামগুলি হল -১) ব্রহ্ম, ২)পদ্ম, ৩) বিষ্ণু, ৪) শিব, ৫) ভাগবত, ৬) নারদীয়, ৭) মার্কন্ডেয়,৮) অগ্নি, ৯) ভবিষ্য, ১০) ব্রহ্মবৈবর্ত, ১১) লিঙ্গ, ১২) বরাহ, ১৩) স্কন্দ, ১৪) বামন,১৫) কূর্ম, ১৬) মৎস্য, ১৭) গরুড় এবং ১৮) ব্রহ্মান্ড।
পুরাণ সাহিত্যকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে- ¡) মহাপুরাণ এবং ¡¡) উপপুরাণ।
পুরাণের প্রবক্তা হলেন বেদব্যাস। পুরান শব্দের অর্থ হল- প্রাচীন কথা।
পুরাণে রচয়িতা ব্যাসদেব এবং পুরান সংখ্যায় ১৮ টি।
পুরাণ দুই ভাগে বিভক্ত। মহাপুরাণ ও উপপুরাণ। আবার উপপুরান গুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- সাত্ত্বিক পুরাণ, রাজসিক পুরাণ, তামসিক পুরাণ।
তথ্য সুত্র – একনজরে পুরাণ সম্পর্কে আলোচনা (modernsanskrit.in)
পুরাণ সম্পর্কে mcq টেস্ট গুলি দেখুন
সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট গুলি দেখুন
- ১. ভাস সমস্যা
- ২. সংস্কৃত গদ্যসাহিত্যে বানভট্টের অবদান
- ৩. গীতিকাব্য সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ
- ৪. সংস্কৃত গদ্যসাহিত্যের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা
- ৫. সংস্কৃত সাহিত্যে ঐতিহাসিক কাব্য সম্বন্ধে নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ
- ৬. প্রহসন সাধারন তথ্য