শকুন্তলাকে দুর্বাসা কেন অভিশাপ দিয়েছিলেন? দুর্বাসার অভিশাপের বক্তব্য কী ছিল? দুর্বাসার অভিশাপের যুক্তিকতা বিচার কর।/দুর্বাসার অভিশাপের নাটকীয় তাৎপর্য বর্ণনা কর।
শকুন্তলাকে দুর্বাসা কেন অভিশাপ দিয়েছিলেন? দুর্বাসার অভিশাপের বক্তব্য কী ছিল? দুর্বাসার অভিশাপের যুক্তিকতা বিচার কর।/ দুর্বাসার অভিশাপের নাটকীয় তাৎপর্য বর্ণনা কর
শকুন্তলাকে দুর্বাসা কেন অভিশাপ দিয়েছিলেন?
সামাজিক নিয়ম অনুসারে অপরাধীর শাস্তি অবশ্যই প্রাপ্য। কর্তব্যহীনতা এবং গুরুজনকে অসম্মান করা দন্ডনীয় অপরাধ। শকুন্তলার উপর অতিথি সৎকারের ভার অর্পণ করে মহর্ষি কণ্ব সোমতীর্থে গিয়েছিলেন। সেই সময় শকুন্তলা দুটি অপরাধ করেছেন।
- প্রথমটি হল- গুরুজনদের অনুমতি ছাড়াই রাজা দুষ্যন্তের সঙ্গে গান্ধর্ব্য বিধি মতে বিবাহ
- দ্বিতীয়টি হলো মহর্ষি দুর্বাসা আশ্রমে এসে বারবার আগমনবার্তা জানালেও শকুন্তলার কানে সেই বার্তা পৌছায়নি। ফলে অতিথির প্রতি যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করতে তিনি ব্যর্থ হন। এই কারণে সুলভ কোপ মহর্ষি দুর্বাসা শকুন্তলা’ কে অভিশাপ দিয়েছিলেন।
দুর্বাসার অভিশাপ
ঋষি দুর্বাসা শকুন্তলা’ কে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে-
” আ! অতিথিপরিভাবিনি-
বিচিন্তয়ন্তী যমনন্যমানসা তপোধনং ন বেৎসি মামুপস্থিতম্।
স্মরিষ্যতি ত্বাং ন স বোধিতোঅপি সন্ কথাং প্রমত্তঃ প্রথমং কৃতামিব ।।”
অর্থাৎ ওরে অতিথির অপমানকারী নিয়ে চিন্তায় মগ্ন থেকে তুই আমার মত তপসিয়া আগমন জানতে পারলি না, কেউ যদি তাঁকে স্মরণ করিয়েও দেয়, তাহলেও সে তোকে চিনতে পারবে না। একজন প্রমত্ত ব্যাক্তি যেমন তার প্রথম উচ্চারিত কথাটি ভুলে যায়, সেইরূপই সে তোকে ভুলে যাবে।
দুর্বাসার অভিশাপের উপযোগিতা:-
কবিকর কালিদাস -এর ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ নাটকে দুর্বাসার অভিশাপ বৃত্তান্তটি একটি অভিনব নাটকীয় সংযোজন। ‘মহাভারত’- এ বর্ণিত ‘দুষ্যন্তশকুন্তলা’ উপখ্যানে ঋষি দুর্বাসার অভিশাপের কোনো উল্লেখ নেই। মহাকবি কালিদাস সম্পূর্ণ নিজ কল্পনায় অভিশাপ বৃত্তান্তটি নাটকে উপস্থাপিত করেছেন। তিনি নিজ প্রতিভা বলে মহাভারতের নীরস কারিনীকে গ্রহণ করে প্রাণ সংযোজনের দ্বারা ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ নাটকটি একটি সাধারন উপন্যাসে পরিণত হত। মহাভারতের রাজা দুষ্যন্ত একজন কলঙ্কিত রাজা। কোনো শ্রেষ্ঠ নাটকের নায়ক কলঙ্কযুক্ত হতে পারে না। এই বিষয়ের উপরে দৃষ্টি রেখেই কবিকূল চূড়ামণি কালিদাস অভিশাপ বৃত্তান্তের অবতারণা করে নায়ক চরিত্রটিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। এছাড়াও এই অভিনব সংযোজনের পিছনে নিম্নলিখিত একাধিক তাৎপর্য বর্তমান বা বিদ্যমান।
- প্রথমত, প্রেম সত্যই পবিত্র বস্তু, কিন্তু তা কখনোই আত্মকেন্দ্রিক হতে পারে না। আবার যে প্রেম সামাজিক রীতিনীতির বিরোধী হয়, তা কখনোই পবিত্র প্রেম হতে পারে না। তারই ফলস্বরূপ শকুন্তলার উপর বর্ষিত হয়েছে ঋষি দুর্বাসার বজ্রকঠোর অভিশাপ।
- দ্বিতীয়ত, মহাভারতের রাজা দুষ্যন্ত সেচ্ছায় শকুন্তলাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু কালিদাসের নাটকে দুর্বাসার অভিশাপের ফলেই রাজার স্মৃতিভ্রষ্ট হয়। তাই পাঠকবর্গের কাছে শকুন্তলা প্রত্যাখ্যানের পরেও দুষ্যন্ত চরিত্রের মহিমা ক্ষুন্ন হয়নি।
