ঋকসংহিতার প্রথম মন্ডলের দ্বিতীয় অনুবাকের চতুর্থ সূক্তকে অবলম্বন করে ইন্দ্র দেবতার স্বরূপ প্রদর্শন করা হল । ইন্দ্রদেবতার স্বরূপ অর্থাৎ এই সূক্তে ইন্দ্র দেবতার যে স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হল
ঋকসংহিতার প্রথম মন্ডলের দ্বিতীয় অনুবাকের চতুর্থ সূক্তকে অবলম্বন করে ইন্দ্র দেবতার স্বরূপ প্রদর্শন কর
অবস্থান | ঋকবেদ-প্রথমমন্ডল-দ্বিতীয় অনুবাকের চতুর্থ সূক্ত |
ঋষি | বিশ্বামিত্রের পুত্র মধুচ্ছন্দা |
ছন্দ | গায়ত্রী |
দেবতা | ইন্দ্র |
মন্ত্র সংখ্যা | ১০ টি |
ভূমিকা:- বৈদিক দেবতা মন্ডলীর মধ্যে ইন্দ্রের প্রাধান্য সর্বাতিশায়ী। তিনি সকলের অধিপতি। পরমৈশ্বর্যবোধক ‘ইদি’ ধাতু হইতে নিষ্পন্ন ‘ইন্দ্র’ – শব্দ ইন্দ্রের ঐরূপ পরিচয়ই বহন করে। শৌর্যে, বীর্যে ও মহিমায় ইন্দ্র অদ্বিতীয়। ঋকবেদের সূক্তগুলির প্রায় এক-চতুর্থাংশ তার প্রশস্তিতে নিবেদিত। ইন্দ্র এককভাবে এবং অন্য দেবতাদের সহিত যুগ্মভাবে যে সকল সূক্তে স্তুত হয়েছেন তাদের সংখ্যা প্রায় তিনশত।
আচার্য শৌণক তাঁহার বৃহদ্দেবতা গ্রন্থে বিশেষত্ব বর্ণনা করে বলেছেন-
” রসাদানং তু কর্মাস্য বৃত্রস্য স নির্বহণম্।
স্তুতেঃ প্রভুত্বং সর্বস্য বলস্য নিখিলা কৃতিঃ।।”
ইন্দ্র সূক্তের ঋষি, ছন্দ, দেবতা :-
ঋক সংহিতার প্রথম মন্ডলের দ্বিতীয় অনুবাকের চতুর্থ সূক্তটি দশটি মন্ত্রের সংকলন। এই সূক্তের ঋষি হলেন- বিশ্বামিত্রের পুত্র মধুছন্দা, দেবতা হলেন ইন্দ্র, ছন্দ হল গায়ত্রী।
ইন্দ্র দেবতার স্বরূপ :-
এই সূক্তে ইন্দ্র দেবতার যে স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হল-
ইন্দ্র দেবতা রক্ষাকর্তা স্বরূপ:-
দোহক যেমন দোহনের নিমিত্ত সুদুগ্ধবতী গাভীকে আহ্বান করে সকলে তেমনি রক্ষার্থ দিনে দিনে শোভন কর্মা ইন্দ্রকে আহ্বান করে।
ঋষির দৃষ্টিতে-
” সুরূপকৃত্নুমূতয়ে সুদুঘামিব গোদুহে।
জুহুমসি দ্যবিদ্যবি।।”
ইন্দ্র দেবতা সোমপায়ী ও গাভীদাত্রা :-
বৈদিক দেবতাদের মধ্যে ইন্দ্র শ্রেষ্ঠ সোমপানকারীরূপে প্রসিদ্ধ। যজমান তাঁর অনুষ্ঠিত প্রাতঃসবন, মাধ্যন্দিন সবন ও তৃতীয় সবন – এই তিন সবনেই সোমরস পানে তৃপ্ত করবার জন্য ইন্দ্রকে আহ্বান জানান। ইন্দ্র সোমরস পানে তৃপ্ত হলে ও হৃষ্ট হলে যজমানকে প্রচুর গাভী দান করেন।
ঋষির দৃষ্টিতে-
” উপ নঃ সবনা গহি সোমস্য সোমপাঃ পিব।
গোদা ইদ্রেবতো মদঃ।।”
ইন্দ্র দেবতা ঋষির সমীপবর্তী
ইন্দ্রের নিকট ঋষির প্রার্থনা এই যে ইন্দ্র যেন সর্বদায় তাদের সমীপে থাকেন। তাদের নিকটই যেন তাঁর স্বরূপ ও মাহাত্ম্য প্রকাশ করেন। ঋষির দৃষ্টিতে-
” অথা তে অন্তমানাং বিদ্যাম সুমতীনাম্।
মা নো অতি খ্য আ গহি।।”
ইন্দ্র দেবতা ধনবান ও ধনদাতা :-
এই ইন্দ্র দেব হলেন ধনবান। তিনি যজমানকে ও তাঁর আত্মীয় বর্গকে শ্রেষ্ঠ ধন দান করেন।
ইন্দ্র দেবতা শত্রুবিনাশী :-
