তর্কসংগ্রহ হতে মন সম্পর্কে টিকা লেখ ।
তর্কসংগ্রহ হতে মন সম্পর্কে টিকা
মন :- ন্যায় বৈশেষিক দর্শনের মন নবম দ্রব্য রূপে স্বীকৃত। সংখ্যা, পরিমাণ, পৃথকত্ব, সংযোগ, বিভাগ, পরত্ব, অপরত্ব, সংস্কার এই আটটি গুণের অধিকরণ হল মন। তর্কসংগ্রহকার মনের লক্ষণ প্রসঙ্গে বলেছেন-
“সুখাদ্যুপলব্ধিসাধনমিন্দ্রিয়ং মনঃ।”
প্রত্যেক জীবাত্মার সুখাদির অনুমিতি পরস্পর ভিন্ন।তাই প্রত্যেক জীবাত্মার জন্য আলাদা একটি মন স্বীকার করতে হয়। সুতরাং জীবাত্মা যেহেতু অসংখ্য তাই মনও অসংখ্য। মন পরমাণু পরিমাণ বিশিষ্ট সুতরাং নিত্য।
যার স্পর্শ নেই অথচ ক্রিয়া আছে তাই হল মন। অন্নংভট্ট বলেছেন-
” স্পর্শরহিতত্বে সতি ক্রিয়াবত্ত্বং মনসোলক্ষণম্।”
পৃথিবী, অপ্, তেজ ও বায়ু এই চারটির স্পর্শ আছে। আর আকাশ কাল দিক আত্মা এই চারটি দ্রব্য বিভু বলে এর ক্রিয়া নেই। তাই মনই ক্রিয়া থাকে। পৃথিব্যাদি আটটি দ্রব্য হতে ভিন্ন মন অতি সূক্ষ্ম। ইহা প্রত্যক্ষ হয় না। কিন্তু অনুমানের সাহায্যে এর অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়।
মীমাংসকগন মনে করেন মন বিভু পরিমাণ বিশিষ্ট, যেহেতু মন স্পর্শরহিত এবং স্পর্শরহিত দ্রব্য মাত্রই বিভু হয়।
আবার নৈয়ায়িকগণ বলেন মনকে যদি বিভু বলে মেনে নেওয়া হয় তবে আত্মা ও মনের সংযোগ কখনো সম্ভব হবে না। কারণ দুটো বিভু পদার্থের মধ্যে সংযোগ স্বীকার করা যায় না। অথচ আত্মা ও মনের সংযোগ না হলে জ্ঞানের উৎপত্তি হতে পারবে না। সুতরাং মনকে বিভু বলে স্বীকার করলে অসমবায়ী কারণের অভাবে কখনোও জ্ঞান উৎপন্ন হবে না। অতএব মন বিভু হতে পারে না।
মন বিভু পরিমাণবিশিষ্ট হলে সুষুপ্তি ব্যাখ্যা করা যায় না। তাই মনকে অনু পরিমান বিশিষ্ট বলে স্বীকার করতে হয় অণু পরিমাণ বিশিষ্ট বলে স্বীকার করতে হয়। অনু পরিমান মন যখন পুরীতৎ নাড়ীতে প্রবেশ করে তখন সুষুপ্তি ঘটে আর যখন সেখান থেকে বাইরে আসে তখন আত্মমনঃ সংযোগ হওয়ায় জ্ঞানের উৎপত্তি ঘটে। তাই মনকে অণু পরিমাণ বিশিষ্ট বলেই স্থির করা হয়