আচার্য মনু রচিত মনুসংহিতা সপ্তম অধ্যায় রাজধর্ম হতে ছোট প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হল। মনুসংহিতা হতে slst wbssc সাজেসন হিসাবে Monusonghita short Questions and Answer .
মনুসংহিতা সপ্তম অধ্যায় রাজধর্ম হতে ছোট প্রশ্ন ও উত্তর
মনুসংহিতা ছোট প্রশ্ন ও উত্তর পার্ট -1
1) মনুসংহিতা গ্রন্থের রচয়িতার নাম কি?
উঃ- মনুসংহিতা গ্রন্থের রচয়িতা ভগবান মনু। মতান্তরে ইহা রচয়িতা মহর্ষি ভৃগু।
2) মনুসংহিতা গ্রন্থে কয়টি অধ্যায় এবং কোনটি তোমাদের পাঠ্য?
উঃ- মনুসংহিতা গ্রন্থ 12 টি অধ্যায় আছে। এর মধ্যে রাজধর্মঃ নামক সপ্তম অধ্যায়টি আমাদের পাঠ্য।
3) মনুসংহিতার টীকাকার ও টিকার নাম কি?
উঃ- মনুসংহিতার প্রাচীন টীকাকার মেধাতিথি ও তাঁর টীকার নাম মেধাতিথি ভাষ্য।
4) মনুসংহিতার রচনাকাল লিখ?
উঃ- খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক হতে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের মধ্যে গ্রন্থটি সংকলিত হয়েছে।
5) মনুসংহিতার কয়েকজন টীকাকারের নাম লেখ?
উঃ- মেধাতিথি, গোবিন্দরাজ,কুল্লবভট্ট,রাঘবানন্দ।
6) কুল্লবভট্ট রচিত টীকাটির নাম কি?
উঃ- মন্বোর্থমুক্তাবলী।
7) রাজা অগ্নির মধ্যে কোনটি বেশি ক্ষতিকারক এবং কেন?
উঃ- রাজা ও অগ্নির মধ্যে রাজা অধিক তর ক্ষতিকারক। কারণ সাধারণ অগ্নি তার অত্যন্ত নিকটবর্তী ব্যক্তিকে দগ্ধ করে। কিন্তু রাজরূপ অগ্নি সকল পশু ও ধনের সহিত অপরাধী ব্যক্তির সমগ্র পরিজনকে বিনষ্ট করে।
8) সর্বোতেজময় হিষঃ- কার বিষয়ে কোন পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্তব্য অথবা কাকে সর্বতেজোময় বলা হয়েছে এবং কেন?
উঃ- ইন্দ্র বায়ু যম প্রভৃতি আটজন দেবতার সারভূত অংশ নিয়ে ঈশ্বর রাজাকে সৃষ্টি করেছেন। তাই শক্তিতে রাজা আট দেবতার সমান। কারণ রাজার অনুগ্রহে ইষ্ট সিদ্ধি, পরাক্রমে বিজয় ও ক্রোধে বিনাশ প্রাপ্তি ঘটে।এই প্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করা হয়েছে।
9) মাৎস্যান্যায় কি?
উঃ- জলাশয়ে বড় বড় মাছেরা যেমন ছোট ছোট মাছেদের গিলে খায়। সেই রূপ ভাবে দন্ড প্রতিষ্ঠিত নাহলে বলশালী লোকেরা দুর্বলের উপর অত্যাচার করে। একেই বলে মাৎস্যান্যায়।
10) জাঙ্গলদেশ কাকে বলে?
উঃ- অল্প জল তৃণ যুক্ত, পরিমিত বায়ু ও রদযুক্ত শস্য সমৃদ্ধ দেশকে জাঙ্গলদেশ বলা হয়।
মনুসংহিতা ছোট প্রশ্ন ও উত্তর পার্ট -2
11) শিল ও উঞ্ছ বলতে কী বোঝো?
উঃ- ধান্য ক্ষেত্রে একটি একটি ধানের শিষ চয়ন করাকে বলা হয় শিল এবং ধান্যক্ষেত্র থেকে একটি একটি ধানের কনা সংগ্রহকে বলা হয উঞ্ছ।
12) মন্ত্রণা কালে রাজা কাদের দূরে রাখবেন?
উঃ- মন্ত্রণা কালে জড় বুদ্ধিসম্পন্ন মুখ, অন্ধ,বোধি,অতি দুগ্ধ ব্যক্তি, স্ত্রীলোক,ম্লেচ্ছপীড়িত,অঙ্গহীনব্যাক্তি, শুকসারী থেকে মন্ত্রনা দূরে রাখবেন।
13) ব্রাহ্মণ বুবা বলতে কী বোঝো?
উঃ- যে ব্রাহ্মণ নিজ বংশের আচার-আচরণ পালন করেন না অথচ নিজেকে ব্রাহ্মণ বলে ঘোষণা করে তাদের ব্রাহ্মণবুবা বলে।
14) তোর্যত্রিক শব্দের অর্থ কি?
উঃ- কামজ ব্যসনের অন্তর্গত হল তোর্যত্রিক। এই পদটির দ্বারা নিত্য গীত বাদ্য কে বোঝায।
15) কোন কোন ব্যসনগুলি অধিকতর কষ্ট দেয?
উঃ- কামজ ব্যসনের মধ্যে মদ্যপান,পাশাখেলা, স্ত্রীসম্ভোগ ও মৃগয়া এবং ক্রোধজ ব্যসনের মধ্যে দণ্ডপারুষ্য,বাকপারুষ্য ও অর্থদূষন। এই তিনটি অধিকতর কষ্টকর।
16) ব্যাসন ও মৃত্যুর মধ্যে কোনটি অধিকতর কষ্টদায়ক?
উঃ- মৃত্যু কষ্টদায়ক হলেও সেই কষ্ট সাময়িক। কিন্তু ব্যসন সারাজীবন তিলে তিলে মানুষকে কষ্ট দেয়। অতএব মৃত্যু অপেক্ষা ব্যসনেই অধিকতর কষ্টদায়ক।
17) রাজা বালক হলেও তাকে অবমাননা করা উচিত নয় কেন?
