সাংখ‍্যকারিকা: সাংখ্য দর্শনের স্রষ্ঠা কে? সাংখ‍্য শাস্ত্রীয় পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব সমূহের প্রকারভেদ

সাংখ্য দর্শনের শ্রষ্ঠা কে? সাংখ‍্য শাস্ত্রীয় পঞ্চবিংশতি তত্ত্বসমূহের প্রকারভেদ আলোচনা করো।

সাংখ্য দর্শনের স্রষ্ঠা কে? সাংখ‍্য শাস্ত্রীয় পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব সমূহের প্রকারভেদ আলোচনা করো

সাংখ্য দর্শনের স্রষ্ঠা কে?


উঃ- আদি দার্শনিক মহামুনি কপিল সাংখ্যদর্শন-চিন্তার প্রবর্তক।

সাংখ‍্য শাস্ত্রীয় পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব সমূহের প্রকারভেদ

ভূমিকা:- সাংখ‍্যশাস্ত্রে তত্ত্ব শব্দে পদার্থকেই বোঝানো হয়েছে। পদার্থ দুই প্রকার। যথা- পরিণামী ও অপরিণামী। সাংখ‍্যের দুটি মূল তত্ত্ব হল পুরুষ ও প্রকৃতি। দুটিই নিত্য। প্রকৃতি হল পরিণামী সৎ আর পুরুষ হল অপরিনামী সৎ। দুঃখের অবশ্যম্ভাবী ও চিরস্থায়ী নিবৃত্তির উপায় হল ব্যক্ত ও অব্যক্তের বিবেক জ্ঞান –

” তদ্বিপরীতঃ শ্রেয়ান্ ব‍্যক্তাব‍্যক্তজ্ঞবিজ্ঞানাৎ।”

ব্যক্ত বলতে মহৎ থেকে শুরু করে পঞ্চমহাভূত পর্যন্ত ২৩ টি পদার্থকে বুঝতে হবে। এই ২৩টির সঙ্গে পুরুষ ও প্রকৃতিকে যোগ করে মোট পঞ্চবিংশতি পদার্থতত্ত্ব সাংখ‍্যশাস্ত্রে ঘোষিত হয়েছে। কোনও পদার্থতত্ত্ব কেবল প্রকৃতি বা কেবল কারণই, অর্থাৎ কার্য নয়। কোনও কোনও তত্ত্ব কেবল বিকৃতি বা কার্যই অর্থাৎ কারণ নয়। কোনও তত্ত্ব প্রকৃতি বা কারন ও বিকৃতি বা কার্য উভয়ই। আবার কোনও তত্ত্ব প্রকৃতি বা কারণ নয় ও বিকৃতি বা কার্যও নয়।

ঈশ্বরকৃষ্ণ সাংখ্যকারিকায় এই শ্রেণীবিভাজন করে লিখেছেন-

“মূলপ্রকৃতিরবিকৃতির্মহদাদ‍্যাঃ প্রকৃতিবিকৃতয়ঃ সপ্ত।
ষোড়শকস্তু বিকারো ন প্রকৃতির্ন বিকৃতিঃ পুরুষঃ।।”

এই কারিকায় অন্তর্নিহিত বক্তব্যকে এখন বিশ্লেষণ করা যাক –

১) কেবল প্রকৃতি:-

প্রকৃষ্ট রূপে সকল কার্যকে যে সৃষ্টি করে, সেটাই হল প্রকৃতি – ‘প্রকরতীতি প্রকৃতিঃ’। নিখিল কার্য বর্গের আদি কারণ হল প্রকৃতি, এর কোনো মূল কারণ নেই। সুতরাং প্রকৃতি অন্য কোনো তত্ত্ব থেকে উৎপন্ন হয় না। ব্যক্ত কার্য বর্গের অব্যক্ত কারণের জন্য অন্য কোন মূল কারণ অন্বেষণ নিষ্প্রয়োজন, নচেৎ অনাবস্থা দোষ হয়।

