রামায়ণ হতে শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর

রামায়ণ হতে শর্ট প্রশ্ন এবং উত্তর সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস (RAMAYANA SHORT QUESTION AND ANSWER) দেওয়া হল । রামায়ণের সাতটি কান্ড কি কি ? রামায়নের রচয়িতা কে ?

সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস রামায়ণ শর্ট প্রশ্ন ও উত্তর

Table of Contents

  • ■ বর্তমানে প্রচলিত রামায়ণে ৭টি কাণ্ডে ৫০০টি অধ্যায় আছে।
  • ■ বর্তমানে প্রচলিত রামায়ণে ২৪,০০০ শ্লোক রয়েছে।
  • ■ রামায়ণ মহাকাব্য শ্রেণির রচনা। এটি Authentic Epic বা Epic of growth
  • ■ বর্তমানে রামায়ণের ৭টি কাণ্ড—১. আদিকাণ্ড বা বালকাও ২. অযোধ্যাকাণ্ড অরণ্যকাণ্ড ৪. কিষ্কিন্ধাকাণ্ড ৫. সুন্দরকাণ্ড ৬. লঙ্কা বা যুদ্ধকাণ্ড ৭. উত্তরকাণ্ড।
  • ■ রামায়ণে করুণরসের প্রাধান্য রয়েছে।উদাহরণ—১. সীতাহরণে রামচন্দ্রের বিলাপ। ২. বালিবধে তারার বিলাপ। ৩. রাবণববিভীষণ ও মন্দোদরীর বিলাপ। ৪. ইন্দ্রজিতবধে রাবণের বিলাপ। ৫. লক্ষ্মণের পতনে রামচন্দ্রে বিলাপ।
  • ■ বাল্মীকি আদিকবি। ধ্রুপদি সংস্কৃত সাহিত্যে প্রথম শ্লোকটি তাঁর রচনা বলেই মনে করা হয়।“মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতী সমাঃ। যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্।।”
  • ■ রামায়ণ মহাকাব্য প্রধানত অনুষ্টুপ্ ছন্দে লেখা।
  • ■ রামায়ণের আদিকাণ্ড বা বালকাণ্ড এবং উত্তরকাণ্ডকে প্রক্ষিপ্ত বলে মনে করা হয়।
  • ■ পাঠভেদানুসারে রামায়ণের পৃথিগুলিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা১. গৌড়ীয় বা বঙ্গীয় পাঠ। ২. দক্ষিণী পাঠ বা দক্ষিণ ভারতীয় পাঠ। ৩. পশ্চিমোত্তরীয়
  • ■ রামায়ণের যে-সব হাতে লেখা পুঁথি পাওয়া গেছে, তার সংখ্যা ২,০০০-এরও বেশি পাঠ।
  • ■ আর্য রামায়ণানুসারে রচিত কয়েকটি রামায়ণ ১. অদ্ভুতরামায়ণ ২. যোগবাশিষ্ঠরামায়ণ ৩. অধ্যাত্মরামায়ণ ৪. আনন্দরামায়ণ৫. তত্ত্বসংগ্রহরামায়ণ ৬. ভূশণ্ডীরামায়ণ ৭. মন্ত্ররামায়ণ।

রামায়ণ শর্ট প্রশ্ন এবং উত্তর

  • ■ রামায়ণের কাহিনি থেকে উপাদান নিয়ে রচিত সংস্কৃত নাটক— ১. ভাস–প্রতিমানাটক, অভিষেকনাটক ২. ভবভূতি— মহাবীরচরিত, উত্তররামচরিত৩. জয়দেব—প্রসনরাঘব ৪. মুরারি—অনর্ঘরাঘব ৫. রাজশেখর-বালরামায়ণ।
  • ■ রামায়ণ অবলম্বনে রচিত কাব্যচম্পুরামায়ণ।বিজয় গণির রামচরিত হেমচন্দ্রের সীতারাবণকথনক।
  • ■ জৈন রামায়ণ নামে প্রসিদ্ধ গ্রন্থটির নাম ত্রিষষ্ঠিশলাকাপুরুষ। এটি প্রাকৃতভাষায় হেমচন্দ্ৰরচনা করেন।
  • ■ বাল্মীকি রচিত রামায়ণের কয়েকটি প্রসিদ্ধ টীকা ও টীকাকার— ১. রামানুজ— রামানুজীয় টীকা ২. বিদ্যানাথ দীক্ষিত— রামায়ণদীপিকা ৩. মহেশ্বরতীর্থ—রামায়ণতত্ত্বদীপিকা ৪.গোবিন্দরাজ— রামায়ণভূষণ ৫. ঈশ্বরদীক্ষিত—বৃহবিবরণ।
  • ■ রামায়ণ বৈদভীরীতিতে রচিত।
  • ■ রামায়ণের প্রাচীনতম টীকা ‘রামায়ণকতক’।