উঃ- রাজা বালক হলেও তাকে মনুষ্য জ্ঞানে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। যেহেতু রাজা কোনোঅনির্বচনীয় মহান দেবতা মনুষ্যরূপে অবস্থান করেন।
18) রাজা কখন নানাপ্রকার রূপ ধারণ করেন?
উঃ- রাজা নিজের প্রয়োজনে, ক্ষমতা, স্থান ও কাল সম্পর্কে যথাযথ বিবেচনা করে কার্যসিদ্ধির জন্য বারবার নানাপ্রকার রূপ ধারণ করে থাকেন।
19) ঈশ্বর দণ্ডকে কখন সৃষ্টি করেন?
উঃ- রাজার প্রয়োজন সিদ্ধির জন্য সকল প্রাণীর রক্ষক, ধর্ম স্বরূপ প্রজাপতির শরীর থেকে জাত ও ব্রহ্মতেজ দ্বারা এই দণ্ডকে ঈশ্বর পূর্বেই সৃষ্টি করেছেন।
মনুসংহিতা ছোট প্রশ্ন ও উত্তর পার্ট -3
20) দণ্ডের ভয়ে কি হয় এবং কি হয় না? অথবা পৃথিবীতে দণ্ড থাকার ফল কি?
উঃ- দণ্ডের ভয়ে স্থাবর জঙ্গ মাত্যক বিশ্বের সকল প্রাণী ভোগ্য বস্তুগুলি ভোগ করতে সমর্থ হয়। এছাড়া কোন প্রাণী স্বধর্মভাবে বিচলিত হয় না।
21) রাজা কখন দন্ড প্রয়োগ করবেন?
উঃ- দেশকাল এবং অপরাধী সামর্থ্য ও বিদ্যার কথা যথাযথ বিবেচনা করে রাজা অপরাধী ব্যক্তির ওপর দণ্ডবিধান করবেন।
22) কাকে চতুরাশ্রম ধর্মের প্রতিভূ বলা হয়েছে এবং কেন?
উঃ- ব্রহ্মতেজ থেকে উৎপন্ন ধর্মস্বরূপ দণ্ডকে চতুরাশ্রম ধর্মের প্রতিভূ বলা হয়েছে। কারণ এই দণ্ডই রাজা, দণ্ডই পুরুষ,দণ্ডই নেতা এবং দন্ডই শাসক।
23) পণ্ডিতেরা দণ্ডকে ধর্ম বলেন কেন?
উঃ- দন্ড সমস্ত প্রজাকে শাসন করে থাকে এবং সকলকে রক্ষণাবেক্ষণ করে। তাই সবাই নিদ্রিত হলেও দন্ড একমাত্র জেগে থাকে।এই কারণে পণ্ডিতরা দণ্ডকে ধর্ম বলেছেন।
24) দণ্ডের সুপ্রয়োগ ও অপ্রয়োগের ফল কি? অথবা শাস্ত্রানুযায়ী প্রযুক্ত দন্ডের ফল কি এবং অবিবেচনার সঙ্গে প্রযুক্ত দণ্ডের ফল কি?
উঃ- শাস্ত্রানুযায়ী সম্যক বিবেচনাপূর্বক দন্ড প্রয়োগ করা হলে সমগ্র প্রজা রাজার অনুরক্ত হয় এবং অবিবেচনার সঙ্গে দন্ড প্রযুক্ত হলে সকল ধন সম্পদ বিনষ্ট হয।
25) রাজা দণ্ড প্রয়োগ না করলে কি হত?
উঃ- রাজা যদি নিরলসভাবে অপরাধীর ওপর দণ্ডবিধান না করেন তাহলে বলশালী লোকেরা দুর্বলদের শূলে নিক্ষিপ্ত মৎস্যের ন্যায় বিনাশ করে থাকে। এছাড়া কাক যজ্ঞের পিঠে ভক্ষন করে। এছাড়া কুকুর যজ্ঞের হবি লেহন করে এবং সমাজে কারো কোন বিষয়ে অধিকার থাকবে না।
26) দন্ড ভয়ের ফল কি?
উঃ- দন্ড ভয়ের ফলে সকল লোক নিয়ন্ত্রণে থাকে। অর্থাৎ জগতের সকল প্রাণী স্ব স্ব ভোগ্য বস্তু ভোগ করতে সমর্থ হয।
27) দণ্ডের স্বার্থ প্রণেতা রাজার কি কি গুন থাকা দরকার?
উঃ- সত্যবাদী,বিবেচক, বুদ্ধিমান,ধর্ম,অর্থ ও কাম সম্পর্কে জ্ঞান সম্পন্ন উত্তম অমাত্মসহায় সম্পন্ন ও তত্ত্ব জ্ঞানী রাজাকে মুনিষীগন দণ্ডের সার্থক প্রনেতা মনে করেন।
28) কোন রাজা দন্ডের যথার্থ প্রয়োগকারী নয?
উঃ- অমাত্য সহায় বর্জিত,মুর্খ, লোভী, স্বার্থ জ্ঞানহীন ব্যাসনাসক্ত রাজা কখনই শাস্ত্রানুযায়ী দণ্ড প্রয়োগ করতে সমর্থ হন না।
29) রাজার কর্তব্য কি?
উঃ- রাজা অত্যন্ত ন্যায়-নিষ্ঠ, শত্রুপ্রতি তীক্ষ্নদণ্ড,মিত্রের প্রতি সরল ব্যবহার এবং ব্রাহ্মণের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন।
30) রাজার যশ কিভাবে বিস্তার করে?
উঃ- গুনসম্পন্ন সুশাসক রাজা অল্প ধনের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করলেও তার কীর্তি জলে পতিত তৈলবিন্দুর মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অপরদিকে বিপরীত আচরণকারীর রাজার যশ জলে পতিত ঘৃতবিন্দুর মতো সংকুচিত হয়ে যায়।
মনুসংহিতা ছোট প্রশ্ন ও উত্তর পার্ট -4
31) অসৎ আচরন সম্পন্ন রাজার যশ কিভাবে বিস্তার লাভ করে?
উঃ- অসৎ আচরন সম্পন্ন রাজার যশ ঘৃতবিন্দুর মতো সঙ্কুচিত হয়ে যায়।
32) রাজার প্রাত্যহিক কর্তব্য কী?
