সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস হতে দৃশ্যকাব্য সম্পর্কে সাধারন তথ্য ছোট প্রশ্ন ও উত্তর এর মাধ্যমে দেওয়া হল । দৃশ্যকাব্য পরিচয় , দৃশ্য কাব্য কাকে বলে প্রভৃতি আলোচনা করা হয়েছে । সংস্কৃত নাটক হতে ছোট প্রশ্ন ও উত্তর ।
দৃশ্যকাব্য সম্পর্কে সাধারণ পরিচয়-ছোট প্রশ্ন ও উত্তর
১) সংস্কৃত অলংকার শাস্ত্রে দৃশ্যকাব্য পরিচয় দাও ?
সংস্কৃত অলংকার শাস্ত্রে সাহিত্য সাধারণভাবে কাব্য নামে পরিচিত। সেই কাব্য দু,প্রকার- শ্রব্য ও দৃশ্য।
শুধুমাত্র পড়া ও শোনায় যে কাব্য, তা শ্রব্যকাব্য। আর একই সঙ্গে চক্ষু ও কর্নের আনন্দবিধান করে বলে নাটক দৃশ্যকাব্য নামে পরিচিত।
এই দৃশ্য কাব্য আবার রূপক ও উপরূপক এই দুভাগে বিভক্ত।
২) দৃশ্যকাব্যের অপর নাম “রূপক” কেন ? সেই রূপক কয়প্রকার ?
উঃ=> অভিনেতা-অভিনেত্রীর উপর নাট্যচরিত্রের রূপের আরোপ ঘটে, নাট্যচিত্রিত চরিত্রের চলন, বলন, ভাবাদি অভিনেতা-অভিনেত্রীর দ্বারা রূপায়িত হয় বলে দৃশ্যকাব্যকে রূপক বলা হয়।
সাহিত্যদর্পনে বিশ্বনাথ বলেছেন, “তদরূপারোপাত্তু রূপকম্”।
রূপক দশপ্রকার – নাটক, প্রকরন, ভান,ব্যায়োগ, সমবকার, ডিম, ঈহামৃগ, অংকবীথি ও প্রহসন।
৩) অভিনয় কয় প্রকার ও কি কি ? এগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উঃ=> নাট্যশাস্ত্রাদি গ্রন্থে চারপ্রকার অভিনয়ের কথা বলা হয়েছে আঙ্গিক, বাচিক,আহার্য ও সাত্ত্বিক।
যা হাত, পা, চোখ, মুখ প্রভৃতির দ্বারা বা অঙ্গভঙ্গীর দ্বারা নিষ্পাদ্য তা হল আঙ্গিক অভিনয়। যা বাক্ বা সংলাপের দ্বারা নিষ্পাদ্য, তা হল বাচিক অভিনয়। যা বেশ -ভূষা প্রভৃতির দ্বারা নিষ্পাদ্য, তা হল আচার্য অভিনয়।
আর যে অভিনয়ে “সত্ত্ব” অর্থাৎ যে চরিত্রের অভিনয় হচ্ছে, সেই রাম-দুষ্যন্ত প্রভৃতি চরিত্রের মানসিক অবস্থা অভিনেতা-অভিনেত্রীর দ্বারা যথার্থভাবে প্রকাশিত হয়, সেরূপ অভিনয়কে সাত্ত্বিক অভিনয় বলে।
৪) উপরূপক কয়প্রকার ও কি কি ?
উঃ=> উপরূপক আঠার প্রকার ।
সেগুলি হল – নাটিকা, ত্রোটক, গোষ্ঠী, সট্টক, নাট্যরাসক, প্রস্থান, উল্লাপ্য, কাব্য, প্রেউখন, রাসক, সংলাপক, শ্রীসদিত, শিল্পক, বিলাসিকা, দুর্মল্লিকা, প্রকরনী, হল্লীশ ও ভমিক।
উঃ=> অলংকার শাস্ত্রে অবস্থার অনুকরনকে “অভিনয়” বলা হয়েছে-“ভবেদ্ অভিনয়োঅবস্থানুকারঃ”।
লোকবৃত্তের, লোকচরিত্রের, রাম,রাবন প্রভৃতি চরিত্রের কিংবা বাস্তব জগতের নানা চরিত্রের অবস্থা প্রভৃতির অনুকরন-ই অভিনয় পদবাচ্য।
৭) আচার্য ভরতের মতে, দৃশ্যকাব্য তথা নাটকের মূল বৈশিষ্ট্য কি ?