১) রামায়ণ প্রকৃতপক্ষে কোন শ্রেনীর রচনা ?

রচনারীতি, চরিত্র-চিত্রন, প্রকৃতি বর্ণনা, মানবীয় রস প্রভৃতির পরিপ্রেক্ষিতে রামায়ণ প্রকৃতপক্ষে মহাকাব্য।

২) লৌকিক বা ধ্রুবদী সংস্কৃত সাহিত্যের প্রথম শ্লোক বা আদি কবিতাটি কি ?

বাল্মীকি রামায়ণের আদিকান্ডে “মা নিষাদ প্রতিষ্ঠান”-প্রভৃতি শ্লোকটিকে সংস্কৃত সাহিত্যের প্রথম শ্লোক বলা হয়। সম্পূর্ণ শ্লোকটি এরকম –

“মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগম: শাশ্বতী: সমা:।
যত ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধী: কামমোহিতম্।।”

(ওরে ব্যাধ, যেহেতু তুই ক্রোঞ্চদম্পতীর মধ্যে প্রেম নিবেদনে নিরত ক্রোঞ্চটিকে হত্যা করেছিস, সেজন্য কোনো কালেই তুই সংসারে শান্তি ও প্রতিষ্ঠা পাবিনা।)

৩) রামায়ণের পাঠভেদগুলি কী কী ?

বিশেষজ্ঞগন রামায়ণের তিনটি পাঠভেদের কথা বলেছেন-

  • i)গৌড়ীয় বা বঙ্গীয় পাঠ(কলিকাতা সংস্কৃত কলেজ ও প্যারিস সংস্করণ।
  • ii) দক্ষিণী বা দক্ষিণ ভারতীয় পাঠ(নির্ণয় সাগর প্রেস, মুম্বই সংস্করণ ।
  • iii) পঞ্চিম মোওরীয় পাঠ (দয়ানন্দ মহাবিদ্যালয়, লাহোর সংস্করণ।

৪) রামায়ণে প্রক্ষিপ্ত অংশ কোনগুলি ? সেগুলিকে প্রক্ষিপ্ত বলার কারণ কী ?

বিশেষজ্ঞদের মতে, রামায়ণের প্রথম (বাল)কান্ড ও সপ্তম কান্ড (উত্তর কান্ড) এই দুটিকে প্রক্ষিপ্ত কান্ড বলা হয়।

  • প্রথমত: দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ কান্ডের কাহিনীর মধ্যে যে সংলগ্নতা এবং ভাব ও রচনাশৈলীগত ঐক্য দেখা যায় তা প্রথম ও সপ্তম কান্ডে অনুপস্থিত ।
  • দ্বিতীয়ত: দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ কান্ডের অন্তর্গত কাহিনীকে রামচন্দ্রকে অবতার রূপে চিত্রিত করা হয়নি, একজন পরিপূর্ণ মানুষরূপে (নরচন্দ্রমা) দেখানো হয়েছে, কিন্তু প্রথম ও সপ্তম কান্ডে রামকে বিষ্ণুর অবতাররূপে দেখানো হয়েছে।

৫) বাল্মীকি স্বয়ং তাঁর রামায়ণকে কোন শ্রেনীর রচনারূপে উল্লেখ করেছেন ?

