ভারতীয় দর্শন হতে শূণ্যবাদ সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
শূণ্যবাদ – ভারতীয় দর্শন
শূণ্যবাদ:- বৌদ্ধ দর্শন চারটি সম্প্রদায়ের বিভক্ত। যথা-
- i) সৌত্রান্তিক
- ii) বৈভাষিক
- iii) মাধ্যমিক বা শূণ্যবাদ
- iv) যোগাচারবাদ বা বিজ্ঞানবাদ।
এই চারটি সম্প্রদায়ের মধ্যে শূণ্যবাদ অন্যতম। মহাযান মাধ্যমিক সম্প্রদায় শূণ্যবাদের উদগাতা। এই শূন্যবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন নাগার্জুন। এছাড়া অশ্বঘোষ, শান্তিদেব, আর্যদেব প্রমুখ বৌদ্ধ দার্শনিকেরা এই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। শূন্যবাদ মতে বিশ্বজগতে সত্তা বলে কিছুই নেই। সবই শূন্য- ‘সর্বং শূণ্যম্’ এই মতটিকে শূন্যবাদ বলা হয়।
আসলে মাধ্যমিক মতে জাগতিক কোন বস্তুর সত্তা কী, তা বুদ্ধির দ্বারা নির্ণয় করা যায় না। তাই তা অবর্ণনীয়। মাধবাচার্য সর্বদর্শন সংগ্রহে বলেছেন – জ্ঞাতা, জ্ঞান এবং জ্ঞেয় পরস্পর সাপেক্ষ। যেহেতু একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল। তাই একটি মিথ্যা প্রমাণিত হলে অন্য দুটি মিথ্যা হবে। আমরা পদার্থকে চার ভাবে জানতে পারি। সৎ,অসৎ, সদসৎ, সদসদ্ ভিন্ন। কিন্তু পরমতত্ত্বকে এই চার ভাবের কোনভাবেই জানতে পারি না-
” অতস্তত্তং সদসদুভয়ানুভয়াত্মক চতুষ্কোটি বিনির্মুক্তং শূণ্যমেব।”
জাগতিক সকল বস্তুই শর্তাধীন। জাগতিক বস্তুকে অসৎ বলা যায়না। কারণ অসৎ বস্তু প্রতিভাত হয় না কিন্তু জাগতিক বস্তুর প্রতিভাত হয়। আবার জাগতিক বস্তু সৎ ও অসৎ একথা বলা চলে না। কারণ দুটি বিরুদ্ধ ধর্মের একত্ব বস্তুতে অভাবত্ব সম্ভব নয়। তাই কি মন, কি বাহ্য অবর্ণনীয় জাগতিক বস্তুর এই অফ অনির্বচনীয়। জাগতিক বস্তুর এই অনির্বচনীয়তাকেই মাধ্যমিক সম্প্রদায় শূন্যতা আখ্যা দিয়েছেন। তাই তাদের এই মতবাদ শূন্যবাদ নামে পরিচিত হয়।
শূন্যতার উপলব্ধি হলে প্রবন্ধসমূহ ধ্বংস হয়। মায়া মোহ লোভ দ্বেষ প্রভৃতি প্রপঞ্চ মানুষের চিত্তকে আচ্ছন্ন করে রাখে। শূন্যতার উপলব্ধি হলে প্রবঞ্চ সমূহের আত্যন্তিক বিনাশ ঘটে।
নাগার্জুনের মতে শূন্যতা এবং নির্মাণের মধ্যে পার্থক্য নেই।
নার্গাজুনের মতে শূন্যতার উপলব্ধি ও নির্বানের উপলব্ধি এক ও অভিন্ন। তিনি এই প্রসঙ্গে মাধ্যমিক কারিকায় বলেছেন-
‘প্রভবতি চ শূণ্যতেয়ং যস্য প্রভবন্তি তস্য সর্বার্থাঃ। প্রভবতি ন তস্য কিঞ্চিন্ন ভবতি শূণ্যতা যস্য।”
অর্থাৎ যিনি শূন্যতাকে উপলব্ধি করেন তিনি সর্ববিধ অর্থ( যা-কিছু হিতকর এবং আত্মোন্নতি ও দুঃখমুক্তির প্রধান সহায়ক) হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন কিন্তু যিনি শূন্যতার উপলব্ধি করতে পারেন না তার কিছুই কিছুই বোধগম্য হয় না।
ভারতীয় দর্শন হতে অন্য পোস্ট গুলি
- ভারতীয় দর্শন: শূণ্যবাদ
- ভারতীয় দর্শন: অধ্যাস
- ভারতীয় দর্শন: পরার্থানুমান
- ভারতীয় দর্শন: সমাধি
- ভারতীয় দর্শন: বৌদ্ধদের ক্ষণিকবাদ
- ভারতীয় দর্শন: প্রতীত্যসমুৎপাদতত্ত্ব
- ভারতীয় দর্শন: নৈরাত্মবাদ বা অনাত্মবাদ
- ভারতীয় দর্শন: মায়া
- ভারতীয় দর্শন: ত্রিপিটক
- ভারতীয় দর্শন: পঞ্চীকরণ
- ভারতীয় দর্শন: সপ্তভঙ্গীনয়
- ভারতীয় দর্শন: জৈন দর্শন অনুসরণে স্যাদবাদ
- ভারতীয় দর্শন: বুদ্ধদেবের চতুর্থ আর্যসত্য
- ভারতীয় দর্শন: চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই আত্মা – চার্বাক মতবাদের ব্যাখ্যা ও গ্রহণযোগ্যতা
- ভারতীয় দর্শন: যোগ দর্শনের পাঁচ প্রকার চিত্তবৃত্তি ব্যাখ্যা
- ভারতীয় দর্শন: ছোট প্রশ্ন ও উত্তর
বৌদ্ধ দর্শন চারটি সম্প্রদায়ের বিভক্ত।
সবই শূন্য- ‘সর্বং শূণ্যম্’ এই মতটিকে শূন্যবাদ বলা হয়।