মনুসংহিতা অনুসারে রাজার উৎপত্তির ঐশ্বরিক মতবাদ আলোচনা কর | আচার্য মনু প্রনীত মনুসংহিতা গ্রন্থের সপ্তম অধ্যায়ে রাজাকে তিনি সর্বতেজোময় রূপে ব্যক্ত করেছেন।
সর্বতেজোময় হি সঃ- কে সর্বতেজোময় এবং কেন? রাজার উৎপত্তির ঐশ্বরিক মতবাদ আলোচনা কর।
উঃ- আচার্য মনু প্রনীত মনুসংহিতা গ্রন্থের সপ্তম অধ্যায়ে রাজাকে তিনি সর্বতেজোময় রূপে ব্যক্ত করেছেন।আচার্য মনু সর্বশক্তিমান রাজার স্বরূপ ব্যক্ত করেছেন।
তিনি এই প্রসঙ্গে বলেছেন-
“যস্য প্রসাদে পদ্মা শ্রীবির্জয়শ্চ পরাক্রমে
মনুসংহিতা/ সপ্তম অধ্যায়
মৃত্যুশ্চ বসতি ক্রোধে সর্বতেজোময় হি সঃ’।
অর্থাৎ, রাজা প্রসন্ন হলে বিপুল সম্পদ লাভ হয় পরাক্রমে জয়লাভ এবং ক্রোধ হলে বিনাশ প্রাপ্তি হয। কারণ তিনি সর্ব তেজময় অর্থাৎ সর্বতেজের আধার।
রাজার তেজস্বিতা ও প্রভাব অপরিসীম সেই জন্যই বলা হয়েছে রাজার অনুগ্রহে বাস করেন লক্ষ্মী অর্থাৎ তিনি যার প্রতি অনুগ্রহ করেন তিনি প্রভূত সম্পদের অধিকারী হন আবার উক্ত রাজায় পরাক্রম প্রকাশ করলে শত্রু কে জয়লাভ করতে পারেন এবং তিনি যার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার মৃত্যু হয় অবসম্ভাবী
সুতরাং আচার্য মনুর এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন যে যারা অর্থ কামনা করে অথবা জীবন কামনা করে কিংবা যারা বিজয় কামনা করে তাদের সর্বদা সর্বত্রোভাবে রাজার সন্তুষ্টি বিধান করা উচিৎ।
ঐশ্বরিক মতবাদঃ-
এই ঐশ্বরিক মতবাদের মূল বক্তব্য হলো পৃথিবীতে ঈশ্বর রাষ্ট্র সৃষ্টি করে রাজাকে সেই রাষ্ট্রের প্রতিনিধি করেছেন অর্থাৎ ঈশ্বরের যাবতীয় ইচ্ছা-অনিচ্ছা রাজার মাধ্যমে কার্যকরী হয় রাজা রাষ্ট্রকে পরিচালনার জন্য যে দন্ড প্রয়োগ করেন তা আসলে ঈশ্বরের আদেশ তাই বলা হয়েছে রাজা তেজস্বী দেবতাদের সারভুত অংশে সৃষ্টি হলেও তার প্রকৃত যোগ্যতা নিহিত থাকে তার দন্ডের মধ্যে। অর্থাৎ ঈশ্বর যেহেতু দন্ডকে সৃষ্টি করেছেন, সেহেতু সেই দ্বন্দ্বের প্রয়োগ কর্তা রাজাকে তিনিই সৃষ্টি করেছেন।
নিম্নে কতকগুলি ঐশ্বরিক মতবাদ আলোচনা করা হলো
- i) ঐশ্বরিক শক্তি দ্বারা রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে সুতরাং সেই রাষ্ট্রের সর্ব প্রধান হলেন রাজা। তাও রাজাও ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট।
- ii) ঈশ্বর করুণাময় তিনি সমাজের কল্যাণ করেন সুতরাং প্রজাদের কল্যাণের জন্য ঈশ্বর রাজা কে সৃষ্টি করেছেন।
- iii) শাসন ব্যবস্থার প্রধান অঙ্গ হল রাজা তিনি অসীম ক্ষমতার অধিকারী এই অসীম ক্ষমতা ঐশ্বরিক হাত না থাকলে সম্ভব হত না।
- iv) মনুসংহিতায় বলা হয়েছে দেবতাদের সারভূত অংশে রাজার সৃষ্টি সুতরাং রাজা ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট।