বাল্মীকি তাঁর রামায়ণকে “সংহিতা”, “আখ্যান”,”পুরাবৃত্ত”, “ইতিহাস” ও “কাব্য”-রূপে উল্লেখ করেছেন।

৬) মহাভারতে রাম-কাহিনী কি নামে পরিচিত ?

মহাভারতের শানতিপর্বে রামায়ণ কাহিনী “ভার্গবগীত” রূপে পরিচিত হয়েছে।

৭)রামায়ণ কথার অর্থ কি ? কার নির্দেশে বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেছেন ?

রাম-অয়ন (রামস্য অয়নম্) অর্থাৎ, রামের চরিত বা রাম সম্পর্কিত কাহিনীই রামায়ণ।
রামায়ণের বিবরন অনুসারে বাল্মীকি ব্রহ্মার নির্দেশানুসারে রামকথা অবলম্বনে রামায়ণ রচনা করেন।

৮) রামায়ণের কয়টি কান্ড আছে?

বাল্মীকির রামায়ণে সাতটি কান্ড আছে।

রামায়ণের সাতটি কান্ড কি কি ?

রামায়নের ৭ কান্ডের নাম গুলি হল যথাক্রমে – আদি বালকান্ড, অযোধ্যাকান্ড, অরন্যকান্ড, কিষ্কিন্ধ্যা কান্ড, সুন্দরকান্ড, যুদ্ধ, যুদ্ধকান্ড এবং উত্তরকান্ড।

৯) রামায়ণের শ্লোকের উৎপত্তি সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ?

উ:=> বাল্মীকির বিবরন থেকে জানা যায় যে, বানসিদ্ধ ক্রোঞ্চের মৃত্যুতে ক্রোঞ্চীর বিরহদু:খে আর্দ্রচিত্ত কবির কন্ঠ থেকে যে ছন্দোবদ্ধ বানী নির্গত হয়েছিল- সেই বানীই শ্লোক। শোক বা দু:খ থেকে উৎপন্ন বলেই এর নাম শ্লোক। বাল্মীকির নিজের কথায় -“শোকার্তস্য প্রবৃত্তো মে শ্লোকো ভবতু নান্যথা”।(আদিকান্ড-২.১৮)।

১০) কে কোন কাব্য লিখে আদিকাব্য নামে খ্যাত হন ?

উ:=> বাল্মীকি “রামায়ণ” নামক কাব্য লিখে “আদিকবি” নামে খ্যাত হন। বৈদিক সাহিত্যের অবসানে যে লৌকিক সংস্কৃত সাহিত্যের যুগ শুরু হয়, সেই কালের লৌকিক সংস্কৃত সাহিত্যের আদি বা প্রথম মহাকাব্য হল রামায়। তার রচয়িতা বাল্মীকি সেই কারনে “আদিকবি” নামে খ্যাত।

১১) বাল্মীকির রামায়ণে কত অধ্যায় ও কত শ্লোক আছে ? বাল্মীকি রামায়ণে প্রধানভাবে কোন বংশের রাজার কাহিনী বিবৃত হয়েছে ?

বাল্মীকির রামায়ণে পাঁচশত অধ্যায় ও চব্বিশ হাজার শ্লোক আছে। এজন্য রামায়ণ “চতুর্বিংশতি সাহস্রী সংহিতা” নামেও পরিচিত। বাল্মীকি প্রধানত ইক্ষ্বাকু বংশীয় অথবা সূর্যবংশের রাজার কাহিনী বিবৃত হয়েছে।

১২) রামায়ণ কোন ভাষায় রচিত?

বাল্মীকি রামায়ণ লৌকিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত। রামায়ণের বিপুল জনপ্রিয়তার পরিপ্রেক্ষিতে একথা মনে করা যায় যে, এই গ্রন্থ জনসাধারনের বোধগম্য ভাষায় লেখা হয়েছিল। তখন জনসাধারনের কথ্য ভাষা নিশ্চয়ই সংস্কৃত ভাষা ছিল।