উঃ- রাজা প্রতিদিন প্রাতকালে শয্যা ত্যাগ করে বেদবিদ্যায় অভিজ্ঞ,নীতিশাস্ত্রজ্ঞ বৃদ্ধ ব্রাহ্মণদের সেবা করবেন তাদের আদেশ প্রতিপালন করেন।
33) রাজা কাদের কাছ হতে বিনয় শিক্ষা লাভ করবেন?
উঃ- রাজা বুদ্ধি ও শাস্ত্র জ্ঞান দ্বারা বিনীত হলেও বিদ্যান ব্রাহ্মণদের নিকট বিনয় শিক্ষা লাভ করবেন।
34) বিনীত ও অবিনীত রাজার ফল কি রূপ?
উঃ- প্রচুর ধনসম্পতিযুক্ত রাজা অবিনয় বশত বিনষ্ট হন। অপরদিকে রাজা সহায় সম্বলহীন বনবাসী হয়েও বিনয় বশত রাজ্যলাভ করেন।
35) কোন কোন রাজা অবিনয়হেতু বিনষ্ট হয়েছিলেন?
উঃ- বেণ,নহূষ,সুদা,সুমুখ,নিমি প্রভৃতি রাজারা অবিনয়হেতু বিনষ্ট হয়েছিল।
36) বিনয়ের দ্বারা কে কে রাজ্য লাভ করেছিল?
উঃ- মহারাজ পৃথু এবং রাজর্ষি মনু বিনয়বশত রাজ্য লাভ করেছিল।
37) বিনয়ের দ্বারা কে ঐশ্বর্য এবং কে ব্রহ্মত্ব লাভ করেছিল?
উঃ- বিনয়ের দ্বারা কুবের ঐশ্বর্য লাভ করেছিল এবং সাধিপুত্র বিশ্বামিত্র ব্রহ্মত্ব লাভ করেছিল।
38) আন্বীক্ষিকী কী?
উঃ- আন্বীক্ষিকী হল প্রকৃত পক্ষে তর্কবিদ্যা। আবার গৌতমের ন্যায় দর্শনকেও আন্বীক্ষিকী বলা হয়। কৌটিল্যের মতে, সাংখ্য,যোগ ও চার্বাক দর্শনকে একত্রে আন্বীক্ষিকী বলা হয়। ত্রয়ী,বার্তা,দণ্ডনীতি- এই তিনবিদ্যা যুক্তিসহ ব্যাখ্যা নির্নয় করে আন্বীক্ষিকী বিদ্যা।
39) বার্তা কি?
উঃ-কৃষি,বানিজ্য ও পশুপালন এদের একত্রে বার্তা বলে। বার্তার মাধ্যমে রাজা শস্য,ধাতু ও ধনসম্পত্তি লাভ করে। কৌটিল্য বলেছেন- “কৃষি পশুপাল্য বানিজ্যে চ বার্তা’।
40) ত্রয়ী কী?
উঃ- ঋক্,সাম,যজু এদের একত্রে বলা হয় ত্রয়ী। এই তিন বেদের বিদ্যাকে বলা হয় ত্রয়ী বিদ্যা। তবে অথর্ববেদ,পুরানইতিহাস ও বেদাঙ্গও ত্রয়ীর অন্তর্ভুক্ত। ত্রয়ী বিদ্যাতে চতুরবর্ণ ও চতুরাশ্রম- এর সমস্ত নিয়মকানুনের পুক্ষানুপুঙ্খ নিয়ম রয়েছে।
মনুসংহিতা ছোট প্রশ্ন ও উত্তর পার্ট -5
41) তৌর্যত্রিক কী?
উঃ- তৌর্যত্রিক বলতে নিত্য-গীত -বাদ্যকে বোঝায়। তুর্য শব্দের দ্বারা মূর্জা প্রকৃতিকে বোঝায়। আচার্য মনুরাজ ধর্ম নামে সপ্তম অধ্যায়ে দশপ্রকার কামজ ব্যসন উল্লেখ করতে গিয়ে তৌর্যত্রিক শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
42) যোগক্ষেম কী?
উঃ- অপ্রাপ্তির বস্তুর প্রাপ্তের নাম যোগ এবং প্রাপ্ত বস্তুর রক্ষা করাকে বলা হয় ক্ষেম। প্রাপ্ত বস্তুর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে সমাজ তথা রাষ্ট্রের ক্ষেম সাধন করে। একজন আদর্শ রাজা প্রজাদের অপ্রাপ্ত বস্তুর দিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য দণ্ড নীতির যথাযথ প্রয়োগ করে থাকেন।
43) আত্যয়িক কার্য কী?
উঃ- হঠাৎ কোনো কার্য অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কার্য করতে হলে সামান্য সময় নষ্ট ক্ষতিকর বলে এটিকে আত্যয়িককার্য বলা হয়। সুতরাং,আত্যয়িককার্য হল শীঘ্র সম্পাদিত সমস্যা যুক্ত কোনো কার্য। সুতরাং, আত্যয়িককার্যের ক্ষেত্রে রাজা মন্ত্রীদের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন অথবা নিজেও সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেন।
44) অনাবস্থাদোষ কী?
উঃ- নিশ্চিতরূপে কোনো সন্দেহের নিরশন ঘটানোর জন্য যে প্রমাণের প্রয়োজন তাহল তর্কবিদ্যা। অর্থাৎ মানুষিক জ্ঞানের জন্য যে প্রমাণ প্রয়োজন তা হল তর্ক। এই তর্ক হল পাঁচপ্রকার।নৈয়ায়িক মতে, তৃতীয় প্রকার তর্ক হল অনাবস্থা। অনাবস্থার শব্দটি ন্যায় দর্শনে প্রচলিত একটি পরিভাষা। ন্যায় শাস্ত্রে অনাবস্থার সংজ্ঞা হল-যুক্তির সাহায্যে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পথে যদি কোনো বাধা সৃষটি হয়। তখন সেখানে অনাবস্থাদোষ হয়।
মনুসংহিতা সপ্তম অধ্যায় রাজধর্ম হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
১) কোন কোন দেবতার অংশ দ্বারা রাজা নির্মিত? অথবা,কার কার অংশে রাজার সৃষ্টি হয়েছে?
