শঙ্করাচার্য এর জীবনী: Adi Shankara Biography in Bengali

শ্রীশংকরাচার্য যিনি ‘আদি শঙ্কর’ (৭৮৮-৮২০ খ্রিস্টাব্দ)এর জীবনী আলোচনা কর । শঙ্করাচার্য এর জীবনী আলোচনা করো । Adi Shankara Biography in Bengali ভারতীয় দার্শনিক শঙ্করাচার্য এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী বা শঙ্করাচার্য এর আত্মজীবনী বা (Adi Shankara Jivani Bangla. A short biography of Adi Shankara. Adi Shankara Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) শঙ্করাচার্য এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

মহাগুরু আদি শঙ্কর বা শ্রীশংকরাচার্য এর জীবনী – Adi Shankara Biography in Bengali 

জন্ম৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে 
জন্মস্থানকালাডি, কেরল, ভারত
দর্শনঅদ্বৈত বেদান্ত
মৃত্যু ৮২০ খ্রিস্টাব্দে

শঙ্করাচার্য কে ছিলেন ? Who is Adi Shankara ?

শ্রীশংকরাচার্য যিনি ‘আদি শঙ্কর’ (৭৮৮-৮২০ খ্রিস্টাব্দ) নামে অধিক পরিচিত, তিনি ভারতবর্ষের অন্যতম ধর্মসংস্কারক, অদ্বৈত বেদান্তের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার এবং ভারতীয় দর্শনের অন্যতম প্রবক্তা। তাঁর শিক্ষার মূল কথা হল আত্মা ও ব্রষ্মের সম্মিলন। জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তির সার্থক সমন্বয় এই ক্ষণজন্মা দার্শনিকের জীবনে ঘটেছিল। জ্ঞানবর্জিত কর্মবাদ এবং কর্মবর্জিত জ্ঞানবাদ এই দুয়ের তিনি বিরোধী ছিলেন। তাঁর মতে অবিদ্যা (কর্ম) দ্বারা মৃত্যুকে অতিক্রম করে বিদ্যা (জ্ঞান) দ্বারা অমৃতত্ব লাভ করা যায়। ভারতবর্ষের সনাতন আদর্শ রক্ষায় তিনি দেশের চারপ্রান্তে চারটি মঠ যেমন – পূর্বপ্রান্তে পুরীতে গোবর্ধন মঠ, পশ্চিমপ্রান্তে দ্বারকায় (গুজরাট) শারদা মঠ, উত্তরপ্রান্তে বদরিকায় যোশি মঠ (উত্তরাখণ্ড) এবং দক্ষিণপ্রান্তে রামেশ্বরে শৃঙ্গেরী মঠ (কর্ণাটক) স্থাপন করেন। গুরুপরম্পরা রক্ষার জন্য তিনি দশনামী সন্ন্যাসী সম্প্রদায় প্রবর্তন করেন। যেমন – সরস্বতী, ভারতী, পুরী, তীর্থ, আশ্রম, বন, অরণ্য, গিরি পর্বত ও সাগর। তিনি হিন্দুধর্মের প্রবর্তক ছিলেন।

শঙ্করাচার্য এর জন্ম ও শৈশব :

প্রচলিত মত অনুসারে ‘শংকর বিজয়ন’ বইগুলিতে শংকরের জীবনকথা লেখা আছে। এই জাতীয় কাব্যধারার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বই হল –

  • (১) মাধব শংকর বিজয়ন (মাধবের লেখা, চতুর্দশ শতাব্দী)।
  • (২) চিদবিলাস শংকর বিজয়ন (চিদবিলাসের লেখা, পঞ্চদশ-সপ্তদশ শতাব্দী)।
  • (৩) কেরলীয় শংকর বিজয়ন (কেরল অঞ্চলে প্রচলিত, সপ্তদশ শতাব্দী)।