১৩) রামায়ণের রচনাকাল উল্লেখ কর।


রামায়ণের নিশ্চিত রচনাকাল নির্ণয় প্রায় অসম্ভব, আনুমানিক রচনাকাল নির্ণয় করা যেতে পারে। কারন, এই রচনাকাল নির্ধারন প্রসঙ্গে মূল ও প্রক্ষিপ্ত অংশের মধ্যে কালের ব্যবধান ও একটি প্রক্ষিপ্ত অংশ থেকে আরেকটি প্রক্ষিপ্ত অংশের কালগত ব্যবধানের প্রশ্ন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তবু বলা যায় যে, রামায়ণের রচনাকাল আনুমানিক খ্রি: পূ: দ্বিতীয় শতক থেকে খ্রি: দ্বিতীয় শতক পর্যন্ত।

১৪) ইউরোপীয় পন্ডিত Lassen -এর মতে রামায়ণের গঠন কয়টি স্তরে বিভক্ত ?

পন্ডিত প্রবর lassen রামায়ণের গঠনকে চারটি স্তরে ভাগ করেছেন।

  • প্রথম স্তর – হিমালয়ের দিকে রামচন্দ্রের নির্বাসন এবং লক্ষন ও সীতা কর্তৃক তাঁর অনুগমন। প্রথমে এই অংশমাত্রই ছিল।
  • দ্বিতীয় স্তরে – নির্বাসনস্থান হল গোদাবরী নদীর তীরস্থ স্থান – যেখানে মুনিঋষিদের আশ্রমকে রামচন্দ্র রাক্ষসদের উপদ্রব থেকে রক্ষা করেন।
  • তৃতীয় স্তর- রামচন্দ্র কর্তৃক দাক্ষিনাত্যের অধিবাসীদের পরাজিত করার প্রচেষ্টা ।
  • চতুর্থ স্তর– লংকার রাজা রাবনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা।

১৫) রামায়ণ কি রূপক বা প্রতীক কাব্য ? যদি তা হয়, তাহলে সেই প্রতীকের অর্থ ব্যাখ্যা কর।

উ:=> Lassen, Weler প্রমুখ পাশ্চাত্য পন্ডিতের মতে, রামায়ণ রূপক বা প্রতীককাব্য রূপেও গন্য।
রাবণবধ ও সীতা উদ্ধার কাহিনীতে দক্ষিণ ভারত ও সিংহলে কৃষিভিত্তিক আর্যসভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রসার প্রতিকায়িত। পশুপালক অনার্ত জাতিগুলির মধ্যে কৃষির প্রচলন ও উন্নত জীবনচর্যার প্রবর্তন এবং আর্য-অনার্য সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব রাম-সীতা ও রাবনের কাহিনীতে রূপকের মাধ্যমে পরিবেশিত হয়েছে। রবীনদ্রনাথের মতে, রাম-কর্ষনজীবী সভ্যতার, কৃষিজীবী মানুষের প্রতিনিধি রাবণ হল আকর্ষনজীবি সভ্যতার, পরশ্রমজীবী শোষনজীবী সভ্যতার প্রতিনিধি।

১৬) রামায়ণের জনপ্রিয়তা এবং স্থায়িত্ব সম্পর্কে বাল্মীকির শ্লোকটি উল্লেখ কর।

রামকথার অসাধারন জনপ্রিয়তা উল্লেখ করে বাল্মীকি বলেছেন-

“যাবৎ স্থাস্যন্তি গিরয়: সরিতশ্চ মহীতলে।
তাবদ্রামায়ণী কথা লোকেষু প্রচরিষ্যতি।।”

যতদিন পৃথিবীতে পর্বত ও নদী সমূহ থাকবে, ততদিন লোকসমাজে রামকথা প্রচলিত থাকবে।

১৭) অধ্যাপক কীথ্ রামায়ণকে কোন শ্রেনীর রচনারূপে উল্লেখ করেছেন ?

উ:=> অধ্যাপক কীথের মতে, রামায়ণ মূলগতভাবে একটি প্রকৃতি কেন্দ্রিক কাহিনী । তিনি মনে করেন রামকথার মহান শিল্পী দুটি পৃথক কাহিনীকে অনবদ্য কুশলতায় গ্রথিত করেছেন। তার মধ্যে একটি হল অযোধ্যার প্রাসাদ – রাজনীতি এবং অন্যটি হল সীতার উপর আধিপত্য ও অধিকারকে কেন্দ্র করে রাম রাবণের যুদ্ধ।

১৮) রামায়নের আদর্শে রচিত রামায়ন নামধারী গ্রন্থগুলির নাম এবং তাদের রচয়িতা কে ?