উ:- সুপ্রসিদ্ধ স্মৃতিকার মহর্ষি মনু প্রণীত মনুসংহিতা- র সপ্তম অধ্যায়ে উল্লেখিত -ইন্দ্র, বায়ু, যম, সূর্য, অগ্নি, বরুন, চন্দ্র ও কুবের এই আটজন দেবতার সারভূত অংশ সমূহে রাজা নির্মিত। এই প্রসঙ্গে আচার্য মনু বলেছেন-
“ইন্দ্রানিলযমার্কাণামগ্নেশ্চ বরুনস্য চ।
চন্দ্রবিত্তেশয়োশ্চৈব মাত্রা নির্হৃত্য শাশ্বতীঃ।।”
২) সাধারন অগ্নির অপেক্ষা রাজাগ্নি কিভাবে অধিকতর প্রভাবশালী?
অথবা, প্রাকৃতিক অগ্নি ও রাজরূপ অগ্নির মধ্যে কোনটি ভয়ঙ্কর এবং কেন?
উ:- সাধারন অগ্নি তাঁর অত্যন্ত নিকটস্থ ব্যাক্তিকেই দগ্ধ করে, কিন্তু রাজরূপ অগ্নি সকল পশু ও ধনের সঙ্গে অপরাধী ব্যক্তির সমগ্র পরিবারকে বিনষ্ট করে। সুতরাং সাধারন বা প্রাকৃতিক অগ্নি অপেক্ষা রাজাগ্নি অধিক ভয়ঙ্কর ও প্রভাবশালী। তাই ভগবান মনু বলেছেন- ‘কুলং দহতি রাজাগ্নিঃ সপশুদ্রব্যসঞ্চয়ম্।’
৩) রাজশাসনের চারটি উপায় কি কি? পণ্ডিতগন এগুলির কোন দুটির প্রশংসা করেন?
অথবা, প্রশাসনের চারটি উপায়ের নাম কর।
উ:- সুপ্রসিদ্ধ স্মৃতিকার মনুর মতে রাজশাসনের চারটি উপায় হল-সাম, দান, ভেদ ও দণ্ড। এই চারটি উপায়ের মধ্যে সাম এবং দণ্ডকে পণ্ডিতগন অধিক প্রশংসা করেন কারন এই দুটি উপায় অবলম্বন করলে অর্থব্যয় ও সৈন্য ক্ষয়ের কোনরূপ আশঙ্কা থাকে না। তাই পণ্ডিতেরা কার্যসিদ্ধির উপায়রূপে সাম ও দণ্ডের প্রশংসা করেন।
৪) দুর্লভো হি শুচির্নরঃ – ব্যাখ্যা কর। (দণ্ডের ফল)
উ:- ভগবান মনু প্রণীত মনুসংহিতার সপ্তম অধ্যায়ে উল্লেখিত উদ্ধৃতিটিতে দণ্ডের দ্বারা রাজা সমস্ত প্রজাকে বশে আনেন। দণ্ড অপরাধীকে ভীত ও সংযত করে।ফলে সমাজে সকলেই সুখে বসবাস করে। মানুষ সামনে আপাত ধার্মিক সাজলেও পরোক্ষ সে পরের উপর অত্যাচার করে সমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। সমাজে শুচি, সত্যবান বা পবিত্র লোকের
বড়োই অভাব। লোকে দণ্ডের ভয়ে ভীত হয়েই পবিত্রতার অভিনয় করে, তাই শাস্ত্রে বলা হয়েছে-
“দণ্ডস্য হি ভয়াৎ সর্বং জগদ্ ভোগায় কল্পতে।”
এই প্রসঙ্গে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রও বলা হয়েছে-
“চতুর্বর্ণাশ্রমো লোকো রাজা দণ্ডেনঃ পালিতঃ।”
৫) দণ্ডের সার্থক প্রণেতা হতে রাজার কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন?
অথবা, দণ্ড প্রণয়নের জন্য রাজার যোগ্যতা কি?
উ:- ভগবান মনুর মতে শুচি, বিশুদ্ধচিত্ত, সত্যবাদী, শাস্ত্রজ্ঞ সহায় সম্পন্ন বুদ্ধিমান রাজাই দণ্ডের সার্থক প্রণেতা হতে পারেন। এই প্রসঙ্গে মহর্ষি মনু বলেছেন-
“শুচিনা সত্যসন্ধেন যথাশাস্ত্রানুসারিনা।
প্রণেতুং শক্যতে দণ্ডঃ সুসহায়েন ধীমতা।।”
৬) মনুসংহিতার দুটি টীকার নাম লেখ? এতে কটি অধ্যায় আছে? তোমার পঠিত অধ্যায়ের বিষয়বস্তু কি?
উ:- মনুসংহিতার দুজন টীকাকার হলেন- মেধাতিথি এবং কুল্লূকভট্ট।
মনুসংহিতার স্মৃতিশাস্ত্র তথা ধর্মশাস্ত্র জাতীয় গ্রন্থ। প্রধান টীকার নাম হল- কুল্লূখ ভট্ট রচিত – মন্বর্থ মুক্তাবলী এবং মেধাতিথি রচিত – মনুভাষ্য। এছাড়াও গোবিন্দরাজের মনুটীকা এবং সর্বজ্ঞ নারায়ণের মন্বর্থ বিবৃতি।
মনুসংহিতার দ্বাদশ অধ্যায় (১২টি) রয়েছে।
আমাদের পঠিত অধ্যায় অর্থাৎ মনুসংহিতার সপ্তম অধ্যায়ের বিষয়বস্তু হল- রাজধর্ম।
৭) ঈশ্বর দণ্ডকে কেন সৃষ্টি করেন? অথবা, কে, কেন দণ্ডকে সৃষ্টি করেছেন?
উ:- রাজার উদ্দেশ্যে সিদ্ধির জন্য সৃষ্টির প্রারম্ভে ঈশ্বর সকল প্রাণীর রক্ষক, আত্মজ, ধর্মস্বরূপ, ব্রহ্মতেজোময় দণ্ডের (রাজাকে সৃষ্টির পূর্বেই ) সৃষ্টি করেছেন। তাই ভগবান মনু বলেছেন-
“তস্যার্থে সর্বভূতানাং গোপ্তারং ধর্মমাত্মজম্।
ব্রহ্মতেজোময়ং দণ্ডমসৃজং পূর্বমীশ্বরঃ।।”
৮) মাৎস্যান্যায় বলিতে কী বোঝ? দণ্ডের মূর্তি কিরূপ?
