অগ্নিসূক্ত(ঋষি-মধুচ্ছন্দা,ছন্দ-গায়ত্রী,দেবতা-অগ্নি)অগ্নি দেবতার স্বরূপ বর্ণনা কর। (অগ্নিসূক্ত) Describe the nature of the ‘Agnidevata’.
অগ্নিদেবতার স্বরূপ বর্ণনা
অবস্থান | ঋগ্বেদ – প্রথমমণ্ডল-প্রথম সূক্ত |
ঋষি | বিশ্বামিত্রের পুত্র মধুচ্ছন্দা |
ছন্দ | গায়ত্রী |
দেবতা | সবিতা |
মন্ত্রসংখ্যা | ১১ টি |
1) স নঃ পিতেব সুনবে- এখানে সঃ পদের দ্বারা কোন দেবতা উদ্দিষ্ট? রাজান্তমধ্বরানাং গোপাম্ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে তোমার পাঠ্যাংশে প্রতিফলিত অগ্নি দেবতার স্বরূপ বর্ণনা কর।
উঃ- স নঃ পিতবে সুনবে- অর্থাৎ আমাদের নিকট পুত্রের কাছে পিতার মতো সহজলভ্য হও- প্রশ্নোদ্ধৃত মন্ত্রাংশে সঃ পদের দ্বারা অগ্নি দেবতা কে বোঝানো হয়েছে।
রাজান্তমধ্বরানাং গোপাম্– বলতে অগ্নি দেবতা কে বোঝানো হয়েছে।
অগ্নি সূক্ত অবলম্বন করে অগ্নি দেবতার স্বরূপ প্রদর্শন
পৃথিবীর স্থানগত দেবতাদের মধ্যে অগ্নি প্রথম ও প্রধান। যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিরুক্তকার যাস্ক তাই বলেন অগ্নিকেই প্রথম বাখ্যা করব।
কেননা, তিনি পৃথিবী স্থানের দেবতা
“অগ্নিঃ পৃথিবীস্থানস্তং প্রথমং বাখ্যাস্যামঃ”।
পৃথিবীর এই ইন্দ্র সকল দেবতাদের মধ্যেও প্রথম। তাই বেদ সংহিতা আরম্ভ অগ্নি সূক্ত দিয়ে।
আবার ঐতরেয় ব্রাহ্মণ আরম্ভ অগ্নি কথা দিয়ে-
“অগ্নির্বে প্রথমা দেবতানাম্?
আবার তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে –
“অগ্নিরগ্রে প্রথমো দেবতানাম্”।
বৈদিক ঋষি এই লোহিত বর্ণ পিঙ্গলনয়ন,রুদ্রাক্ষধারী, অন্তর্জ্যোতী ঐশী শক্তির আরাধনায় প্রথম আত্মনিয়োগ করেছিলেন। অগ্নির অপর নাম বহ্নি। কেননা তিনি দেবতাদের বহনকারী।
আসলে যাগকর্মে তাঁর একচেটিয়া প্রাধান্য-
” Agni’s priesthood is the mast salient feature of his characteristics.” (Macdonell)
অগ্নি সূক্তের ঋষি, ছন্দ ও দেবতা : –
ঋক সংহিতার প্রথম মন্ডলের প্রথম সূক্তটি প্রথম নয়টি মন্ত্রের সমাহার। এই সূক্তের ঋষি হলেন বিশ্বামিত্রের পুত্র মধুছন্দা। ছন্দ হল গায়ত্রী এবং দেবতা হল অগ্নি।
অগ্নি সূক্ত অনুসারে অগ্নিদেবতার স্বরূপ :-
এই সুক্তের নয়টি মন্ত্রে অগ্নি দেবতার যে সরূপ প্রকাশিত হয়েছে তা নিম্নে বর্ণিত হল –
অগ্নি সূক্ত অনুসারে অগ্নিদেবতা যজ্ঞের পুরোহিত :-
অগ্নি হলেন যজ্ঞের পুরোহিথ। সায়নাচার্য বলেন- রাজার পুরোহিত যেমন যজ্ঞ সম্পাদনের দ্বারা রাজার অভীষ্ট পৃরণ করেন। অগ্নিও সেইরূপ যজ্ঞের অঙ্গীভূত হোম সম্পাদন করিয়া অভীষ্ঠ সম্পাদক হন। এই হেতু অগ্নিকে পুরোহিত বলা হয়।
“অগ্নিমীলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবমৃত্বিজম্।
হোতারং রত্নধাতমম্।।”