রামায়ণের বিপুল জনপ্রিয়তার কারনে পরবর্তীকালে রামায়ণ নামধারী সাতটি গ্রন্থ রচিত হয়েছিল।
তার তালিকা:

গ্রন্থরচয়িতা
অদ্ভুদ রামায়ণ বাল্মীকি(কিংবদন্তী অনুসারে)
যৌগবাসিষ্ঠ রামায়ণ
বা মহারামায়ণ
বাল্মীকি(ঐতিহ্যানুসারে)
অধ্যাত্মরামায়ণ বৈষ্ণবাচার্য
রামানন্দ(আনুমানিক)
আনন্দ রামায়ণ অজ্ঞাত
তত্ত্বসংগ্রহ রামায়ণ বা রামায়ণ তত্ত্বদর্পন ব্রহ্মানন্দকবি
ভূশুন্ডী রামায়ণ বা মহারামায়ণঅজ্ঞাত
মন্ত্র রামায়ণনীলকন্ঠ
রামায়ন নামধারী গ্রন্থগুলি

১৯) অদ্ভুত রামায়নের রচয়িতা কে ও সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু আলোচনা কর।

কিংবদন্তী অনুযায়ী বাল্মীকি এই গ্রন্থটির রচয়িতা। সমগ্র গ্রন্থটি ২৭টি কান্ডে বিভক্ত। এর কাহিনী অনুসারে সহস্রস্কন্দ বিশিষ্ট মহাবলী রাবণ রামের কাছে অজেয় , তাই সীতা ভয়ংকরী কালীর রূপ ধারন করে রাবণকে নিহত করেন। এইভাবে রামায়ণের প্রধান প্রধান কাহিনী অদ্ভুদ ও বিচিত্রভাবে, অলৌকিক ও অবিশ্বাস্যভাবে পরিবেশিত হয়েছে বলে গ্রন্থটি অদ্ভুদ রামায়ণ নামে পরিচিত।

২০) যোগবাসিষ্ট রামায়ণ এর পরিচয় দাও।

পরবর্তীকালের রামাণ নামধারী গ্রন্থগুলির মধ্যে এটি আকারে সর্ববৃহৎ। এই গ্রন্থটিও বাল্মীকির নামে প্রচলিত। গ্রন্থটি ছয়টি প্রকরনে বিভক্ত । এতে মোট ২৭,৫৮৭টি শ্লোক আছে। এই গ্রন্থের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল বশিষ্ট কর্তৃক রামচন্দ্রকে অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের তত্ত্বের উপদেশ। উল্লেখ্য, সাহিত্যরসের মাধ্যমে এখানে দার্শনিক তত্ত্ব পরিবেশিতহয়েছে। গ্রন্থটি মহা রামায়ণ, আর্য রামায়ণ, জ্ঞানবসিষ্ট অথবা বাসিষ্ট বামায়ণ নামেও পরিচিত।

২১) অধ্যাত্ম রামায়ণের পরিচয় দাও।

এই গ্রন্থের রচয়িতা বা রচনাকালে সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। অনেকের অনুমান প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব- আচার্য রামানন্দ এই গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থ পাঠে জানা যায় যে, রামায়ণের সমগ্র কাহিনীর মধ্য দিয়ে আধ্যাত্মিক তত্ত্ব পরিবেশনই গ্রন্থকারের মূল উদ্দেশ্য। বিষ্ণুর অবতাররূপে রামচন্দ্রের মাহাত্ম্য এখানে কীর্তিত হয়েছে। আগম শাস্ত্রের ভঙ্গীতে উমা ও শিবের কথোপকথনের মাধ্যমে এখানে সমগ্র কাহিনী বিবৃত হয়েছে।