২)প্রকৃতি বিকৃতি :-

মহৎ, অহংকার ও পঞ্চতন্মাত্র( রূপতন্মাত্র-রসতন্মাত্র-গন্ধতন্মাত্র, শব্দতন্মাত্র ও স্পর্শতন্মাত্র – এই সাতটি তত্ত্বকে প্রকৃতি- বিকৃতি অর্থাৎ একাধারে কারণ ও কার্য বলা হয়। মহৎ থেকে অহংকার উৎপন্ন হয় বলে মহৎ অহংকারের প্রকৃতি। আবার প্রধান থেকে উৎপন্ন বলে মহৎ নিজে বিকৃতি। অহংকার থেকে উৎপন্ন বলে পঞ্চতন্মাত্র বিকৃতি। আবার পঞ্চতন্মাত্র থেকে ইন্দ্রিয় ও মহাভূতগুলি সৃষ্টি হয় বলে প্রকৃতিও বটে। আবার অহংকার পঞ্চতন্মাত্রের প্রকৃতি হলেও মহৎ থেকে উৎপন্ন বলে সেটি বিকৃতি। সুতরাং এই সাতটি তত্ত্ব প্রকৃতি -বিকৃতি।

৩) কেবল -বিকৃতি:-

পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রীয়, পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় ও মন এই একাদশ ইন্দ্রিয় আর পঞ্চমহাভূত এই ১৬ টি তত্ত্ব কেবল- বিকৃতি। অর্থাৎ এগুলি কেবল কার্যই হবে। কারো কারন নয়। কেননা, এগারটি ইন্দ্রিয় সাত্ত্বিক অহংকার থেকে উৎপন্ন হয়। আর পঞ্চমহাভূত রাজসিক পঞ্চতন্মাত্র থেকে উৎপন্ন হয়। কিন্তু এরা কোনো কিছুকেই উৎপন্ন করে না। তাই এরা প্রকৃতি নয়। এই ১৬টি তত্ত্ব থেকে কিছুই উৎপন্ন হয় না। তাই এগুলি অন্য কোনো কার্যের প্রকৃতি হতে পারে না।

৪) প্রকৃতিও নয়, বিকৃতিও নয় :-

পুরুষ কোনো তত্ত্বকে উৎপাদন করে না। তাই পুরুষ প্রকৃতি নয়। আবার কোনো তত্ত্ব থেকে পুরুষ উৎপন্ন হয় না, তাই বিকৃতি ও নয়। সুতরাং, পুরুষ কারণ বা কার্য কিছুই নয়, তা নিষ্ক্রিয় ও নির্বিকার।

সাংখ্য মতে যে পঁচিশটি তত্ত্বের অবস্থান ভেদবোধ চিত্রে প্রদর্শিত হল –

পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব

১) পুরুষ – ২) প্রকৃতি
৩) মহৎ
৪)অহংকার
|
সত্ত্ব রজঃ তমঃ
পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব
সত্ত্ব রজঃ তমঃ
|
পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয় —-
পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়
১৫) মন
|
পঞ্চতন্মাত্র

(পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয় )
৫) চক্ষু
৬) কর্ণ
৭) নাসিকা
৮) জিহ্বা
৯) ত্বক
(পঞ্চতন্মাত্র)
|
১৬)রূপতন্মাত্র
১৭)রসতন্মাত্র
১৮)গন্ধতন্মাত্র
১৯)স্পর্শতন্মাত্র
২০)শব্দতন্মাত্র
(পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়)
১০) বাক
১১)হাত
১২)পাদ
১৩)পায়ু
১৪)উপস্থ
(শব্দতন্মাত্র)
|
পঞ্চমহাভূত
২১)তেজ,
২২)জল,
২৪)বায়ু,
২৫)আকাশ
পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব


পঞ্চবিংশতি তত্ত্বের মূল্যায়ন :-

এইভাবে সাংখ্যকারিকায় সাংখ্য প্রতিপাদ্য পঞ্চবিংশতি তত্ত্বকে কোথাও দুই শ্রেণীতে, কোথাও তিন শ্রেণীতে, আবার কোথাও চার শ্রেণীতে বিভক্ত করে ঈশ্বরকৃষ্ণ তত্ত্বগুলির নিকৃষ্ট স্বরূপকে নিরূপণ করেছেন।

সাংখ‍্যকারিকা হতে অন্যান্য প্রশ্ন উত্তর

Comments