উ:- জলাশয়ে বড় বড় মাছ ছোট ছোট মাছকে গিলে ফেলে, তেমনি দণ্ডের অভাবে বা রাজার অভাবে সমাজে যে অরাজকতা অর্থাৎ বলবানেরা দুর্বলদের উপর অত্যাচার ও উৎপীড়িত করে। তখন সমাজে দেখা দেয় নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা। সমাজে এই অরাজক অবস্থাকে মাৎস্যন্যায় বলে।
দণ্ড কৃষ্ণবর্ণ ও রক্তচক্ষু হয়ে পাপবিনাশের নিমিত্ত হয়। এই প্রসঙ্গে মনু বলেছেন-
“যত্র শ্যামো দেহি লোহিতাক্ষো দণ্ডশ্চরতি পাপহা।
প্রজাস্তত্র ন মুহ্যন্তি নেতা চেৎ সাধু পশ্যতি।।”
৯) রাজা বালক হলেও কেন তাকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়?
উ:- বস্তুতঃ রাজা কোন সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ কোন দেবতা, রাজ্যশাসন ও প্রজাপালনের জন্যই তিনি পৃথিবীতে মনুষ্যরূপে অবতীর্ণ হন। রাজা বয়সে বালক হলেও সামান্য মনুষ্যজ্ঞানে তাকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। এই প্রসঙ্গে আচার্য মনুর মতটি হল-
“বালোঅপি নাবমন্তব্যো মনুষ্য ইতি ভূমিপঃ।
মহতী দেবতা হ্যেষা নররূপেন তিষ্ঠতি।।”
১০) যথাযথভাবে দণ্ড প্রয়োগ না হলে কি ঘটবে?
উ:- রাজা যদি দণ্ডযোগ্য অপরাধীর উপর দণ্ড প্রয়োগ না করেন তাহলে বলবানেরা দুর্বলদের উপর অকথ্য অত্যাচার – নির্যাতন করবেন, যার ফলে মাৎস্যন্যায়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে। চতুর্বর্ণের মধ্যে অধরোত্তর অবস্থা দেখা দেবে। অর্থাৎ উঁচুবর্ণের লোকের উপর নীচু বর্ণের আধিপত্য হবে। তাই মনু বলেছেন-
“যদি ন প্রণয়েদ্রাজা দণ্ডং দণ্ড্যেষ্বতন্দ্রিতঃ।
শূলে মৎস্যানিবাপক্ষ্যন্ দুর্বলান্ বলবত্তরাঃ।।”
রাজা অলসতার বশবর্তী হয়ে দণ্ডযোগ্য ব্যাক্তিকে যদি দণ্ড বিধান না করেন, তবে শূলে মাছকে গেঁথে যেমন- শিকপোড়া করা হয় তেমনি বলবান ব্যাক্তিরা দুর্বল ব্যাক্তিদের উপর অকথ্য অত্যাচার করবে।
১১) ব্যসন বলতে কী বোঝ? তা কত প্রকার?
উ:- বি-অস্ + ল্যুট্ করণে = ব্যসন। শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল বি-বিশেষণ, অস্ – অস্যতে নিক্ষিপ্যতে অন্তঃ করণম্ অনেনেতি। অর্থাৎ যার দ্বারা মানুষের চিত্ত বা অন্তঃকরণ বিশেষভাবে নিক্ষিপ্ত হয়, তাই হল ব্যসন। প্রকারান্ত একে অত্যধিক ইন্দ্রিয়াসক্তিও বলা যায়। ব্যসন কথাটির সাধারন অর্থ হল -কুক্রিয়া। কামজ ও ক্রোধজ মিলিয়ে মোট অষ্টাদশ প্রকার ব্যসন রয়েছে।
১২) ক্রোধজ ব্যসনগুলি কি কি?
উ:- “পৈশুণ্যং সাহসং দ্রোহ ঈর্ষ্যাসূয়ার্থ দূষণম্।
বাগ্ দণ্ডজং চ পারুষ্যং ক্রোধজোঅপি গণোঅষ্টকঃ।।” অর্থাৎ আটটি ক্রোধজ ব্যসন হল-
i) অপর ব্যাক্তির অজ্ঞাত দোষকে আবিষ্কার।
ii) সাধু ব্যক্তির নিগ্রহ
iii) বিশ্বাসভঙ্গপূর্বক গুপ্তহত্যা
iv) ঈর্ষা
v) অপরের গুনে দোষ সৃষ্টি
vi) অর্থজনিত দোষ
vii) কঠোর বাক্য প্রয়োগ ও
viii) দণ্ডবিধান।
১৩) কামজ ব্যসনগুলি কি কি?
উ:- মৃগয়াক্ষো দিবাস্বপ্নঃ পরিবাদঃ স্ত্রিয়ো মদঃ।
তৌর্যত্রিকং বৃথাট্যা চ কামজো দশকো গণঃ।।
অর্থাৎ দশটি কামজ ব্যসন হল- মৃগয়া, পাশাখেলা, দিবানিদ্রা, পরনিন্দা, স্ত্রী সম্ভোগ, মদ্যপান জনিত মত্ততা, নৃত্য, গীত, বাদ্য এবং অকারণ ভ্রমণ।
১৪) দুর্গ কথাটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী? মনুসংহিতা অনুসারে কয় প্রকার দুর্গ আছে? দুর্গগুলির নাম লেখো।
উ:- দুঃখেন গম্যতে যৎ তৎ দুর্গম্- (দুর্ -গম্+ড = দুর্গ) অর্থাৎ অতিকষ্টে যেখানে যাওয়া যায় তাকেই বলে দুর্গ।
আচার্য মনুর মতে দুর্গ ছয় প্রকার। যথা- ধন্বদুর্গ, মহীদুর্গ, অবদুর্গ, বার্ক্ষদুর্গ, নৃদুর্গ ও গিরি দুর্গ। এই প্রসঙ্গে আচার্য মনু বলেছেন-
“ধন্বদুর্গং মহীদুর্গমব্দদুর্গং বার্ক্ষমেব বা।
নৃদুর্গং গিরিদুর্গং বা সমাশ্রিত্য বসেৎপুরম্।।”
১৫) মনুসংহিতা অনুসারে শ্রেষ্ঠ দুর্গ কি? এবং কেন?