উক্ত ঐশ্বরিক মতবাদ গুলি হল প্রাচীনতম, আসলে কোনো ভিত্তি নেই অর্থাৎ ভিত্তিহীন। আধুনিক যুগে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্র প্রধানের সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক তাগিদেই।
আচার্য মনু তার মনুসংহিতা গ্রন্থে রাজ ধর্ম নামক সপ্তম অধ্যাযে রাজার উপর দেবত্ব আরোপ করেছেন। যাতে প্রজারা রাজার ভয়ে বা দন্ডের ভয়ে রাজ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে। কারণ তিনি ছিলেন রাজর্ষি, তাই এই উপলব্ধি করেছিলেন।
মনুসংহিতা সপ্তম অধ্যায় রাজধর্ম হতে অন্যান্য পোস্ট গুলি
- মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক ব্যাখ্যা-12
- মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক বাখ্যা-11
- মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক বাখ্যা-10
- মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক বাখ্যা-9
- মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক বাখ্যা-8
- মনুসংহিতা রাজধর্ম সপ্তম অধ্যায় হতে শ্লোক সংস্কৃত বাখ্যা-7
- মনুসংহিতা শ্লোক (রাজধর্ম ) সংস্কৃত বাখ্যা -6
- মনুসংহিতা (রাজধর্মঃ) সংস্কৃত শ্লোক বাখ্যা-5
- মনুসংহিতা শ্লোক (রাজধর্মঃ) সংস্কৃত ব্যাখ্যা-4
- মনুসংহিতা (রাজধর্ম) সংস্কৃত শ্লোক ব্যাখ্যা-3
- মনুসংহিতা সপ্তম অধ্যায় (রাজধর্ম) হতে শ্লোক সংস্কৃত বাখ্যা-2
- মনুসংহিতা সপ্তম অধ্যায় রাজধর্ম হতে সংস্কৃত বাখ্যা-1
- মনুসংহিতা: কুলং দহতি রাজাগ্নিঃ স পশুদ্রব্যসঞ্চয়ম্ – উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ
- মনুসংহিতা: দণ্ডের উৎপত্তি প্রকৃতি ও কার্যকলাপ
- মনুসংহিতা অনুসারে দন্ডের উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য
- মনুসংহিতা অনুসারে দূত সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ বিবরণ দাও
- মনুসংহিতা অনুসারে মনুর মতে রাজার বিনয়ের গুরুত্ব
- মনুসংহিতা অনুসারে রাজার মন্ত্রনা বিধি
- মনুসংহিতা (রাজধর্ম) হতে ছোট প্রশ্ন ও উত্তর
- মনুসংহিতা অনুসারে ব্যসন কী ? ব্যসনের বিভাগসমূহ প্রভাব ও পরিনাম আলোচনা কর
- মনুসংহিতা অনুসারে ষড়গুণ -এর প্রয়োগ নির্দেশ
- রাজার প্রাত্যহিক কৃত্যগুলি কী কী ( মনুসংহিতা )
- মনুসংহিতা: রাজার উৎপত্তির ঐশ্বরিক মতবাদ আলোচনা কর।
- মনুসংহিতা অনুসারে মনুর মতে দূর্গ কয় প্রকার ও কি কি
- মনুসংহিতা অনুসারে দন্ডের প্রকৃতি ও উপযোগিতা
- মনুসংহিতা অনুসারে মনুর মতে রাজার বিনয়ের গুরুত্ব-2
- মনুসংহিতা অনুসারে ব্যসন ও মৃত্যুর মধ্যে কোনটি ক্ষতিকর
- মনুসংহিতা অনুসারে রাজার উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
- ব্যসন কি? ব্যসন কয় প্রকার- পুূর্ববর্তী ব্যসনগুলি পরবর্তী ব্যসনের চেয়ে ক্ষতি কারক কেন?