উঃ=> আচার্য ভরত বলেন, নাটকে সমস্ত শ্রেনীর মানুষের মনোবিনোদনের উপকরনে আছে, তাই নাটক হল সর্ববর্নের অধিকারযুক্ত পঞ্চমবেদ।
পৃথিবীতে এমন কোনো জ্ঞান, শিল্প, কলা বা বিদ্যা নেই নাটকে যার অনুকরন হয় না।
৮) সংস্কৃত নাটকে কাহিনী পাঁচটি পর্যায়ে বিভক্ত হয়। এই পর্যায়গুলির নাম সন্ধি। এই পাঁচটি সন্ধির পারিভাষিক নাম- মুখ প্রতিমুখ, গর্ভ, বিমর্ষ, উপসংহৃতি বা নিবর্হন।
৯) নাটক অর্থাৎ দৃশ্যকাব্য সম্পর্কে কালিদাসের অভিমত ব্যাখ্যা কর।
উঃ=> কালিদাস তাঁর ” মালবিকাগ্নিমিত্রম্ ”(১.৪) নাটকে বলেছেন, নাটক হল ( শৃঙ্গার,বীর প্রভৃতি) রসের আশ্রয় এবং এখানে ত্রিগুনের(সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ) প্রভাবজাত লোকচরিত্র প্রত্যক্ষগোচর হয়।
অতএব, নাটক ভিন্ন ভিন্ন রূচিসম্পন্ন মানুষের একত্র মনোরঞ্জনের সার্থক সাহিত্য উপকরন “ত্রৈগুন্যোদ্ভবমত্র লোকচরিতং নানা রসং দৃশ্যতে।
নাট্যং ভিন্নরুচেঃ জনস্য বহুধাপ্যেকং সমারাধনম্।।”
১০) সংস্কৃত দৃশ্যকাব্য তথা নাটকে পাঁচটি সন্ধির সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য বিষয়গুলির নাম উল্লেখ কর।
উঃ=> সংস্কৃত নাটকে পাঁচটি “সন্ধি”-র সঙ্গে যুক্ত থাকে পাঁচটি অর্থ প্রকৃতি (নাট্য প্রয়োজনসিদ্ধির হেতু)।
পাঁচটি অবস্থা যথাক্রমে হল- আরম্ভ, যত্ন, প্রাপ্ত্যাশা, নিয়তাপ্তি ও ফলাগম। পাঁচটি অর্থ প্রকৃতি হল- বীজ, বিন্থ, পতাকা, প্রকরী ও কার্য।
১১) সংস্কৃত নাটকে কাহিনীর কয়টি ভাগ ও কি কি ?
উঃ=> সংস্কৃত নাটকে কাহিনী দুটি ভাগে বিভক্ত- আধিকারিক ও প্রাসঙ্গিক।
আধিকারিক হল মূল কাহিনী, যেমন- ভবভূতির “মালতীমাধবম্” প্রকরনে মাধব মালতীর প্রনয়কাহিনী আধিকারিক(Main plot).
আর প্রাসঙ্গিক কাহিনী হল- মূল কাহিনীর পরিপুষ্টির জন্য সংযোজিত উপ কাহিনী (sub plot).
যেমন- “মালতীমাধবম্” নাটকে মকরন্দ ও মদয়ন্তিকার কাহিনী ।
১২) গঠন ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে সংস্কৃত নাটকের কয়টি ভেদ দেখা যায় ?
