রঘুবংশম্ মহাকাব্যে ত্রয়োদশ সর্গে বর্ণিত সমুদ্রের শোভা ও মাহাত্ম্য বর্ণনা

রঘুবংশম্ মহাকাব্যে ত্রয়োদশ সর্গে মহাকবি কালিদাস সমুদ্রের শোভা ও মাহাত্ম্য বর্ণনা গঙ্গা-যমুনার সঙ্গম বর্ণনা করেছেন। রঘুবংশম্ মহাকাব্যে বর্ণিত সমুদ্রের শোভা ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হল।

রঘুবংশম্ মহাকাব্যে বর্ণিত সমুদ্রের শোভা ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করো


উঃ- ভূমিকা:- মহাকবি কালিদাস রামায়ণের কাহিনী অবলম্বন করে রঘুবংশম্ মহাকাব্য রচনা করেছেন। এই মহাকাব্যের ত্রয়োদশ সর্গটি আমাদের পাঠ‍্যাংশ রূপে গৃহীত হয়েছে। এই সর্গে আমরা দেখি রামচন্দ্র সীতাকে নিয়ে পুষ্পক রথে আরোহন করে অযোধ্যাতে প্রত্যাবর্তন করছেন। সেই সময় তিনি পথের বর্ণনা সীতার কাছে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। তখনই সমস্ত দৃশ্য গুলির মধ্যে সমুদ্রের শোভা ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করে গঙ্গা-যমুনার সঙ্গম বর্ণনা করেছেন।


সমুদ্র সৃষ্টির কারণ

রামচন্দ্রের পূর্বপুরুষেরা অর্থাৎ সগর রাজার সন্তানগণ পিতার অপহৃত যজ্ঞের ঘোড়া অনুসন্ধান করতে করতে পৃথিবীর খননকার্য শুরু করেন। এর খননকারীদের ফলে পাতালে গমন করার উদ্দেশ্যে সমুদ্র সৃষ্টি করেছিলেন। সগররাজার সন্তানদের দ্বারা সৃষ্ট অনন্ত‍্য জলাধারের নাম হয়েছে সাগর।

সমুদ্রের জলরাশির শোভা বর্ণনা

সূর্যকিরণে জলাধারের জল বাস্পে রূপান্তরিত হয়। তার ফলে সৃষ্টি হয় মেঘ, এই মেঘ থেকে হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির দ্বারা পৃথিবী শস্য শ্যামলা হয়। আবার এই সমুদ্রে রত্নরাজি পুষ্টি লাভ করে। তাই সমুদ্রের অপর নাম রত্নাকর।সমুদ্র শত্রুকেও ত্যাগ করে না। এমনকি এখান থেকে চন্দ্র আবির্ভূত হয়েছে। আবার এই অসীম জলরাশির মধ্যে নিহিত থাকে অগ্নি মহামহিমশানী। কারণ পূর্বে পর্বতের ডানা ছিল।তারা ইচ্ছা অনুসারে যেখানে সেখানে গমন করত। তখন আর্ত জনগণকে রক্ষা করার জন্য ইন্দ্র তাদের ডানাগুলি কেটে দেন। তখন পর্বতেরা ইন্দ্রের ভয়ে সমুদ্রে আশ্রয় নিয়েছিল।সমুদ্রের শান্ত জলরাশি সহজে আকাশ বলে মনে হয়। তেমনি সমুদ্রে রয়েছে ফেনারাশি। তা সর্বদা আকাশে অবস্থিত তারকার মতো শোভা পায়। এছাড়া রামচন্দ্র সীতা উদ্ধারের সময় সমুদ্রের জলরাশির উপরে মলয় পর্বত পর্যন্ত যে সেতু নির্মাণ করেছিলেন।

তার সমুদ্র সমুদ্র নায়ক তার নায়িকা নদী সমূহ। অসংখ্য নদী তরঙ্গ আকারে এসে সমুদ্রে মিলিত হয়। তা দেখে মনে হয় একাধিক নায়িকারূপ নদী অধরসুধা পান করেছে। সমুদ্রের মোহনায় অগণিত তিমি মাছ জল ক্রীড়ায় রত থাকে। মাঝে মাঝে জলরাশিকে বিভক্ত করে তারা মাথা তুলে।তখন এক অপূর্ব শোভার সৃষ্টি হয়। বালুকাময় বেলাভূমিতে বিশাল বিশাল সাপ গুলি তরঙ্গের সাথে মিলে একাকার হয়ে গেছে। তখন তাদের মাথার মনি গুলি সূর্যের কিরণে প্রদীপ্ত হয়।

সমুদ্রের মাহাত্ম্য বর্ণনা :-

এই দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা সাধ্যের অতীত। এই সমুদ্রে কোথাও শান্ত কোথাও উদ্বেগ। কোথাও আবার নীলকান্ত মনির মতো শোভা পায়। অর্থাৎ বিশ্বরূপ ধারণকারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রূপের মতো এই সমুদ্রের স্বরূপ অবর্ণনীয়।
    সমুদ্রের মহিমা বিষ্ণুরূপ মহিমার মতোই ধারণাতীত প্রলয়কালে সমস্ত পৃথিবী জলমগ্ন হলে ভগবান বিষ্ণু সমস্ত জগৎ সংহার করে এই সমুদ্রে অনন্ত শয্যায় শায়িত থাকেন। এবং তার নাভি মূল থেকে উৎপন্ন পদ্মে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা বসে তার স্তুতি করেন।
   এই সমুদ্র রত্নাকর।এই সমুদ্রের জল দগ্ধকারী বাড়বাড়ন ধারণ করে আবার অপকারী আশ্রিতকেও আশ্রয় দান করেন। তাই সমুদ্রের মহিমা সত্যিই অনির্বচনীয়। বরাহ অবতারে ভগবান বিষ্ণু যখন পৃথিবীকে উদ্ধার করেছিলেন তখন সমুদ্রে স্ফিত জলরাশি ক্ষণিকের জন্য লজ্জা মুখী পৃথিবীর অবগুন্ঠন।

উপসংহার:-

পরিশেষে বলা যায় মহাকবি কালিদাস রঘুবংশম্ মহাকাব্যে ত্রয়োদশ সর্গে রামচন্দ্রের মুখে সমুদ্রের শোভা ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন। তার সকল পাঠক হৃদয়কে হরন করেছে। এই বর্ণনার সময় ভাব ও ভাষা সঙ্গতি রক্ষা করেছেন। তেমনি তার সাথে পুরাণকেও মিশ্রন করেছেন।তাই সমুদ্রের মাহাত্ম্য পাঠের সময় পাঠকেরা অভিভূত হয়ে পড়ে।

আরো পড়ুন –

Comments