ভারতীয় দর্শন(টীকা) হতে বৌদ্ধদের ক্ষণিকবাদ আলোচনা করা হল ।
বৌদ্ধদের ক্ষণিকবাদ (টিকা) – ভারতীয় দর্শন
বৌদ্ধদের ক্ষণিকবাদ:- বৌদ্ধদের অনিত্যতাবাদ তাদের কার্যকারণ তত্ত্ব বা প্রতীত্যসমুৎপাদতত্ত্ব থেকে নিঃসৃত হয়। অনিত্যবাদ অনুসারে প্রতিটি বস্তুই অনিত্য। সবকিছু অনিত্য (সর্বমনিত্যম্) সব কিছু পরিবর্তনশীল বা অস্থায়ী, কোন কিছুই স্থায়ী নয়। এই সর্ব ব্যাপক পরিবর্তনবাদ ও অনিত্যবাদ বৌদ্ধদের প্রতীত্যসমুৎপাদ বাদ থেকেই নিঃসৃত হয়েছে।
প্রতীত্যসমুৎপাদের অর্থ হল কার্য মাত্রই কারণের উপর নির্ভরশীল। কারণ থাকলে কার্য হয়, কারণের অভাবে কার্যের অভাব ঘটে। তাই কার্যমাত্রই অনিত্য।
বৌদ্ধদর্শনে সর্বজনীন পরিবর্তনবাদ স্বীকৃত হলেও সবকিছু ক্ষণিক (সর্বংক্ষণিকম্) এই মতবাদ প্রাচীন বৌদ্ধ দর্শনে গুরুত্ব আরোপিত হয়নি। পরবর্তীকালে অশ্বঘোষ, বুদ্ধঘোষ প্রমূখ বৌদ্ধদার্শনিকেরা পরিবর্তনবাদকে ক্ষণিকবাদে রূপান্তরিত করেছেন। তাঁদের মতে,
‘ সর্বং ক্ষণিকং ক্ষণিকম্’।
সবকিছু ক্ষণিক অর্থাৎ মাত্র একটি ক্ষণের জন্য স্থায়ী। বৌদ্ধ মতে, অর্থ ক্রিয়াকারিত্ব বা কার্য উৎপন্ন করার ক্ষমতাই বস্তুর সত্তা-
‘ অর্থক্রিয়াকারিত্ব লক্ষণং সৎ।’
অর্থাৎ যা কার্য উৎপাদন করতে পারে বা অর্থক্রিয়াকারী, তাই সৎ। বৌদ্ধ মতে, এমন কোনো সৎ বস্তু নেই যা কার্য উৎপন্ন করে না। যা কার্য উৎপাদন করতে পারে না। তা অসৎ। যেমন- শশশৃঙ্গ। বীজ হল সৎ বস্তু, তাই বীজ অঙ্কুর উৎপাদন করতে পারে। তাই বৌদ্ধরা বলেন, যা অর্থক্রিয়াকারী তাই সৎ। অতএব, সৎ বস্তু মাত্রই একটি ক্ষণের জন্য স্থায়ী বা ক্ষণিক-
‘ যৎ সৎ তৎ ক্ষণিকম্।’
বৌদ্ধ দার্শনিক রত্নকীর্তি (৯৫০ খ্রিঃ) বলেছেন যে, অনুমানের দ্বারা ক্ষণিকবাদ সিদ্ধ হয়। তিনি বলেন-
‘বীজাদিকং সর্বং ক্ষণিকং সত্তাৎ।’
বীজ প্রভৃতি সব বস্তুই সৎ বা সত্তাবাদ,অতএব, বীজাদি সব বস্তুই ক্ষণিক -এইভাবে অনুমান করা যায়। এই অনুমানে বীজাদি সব বস্তু হল পক্ষ, ক্ষণিকত্ব সাধ্য এবং সত্তা হল হেতু।
‘ অর্থক্রিয়াকারিত্ব লক্ষণং সৎ ‘
বৌদ্ধদের সত্তার এই লক্ষণ থেকে ক্ষমিকবাদ নিঃসৃত হয়। বৌদ্ধরা বলেন, যা সৎ তাই অর্থক্রিয়াকারী। তাই তা ক্ষণিক। বীজ স্থির দ্রব্য বা স্থায়ী হলে অঙ্কুর নামক কার্যের জনক হতে পারে না। বীজের অর্থ ক্রিয়া কারিতা বা কার্য জনকতা থেকে প্রমাণিত হয় যে, বীজ স্বরূপত ক্ষণিকই। বৌদ্ধ মতে, কোনো অক্ষণিক স্থায়ী বস্তুর অর্থক্রিয়াকারিতা নাই। এই মুহূর্তে যা শোভমান পরমুহূর্তে তা বিলীয়মান। জগতের সবকিছুর অস্তিত্ব শুধু ক্ষণকালের। সুতরাং ক্ষণিকবাদ সার্বভৌম।
ভারতীয় দর্শন হতে অন্য পোস্ট গুলি
- ভারতীয় দর্শন: শূণ্যবাদ
- ভারতীয় দর্শন: অধ্যাস
- ভারতীয় দর্শন: পরার্থানুমান
- ভারতীয় দর্শন: সমাধি
- ভারতীয় দর্শন: বৌদ্ধদের ক্ষণিকবাদ
- ভারতীয় দর্শন: প্রতীত্যসমুৎপাদতত্ত্ব
- ভারতীয় দর্শন: নৈরাত্মবাদ বা অনাত্মবাদ
- ভারতীয় দর্শন: মায়া
- ভারতীয় দর্শন: ত্রিপিটক
- ভারতীয় দর্শন: পঞ্চীকরণ
- ভারতীয় দর্শন: সপ্তভঙ্গীনয়
- ভারতীয় দর্শন: জৈন দর্শন অনুসরণে স্যাদবাদ
- ভারতীয় দর্শন: বুদ্ধদেবের চতুর্থ আর্যসত্য
- ভারতীয় দর্শন: চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই আত্মা – চার্বাক মতবাদের ব্যাখ্যা ও গ্রহণযোগ্যতা
- ভারতীয় দর্শন: যোগ দর্শনের পাঁচ প্রকার চিত্তবৃত্তি ব্যাখ্যা
- ভারতীয় দর্শন: ছোট প্রশ্ন ও উত্তর