মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক বাখ্যা-11

মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক ব্যাখ্যা। শ্লোকটি হল – “তস‍্যার্থে সর্বভূতানাং গোপ্তারং ধর্মমাত্মজম্।
ব্রহ্মতেজোময়ং দণ্ডমসৃজৎ পূর্বমীশ্বরঃ।।”

মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক বাখ্যা-11

“তস‍্যার্থে সর্বভূতানাং গোপ্তারং ধর্মমাত্মজম্।
ব্রহ্মতেজোময়ং দণ্ডমসৃজৎ পূর্বমীশ্বরঃ।।”

অনুবাদ

তার (রাজার) উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পূর্বে (রাজার সৃষ্টির পূর্বে )সমস্ত জীবের রক্ষক, ধর্মস্বরূপ পুত্র, ব্রহ্মতেজোময় দন্ড ঈশ্বর সৃষ্টি করেছিলেন।

উৎস

আলোচ‍্য শ্লোকটি সুপ্রসিদ্ধ  ধর্মশাস্ত্রকার মহর্ষি মনু প্রণীত মনুসংহিতার রাজধর্ম নামক সপ্তম অধ্যায়ের অন্তর্গত।

প্রসঙ্গ

দণ্ডের উৎপত্তি এবং মাহাত্ম‍্যের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে মহর্ষি মনু আলোচ্য শ্লোকের অবতারনা করেছেন।

ব্যাখ্যা

      রাজা রাজ্য শাসনের অন্যতম উপাদান হলো দন্ড বা রাজদণ্ড। দেবতাদের সারভূত অংশ থেকে রাজাকে সৃষ্টি করবার পূর্বে পরমেশ্বর দন্ডের সৃষ্টি করেছেন। প্রজাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার জন্য রাজার শাসন কার্যের সুবিধার্থে দন্ডের সৃষ্টি করা হয়েছে। বস্তুতঃ এই দণ্ডই প্রকৃত শাসক, রাজা দন্ডের প্রতিনিধি মাত্র।  দন্ড না থাকলে প্রজারা  রাজার আনুগত্য স্বীকার করত না, প্রতিপদে রাজার আদেশ অমান্য করত। সে কারণেই রাজার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করার জন্য রাজার সৃষ্টির পূর্বেই পরমেশ্বরের দ্বারা দণ্ড সৃষ্টি হয়েছে।  তাই মহাভারতের শান্তি পর্বে বলা হয়েছে-

“দন্ডেন নীয়তে চেদং দন্ডং নয়তি বা পুনঃ।
দন্ডনীতিরিতি খ‍্যাতা ত্রীল্লোঁকানভিবর্ততে।”

কয়েকটি বিশেষণের দ্বারা দন্ডের অসীম ক্ষমতা এবং প্রভাবের কথা উল্লেখিত হয়েছে।  এই দন্ড সমস্ত প্রাণীর রক্ষক। দন্ড প্রজাপুঞ্জকে সমস্ত বিপদ থেকে যেমন রক্ষা করে তেমনি দন্ডের ভয়ে কোন প্রজা স্বধর্ম থেকে বিচ্যুত হয় না। এই দন্ড ধর্মস্বরূপ। দন্ডের মাহাত্ম‍্যে প্রাণী বর্গ নিজ নিজ ধর্মে প্রবৃত্ত থাকে, বিধাতার দ্বারা সৃষ্ট বলে এই দন্ড পরমেশ্বরের  সন্তান তুল্য এবং সমস্ত তেজের আকর।  দণ্ডকে যেহেতু প্রজা কল্যাণের জন্য ঈশ্বরেই সৃষ্টি করেছেন, তাই দন্ডের সর্বাতিশায়ী প্রভাবের কথা বিবেচনা করে প্রত্যেক প্রাণীর এই দন্ডনীতি যথাযথ মান্য করে নিজ নিজ কর্তব‍্যে অবিচল থাকা উচিত।

আলোচ‍্য শ্লোকটিতে অনুষ্টুপ্ ছন্দ পরিলক্ষিত হয়েছে এই ছন্দের লক্ষণ হল-

“পঞ্চমং লঘুসর্বত্র সপ্তমং দ্বিচতুর্থয়োঃ।
গুরুষষ্ঠঞ্চ পাদানাং শেষেস্বনিয়মো মতঃ।।”

মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর

Comments