২২) আনন্দ রামায়ণ-এর বিষয়বস্তুর বিবরন দাও।

এই গ্রন্থের রচয়িতা অজ্ঞাত। এখানে শিব-দুর্গার কথোপকথনের মাধ্যমে কাহিনীটি বিবৃত হয়েছে। গ্রন্থটিতে নয়টি কান্ডে মোট ১২০০০ শ্লোক সন্নিবেশিত হয়েছে। ১৫-১৬শ খৃষ্টাব্দে গ্রন্থটি রচিত হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। এর কান্ডগুলি সার, যাত্রা, যোগবিলাস, জন্ম, বিবাহ, রাজ্য, মনোহর ও পূর্ণ নামে পরিচিত। রামায়ণের মূল কাহিনীর সঙ্গে এখানে রাম-সীতা অবতারের আধ্যাত্মিক তত্ত্ব ও লৌকিক ভক্তিরসের মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে।

২৩) তত্ত্ব সংগ্রহ রামায়নের রচয়িতা কে ? এর বিষয়বস্তুর পরিচয় দাও।

ব্রহ্মানন্দ কবি সপ্তদশ খৃষ্টাব্দে এই গ্রন্থ রচনা করেন। এর রচিত রামায়ণ ভিত্তিক আরেকটি গ্রন্থ হল রামায়ণ তত্ত্বদর্পন।
এই দুটি গ্রন্থে রামচন্দ্রের ভাগবত অবতারবাদ এবং ভক্তিনির্ভর উপাসনা পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে।

২৪) মন্ত্র রামায়নের রচয়িতা কে ? এর বিষয়বস্তু উল্লেখ কর।

মহাভারতের প্রসিদ্ধ টীকাকার নীলকন্ঠ (১৬৫০-১৭৫০খৃ:) এই গ্রন্থ রচনা করেছেন। এর বৈশিষ্ট্য হল গ্রন্থকার এখানে ঋগবেদের মন্ত্রও রামায়ণের শ্লোক পাশাপাশি উপস্থনা করে স্বরচিত টীকার মাধ্যমে উভয়ের অন্তর্নিহিত তত্ত্ব প্রতিপাদন করেছেন।

২৫) “আদি রামায়ণ” নামে কোন গ্রন্থটি পরিচিত ? এর বিষয়বস্তু উল্লেখ কর।

সংস্কৃতে ভুশুন্ডী রামায়ণ নামে পরিচিত তারই অপর নাম আদি রামায়ণ বা মহা রামায়ণ। এর রচয়িতা ও রচনাকাল জানা যায়না।
এখানে ভাগবত পুরানের কৃষ্নচরিতের আদর্শে রামায়ণের রামচরিত্রটিকে আদ্যন্ত পরিমার্জিত করে উপস্থাপিত করা হয়েছে।

২৬) অশ্বঘোষের রচনায় রাম কথার প্রভাব আলোচনা কর।

একথা সত্য যে অশ্বঘোষের সরাসরি রামকথা অবলম্বনে কোন গ্রন্থ রচনা করেননি, কিন্তু তাঁর “বুদ্ধচরিতম্” মহাকাব্যে অন্তত তিনটি স্থানে রামের প্রসঙ্গ উথ্থাপন করেছেন – প্রথমে, বনবাসের প্রথম পর্যায়ে সারথি সুমিসের-রামায়ণে সুমন্দ্রের মনোবেদনার প্রকাশে (৬.৩৬) দ্বিতীয়বার অগস্ত্যের সঙ্গে সাক্ষাৎকার (৯.৮) শেষে বনবাস থেকে রামের অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে(৯.৫৯) ।

২৭) বাল্মীকির রামায়ণ অন্য কি কি নামে পরিচিত ?

