ব্যসন কি? মনু কয়প্রকার ব্যসনের উল্লেখ করেছেন? অর্থাৎ কয় প্রকার ও কি কি ? পুূর্ববর্তী ব্যসনগুলি পরবর্তী ব্যসনের চেয়ে ক্ষতি কারক কেন? মনুসংহিতা অনুসারে ব্যসন সম্পর্কে আলোচনা করা হল ।
মনুসংহিতা অনুসারে ব্যসন সম্পর্কে আলোচনা
ব্যসন কি?
ব্যসন শব্দটির আভিধানিক অর্থ বিপদ, পাপ, দুঃখ প্রভৃতি। মনু ব্যসন শব্দটির কোন প্রতিশব্দ ব্যবহার না করলেও সে গুলিকে ব্যসনের অন্তর্ভক্ত করেছেন যেগুলির বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে যে অর্থ উপলব্ধি তা হল কুক্রিয়া।
কারণ এই ব্যসনের কথা উল্লেখ করার অব্যবহৃত করার পূর্বে বলা হয়েছে জিতেন্দ্রিয় রাজা প্রজাকুলকে সবশে রাখতে পারেন অর্থাৎ স্বার্থক রাজ পদে উন্নীত হতে পারেন, আর যারা ইন্দ্রিয়কে জয় করতে পারেনা ইন্দ্রিয়ের তাড়নায় এমন সমস্ত কুক্রিয়া আচরণ করে যার দ্বারা তার ধংসের পথ প্রসস্থ হয়। সেই সমস্ত কুক্রিয়াকে ঋষি ব্যসন নামে অভিহিত করেছেন।
মনু কয়প্রকার ব্যসনের উল্লেখ করেছেন? অর্থাৎ কয় প্রকার ও কি কি ?
ব্যসন প্রধানত দুই প্রকার, এক কামজ দুই ক্রোধজ।
কামজ ব্যসন কয় প্রকার ও কি কি
এদের মধ্যে কামজ ব্যসনের সংখ্যা হল ১০টি । যথা
মৃগয়াক্ষো দিবাস্বপ্ন পরিবাদ স্ত্রিয়েমদঃ
তৌর্যত্রিকং বৃথাট্যা চ কামজো দাশকেগনঃ।।
অর্থাৎ মৃগয়া, পাশাখেলা, দিবানিন্দ্রা, পরদোষ কথন, স্ত্রীসম্ভোগ, মদ্যপানজনিত মত্ততা, নৃত্য, গীত এবং বাদ্য ও অহেতুক ভ্রমন ।
ক্রোধজ ব্যসন কয় প্রকার ও কি কি
ক্রোধজ ব্যসন হল আট প্রকার । যথা —
পৈশুন্যং সাহসং দ্রোহ ঈর্ষ্যাসূর্থদূষণম্।
বাগদন্ডজং চ পারুষ্যং ক্রোধজোহপি গনোহষ্টকঃ।।
অর্থাৎ ক্ষলতা পূর্বক অজ্ঞতা দোষ আবিস্কার, সাধু ব্যক্তির বধ বা বন্ধনাদির দ্বারা নিগ্রহ, দ্রোহ, ঈর্ষা, অসূয়া, অর্থ দূষন, কঠোর বাক্য প্রয়োগ এবং কঠোর দন্ড বিধান।
পুূর্ববর্তী ব্যসনগুলি পরবর্তী ব্যসনের চেয়ে ক্ষতিকারক
মদ্যপান, পাশা খেলা, স্ত্রী সম্ভোগ ও মৃগয়া কামজ ব্যসনগুলির মধ্যে দন্ড প্রয়োগ, কঠোর বাক্য ও অর্থ দূষন এই তিনটি ক্রোধজ ব্যসনগুলির মধ্যে কষ্টদায়ক।
এই ৭টি ব্যসনের মধ্যে পূর্ববর্তী পরবর্তী থেকে গুরুতর। অতএব এখানে সূচিত ব্যসন বলতে এই সাতটি ব্যসনকে বোঝাচ্ছে।
ব্যসনের মূল কারণ
উভয়বিধ ব্যসনই ক্ষতিকর বলে গন্য হয়। তবে সকল ব্যসনের মূলে রয়েছে লোভ। লোভই রাজাকে ব্যসনাসক্ত করে ধনে প্রানে বিনষ্ট করে। যদিও সকল ব্যসনই ক্ষতিকর মারাত্মক ব্যসন রয়েছে।
এদের মধ্যে মদ্যপানাদি কামজ ব্যসন চারটি এবং কঠোর দন্ড প্রয়োগাদি ক্রোধজ ব্যসন তিনটি।
