বৈদিক উপসর্গের বৈশিষ্ট‍্য স্বরূপ ও ব্যবহার

বৈদিক ব‍্যাকরণ হতে বৈদিক উপসর্গের বৈশিষ্ট‍্য স্বরূপ ও ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

বৈদিক উপসর্গের বৈশিষ্ট‍্য স্বরূপ ও ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা

ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিশেষ কতকগুলি নিপাত গতি সংজ্ঞা হয় এর মধ‍্যে উপসর্গ অন্তর্গত। বেদে উপসর্গের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট‍্য লক্ষ‍্য করা যায়। অপ্রধান বাক‍্য ব‍্যাতিরেকে প্রধান বাক‍্যে ব‍্যবহৃত বৈদিক উপসর্গগুলি স্বতন্ত্র উদাত্ত স্বর বিশিষ্ট এবং পঠপাঠে সেগুলি পৃথক পদরূপে পঠিত হয়েছে।

কিন্তু বৈদিক ভাষায় অপ্রধান বাক‍্যে ব‍্যবহৃত উপসর্গগুলি সর্বদাই ক্রিয়ানুগত এবং অনুদাত্ত স্বরবিশিষ্ট। লৌকিক সংস্কৃত কর্মপ্রবোচনীয় রূপে যে নিপাতগুলি অভিহিত হয়েছে তাদের সঙ্গে বৈদিক উপসর্গের সাদৃশ‍্য লক্ষ‍্য করা যায়। বেদে উপসর্গ সমূহ ক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত বা অসংযুক্ত হয়ে প্রযুক্ত হয়েছে। তবে অপ্রধান বাক্যগুলিতে তারা স্বাধীন নয়,  ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রধান বাক্যে ছান্দস উপসর্গের উদাহরণ হল- ‘অহমেব বাত ইব প্রবামি।’ এই মন্ত্রাংশে প্র এই উপসর্গটি বামি -এই ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়।  যেহেতু মন্ত্রাংশটি একটি স্বাধীন বাক্য। অপ্রধান বাক্যে ব্যবহৃত ছান্দস উপসর্গের উদাহরণ হল-

” যত্রা নরো দেবয়ন্তো যুগানি
বিতন্বতে প্রতিভদ্রায় ভদ্রম্।”

আলোচ্য মন্ত্রাংশে বি এই উপসর্গটি তন্বতে এই ক্রিয়ার সঙ্গে  ব্যবহৃত হয়েছে, যেহেতু এটি অপ্রধান বাক্য।

বৈদিক উপসর্গের অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্য

i) সাধারণত উপসর্গগুলি ধাতুর পূর্বে বসে। এ বিষয়ে পাণিনীর সূত্রটি হল- ‘তে প্রাগ্ ধাতোঃ’। যেমন- ‘অহমেব বাত ইব প্রবামি।’ এখানে ‘প্র’ উপসর্গটি বামি ক্রিয়ার পূর্বে বর্তমান।

ii) কখনো কখনো বেদে উপসর্গগুলি ধাতুর পরেও প্রযুক্ত হয়েছে দেখা যায়। এ বিষয়ে পাণিনীর সূত্র হল- ‘ছন্দসি পরেঅপি’। যথা- জয়েম সংযুধি স্পৃধঃ’ এই মন্ত্রাংশের সম  উপসর্গটি জায়েম এই ক্রিয়ার পরে প্রযুক্ত হয়েছে।

iii) বৈদিক ভাষায় ধাতু এবং উপসর্গের মধ্যে ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ উপসর্গ এবং ধাতুর মধ্যে অন্যান্য ব্যবধান রচনা করে। এ বিষয়ে পাণিনীর সূত্র হল-‘ব‍্যবহিতাশ্চ। যথা-

” উপত্বাগ্নে দিবে দিবে
দোষাবস্তর্ধিয়া বয়ম্
নমো ভরন্তি এমসি।।”

