তর্কসংগ্রহ হতে স্মৃতি ও অনুভবের মধ্যে পার্থক্য লিখ ।
স্মৃতি ও অনুভবের মধ্যে পার্থক্য – তর্কসংগ্রহ
উ:- যে গুণটি সকল প্রকার ব্যবহারের কারণ হয় তাকেই বুদ্ধি বা জ্ঞান বলে-
‘সর্বব্যবহারহেতুর্গুণো বুদ্ধির্জ্ঞানম্।’
আচার্য অন্নংভট্ট জ্ঞান এর প্রকারভেদ প্রসঙ্গে বলেছেন-
” সা দ্বিবিধাস্মৃতিরনুভবশ্চ।”
অর্থাৎ জ্ঞান দ্বিবিধ- স্মৃতি ও অনুভব। স্মৃতি ও অনুভব জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হলেও এদের মধ্যে বেশকিছু বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
যেমন-
স্মৃতি ও অনুভবের মধ্যে পার্থক্য
i) অন্নংভট্ট তর্কসংগ্রহ গ্রন্থে স্মৃতির লক্ষণ প্রসঙ্গে বলেছেন- “সংস্কারমাত্রজন্যং জ্ঞানং স্মৃতিঃ”। অর্থাৎ যে জ্ঞান কেবল সংস্কারের দারাই উৎপন্ন হয় তাকে স্মৃতি বলে। এখানে সংস্কার বলতে ভাবনাকে বোঝায়।
অপরদিকে আচার্য অন্নংভট্ট অনুভবের লক্ষণ প্রসঙ্গে বলেছেন- “স্মৃতিভিন্নজ্ঞানম্ অনুভব।” অর্থাৎ যে জ্ঞানটি স্মৃতি হতে ভিন্ন প্রকারের তাকে অনুভব হলে। সুতরাং প্রত্যক্ষ অনুমান উপমান ও শব্দ প্রমাণের দ্বারা উৎপন্ন জ্ঞানকেই অনুভব বলে।
ii) অনুভব দুই প্রকারের -যথার্থ অনুভব ও অযথার্থ অনুভব।
অপরদিকে, স্মৃতির কোনো প্রকারভেদ লক্ষ্য করা যায় না।
iii) প্রতিটি জ্ঞান প্রথমক্ষণে উৎপন্ন হয়, দ্বিতীয়ক্ষণে উপস্থিত থাকে, তৃতীয়ক্ষণে বিনষ্ট হয়। তাই অনুভব নামক জ্ঞানও দ্বিতীয়ক্ষণে নিজ আশ্রয়ে আত্মাতে সংস্কার উৎপন্ন করে। তৃতীয় ক্ষণে বিনষ্ট হয়। কিন্তু এই সংস্কার পরবর্তীকালে যে জ্ঞান উৎপন্ন করে, তাকে স্মৃতি বলে।
iv) অনুভব নামক জ্ঞান সংস্কার উৎপন্ন করে এবং সংস্কারের দ্বারা স্মৃতি উৎপন্ন হয়, তাই স্মৃতি অনুভবের প্রভেদ হল উৎপাদ্য উৎপাদক। এখানে অনুভব হল স্মৃতির উৎপাদক এবং স্মৃতি হল উৎপাদ্য।
v) স্মৃতিতে বিশেষ্য, বিশেষণ ও উভয়ের সম্বন্ধ বিষয় রূপে প্রতিভাত হয়। অনুভবের বিষয়টি স্মৃতির বিষয় হয়, অনুভবের বিষয় নয়।
vi) অনুভব নামক জ্ঞান সংস্কারের উৎপাদক হলেও উপেক্ষাত্ম জ্ঞান ও নির্বিকল্পক জ্ঞান কোনো সংস্কার উৎপাদন করে না। এই কারণে এই দুটি জ্ঞান স্মৃতির প্রতি কারণ হয় না। কিন্তু অনুভবের ক্ষেত্রে এদের কারণতা রয়েছে।
vii) দেবদত্তকে প্রত্যক্ষ করলে ঐ প্রত্যক্ষ অনুভবকে ‘অয়ং দেবদত্তঃ’ এই ভাবে প্রকাশ করা হয়।
অপরদিকে এই অনুভব সংস্কারের দ্বারা স্মৃতি উৎপাদন করলে ঐ স্মৃতিতে ‘সঃ দেবদত্তঃ ‘ এইভাবে স্বীকার করা হয়। এখানে স্পষ্টই পরিলক্ষিত হয় যে, অনুভবের বিষয় ও স্মৃতির বিষয় সমান নয়।
viii) প্রত্যক্ষ অনুমতি উপমিতি ও শব্দবোধ অনুভবের মানস প্রত্যক্ষ হয়। তখন ‘অনুভবামি’ এরূপ তার প্রকাশ হয়। সুতরাং প্রত্যক্ষ মানসপ্রত্যক্ষকে অনুভবত্ব জাতি থাকে। কিন্তু স্মৃতিতে তা থাকে না।