অথবা, রাজার বসবাসের জন্য কোন দুর্গটি উপযুক্ত?
উ:- সমস্ত দুর্গের মধ্যে গিরিদুর্গই সর্বাপ্রেক্ষা শ্রেষ্ঠ। কারণ এই দুর্গ পর্বত পৃষ্ঠে অবস্থিত বলে শত্রুর দুরধিগম্য। তাছাড়া গিরিদুর্গকে আশ্রয় করে দেবতারা থাকেন। গুণ বাহুল্যবশতঃ এই দুর্গই শ্রেষ্ঠ। তাই আচার্য মনু বলেছেন- “এষাং হি বাহুগুণ্যেন গিরিদুর্গং বিশিষ্যতে।”
১৬) মনুসংহিতা অনুসারে বিনয়ের জন্য কারা পুরস্কৃত হয়েছেন?
উ:- সুপ্রসিদ্ধ স্মৃতিকার মনু প্রণীত মনুসংহিতা অনুসারে বিনয়ের জন্য পুরস্কৃত হয়েছিলেন- পৃথু, মনু, কুবের, গাধিপুত্র বিশ্বামিত্র। তাই মহর্ষি মনু বলেছেন-
“পৃথুস্তু বিনয়াদ্ রাজ্যং প্রাপ্তবান্ মনুরেব চ।
কুবেরশ্চ ধনৈশ্বচর্যং ব্রাহ্মণ্যঞ্চৈব গাধিজঃ।”
১৭) মনুসংহিতা অনুসারে অবিনয়ের জন্য কারা তিরস্কৃত বা বিনষ্ট হয়েছেন?
উ:- সু প্রসিদ্ধ ধর্মশাস্ত্রকার মহর্ষি মনু প্রণীত মনুসংহিতা অনুসারে অবিনয়ের জন্য তিরস্কৃত হয়েছিলেন – বেন, রাজা, নহুষ, পিজবনপুত্র সুদা, সুমুখ এবং নিমি। তাই আচার্য মনু বলেছেন-
“বেণো বিনষ্টোঅবিনয়ান্নহুষশ্চৈব পার্থিবঃ।
সুদাঃ পৈজবনশ্চৈব সুমুখো নিমিরেব চ।।”
১৮) রাজসচিব হতে গেলে কোন ব্যক্তির কি কি গুন থাকা আবশ্যক?
অথবা, অমাত্যগণের জন্য কি কি সাধারন গুণাবলীর কথা মনু বলেছেন?
উ:- ভগবান মনু মনে করেন বংশপরম্পরায় রাজকর্মচারী, শাস্ত্রজ্ঞ, পরাক্রমী, বীর, নানা প্রকার অস্ত্রাবিদ্যায় নিপুন, সদ্ধংশজাত এবং শপথাদি দ্বারা পরীক্ষিত বা সর্বপ্রকার প্রলোভনে অচঞ্চল এরূপ ব্যক্তি সচিব বা অমাত্য হওয়ার পক্ষে উপযুক্ত। তাই মহর্ষি মনু বলেছেন- “মৌলাঞ্চ শাস্ত্রবিদঃ শূরাল্লব্ধলক্ষ্যান্ কুলোদগতান্। “
১৯) রাজা কেন মন্ত্রী নিয়োগ করবেন? কতজন মন্ত্রী নিয়োগ করবেন?
উ:- ভগবান মনুর মতে রাজকর্ম পরিচালনা করা একাকী রাজার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তাঁকে সহায়তা করার জন্য তিনি মন্ত্রীদের নিয়োগ করে থাকেন। কুলক্রমাগত, সেবক, শাস্ত্রজ্ঞ, বীর, অস্ত্রবীর উচ্চবংশজাত পরীক্ষিত সাত বা আটজন ব্যক্তিকে রাজা মন্ত্রীরূপে নিযুক্ত করবেন। তাই ধর্ম শাস্ত্রকার মনু বলেছেন-
‘সচিবান্ সপ্তচাষ্টৌ বা প্রকুর্বীত।’
২০) যোগক্ষেম কথার অর্থ কি?
উ:- যোগ শব্দের অর্থ অলব্ধবস্তুর লাভ এবং ক্ষেম শব্দের অর্থ লব্ধ বস্তুর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও বর্ধিতকরণ –
“অলব্ধলাভো যোগঃ স্যাৎ ক্ষেমোলব্ধস্য পালনম্। “
২১) রাজশাসনে বা রাজ্য প্রশাসনে ষড়গুন কী কী?
উ:- সন্ধি, বিগ্রহ, যান, আসন, দ্বৈধীভাব ও সংশ্রয় এই ছয়টিকে ষড়গুণ বলা হয়।
সন্ধি-শর্তসাপেক্ষে চুক্তি, বিগ্রহ -যুদ্ধি ঘোষনা, যান- যুদ্ধযাত্রা, আসন- কোন প্রকার বলবান বুঝলে সৈন্যদলকে দুভাগ করে দুজায়গায় অবস্থান। সংশ্রয় -কোন গুনবান ও বলবত্তর রাজার আশ্রয়গ্রহণ-
” সন্ধিঞ্চ বিগ্রহঞ্চৈব যানমাসনমেব চ।
দ্বৈধীভাবং সংশ্রয়ঞ্চ ষড়গুণাংশ্চিন্তয়েৎসদা।।”
২২) শিল ও উঞ্ছ শব্দ দুটি ব্যাখ্যা কর।
উ:- শস্যক্ষেত্রে পড়ে থাকা ধান্যাদি শস্যের মঞ্জুরীকে সংগ্রহ করার নাম -শিল।
‘মঞ্জর্যাত্মকানেকধান্যোচ্চয়নং শিলঃ।’
পক্ষান্তরে শস্যক্ষেত্রে পতিত ধান্যাদি শষ্যের এক একটি কনাকে সংগ্রহ করার নাম উঞ্ছ-
‘একৈকধান্যাদিগুড়কোচ্চয়ণম্ উঞ্ছঃ।
সাধারনভাবে শব্দদুটির এরূপ অর্থ হলেও গ্রন্থে মিলিতভাবে শিলোঞ্ছ শব্দের দ্বারা রাজকোষাগারে অর্থাভাব এবং তা থেকে সম্প্রসারিত অর্থে অর্থাভাবযুক্ত রাজাকে বোঝায়।
২৩) কিরূপ গুণযুক্তা কন্যাকে রাজার বিবাহ করা বিধেয়?