উঃ=> গঠন ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে সংস্কৃত নাটকের তিনটি ভেদ স্বীকৃত- বস্তু অর্থাৎ কাহিনীগত, নেতা অর্থাৎ নায়কগত এবং রস অর্থাৎ কাহিনীর প্রকৃতিগত।
১৩) কিরূপ ব্যক্তি সংস্কৃত নাটকের নায়ক হওয়ার যোগ্য ?
উঃ=> দেবতা, গান্ধর্ব প্রভৃতি কাল্পনিক চরিত্র এবং রাজা, রাজর্ষি, ব্রাহ্মন, অমাত্য, বনিক প্রভৃতি লোকচরিত্র সংস্কৃত নাটকের নায়ক হওয়ার উপযুক্ত বলে নাট্যশাস্ত্রাদি গ্রন্থে কথিত হয়েছে।
১৪) কে সংস্কৃত দৃশ্যকাব্য অর্থাৎ নাটকের নায়িকা হওয়ার উপযুক্ত ?
উঃ=> স্বকীয়া অর্থাৎ অবিবাহিতা কন্যা বা পত্নী, পরকীয়া অর্থাৎ পরস্ত্রী এবং সামান্য অর্থাৎ গনিকা সংস্কৃত নাটকের নায়িকা হওয়ার উপযুক্ত।
১৫) স্বকীয়া নায়িকা কয়প্রকার ও কি কি ?
উঃ=> স্বকীয়া বা স্বীয়া নায়িকা তিনপ্রকার- মুগ্ধা, মধ্যমা ও প্রগলভা।
১৬) মধ্যমা ও প্রগলভ নায়িকা কয়প্রকার ও কি কি ?
উঃ=> মধ্যমা বা মধ্যা ও প্রগলভা নায়িকা প্রত্যেকে তিন প্রকার – ধীরা, অধীরা ও ধীরাধীরা(উভয়াত্মিক)।
১৭) সংস্কৃত নাটকের চারপ্রকার নায়কের উদাহরণ দাও।
উঃ=> সংস্কৃত নাটকে ধীরোদাত্ত, ধীরোদ্ধত, ধীরলোলিত ও ধীরপ্রশান্ত – এই চার প্রকার নায়কের কথা বলা হয়েছে ।
তার মধ্যে ভবভূতির “উত্তররামচরিতম্” নাটকের নায়ক রাম হলেন ধীরোদাত্ত প্রকৃতির নায়ক, “অভিজ্ঞানশকুন্তলম্” নাটকের নায়ক দুষ্যন্তও তাই। ভট্টনারায়নের “বেনীসংহারঃ” নাটকের নায়ক ভীমসেন ধীরোদ্ধত, হর্ষদেব রচিত নাটক রত্নাবলীর নায়ক বৎসরাজ এবং ভবভূতির “মালতীমাধবম্” প্রকরনের মাধব ধীরপ্রশান্ত নায়ক।
১৮) সংস্কৃত নাটকে কয় প্রকার মঞ্চ নির্দেশ পাওয়া যায় ?
উঃ=> সংস্কৃত নাটকে পাঁচপ্রকার মঞ্চ নির্দেশ পাওয়া যায়। এগুলি হল – প্রকাশ্য, অপবারিত, জনান্তিক, ভূগত ও আকাশভাষিত।
২০) সংস্কৃত নাটকের প্রথমে ও শেষে কি থাকে ?
উঃ=> সংস্কৃত নাটকে প্রথমে থাকে নান্দী (মঙ্গলবাচক প্রারম্ভিক শ্লোক) এবং শেষে থাকে ভরতবাক্য।
২১) নান্দী কী ? নান্দী কয় প্রকার ও কী কী ?
উঃ=> সংস্কৃত নাটকের প্রারম্ভে যে শ্লোকের দ্বারা নাট্যকার তাঁর নিজের অথবা অন্যের অভিপ্রায় সিদ্ধির জন্য অভিনেতৃগন দেবতা, ব্রাহ্মণ- অথবা রাজাদের স্তুতি বা প্রশংসা করে থাকেন, সেই অংশকে মঙ্গলবাচক শ্লোককে “নান্দী” বলে। আনন্দ দেয় বলেই এর নাম “নান্দী”-নন্দয়তি আনন্দয়তি ইতি নান্দী।
সংস্কৃত নাটকে নান্দী চার প্রকার নমস্কৃতি, মাঙ্গপিকী, আম্নীঃ এবং পত্রাবলী।
২২) “ভরতবাক্য” কি ?