ইন্দ্র তাঁর বজ্র দ্বারা শত্রুকে ধ্বংস করেন। সেইহেতু ইন্দ্রকে দস্ম অর্থাৎ শত্রু বিনাশকারক রূপে সম্বোধন করা হয়েছে।
ঋষির দৃষ্টিতে-
” উত নঃ সুভগা অরির্বোচেয়ুর্দস্মকৃষ্টয়ঃ।
স্যামেদিন্দ্রস্য শর্মণি।।”
ইন্দ্র দেবতা বৃত্রবিনাশী ও ভক্তপ্রিয় :-
ইন্দ্রের অপর নাম শতক্রতু। তিনি যজ্ঞের সোম পান করে বৃত্র প্রভৃতি শত্রুদিগকে হত্যা করেছিলেন। যুদ্ধে তিনি তাঁর প্রিয় ভক্তকে রক্ষা করেন।
ঋষির দৃষ্টিতে-
” অস্য পীত্বা শতক্রতো ও ঘনো বৃত্রাণামভবঃ।
প্রাবো বাজেষু বাজিনম্।।”
ইন্দ্র দেবতা ধনসম্পদের রক্ষাকর্তা ও সোম অভিষককারীর সখা:-
ইন্দ্র হলেন ধনের রক্ষক। তিনি মহান তিনি পূজার্থ। যিনি সোমের অভিষব করেন তাঁকে সকল সময় রক্ষা করেন। সোমযোগকর্তা যাতে সোমযোগ সম্পূর্ণ করতে পারেন সেইজন্য তিনি সহায়তাও করেন।
ঋষির দৃষ্টিতে-
” যো রায়ো ত বনির্মহানৎসুপারঃ সুন্বতঃ সখা।
তস্মা ইন্দ্রায় গায়ত।।”
ইন্দ্রের দেবতার মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব
উপসংহার :- ইন্দ্রের মহিমা উচ্ছ্বসিত কন্ঠে খ্যাপিত হয়েছে ঋকবেদের বিখ্যাত সজনীয় সূক্তে। ইন্দ্র কিনা করেছেন? তিনি ব্যথিত পৃথিবীকে দৃঢ় করেছেন। তিনি প্রকুপিত পর্বতসমূহ কে নিয়ন্ত্রিত করেছেন। তিনি সুবিস্তৃত অন্তরীক্ষলোককে নির্মাণ করেছেন। তিনি দ্যুলোককে স্তম্ভিত করেছেন।
এই বীরত্বব্যঞ্জক বহুপ্রকার কর্ম নিষ্পাদনের জন্য ইন্দ্র যে কেবল শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন তা নয়, তিনি বৈদিক যুগের জাতীয় দেবতারূপেও অভিহিত হয়েছেন।
ইন্দ্র সুক্ত হতে ব্যাখ্যা-(১.৪.৮)
ইন্দ্র সূক্ত – প্রথমমণ্ডল- চতুর্থ সূক্ত
”অস্য পীত্বা শতক্রতো ঘনো বৃত্রাণামভবঃ।
প্রাবো বাজেসু বাজিনম্।।(১.৪.৮)”
অনুবাদ :- হে শতত্রুতো, এই সোম পান করে তুমি বৃত্র প্রভৃতি শত্রুদিগকে হনন করেছিলে, যুদ্ধে (তোমার ভক্ত ) যোদ্ধাদিগকে রক্ষা করেছিলে।
উৎসঃ :- অয়ম্ মন্ত্রঃ ঋগ্বেদস্য প্রথমমণ্ডলস্য চতুর্থসূক্তে আম্নাতঃ।
ঋষিঃ :- দেবতা ছন্দঃ চ :- অস্য মন্ত্রস্য মধুচ্ছন্দা ঋষিঃ, ইন্দ্রঃ দেবতা, গায়ত্রী ছন্দঃ চ।
প্রসঙ্গঃ :- অস্মিন্ মন্ত্রে ঋষিঃ মধুচ্ছন্দা ইন্দ্রস্য স্বরূপম্ প্রকাশয়তি।
অন্বয়ঃ :- অস্য মন্ত্রস্য অন্বয়ঃ যথা – শতত্রুতো, অস্য পীত্বা বৃত্রানাম্ ঘনঃ অভবঃ। বাজেষু বাজিনম্ প্রাবঃ।
সায়নভাষ্যম্ :- সায়ণাচার্যঃ ইমম্ মন্ত্রম্ এবম্ ব্যাখ্যাতবান্ – হে শতত্রুতো বহুকর্মযুক্তেন্দ্র ত্বমস্য সোমস্য সম্বন্ধিনমহং পীত্বা বৃত্রাণাং বৃত্রাণামকাসুরপ্রমুখাণাং শত্রুণাং ঘনো অভবঃ। হন্তাভূঃ। ততো বাজেষু সংগ্রামেষু বাজিনং সংগ্রামবন্তং স্বভক্তং প্রাবঃ। প্রকর্ষেণ রক্ষিতবানসি।
সরলার্থঃ:- অস্য মন্ত্রস্য সরলার্থঃ যথা- ইন্দ্রঃ সোমম্ পীত্বা বৃত্রঃ ইতি অনুসরম্ হন্তিস্ম। সঃ দেবঃ সংগ্রামেষু সংগ্রামবন্তম্ স্বভক্তম্ রক্ষতি ইতি শিবম্।
আরো পড়ুন –