উদাহরণসহ ভট্টির রচনাশৈলীর প্রধান বৈশিষ্ট্য?
or, সংস্কৃত সাহিত্যে ভট্টির স্থান ও গুরুত্ব?
or, ভট্টি কাব্যের কাব্যমূল্য বিচার কর?
or, ব্যাখ্যাগম্যামিদং কাব্যম্?
or, ‘ দীপতুল্য-প্রবন্ধোঅয়ং শব্দ লক্ষণচক্ষুষাম্’- justify the statement.
ভট্টির রচনাশৈলী আলোচনা
উ:- মহাকবি কালিদাস উত্তর যুগের পরবর্তীকালে যে কয়েকজন মহাকবির আবির্ভাব হয়েছিল তাদের মধ্যে কবি ভট্টি অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক স্বরূপ। তাঁর রচিত ভট্টিকাব্য ২২টি সর্গে রচিত। এই ভট্টিকাব্যের মাধ্যমে তিনি আপন প্রতিভার প্রকাশ করেছিলেন। কারণ প্রত্যেক সাহিত্যকেরই একটা নিজস্ব রচনাশৈলী থাকে। যার মাধ্যমে তাঁর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র প্রতিবিম্বিত হয়।
পাশ্চাত্য সমালোচকের মতে- ” All literature implies style for style is the reflection of writers personality which is agian determined by the age in which he lives.”
সুশিক্ষিত ছাত্রদের কাছে অনধ্যায়ের সুযোগে ব্যাকরণ ও অলংকার শেখানোর সুপরিকল্পিত উপায় নিয়ে ভট্টি এই ভট্টিকাব্য রচনা করেন। তিনি বিষয়বস্তুতে নতুনত্ব সৃষ্টির প্রয়াস না করে সম্ভবতঃ কবিত্ব অপেক্ষা পাণ্ডিত্যের প্রকাশকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর এই কাব্যকে ব্যাকরণের দিক থেকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
- i) প্রকীর্ণ কান্ড(১ম থেকে ৫ম সর্গ)
- ii) অধিকার কান্ড ( ৬ ষ্ঠ থেকে ৯ম সর্গ)
- iii) প্রসন্ন কান্ড (১০ ম থেকে ১৩ শ সর্গ)
- iv) তিঙন্ত কান্ড( ১৪ম থেকে ২২তম সর্গ পর্যন্ত )
ভট্টিকাব্যের কান্ডের বিষয়বস্তু
- প্রকীর্ণ কান্ডে পাণিনী ব্যাকরণের বিভিন্ন প্রয়োগ দেখানো হয়েছে।
- অধিকার কান্ডে কারক ও বিভক্তি, ষত্ববিধান ও আত্মনেপদ বিধান আলোচিত হয়েছে।
- প্রসন্ন কান্ডে গুণ ও অলংকারের আলোচনা রয়েছে
- তিঙন্ত কান্ডে দশপ্রকার লট্ ল -কারের প্রয়োগ বিধান দেখানো হয়েছে।
তাঁর দীপ্ তুল্য হলেও শাস্ত্রবিমুখ ব্যক্তিদের কাছে অন্ধের হাতে দর্পণের তুল্য নিরর্থক। কবি নিজেই তাঁর কাব্য সম্পর্কে বলেছেন-
“দীপতুল্যঃ প্রবন্ধোঅয়ং শব্দলক্ষণ চক্ষুষাম্।
হস্তামর্ষ ইবান্ধানাং ভবেৎ ব্যাকরণাদ্ ঋতে।।”
ব্যাকরণের প্রখর জ্ঞান না থাকলে তাঁর শ্লোক সমূহ হবে দুর্বোধ্যা। ফলে রসাস্বাদন হবে দুঃসাধ্য। কবি একথা জানা সত্ত্বেও এরূপ রচনাতে বাধ্য হয়েছিলেন ব্যাকরণ শিক্ষার তাগিদে। তিনি নিজমুখে তা অকপটে স্বীকার করেছিলেন
“ব্যাখ্যাগম্যমিদং কাব্যমুৎসবঃ সুধিয়ামলম্ ময়া।
হতা দুর্মেধসাশ্চাস্মিন্ বিদ্বৎপ্রিয়তয়া ময়া।।”
কোভিদ ভট্টির কাব্য প্রতিভা প্রকাশিত হয়েছে প্রধানত দ্বিতীয় সর্গের শরৎকালের বর্ণনায়, দশম সর্গের অলংকার ব্যাখ্যায় এছাড়া বিভিন্ন সর্গে নগর, ঋতু, আশ্রম, অরণ্যানী, প্রভাত, সমুদ্র ও যুদ্ধ বর্ণনায় কবির কৃতিত্ব প্রতিভার পরিচয় পায়। শরৎকালের বর্ণনাতে কবি পদ্ম সমন্বিত সরোবরে ভ্রমরের আনাগোনার একটি সুস্পষ্ট চিত্র দান করছেন-