উঃ=> ভরতবাক্য হল নাটকের শেষ আশীর্বাদমূলক শ্লোক বা শান্তিবাক্য। নাটকের পঞ্চসন্ধির অন্তিম “উপসংহতি” নামক সন্ধির চৌদ্দটি অঙ্গের মধ্যে শেষ অঙ্গ হল প্রশস্তি। এখানে রাজা, দেশ ও দেশবাসিগনের শান্তি কামনা করা হয়। বিশ্বনাথের কথায় -“নৃপদেশাদিশান্তিস্তু প্রশস্তিরভিধীয়তে”। এই প্রশস্তিবাক্য নাটকের কোনো চরিত্র পাঠ করলে তা “প্রশস্তি” পদবাচ্য, আর সূত্রধর জাতীয় প্রধান নট মঞ্চে প্রবেশ করে পাঠ করলে তাকে “ভরতবাক্য” বলে। “ভরত” অর্থাৎ নট, নটের বাক্য- তাই ভরতবাক্য।
২৩) নাটক সংক্রান্ত প্রাচীন তথ্য কার লেখা কোন গ্রন্থে পাওয়া যায় ?
উঃ=> নাট্য সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আচার্য ভরত প্রনীত (আনুমানিক খৃঃ পূঃ ৪র্থ- ২য় শতক) “নাট্যশাস্ত্র” নামক গ্রন্থে পাওয়া যায়। উক্ত গ্রন্থে নাটকের স্বরূপ, বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য, পাত্র, পাত্রী, পরিচালনা, মঞ্চ, নৃত্য-গীত-বাদ্য প্রভৃতির আলোচনা আছে।
২৪) সংস্কৃত নাটকের উৎপত্তি বিষয়ে কি কি মত পাওয়া যায় ?
উঃ=> সংস্কৃত নাটকের উৎপত্তি বিষয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য পন্ডিতগন বিভিন্ন মত পোষন করেন। এ বিষয়ে প্রধান মতগুলি হল – দৈব উৎপত্তিবাদ, পুতুল নাচমূলক, ছায়ানাটকমূলক, পরলোকগত পূর্বপুরুষদের পারলৌকিক অনুষ্ঠান সংক্রান্ত, বসন্তোৎসবমূলক, কৃষ্ণপূজাসম্ভুত ও গ্রীক প্রভাবজাত।
২৫) সংস্কৃত নাটকের উৎপত্তি বিষয়ে সবচেয়ে প্রাচীন মত কি ?
উঃ=> সংস্কৃত নাটকের উৎপত্তি বিষয়ে সবচেয়ে প্রাচীন মতটি আচার্য ভরতের নাট্যশাস্ত্রে পাওয়া যায়। এই মত অনুসারে দেবরাজ ইন্দ্রের অনুরোধে প্রজাপতি ব্রহ্মা স্বয়ং ঋগ্বেদ থেকে সংলাপ, সামবেদ থেকে গান, যজুর্বেদ থেকে অভিনয় এবং অথর্ববেদ থেকে ভাব ও রস সংগ্রহ করে নাট্যবেদ বা নাটক সৃষ্টি করেন। এই মত দৈব উৎপত্তিবাদ নামে পরিচিত।
২৬) কার পরিচালনায় কার লেখা কি কি নাটক প্রথম কোথায় কোথায় অভিনীত হয় ?
উঃ=> আচার্য ভরতের পরিচালনায় ব্রহ্মরচিত দুটি নাটক “অমৃতমন্থন” ও “ত্রিপুরদাহ” যথাক্রমে স্বর্গের দেবসভায় ও হিমালয়ের কৈলাসে প্রথম অভিনীত ৎ মঞ্চস্থ হয়।
২৭) ব্রহ্মা রচিত দুটি নাটকের নাম এবং তাদের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লেখ ?