অগ্নিসূক্তের আলোচ্য মন্ত্রটির প্রারম্ভে উপ এই  উপসর্গটি ব্যবহৃত হয়েছে এবং এমসি এই ক্রিয়া পদটি মন্ত্রের একবারে শেষে লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ উপসর্গ এবং ধাতুর মধ্যে অন্যান্য পদগুলি ব্যবধান রচনা করে।

iv) বৈদিক ভাষায় কখনো কখনো ধাতু না থাকলেও উপসর্গগুলি ধাতুর অর্থকে ব্যক্ত করে।  যথা – ‘ আ ভূ ন ইন্দ্রকৌশিক’। আলোচ্য মন্ত্রাংশে আ এই উপসর্গটি গম্ ধাতুর অভাব থাকলেও আ- গম ধাতুর অর্থকেই প্রকাশ করেছে।

v) বৈদিক ভাষায় কোন কোন পংক্তিতে ক্রিয়ার সঙ্গে উপসর্গের একবার মাত্র অন্বয় লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে অন্বয় লক্ষিত হয় না। যা- ‘নিরহংসঃ পিপৃতা নিরবদ‍্যাত্।’ এখানে পিপৃতা এই ক্রিয়ার সঙ্গে নির এই উপসর্গটি একবার মাত্র যুক্ত হয়েছে।  পরে নির উপসর্গটি উল্লেখিত হয়েছে অথচ ক্রিয়াপদটি প্রযুক্ত হয়নি।

vi) বৈদিক বাগ্ ভঙ্গিতে একই ক্রিয়াপদের সঙ্গে বিভিন্ন উপসর্গ যুক্ত থাকে স্বতন্ত্রভাবে।

vii) অপ্রধান বাক্যের তিঙন্ত অর্থাৎ  ক্রিয়াপদ অনুদাত্ত হয় না। ফলত এই উদ্যাত্ত স্বর বিশিষ্ট  ক্রিয়াপদ থাকলে উপসর্গ তার স্বাতন্ত্র হারিয়ে ক্রিয়াপদটির সঙ্গে সমাসবদ্ধ হয় এবং অনুদাত্ত স্বর বিশিষ্ট হয়ে যায়। যথা – ‘ যত্রা নঃ পূর্বে পিতর পরেষু।’ এখানে পরেষু  ক্রিয়াপদটি  স্বর দেখানো হয়েছে। এই পদটি পদপাঠে ভাঙলে পরাঈষু  ফলত পরা হবে এই উপসর্গটি অনুদাত্ত স্বর বিশিষ্ট হবে।

viii) বেদে প্রধানবাক‍্যে কৃদন্ত পদের সঙ্গে  উপসর্গ সমাসবদ্ধ রূপে ব্যবহৃত হয়। যথা- ‘স্মরতে বিভাতী’ এখানে ‘ভাতী’ এই কৃদন্ত পদের সঙ্গে বি উপসর্গের সমাস হয়েছে।

ix) কখনো কখনো আম্রেঢ়ন লক্ষ্য করা যায়। যথা- ‘ সং সম্ ইদযুবসে বৃষন্।’

x) বেদে উপসর্গের ব্যবহারে প্রত্যয় গ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন – কখনো কখনো উপসর্গের উত্তর বতি প্রত‍্যয় হয় ধাতুর অর্থে। এই বিষয়ে পাণিনীর সূত্রটি হল- ‘উপসর্গাৎ ছন্দসি ধাত্বর্থে।’
যথা- ‘ যাতি দেবঃ প্রবতা যাতি উদ্বতা।’

xi) বৈদিক ভাষায় উপসর্গ যোগে বিভক্তি নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। যেমন-

  • a) ‘উপত্বাগ্নে’ এখানে উদাহরণে উপ্ এই উপসর্গের যোগে সপ্তমী বিভক্তি হয়েছে।
  • b) ‘যো দেবো মত‍্যা অতি’। এখানে অতি উপসর্গের যোগে দ্বিতীয়া বিভক্তির প্রাপ্তি ঘটেছে।
  • c) ‘দিবো বা রোচনাদ্ অধি।’ এখানে অধি উপসর্গের যোগে পঞ্চমী বিভক্তি হয়েছে।
  • d) ‘মর্ত‍্যেষু আ’। এখানে আ এই উপসর্গের যোগে সপ্তমী বিভক্তি হয়েছে।
Comments