পূর্ববর্তী কামজ ব্যসনটি পরেরটির চেয়ে বেশী ক্ষতিকর কেন
এই সাতটির মধ্যে আবার পূর্ববর্তী ব্যসনটি পরেরটির চেয়ে বেশী ক্ষতিকর কেন এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আচার্য মনু যে কারণগুলি দেখিয়েছেন তা হল
- যে পাশা খেলার চেয়ে মদ্য পান গুরুতর দোষ।কেননা পাশা খেলাতে যদিও অর্থক্ষয় হয়, তথাপি এক পক্ষ জয়ী হওয়ার জন্য তার কিছু অর্থলাভও হয়ে থাকে। কিন্তু মদ্যপানে এমন মত্ততা আসে যে মত্তব্যক্তির জ্ঞান পর্যন্ত লোপ পায়। দেহ ও ধনের ক্ষতি সাধন হয়। অতএব মদ্যপানে ধন ও প্রান উভয়ই বিপন্ন হয়ে থাকে। পাশা খেলার চেয়ে মদ্যপান ক্ষতিকারক।
- পাশাখেলার মধ্যে বন্ধুবর্গের মধ্যে শত্রুভাবের সৃষ্টি হয় এবং বন্ধুত্ব হানি ঘটে। সাথে সাথে শত্রুবৃদ্ধি ঘটে এবং বিভিন্ন ব্যাধি হতে পারে।কিন্তু স্ত্রী ব্যসনের অপত্য উৎপন্নাদি গুন যুক্ত থাকায় এর থেকে পাশাখেলা কী ক্ষতিকারক।
- মৃগয়া হতে স্ত্রী ব্যসন অধিক ক্ষেতিকারক। স্ত্রী ব্যসনের ফলে কর্মে অনাসক্তি বা উদসীন্য দেখা যায় এবং রাজকার্য অবহেলার মনোভাব গড়ে উঠে। ধর্মজ্ঞান লোপ পায়, কিন্তু মৃগয়ায় ব্যয়াম হওয়ায় শারীরিক আরোগ্যাদি গুন উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
এই ভাবে দেখা যাচ্ছে যে কামজ চারটি দোষের মধ্যে পূর্বেরটি বেশী ক্ষতিকারক।
পূর্ববর্তী ক্রোধজ ব্যসনটি পরেরটির চেয়ে বেশী ক্ষতিকর কেন
কামজ দোষের মত ক্রোধজ দোষও পরের পরেরটির চেয়ে পূর্ব পূর্বটি বেশী ক্ষতিকারক।
- যেমন কঠের বাক্য প্রয়োগ থেকে কঠোর দন্ড প্রয়োগ বেশী ক্ষতিকারক।কেননা কঠোর দন্ড প্রয়োগের ফলে অঙ্গ ছেদনাদি যে সব অঙ্গ হানি ঘটে তা কখনো ফিরিয়ে দেওয়া যায় না।
- মর্মভেদী বাক্য প্রয়োগের ফলে ক্রদ্ধ ব্যক্তির মধ্যে যে কোপানল জ্বলে উঠে তা কিন্তু দান সম্মান সুমিষ্ট বাক্যে মধ্যে শান্তি করা সম্ভব।
- তেমনি আবার অর্থ দূষনের চেয়ে কঠোর বাক্য প্রয়োগ যে বেশী ক্ষতিকর তার কারন কঠোর বাক্য প্রয়োগের ফলে যে মর্মপীড়ার সৃষ্টির হয় তা কোন ভাবেই সুচিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ন রূপে সারানো সম্ভব নয়। প্রচুর অর্থদানের সাহায্যে কিন্তু অর্থদূষন প্রতিরোধ সম্ভব।
এভাবে প্রমানিত হল যে প্রতিটি পূর্ববর্তী ব্যসনটি পরেরটির চেয়ে বেশী ক্ষতিকর।
ব্যসন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য (FAQ)
