ভারতীয় দর্শন অনুসারে মায়া কি ? মায়াবাদ সম্পর্কে আলোচনা করা হল ।
ভারতীয় দর্শন অনুসারে মায়া
শঙ্করাচার্যের মায়াবাদ তার অদ্বৈত বাদেরই নামান্তর। মায়াবাদ অতিপ্রাচীন হলেও শঙ্করের নামের সঙ্গে যুক্ত। তিনি সর্বসত্তাময় আত্মার জ্ঞানকে মায়াবাদের দৃঢ় ভিত্তিরূপে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বেদান্তের চরম বানী হল ব্রম্ভ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি ছাড়া যখন কেউ নেই তখন তার থেকে ভিন্নকে দেখা যেতে পারেনা। আর এটা যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে ব্রহ্ম হলেন অদ্বৈত। তাহলে জগত বৈচিত্রের ব্যাখ্যা কীভাবে দেওয়া সম্ভব। শংকর এই জটিল সমস্যার সমাধান করেছেন। তার মতে মায়া ও অবিদ্যা একই জিনিস।
মায়ার কাজ
এই মায়ার দুটি কাজ। যেমন –
- i) এটি বস্তুর স্বরূপ আবৃত করে রাখে।
- ii) অন্য একটি বস্তুকে প্রথম বস্তুতে নিক্ষেপ করে।
মায়ার উদাহরণ
যেমন – রজ্জুতে সর্পভ্রম। এখানে মায়া রজ্জুর স্বরূপ আমাদের কাছে আবৃত রাখছে এবং সেখানে সাপের বিক্ষেপ হয়ে সাপ প্রত্যক্ষ করা হচ্ছে। ভ্রান্তিতে যেমন আমরা একটি বস্তু স্থলে অপর একটি বস্তু দেখি, তেমনি ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয়- ‘ একমেবাদ্বিতীয়ম্’। তিনি ভিন্ন দ্বিতীয় বস্তু নেই তবু আমরা ভুল করে বহু বস্তু সমন্বিত জগৎ দেখি। ‘একোঅহং বহুস্যাম্’ এই ভ্রান্তির কারণ মায়া।
মায়া একদিকে যেমন কারণের স্বরূপকে আবৃত করে তেমনি আবার আবৃত কারণের ওপর একটি জিনিস বিক্ষেপ করে। শঙ্করের মতে মায়ার দ্বারা ব্রহ্মের কোন বিকার হয়না। মায়া ঈশ্বরেরই শক্তি। এটি অনাদি, অনির্বচনীয় ভাবরূপ অজ্ঞান। যে কোন বস্তুই অনির্বচনীয় বলে তা মায়া।
ভারতীয় দর্শন হতে অন্য পোস্ট গুলি
- ভারতীয় দর্শন: শূণ্যবাদ
- ভারতীয় দর্শন: অধ্যাস
- ভারতীয় দর্শন: পরার্থানুমান
- ভারতীয় দর্শন: সমাধি
- ভারতীয় দর্শন: বৌদ্ধদের ক্ষণিকবাদ
- ভারতীয় দর্শন: প্রতীত্যসমুৎপাদতত্ত্ব
- ভারতীয় দর্শন: নৈরাত্মবাদ বা অনাত্মবাদ
- ভারতীয় দর্শন: মায়া
- ভারতীয় দর্শন: ত্রিপিটক
- ভারতীয় দর্শন: পঞ্চীকরণ
- ভারতীয় দর্শন: সপ্তভঙ্গীনয়
- ভারতীয় দর্শন: জৈন দর্শন অনুসরণে স্যাদবাদ
- ভারতীয় দর্শন: বুদ্ধদেবের চতুর্থ আর্যসত্য
- ভারতীয় দর্শন: চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই আত্মা – চার্বাক মতবাদের ব্যাখ্যা ও গ্রহণযোগ্যতা
- ভারতীয় দর্শন: যোগ দর্শনের পাঁচ প্রকার চিত্তবৃত্তি ব্যাখ্যা
- ভারতীয় দর্শন: ছোট প্রশ্ন ও উত্তর