ভারতীয় দর্শন: নৈরাত্মবাদ বা অনাত্মবাদ

নৈরাত্মবাদ বা অনাত্মবাদ ভারতীয় দর্শন অনুসারে আলোচনা করা হল ।

নৈরাত্মবাদ বা অনাত্মবাদ: ভারতীয় দর্শন

বৌদ্ধমতে, সবকিছু অনিত‍্য – ‘সর্বমনিত‍্যম্‘। পরিবর্তনের নিয়ম সর্বজনীন। এমন কিছু নাই যা পরিবর্তনের ঊর্দ্ধে। পরিবর্তন বস্তুর স্বরুপত। সুতরাং পরিবর্তনের মধ‍্যে অপরিবর্তনীয় কোন সত্তা নেই। সাধারণত গুনের আধার রূপে স্থায়ী দ্রব‍্য কল্পিত হয় এবং মানসিক অবস্থার আধার রূপে আত্মা কল্পিত হয়। ন‍্যায় বৈশেষিক, সাংখ‍্য, যোগ, জৈন, বেদান্ত প্রভৃতি দর্শনে আত্মা পরিবর্তনীয় থাকে। দেহ অনিত‍্য, কিন্তু আত্মা নিত‍্য। দেহের বিনাশে আত্মা বিনষ্ট হয় না –

‘ ন অন‍্যতে অন‍্যমানে শরীরে।’

নৈরাত্মবাদ বা অনাত্মবাদ কি

           বৌদ্ধ মতে, বিজ্ঞান বা চৈতন‍্যের প্রবাহই আত্মা। বিজ্ঞান ক্ষণিক। বিজ্ঞান একটি ক্ষণে উৎপন্ন হয় এবং পরক্ষণে বিনষ্ট হয় এবং নতুন আর একটি বিজ্ঞানের উদ্ভব হয়। এই পরিবর্তনশীল বিজ্ঞান প্রবাহ ছাড়া আত্মা বলে পৃথক কোন সত্তা নেই। চক্র, দন্ড প্রভৃতি বিভিন্ন অংশ ছাড়া রথের যেমন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব থাকে না। তেমনি জীবদেহ মন, বিজ্ঞান প্রভৃতি উপাদানের সমষ্টি ছাড়া স্বতন্ত্র কিছু নয়। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আত্মা সম্বন্ধীয় এই মতকেই নৈরাত্মবাদ বা অনাত্মবাদ বলা হয়।

পঞ্চস্কন্দ

        আত্মা হচ্ছে নাম বা প্রতীকমাত্র, যা  স্কন্দের সমুদায়কে বোঝায়।  পঞ্চস্কন্দের অতিরিক্ত আত্মা বলে পদার্থ নেই। পঞ্চস্কন্দ হল-

  • i) রূপ স্কন্দ বা দেহ।
  • ii) বেদনাস্কন্দ বা সুখ দুঃখের অনুভূতি।
  • iii) সংজ্ঞা স্কন্দ – প্রত‍্যক্ষণ ইত‍্যাদি।
  • iv) সংস্কার স্কন্দ- রাগ, দ্বেষাদি পূর্ব অভিজ্ঞতা জাত প্রবণতা।
  • v) বিজ্ঞান স্কন্দ- আলয় বিজ্ঞান ও প্রবৃত্তি বিজ্ঞানের প্রবাহ।

আত্মা নামক সংঘাতের নির্মাতা দৈহিক অবস্থাসমূহকে রূপ এবং বেদনা,  সংজ্ঞা,  সংস্কার ও বিজ্ঞান স্কন্দকে একত্রে মন বলা হয়। আত্মা,  দেহ-মনের সংঘাত ছাড়া আর কিছুই নয়।

        বৌদ্ধমতে সংঘাতরূপ আত্মা একটি ক্ষণের বেশি কাল অভিন্ন সৎ নয়।  সংঘাত নিয়ত পরিবর্তনশীল সংঘাত রূপ আত্মাকে সন্তান বা ধারা বলা হয়েছে। নামরূপাত্মক আত্মা ক্ষণিক ও পরিবর্তনশীল, যেহেতু আত্মার নির্মাতা উপাদানগুলি ক্ষণিক ও সদা পরিবর্তনশীল।

ভারতীয় দর্শন হতে অন্য পোস্ট গুলি

Comments