ব্যসন শব্দটির আভিধানিক অর্থ বিপদ, পাপ, দুঃখ প্রভৃতি । মনু ব্যসন শব্দটির কোন প্রতিশব্দ ব্যবহার না করলেও সে গুলিকে ব্যসনের অন্তর্ভক্ত করেছেন যেগুলির বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে যে অর্থ উপলব্ধি তা হল কুক্রিয়া।
ব্যসনের মূলে রয়েছে লোভ। লোভই রাজাকে ব্যসনাসক্ত করে ধনে প্রানে বিনষ্ট করে।
মনুসংহিতা সপ্তম অধ্যায় রাজধর্ম হতে অন্যান্য পোস্ট গুলি
- মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক ব্যাখ্যা-12
- মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক বাখ্যা-11
- মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক বাখ্যা-10
- মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক বাখ্যা-9
- মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক বাখ্যা-8
- মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক সংস্কৃত বাখ্যা-7
- মনুসংহিতা শ্লোক (রাজধর্ম ) সংস্কৃত বাখ্যা -6
- মনুসংহিতা (রাজধর্মঃ) সংস্কৃত শ্লোক বাখ্যা-5
- মনুসংহিতা শ্লোক (রাজধর্মঃ) সংস্কৃত ব্যাখ্যা-4
- মনুসংহিতা (রাজধর্ম) সংস্কৃত শ্লোক ব্যাখ্যা-3
- মনুসংহিতা সপ্তম অধ্যায় (রাজধর্ম) হতে শ্লোক সংস্কৃত বাখ্যা-2
- মনুসংহিতা সপ্তম অধ্যায় রাজধর্ম হতে সংস্কৃত বাখ্যা-1
- মনুসংহিতা: কুলং দহতি রাজাগ্নিঃ স পশুদ্রব্যসঞ্চয়ম্ – উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ
- মনুসংহিতা: দণ্ডের উৎপত্তি প্রকৃতি ও কার্যকলাপ
- মনুসংহিতা অনুসারে দন্ডের উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য
- মনুসংহিতা অনুসারে দূত সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ বিবরণ দাও
- মনুসংহিতা অনুসারে মনুর মতে রাজার বিনয়ের গুরুত্ব
- মনুসংহিতা অনুসারে রাজার মন্ত্রনা বিধি
- মনুসংহিতা (রাজধর্ম) হতে ছোট প্রশ্ন ও উত্তর
- মনুসংহিতা অনুসারে ব্যসন কী ? ব্যসনের বিভাগসমূহ প্রভাব ও পরিনাম আলোচনা কর
- মনুসংহিতা অনুসারে ষড়গুণ -এর প্রয়োগ নির্দেশ
- রাজার প্রাত্যহিক কৃত্যগুলি কী কী ( মনুসংহিতা )
- মনুসংহিতা: রাজার উৎপত্তির ঐশ্বরিক মতবাদ আলোচনা কর।
- মনুসংহিতা অনুসারে মনুর মতে দূর্গ কয় প্রকার ও কি কি
- মনুসংহিতা অনুসারে দন্ডের প্রকৃতি ও উপযোগিতা
- মনুসংহিতা অনুসারে মনুর মতে রাজার বিনয়ের গুরুত্ব-2
- মনুসংহিতা অনুসারে ব্যসন ও মৃত্যুর মধ্যে কোনটি ক্ষতিকর
- মনুসংহিতা অনুসারে রাজার উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
- ব্যসন কি? ব্যসন কয় প্রকার- পুূর্ববর্তী ব্যসনগুলি পরবর্তী ব্যসনের চেয়ে ক্ষতি কারক কেন?