শংকরাচার্য এক রক্ষণশীল নম্বুদ্রি ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম শিবগুরু, মা আর্যাদা (শিবতারকা)। তারা অধুনা কেরল রাজ্যের অন্তর্গত কালাডি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জনশ্রুতি আছে, মা-বাবা অনেকদিন ধরে নিঃসন্তান ছিলেন। তারা ত্রিশূরের বৃষভচল শিবমন্দিরে পূজা দিলে আর্দ্রা নক্ষত্রের বিশেষ তিথিতে শংকরের জন্ম হয়। ছোটো বয়সে বাবাকে হারান। শংকর ছেলেবেলা থেকে খুব মেধাবী ছিলেন। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি চারটি বেদ আয়ত্ত করে নেন। সাত বছর থেকে শংকর সন্ন্যাস গ্রহণে ইচ্ছুক ছিলেন। মায়ের বারণ। শেষে পূণী নদীতে স্নানের সময় কুমিরের হাত থেকে ছেলেকে বাঁচাতে মা সন্ন্যাস গ্রহণে সম্মতি দেন। তিনি উত্তর ভারতে নর্মদা নদীর তীরে ওঙ্কারেশ্বরের গৌড়পাদের শিষ্য গোবিন্দ ভগবদপাঠের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। গুরু শংকরকে ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্য এবং অদ্বৈত মত প্রচার করতে বলেন।

শ্রীশংকরাচার্য ছিলেন সর্বশাস্ত্রে পণ্ডিত। বিদগ্ধ ব্যাখ্যাকার, তীক্ষ্ণধী তার্কিক, কবি, দার্শনিক এবং হিন্দুধর্মের প্রবর্তক। মা ৩২ বছর বয়সে তাঁর কর্মময় জীবনের অবসান ঘটে। কাশীতে বিশ্বনাথ মন্দির দর্শনকালে চারটি কুকুরের সঙ্গে চণ্ডালরূপী শিবকে চিনতে পেরে পাঁচ থেকে বিশিষ্ট মণীষা পণ্যক রচনা করেন। বদ্রীনাথ থেকে তিনি বিখ্যাত ভাষ্য (ঢাকা গ্রন্থ) ও প্রকরণগুলি (মূল) রচনা করেন। শংকরাচার্য বিখ্যাত পণ্ডিত মশুন মিশ্র, তাঁর গুরু বৌদ্ধ মীমাংসা দার্শনিক কুমারিল ভট্ট এবং মণ্ডনের স্ত্রী উভয়া ভারতীকে তর্কে পরাজিত করেন। মণ্ডন মিত্র সুরেশ্বরাচার্য নামে তাঁর কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

শঙ্করাচার্য এর দার্শনিক ভ্রমণ :

শংকরাচার্য যৌবনে পদার্পণ করে দেশ ভ্রমণে বেরিয়ে ভারতবর্ষের সমস্ত তীর্থস্থান দর্শন করেন এবং বৌদ্ধদের শূন্যবাদের বিরুদ্ধে প্রচার করে নির্গুণ ব্রয়বাদ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দ্রাবিড়, গুর্জর, দ্বারকা, মহারাষ্ট্র, কাশ্মী, মালব, উচ্ছ্বয়িনী, বিদর্ভ, কাশী, প্রয়াগ, পুষ্কর, হরিদ্বার, নৈমিষারণা, মথুরা, শ্রীশৈল, কোল্লুড়, কাশ্মীর, তামিলনাড়ু, অক্স, কর্ণাটক, সৌরাষ্ট্র (কম্বোজ), কামরুপ ইত্যাদি স্থানে হিন্দুধর্মের পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করার জন্য চারটি মঠের দায়িত্ব তাঁর চার শিষ্য যথাক্রমে সুরেশ্বরাচার্য, হস্তামলকাচার্য, পাপাদ ও ভোটকাচার্যকে দেন এবং তাঁর নাম অনুসারে শংকরাচার্য (পণ্ডিত শংকর) উপাধি প্রদান করেন।