অগ্নি সূক্ত অনুসারে অগ্নিদেবতা ধনদাতা :-
অগ্নির দ্বারা যজমান ধন লাভ করেন। যে ধন দিন দিন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও যশযুক্ত হয় ও তার দ্বারা অনেক বীরপুরুষ নিযুক্ত করা যায়। ঋষি দৃষ্টিতে-
“অগ্নিনা রয়িমশ্নবৎ পোষমেব দিবে দিবে
যশসং বীলবত্তমম্”।।
অগ্নি সূক্ত অনুসারে অগ্নিদেবতা যজ্ঞের রক্ষাকর্তা :-
যজমান যে যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন অগ্নিদেব সেই যজ্ঞকে রাক্ষসাদির আক্রমণ থেকে সতত রক্ষা করেন। অগ্নির দ্বারা রক্ষিত যজ্ঞে আহূত যজমানের হবি নিশ্চয়ই দেবতাদের সমীপে পৌঁছায়।
“অগ্নে যং যজ্ঞমধ্বং বিশ্বতঃ পরিভূরসি।
স ইদ্দেবেষু গচ্ছতি।।”
অগ্নি সূক্ত অনুসারে অগ্নিদেবতা সত্যপরায়ণ:-
অগ্নি ক্রান্তপ্রজ্ঞ, সত্যপরায়ণ, বিবিধ শ্রেষ্ঠ কীর্তিযুক্ত। ঋষির দৃষ্টিতে
” অগ্নির্হোতা কবিক্রতুঃ সত্যশ্চিত্রশ্রবস্তম।
দেবো দেবেভিরাগমৎ।।”
অগ্নি সূক্ত অনুসারে অগ্নিদেবতা কল্যানকারী:-
অগ্নি হব্যদাতা যজমানের সর্বদা কল্যাণ সাধন করে।
অগ্নি সূক্ত অনুসারে অগ্নিদেবতা সকলের পূজনীয়:-
অগ্নি দেবতাকে সকলে প্রতিদিন দিবারাত্র মনের সহিত নমস্কার জানায়। মননই হল অগ্নির সান্নিধ্য লাভের শ্রেষ্ঠ উপায়। ঋষির দৃষ্টিতে-
“উপত্বাগ্নে দিবেদিবে দোষাবস্তর্ধিয়া বয়ম্।
নমো বরন্ত এমসি।।”
অগ্নি সূক্ত অনুসারে অগ্নিদেবতা সহজলভ্য:-
পুত্রের নিকট পিতা যেরূপ অনায়াসে অধিগম্য, অগ্নি আমাদের নিকট সেই রূপ শোভন প্রাপ্তির যুক্ত হয়, মঙ্গলার্থ আমাদের নিকটে সমবেত হন। ঋষি দৃষ্টিতে-
” স নঃ পিতেব সুনবেঅগ্নে সূপায়নো ভব।
সচস্বা নঃ স্বস্তয়ে।।”
অগ্নিদেবের স্বরূপ :-
পরিশেষে বলা যেতে পারে, মানুষের পরমাত্মীয়ের তুল্য,সদা তরুণ, নিত্য ধনের অধিকারী অগ্নিদেবের স্বরূপ শুধু বাহ্যিক অনুষ্ঠান সর্বস্বতার মধ্যে পূর্ণতা পায়নি, তাঁর নিত্য ধন সদাপুষ্ট হয়ে যজমানকে শুধু বাহ্যিক ভাবে পূর্ণ করে না, রূপ থেকেও অরূপে পৌঁছে তা মানুষের অন্তরকে পবিত্রতার স্পর্শমণি দিয়ে নির্মল রাখে।
অকলঙ্ক পূণ্যের ঐশ্বর্যে মানুষ পূর্ণতা লাভ করে – তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও অনুভব করেন –
“আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে
এ জীবন পুণ্য করো দহন দানে।।” গীতবিতান
অতএব, অগ্নির স্বরূপ অফুরান।
আরো পড়ুন –
অগ্নিসূক্ত হতে অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর
অক্ষসূক্ত হতে ছোট অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর
- অক্ষসূক্ত হতে ছোট প্রশ্ন ও উত্তর
- অক্ষসূক্তের বর্ণনা অনুযায়ী অক্ষক্রীড়কের দুর্দশাগ্রস্তের চিত্র
- অক্ষসূক্তে ঋকবেদের যে সমাজচিত্র ফুটে উঠেছে তার বর্ণনা