উ:- সবর্ণা, সুলক্ষণা, সুরূপা, উচ্চবংশেজাতা, মনোহারিনী কন্যারাজার বিবাহযোগ্য।
২৪) রাজার শ্রেষ্ঠধর্ম কী?
উ:- রাজার শ্রেষ্ঠধর্ম হল প্রজাপালন, শত্রুদমনের নিমিত্ত যুদ্ধে পশ্চাদপদ না হওয়া এবং ব্রাহ্মণদের শুশ্রুষা -এই তিনটিই হল রাজার শ্রেষ্ঠ ধর্ম। শুক্রনীতিসারে বলা হয়েছে-
“নৃপস্য পরমো ধর্মঃ প্রজানাং পরিপালনম্।”
২৫) যুদ্ধে কি প্রকার অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ? অথবা, যুদ্ধে কি প্রকার অস্ত্র ব্যবহার করা উচিত নয়?
উ:- স্মৃতিকার মনুর মতে, যুদ্ধক্ষেত্রে গুপ্ত অস্ত্র, কর্ণকারফলক যুক্তবান, বিষাক্তবান ও অগ্নিদীপ্তফলক যুক্ত অস্ত্র বা বাণের দ্বারা শত্রুদের হত্যা করবেন না। প্রাচীনগণ বহুপূর্বেই এসব ভয়ঙ্কর অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে গেছেন।
২৬) মনুর মতে, রাজা কার কাছে কি কি বিষয় শিক্ষা করবেন?
উ:- মনুর মতে, রাজা তিনপ্রকার বেদে পারদর্শী ব্যক্তির নিকট ঋক্- সাম-যজুঃ বেদত্রয় শিক্ষা করবেন। বংশপরম্পরাগত অর্থশাস্ত্রা দিতে অভিজ্ঞ ব্যক্তির নিকট অর্থশাস্ত্র, দণ্ডনীতি, তর্কবিদ্যা, ব্রহ্মবিদ্যা শিক্ষা করবেন। কৃষিবানিজ্য পশুপালনাদি ধনোপার্জনের উপায় সেই বিষয় অভিজ্ঞ ব্যক্তির নিকটে শিক্ষা করবেন।
২৭) মহতী দেবতা হ্যেষা- কে মহতী দেবতা? তাকে এরূপ বলা হয়েছে কেন?
উ:- ভগবান মনু প্রণীত মনুসংহিতার সপ্তম অধ্যায় থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে।
এখানে রাজাকে মহতী দেবতা বলা হয়েছে।
বস্তুতঃ রাজা কোন সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ কোন দেবতা। রাজ্যশাসন ও প্রজাপালনের নিমিত্তে তাকে পৃথিবীতে মনুষ্যরূপে অবতীর্ণ করা হয়। তাই মনু বলেছেন-
“মহতী দেবতা হ্যেষা নররূপেন তিষ্ঠতি।”
২৮) দণ্ড সুপ্তেষু জাগর্তি – কথাটির তাৎপর্য কি?
উ:- ভগবান মনু প্রণীত মনুসংহিতার সপ্তম অধ্যায় থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে।
দম্ ধাতুর উত্তর ড প্রত্যয় যোগে দণ্ড শব্দটি নিষ্পন্ন। নিরুক্তকার যাস্কের মতে, দণ্ড শব্দের বহুবিধ অর্থের অন্যতম হল দমন করা। যা এসেছে দম্ ধাতু থেকে। কামন্দকীয় নীতিসারে একই অর্থে দণ্ডের প্রয়োগ হয়েছে- ‘দমো দণ্ড ইতি প্রোক্তঃ’।
দণ্ডের পালকেরা নিদ্রিত হলেও দণ্ড বিনিদ্র জীবন যাপন করেন। কারণ তাঁর ভয়ে চোর প্রভৃতি তাদের দুষ্কর্য থেকে নিবৃত্ত হয়।
২৯) তৌর্যত্রিকং বলতে কী বোঝ?
উ:- নৃত্য, গীত ও বাদ্য এই তিনটিকে একত্রে তৌর্যত্রিকং বলে।
“তুর্যে ভবম্ তৌর্যম্।
তৌর্যানাং ত্রিকম্ তৌর্যত্রিকম্।”
টীকাকার কুল্লূকভট্ট তৌর্যত্রিকং সম্পর্কে বলেছেন-
“তৌর্যত্রিকং নৃত্য গীত বাদিত্রাণি।”
আবার অমরকোষে বলা হয়েছে-
“তৌর্যত্রিকং নৃত্যগীতবাদ্যং নাট্যমিদং ত্রয়ম্।”
দশপ্রকার কামজ ব্যসনের মধ্যে তৌর্যত্রিক অন্যতম।
৩০) মৃত্যু ও ব্যসনের মধ্যে কোনটি অধিক কষ্টদায়ক এবং কেন?
উ:- মৃত্যু ও ব্যসনের মধ্যে ব্যসন অধিকতর কষ্টদায়ক। কারণ ব্যসনাসক্তব্যক্তি ক্রমশ অধোগতি লাভ করে এবং ব্যসনমুক্তব্যক্তি মৃত্যুর পর স্বর্গলোক প্রাপ্তি হন-
“ব্যসনস্য চ মৃত্যোশ্চ ব্যসনং কষ্টমুচ্যতে।
ব্যসন্যধোঅধো ব্রজতি স্রর্যাত্যব্যসনী মৃতঃ।।”
৩১) মন্ত্রণাকালে কাদের দূরে রাখা হয়?