বাল্মীকির উক্তি অনুসারে রামায়ণ রাম-চরিত, সীতাচরিত, রঘুবীর চরিত, রঘুবংশচরিত ও পৌলস্ত্যবধ প্রভৃতি বিভিন্ন নামে পরিচিত।

২৮) ভারতীয় সমাজে রামায়ণের প্রভাব নিরূপন কর।

ভারতবাসীর কাছে রামায়ণ শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো অপরিহার্য এবং পরম আদরের সামগ্রী । রামের পিতৃভক্তি ও আদর্শনিষ্ঠা, সীতার পতিব্রত্য, ভরত ও লক্ষনের ভ্রাতৃভক্তি, হনুমানের প্রভুভক্তি -ভারতীয় সমাজে চিরকাল আদর্শস্বরূপ। রামরাজত্বের স্বপ্নে ভারতবাসী বিভোর। বস্তুত ভারতীয় সমাজজীবনের সর্বস্তরে এর সর্বাতিশয়ী প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

২৯) রামায়ণ প্রভাবিত বাংলা সাহিত্যের কয়েকটি উল্লেখ গ্রন্থ ও তাদের রচয়িতার নাম কর।

উ:=> রামকথার ঊর্বর ধারা বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যকে ও সমৃদ্ধ করেছে। রামায়ণ কাহিনী অবলম্বনে বাংলায় রচিত হয়েছে কৃতিবাস ওঝার রামায়ণ পাঁচালী, মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ মহাকাব্য, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সীতা বনবাস(গদ্যরচনা), দীনেশচন্দ্ সেনের রামায়নী কথা (সমালোচনা গ্রন্থ), রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য, বাল্মীকি প্রতিভা ও কালমৃগয়া, বুদ্ধদেব বসুর অনবদ্য কাব্যনাট্য তপস্বী ও তরঙ্গীনি, ড: সুকুমার সেনের রামকথার প্রাক্-ইতিহাস, নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ীর “বাল্মীকির রাম ও রামায়ণ” (সমালোচনা গ্রন্থ) ও আরও অনেক গ্রন্থ।

৩০) রামায়ণের রাম-রাবণের সংঘর্ষের কোন বৈদিক কাহিনীর ছায়া লক্ষ্য করা যায় ?

উ:=> য্যাকোবি প্রমুখ পন্ডিতদের মতে, বৈদিক ইন্দ্র ও বৃত্রের সংঘর্ষ কাহিনীই রামায়ণের রাম- রাবনের যুদ্ধ কাহিনীতে পরিবর্তিত হয়েছে। রাম হলেন জলের দেবতা ইন্দ্রের পরবর্তী রূপায়ন এবং সীতা হলেন কৃষি পদ্ধতি বা কর্ষিত ক্ষেত্রের প্রতিক, ব্যক্তি নন। রাম ও সীতার ঘনিষ্ট সম্পর্ক প্রকৃতপক্ষে জলের সঙ্গে কৃষির অপরিহার্য যোগাযোগের ইঙ্গিতবহ।

রামায়ণ প্রভাবিত সংস্কৃত সাহিত্য

গ্রন্থ কিজাতীয় রচনা গ্রন্থকার
প্রতিমানাটকম্ নাটক    ভাস
অভিষেকনাটকম্নাটক  ভাস
রঘুবংশম্  মহাকাব্যকালিদাস
রাবণবধ বা ভট্টিকাব্যমহাকাব্যভর্তৃহরি
জানকীহরণম্মহাকাব্য কুমারদাস
উত্তররামচরিতম্ নাটক ভবভূতি
মহাবীরচরিতম্ নাটক ভবভূতি
রামচরিতম্ কাব্যসন্ধ্যাকরনন্দী
প্রসন্নরাঘবম্নাটক জয়দেব
রামায়ণ প্রভাবিত সংস্কৃত সাহিত্য
রামায়ণের সাতটি কান্ড কি কি ?

রামায়নের সাতটি কান্ডের নাম হল যথাক্রমে – আদিকান্ড, অযোধ্যাকান্ড, অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যা কান্ড, সুন্দরকান্ড, যুদ্ধকান্ড এবং উত্তরকান্ড।

রামায়নের রচয়িতা কে

রামায়নের রচয়িতা হলেন বাল্মীকি ।

পরীক্ষা প্রস্তুতি-রামায়ণ MCQ TEST


সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসের অন্যান্য ছোট প্রশ্ন ও উত্তর গুলি নিচে দেখুন

আরো পড়ুন- SANSKRIT SLST MODEL QUESTION PAPER

VISIT OUR FACEBOOK PAGE

Comments