সংজ্ঞান সূক্ত হতে ছোট অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর
বৃষ্টি সূক্ত হতে অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর
অগ্নি সুক্ত হতে মন্ত্র বাখ্যা -১
” যদঙ্গ দাশুষে ত্বমগ্নে ভদ্রং করিষ্যসি।
তবেত্তৎ সত্যমঙ্গিরঃ।।”
অনুবাদ:– হে অগ্নি, তুমি হব্যদাতা যজমানের যে কল্যাণ সাধন করিবে, হে অঙ্গিরা,সে কল্যাণ প্রকৃত তোমারই।
উৎস:- অয়ম্ মন্ত্রঃ ঋগ্বেদস্য প্রথমমন্ডলস্য প্রথমসূক্তে আম্নাতঃ।
ঋষিঃ দেবতা ছন্দঃ চ :- অস্য মন্ত্রস্য মধুচ্ছন্দা ঋষিঃ, অগ্নিঃ দেবতা, গায়ত্রী ছন্দঃ চ।
প্রসঙ্গ:- অস্মিন্ মন্ত্রে ঋষিঃ মধুচ্ছন্দা অগ্নেঃ স্বরূপম্ প্রকাশয়তি।
অন্বয়:- অস্য মন্ত্রস্য অন্বয়ঃ যথা অঙ্গ, অগ্নে ত্বম্ দাশুষে যৎ ভদ্রম্ করিষ্যসি। তৎ তব ইৎ অঙ্গিরঃ (এতৎ) সত্যম্।
সায়ণাচার্য:- সায়ণাচার্যঃ ইমম্ মন্ত্রম্ এবম্ ব্যাখ্যাতবান্ অঙ্গাগ্নে হে অগ্নে ত্বং দাশুষে হবির্দত্ততে যজমানায় তৎ প্রীত্যর্থং যদ্ভদ্রং বিত্তগৃহপ্রজাপশুরূপং কল্যানং করিষ্যসি তদ্ভদ্রং তব ইৎ। তবৈব সুখহেতুরিতি শেষঃ। হে অঙ্গিরো অগ্নে। এতচ্চ সত্যং ন ত্বত্র বিসংবাদো অস্তি।
সরলার্থ:- অস্য মন্ত্রস্য সরলার্থঃ যথা অগ্নিঃ যজমানায় ধনম্ প্রযচ্ছতি। তেন ধনেন যজমানঃ যজ্ঞানুষ্ঠানম্ যজমানায় অগ্নিঃ তৃপ্যতি। অতঃ সদা যজ্ঞে হবিঃ প্রদানার্থম্ যজমানায় অগ্নিঃ তৃপ্যতি। অতঃ সদা যজ্ঞে হবিঃ প্রদানার্থম্ যজমানায় অগ্নিঃ ধনম্ দদাতি ইতি দিক্।
অগ্নি সুক্ত হতে মন্ত্র বাখ্যা -২
“স ন পিতেব সূনবেঅগ্নে সূপায়ানো ভব।
সচস্বা নঃ স্বস্তয়ে।।”
অনুবাদ:- পুত্রের নিকট পিতা যেমন অনায়াসে অধিগম্য। হে অগ্নি, প্রসিদ্ধ তুমি আমাদের নিকট সেই রূপ শোভনপ্রাপ্তিযুক্ত হও, মঙ্গলার্থ আমাদের নিকট এসে সমবেত হও অর্থাৎ আমাদের সঙ্গে থাকো।
উৎস:- অয়ম্ মন্ত্রঃ ঋগ্বেদস্য প্রথমমন্ডলস্য প্রথমসূক্তে আম্নাতঃ।
ঋষিঃ দেবতা ছন্দঃ চ :- অস মন্ত্রস্য মধুচ্ছন্দা ঋষিঃ, অগ্নি দেবতা, গায়ত্রী ছন্দঃ চ।
প্রসঙ্গ:- অস্মিন্ মন্ত্রে ঋষিঃ অগ্নেঃ স্বরূপম্ প্রকাশয়তি।
অন্বয়:- অস্য মন্ত্রস্য অন্বয়ঃ যথা অগ্নেঃ সঃ (ত্বম্) নঃ সূনবে পিতেব সূপায়নঃ ভব। নঃ স্বস্তয়ে সচস্বা।
সায়ণভাষ্যম্:- সায়ণাচার্যঃ ইমম্ মন্ত্রম্ এবম্ ব্যাখ্যাতবান্ হে অগ্নে স ত্বং নঃ অস্মাদর্থং সূপায়নঃ শোভনপ্রাপ্তিযুক্তো ভব। তথা নো অস্মাকম্ স্বস্তয়ে বিনাশরাহিত্যর্থং সচস্বা সমবেতো ভব। তত্রো ভয়ত্র দৃষ্টান্তঃ। যথা সূনবে পুত্রার্থং পিতা সুপ্রাপঃ প্রায়েণ সমবেতো ভবতি তদ্বৎ।
সরলার্থ:- অস্য মন্ত্রস্য সরলার্থঃ যথা পুত্রম্ নিকষা পিতা যথা সদা তিষ্ঠতি, তথৈব অগ্নিঃ দেবতা অস্মান্ নিকষা সদা তিষ্ঠতু। সঃ সদা অস্মাকম্ মঙ্গলম্ করোতু ইতি শিবম্।