- তৃতীয়ত, অভিশাপ বৃত্তান্তটি না থাকলে নাটকটি চতুর্থ অঙ্কেই শেষ হয়ে যেত- সপ্তম অঙ্ক পর্যন্ত গড়াত না।
- চতুর্থত, অভিশাপ বৃত্তান্ত না থাকলেও অঙ্গুরীয় বিষয়টির এত গুরুত্ব থাকতো না।
- পঞ্চমত, কালিদাস অভিশাপের মধ্য দিয়ে দুষ্যন্ত শকুন্তলার বাহ্য রূপ লাবণ্যের দেহজ ও কামজ প্রেমকে স্বর্গীয় প্রেমে পরিণত করেছেন।
- ষষ্ঠত, প্রথম দর্শনেই শকুন্তলা তাঁর দেহ ও মন দুষ্যন্তকে সমর্পন করেছেন। আর এইরূপ আচরণ নাটকের নায়িকার পক্ষে বেমানান। তাই নায়িকা আত্মমর্যাদা ও তেজস্বিতা প্রকাশের জন্য দুর্বাসার অভিশাপের প্রয়োজন ছিল। অভিশাপের যথার্থতা সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বলেছেন – ” শকুন্তলার কাছে যখন আতিথ্য ধর্ম কিছুই নহে, দুষ্যন্তই সমস্ত তখন শকুন্তলার সে প্রেমে আর কল্যাণ রহিল না।” অর্থাৎ অভিশাপ শকুন্তলার প্রাপ্যই ছিল।
দুর্বাসার অভিশাপের পর্যালোচনা
সুতরাং সবকিছু পর্যালোচনা করে বলা যায় অভিশাপের ফলেই নাটকটি সারাবিশ্বে লোকপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাই ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্‘ নাটকে অভিশাপ বৃত্তান্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থক ও প্রয়োজনীয়।
অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটক হতে অন্যান্য পোস্টগুলি
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ প্রথম অঙ্ক বর্ণনা
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্: চতুর্থ অঙ্কের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকে প্রকৃতির ভূমিকা আলোচনা কর
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকের চতুর্থ অঙ্ক সর্বশেষ্ঠ কেন?
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্: বিদূষকের চরিত্র
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকে দুটি তপোবনের তুলনামূলক আলোচনা
- শকুন্তলাকে দুর্বাসা কেন অভিশাপ দিয়েছিলেন? দুর্বাসার অভিশাপের বক্তব্য ও নাটকীয় তাৎপর্য
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটক অবলম্বনে দুষ্যন্তের চরিত্রটি বর্ণনা
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকের বিষয়বস্তু ও কাহিনী | কালিদাসের অভিজ্ঞান শকুন্তলম pdf
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটক হতে সংস্কৃত শ্লোক বাখ্যা (11-12)
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটক হতে সংস্কৃত বাখ্যা-(9-10)
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটক অনুসারে সংস্কৃত ভাষায় ভাবসম্প্রসারণ (1-3)
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটক হতে সংস্কৃত বাখ্যা-(7-8)
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটক হতে সংস্কৃত শ্লোক বাখ্যা-(5-6)
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটক হতে সংস্কৃত শ্লোক বাখ্যা (3-4)
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটক হতে সংস্কৃত শ্লোক বাখ্যা (1-2)
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটক অনুসারে সংস্কৃত ভাষায় ভাবসম্প্রসারণ (4,5,6)
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ অনুসারে শকুন্তলার চরিত্র বিশ্লেষন কর
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটক হতে ছোট প্রশ্ন উত্তর