“তরঙ্গসঙ্গাচ্চপলৈঃ পলাশৈ
র্জ্বালাশ্রিয়ং সাতিশয়ং দধন্তি
সধূমদীপ্তাগ্নিরুচীনি রেজু
স্তাম্রোৎপলান্যাকুলষট্ পদানি।।”
এই কাব্যের তৃতীয় সর্গের রামের বিরহে মাতাদের বিলাপ বর্ণনা এবং দ্বিতীয় সর্গে চন্দ্র বিরহিনী কুমদবতীর দুঃখে কাতর হয়ে তটাস্থিত বৃক্ষ ও সমবেদনায় অশ্রুবর্ষণ করার দৃশ্য সত্যই অতুলনীয়-
” নিশাতুষারৈর্নয়নাম্বুকল্পৈঃ
পত্রান্তপর্যাগলদচ্ছবিন্দুঃ
উপারুরোদেব নদৎপতঙ্গঃ
কুমুদ্বতীং তীরতরুর্দিনাদৌ।।”
কবি তাঁর কাব্যে যমক অলংকারের আলোচনাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন তা আলোচ্য উদাহরণের মাধ্যমে জানতে পারি-
“বভৌ মরুত্বান্ বি-কৃতঃ স-মুদ্রো
বভৌ মরুত্বান্ বিকৃতঃ সমুদ্রঃ।
বভৌ মরুত্বান্ বিকৃতঃ সমুদ্রো
বভৌ মরুত্বান্ বিকৃতঃ স মুদ্রো।।”
অর্থাৎ পবন নন্দন হনুমান নানা রূপে বনভঙ্গ নগর বহন প্রভৃতি সম্পন্ন করে সীতাপ্রদত্ত অভিজ্ঞান নিয়ে আকাশে বিরাজিত হয়ে মারুতি রূপ মিত্র লাভে হৃষ্ট হলেন, এতে রাবনের পরাজয় হলো। পবনাঘাতে সমুদ্র উদ্বেল হয়ে আনন্দ প্রকাশ করল এবং বায়ু অপত্য স্নেহে অধীর হয়ে উঠলেন। এছাড়াও তিনি একাবলী অলংকারের প্রয়োগেও পিছপা হননি। তাঁর পরিচয় আমরা নিম্নোক্ত উদাহরণের মাধ্যমে পাই-
“ন তজ্জলং যন্ন সুচারুপঙ্কজম্
ন পঙ্কজং তদ্ যদলীনষট্ পদম্।
ন ষট্ পদোঅসৌ ন জুগুজ্ঞ যঃ কলম্।
ন গুঞ্জিতং তন্ন জহার যম্ননঃ।।”
শরৎকালীন প্রকৃতিও সকল প্রাণীর মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে। সেই প্রসঙ্গে আলোচ্য দৃশ্যটি একটি রূপাত্মক শ্লোকের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন-
“দত্তাবধানং মধুলেহিগীতৌ
প্রশান্তচেষ্টং হরিণং জিঘাংসুঃ।
আকর্নয়ন্নুৎসুকহংসনাদান্
লক্ষ্যে সমাধিং ন দধে মৃগাবিৎ।।”
ভট্টিকাব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে সমালোচকগণ কবির প্রতি অবিচার করেছেন। টীকাকার মল্লিনাথও ভট্টিকাব্যটিকে যথার্থ মহাকাব্যের মর্যাদা না দিয়ে উদাহরণ কাব্য বলেছেন-
“রামকথামাশ্রিত্য পাণিনীয় সূত্রাণামুদাহরণকাব্যং চিকীর্ষুঃ।”
তৎসত্ত্বেও তাঁর কাব্যের মর্যাদা এতটুকুও ক্ষুন্ন হয়নি। এই সম্পর্কে A.B.Keith বলেছেন- ” Bhatti whose epic is at once a poem and an illustration of the rules of grammar and Rhetories.”
- ভট্টিকাব্য: সংস্কৃত ব্যাখ্যা – বিম্বাগতৈস্তীরবনৈঃ সমৃদ্ধিং
- ভট্টিকাব্য: সংস্কৃত ব্যাখ্যা – দত্তাবধানং মধুলেহিগীতৌ
- ভট্টিকাব্য: সংস্কৃত ব্যাখ্যা – হিরন্ময়ী শাললতেব জঙ্গমা
- ভাট্টিকাব্য সর্গ 2: সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
- ভাট্টিকাব্য সর্গ 2: শ্লোকের ব্যাকরণ
- ভট্টিকাব্য: সংস্কৃত ব্যাখ্যা – ন তজ্জ্বলং যন্ন সুচারুপঙ্কজম্
- ভট্টিকাব্য: সংস্কৃত ব্যাখ্যা – গর্জন্ হরিঃ সাম্ভসি শৈলকুঞ্জে
- ভট্টিকাব্য: সংস্কৃত ব্যাখ্যা – প্রভাতবাতাহতিকম্পিতাকৃতিঃ
- ভট্টিকাব্য: সংস্কৃত ব্যাখ্যা – সিতারবিন্দ প্রচয়েষু লীনাঃ
- ভট্টিকাব্যের দ্বিতীয় সর্গে রামকর্তৃক শরৎকালের বর্ণনা
- ভট্টির রচনাশৈলী