শঙ্করাচার্য এর মৃত্যু

মাধব শংকর বিজ্ঞান অনুসারে শ্রীশংকরাচার্যের হিমালয়ের কেদারনাথ-বদ্রীনাথে বিদেহ মুক্তি ঘটে। কেদারনাথ মন্দিরের পিছনে তাঁর সমাধি আছে। কারও মতে কাল্টীপুরমে (তামিলনাড়ু), কেরলীয় মতে কেরালার থ্রিসুরের বদাকুন্নাথান মন্দিরে শ্রীশংকরাচার্যের মাত্র ৩২ বছর বয়সে পঞ্চত্বভ্রাপ্তি ঘটে।

শংকরাচার্যের রচিত গ্রন্থ

(১)শঙ্করাচার্য এর ভাষ্য (সাহিত্যের ব্যাখ্যা) :

  • (ক) শ্রুতিপ্রস্থান – দশটি উপনিষদ ভাষ্য – ঈশ, কেন, কঠ, প্রশ্ন, মুণ্ডক, মাণ্ডুক্য, তৈত্তিরীয়, ঐতরেয়, ছান্দোগ্য ও বৃহদারণ্যক। গায়ত্রীভাষ্য, নৃসিংহপূর্বতাপনীয়, শ্বেতাশ্বর প্রভৃতি।
  • (খ) স্মৃতিপ্রস্থান – শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ।
  • (গ) ন্যাপ্রস্থান বাদরায়ণ কৃত ব্রহ্মসূত্রের শারীরক ভাষা।

(২) শঙ্করাচার্য এর প্রকরণ গ্রন্থ (দার্শনিক রচনা):

গ্রন্থের সংখ্যা ৮০টি। যেমন – চূড়ামণি, আত্মবোধ, উপদেশসাহস্ৰী, বাক্যসুধা (৪৬ শ্লোক), মণিরসমালা, অদ্বৈতানুভূতি ইত্যাদি।

(৩) কাব্যসমন্বিত

শৈব, শান্ত ও বৈষুব সম্প্রদায়ের আরাধ্য দেবদেবীর স্তোত্র ভ্রমরাম্বাষ্টক, মোহমুগর, গঙ্গাস্তোত্রম, দক্ষিণামূর্তিস্তোত্র, হরিনীড়ে স্তোত্র, আনন্দলহরী, সৌন্দর্যলহরী প্রভৃতি।

(৪) অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ

সনৎ সুজাতীয় ভাষা, ললিতারিশর্তী ভাষ্য, বিবেকচূড়ামণি শতশ্লোকী, আত্মবোধ, অপরোক্ষানুভূতি, সশশ্লোকা, পম্ভীকরণ, মহাবাক্যার্থ বিবরণ, অনুভব-পঞ্চরত্ন, প্রপঞ্চসার, সর্ববেদান্ত সিদ্ধান্তসার সংগ্রহ, নির্গুণ মানস পুল, দুগ্‌দর্শনবিবেক, অদ্বৈতবোধাদৃত, আত্মসাম্রাজ্যসিদ্ধি, আত্মানাত্মাবিবেক, আত্মজ্ঞানোপদেশবিধি।

শঙ্করাচার্য কে ছিলেন?

শঙ্করাচার্য (Adi Shankara) বা আদি শঙ্কর ছিলেন একজন ভারতীয় দার্শনিক। ভারতীয় দর্শনের অদ্বৈত বেদান্ত নামের শাখাটিকে শঙ্করাচার্য (Adi Shankara) সুসংহত রূপ দিয়েছিলেন ।

শঙ্করাচার্য এর জন্ম কোথায় হয় ?

কালাডি, কেরল, ভারত

শঙ্করাচার্য এর রচনা গুলি কী কী ?

ব্রহ্মসূত্র , মনীষ পঞ্চকাম , গীতাভাষ্য , বিবেক চূড়ামণি , প্রবোধ সুধাকর , সমবেদান্ত সিদ্ধাত্ত সংগ্রহ ।

Comments