উ:- জড়, মূক, অন্ধ, বধির, অতিবৃদ্ধ, স্ত্রীলোক, ম্লেছে, ব্যাধিগ্রস্ত, বিকলাঙ্গ ব্যক্তি এবং মানবেতর প্রানীর উপস্থিতি মন্ত্রণাকালে বাঞ্ছনীয় নয়। তাই এদের দূরে রাখা হয়।
৩২) মনুসংহিতার রচনাকাল কত?এর বর্ণিত বিষয়গুলি উল্লেখ কর।
উ:- খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে খ্রীষ্টিয় দ্বিতীয় শতকের মধ্যে সংকলিত হয় মনুসংহিতা।
এর ১২ টি অধ্যায় যথাক্রমে – সৃষ্টিপ্রকরণ, ধর্মানুষ্ঠান, ধর্মসংস্কার, ব্রহ্মচর্য গার্হস্থাশ্রম, ভক্ষ্যাভক্ষ্য ও অশৌচ নির্ণয়, আশ্রম ধর্মানুশাসন, রাজধর্ম কথন, রাষ্ট্রনীতি, স্ত্রীপুরুষধর্ম ও বৈশ্যশূদ্রের কর্তব্য, সমাজনীতি, প্রায়শ্চিত্ত, মোক্ষধর্ম।
৩৩) জাঙ্গলদেশ কাকে বলে?
উ:- ” অল্লোদক তৃণো যস্তু প্রবাতঃ প্রচুরাত পঃ।
স জ্ঞেয়ো জাঙ্গালো দেশঃ।।”
অর্থাৎ অল্পজলযুক্ত, তৃণসমন্বিত, পরিমিত বায়ু বা বাতাস ও রোদযুক্ত দেশই হলো জঙ্গল দেশ।
৩৪) রাজা কিরূপ দেশে রাজধানী স্থাপন করবেন?
উ:- পরিমিত আলো – বায়ুযুক্ত, শস্য সমৃদ্ধ, ধার্মিক ও পণ্ডিতব্যক্তি অধ্যুষিত, জরাব্যধি বিবর্জিত দেশে যেখানে আনুগত্য বশীভূত প্রজাগণ অতিসহজে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, সেই দেশেই রাজা তাঁর রাজধানী স্থাপন করবেন।
৩৫) ব্রাহ্মণধ্রুব কী? এই শব্দের দ্বারা কাকে বোঝানো হয়েছে?
উ:- “আত্মানং ব্রাহ্মণং ব্রবীতীতি ব্রাহ্মণধ্রুবঃ। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জাতিতে ব্রাহ্মণ হলেও ধর্মীয় আচরণে ব্রাহ্মণ নন, সেই ব্যক্তিকে ব্রাহ্মণব্রুব বলা হয়।
৩৬) কিরকম দূত প্রশংসনীয়?
উ:- বিশুদ্ধ চরিত্র, প্রখর স্মৃতিশক্তি, দেশ-কাল-পাত্র বিষয়ে সম্যক জ্ঞানী, অনুগত, দগ্ধ, নির্ভীক, সুবক্তা, প্রত্যুকপন্নমতি দূতই প্রশংসনীয়।
৩৭) মনুসংহিতা অনুসারে ব্রাহ্মনিধি শব্দের তাৎপর্য লেখ?
উ:- শিক্ষা সমাপনান্তে গুরুগৃহ থেকে প্রত্যাবৃত্ত বেদ ব্রাহ্মণকে তাঁর গার্হস্থ্যাশ্রমে প্রবেশের পূর্বে রাজা যে ধন দান করেন তাকেই মনু-সংহিতায় ব্রাহ্মনিধি বলা হয়েছে।
এরূপ দানের একটি উদ্দেশ্য আছে। এই বেদ ব্রাহ্মণরাই যারা অধীতি, বোধ, আচরন এবং প্রচারণে তাদের জীবন ব্যয় করেন তার রাজ্যে বিদ্যা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটাবেন সেজন্য রাজা তাদের ধনাদি দান করে রাজ্যের সংস্কৃতির প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এই ব্রাহ্মণনিধি চোর অপহরণ করতে পারে না, শত্রুরা কেড়ে নিতে পারে না নিজেও তা নষ্ট হয় না, তাই এই নিধি অক্ষয়, অবিনাশী।
ব্রহ্মনিধি:- গুরুগৃহে শিক্ষা সমাপনান্তে গার্হস্থ্যাশ্রমে প্রত্যাবর্তনকারী রাজা ব্রাহ্মণকে যে ধন দেন তাকেই ব্রহ্মনিধি বলা হয়।
মনুসংহিতা সপ্তম অধ্যায় রাজধর্ম হতে অন্যান্য পোস্ট গুলি
- 1. মনুসংহিতা রাজধর্ম অনুসারে দন্ডের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য
- 2. মনুসংহিতা অনুসারে দন্ডের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য-2
- 3. মনুসংহিতা অনুসারে দন্ডের উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য
- 4. মনুসংহিতা অনুসারে দূত সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ বিবরণ
- 5. মনুসংহিতা অনুসারে মনুর মতে রাজার বিনয়ের গুরুত্ব
- 6. মনুসংহিতা অনুসারে মনুর মতে রাজার বিনয়ের গুরুত্ব-2
- 7. মনুসংহিতা অনুসারে রাজার মন্ত্রনা বিধি
- 8. মনুসংহিতা অনুসারে ব্যসনের বিভাগসমূহ প্রভাব ও পরিনাম আলোচনা কর
- 9. ব্যসন কি? মনু কয়প্রকার ব্যসনের উল্লেখ করেছেন?
- 10. মনুসংহিতা অনুসারে ষড়গুণ -এর প্রয়োগ নির্দেশ
- 11. রাজার প্রাত্যহিক কৃত্যগুলি কী কী
- 12. মনুসংহিতা অনুসারে রাজার উৎপত্তির ঐশ্বরিক মতবাদ
- 13. মনুসংহিতা অনুসারে মনুর মতে দূর্গ কয় প্রকার ও কি কি
- 14. মনুসংহিতা অনুসারে ব্যসন ও মৃত্যুর মধ্যে কোনটি ক্ষতিকর
- 15. মনুসংহিতা অনুসারে রাজার উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য