উঃ=> ব্রহ্মা রচিত দুটি নাটক হল-“অমৃতমন্থন” ও “ত্রিপুরাদাহ”। “অমৃতমন্থন” নাটকে সমুদ্রমন্থনে উথ্থিত অমৃতের বন্টনকে কেন্দ্র করে দেব-দানবের সংগ্রাম বর্ণিত হয়েছে। আর “ত্রিপুরাদাহ” নাটকে হিমালয়ে শিবের উপস্থিতিতে তাঁরই (শিব) দ্বারা ত্রিপুরদহনের ঘটনা প্রদর্শিত হয়েছে।
২৮) নাটকের উৎপত্তির ক্ষেত্রে “পুতুলনাচ” মতের প্রবক্তা কে ? এবং এই মতের প্রতিপাদ্য কি ?
উঃ=> অধ্যাপক পিশেল মনে করেন যে, পুতুল নাচ থেকে নাটকের উৎপত্তি ঘটেছে। সূত্রধার, স্থাপক প্রভৃতি নাট্য-ব্যবহৃত শব্দ তার থেকে রসভাবময় নাটকের উৎপত্তি মানা যায় না।
২৯) সংস্কৃত নাটকের উৎপত্তির সঙ্গে পরলোকগত পূর্বপুরুষদের পারলৌকিক অনুষ্ঠানের যোগ কতটা যুক্তিযুক্ত ?
উঃ=> ড.রিজওয়ে মনে করেন যে, সংস্কৃত নাটক পূর্বপুরুষদের পারলৌকিক অনুষ্ঠান থেকে উদ্ভূত । কিন্তু হিন্দুধর্মে মৃত পুরুষ সম্পর্কিত প্রেত বা বিষয়ক যেসব অনুষ্ঠান ছিল, সেগুলির সঙ্গে নাটকের উৎপত্তির কোনো যোগ ছিল না।
৩০) নাট্যসাহিত্যের উৎপত্তি কি বসন্তোৎসব সম্পৃক্ত ?
উঃ=> কোনো কোনো পাশ্চাত্য পন্ডিত ইউরোপীয় উৎসবানুষ্ঠানের সাযুজ্যে প্রাচীন ভারতের বসন্তোৎসবের সঙ্গে নাট্যানুষ্ঠানের মৌলক যোগসূত্র আবিস্কারের চেষ্টা করেছেন। নাট্যশাস্ত্রের বিবরন অনুসারে সংস্কৃত নাটক প্রথম ইন্দ্রধ্বজ উৎসবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু এই মত গ্রহনযোগ্য নয়। কারন, ইন্দ্রধ্বজ উৎসব ভাদ্রমাসে অনুষ্ঠিত হয়, শীতের শেষে বসন্তকালে নয়।
৩১) সংস্কৃত দৃশ্যকাব্য তথা নাটকের উৎপত্তি কি গ্রীকপ্রভাব সজ্ঞাত ?
উঃ=> সংস্কৃত নাটকে যবন, যবনী, যবনিকা প্রভৃতি শব্দ স্মারক প্রভৃতির সাহায্যে পরিচয় উদঘাটন এবং আরও কতগুলি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে পাশ্চাত্য পন্ডিত weber ও winelisch মনে করেন যে, সংস্কৃত নাটক গ্রীক প্রভাববশতই উৎপন্ন হয়েছে। কিন্তু এতিমখানা মত অভ্রান্ত নয়। কারন, “যবনী” শব্দটি প্রাচীন ভারতে রাজার দেহ রক্ষিনীকে নির্দেশ করত। “যবনিকা” শব্দে গ্রীক পদার্থকেও বোঝায় না। আর স্মারকের সাহায্যে পরিচয় প্রকাশ রামায়ণ প্রভৃতি গ্রন্থেও দেখা যায়।
৩২) স্মারক বা অভিজ্ঞান এর উল্লেখযুক্ত সংস্কৃত নাটকগুলির নাম উল্লেখ কর।
উঃ=> স্মারক বা অভিজ্ঞানের উল্লেখ ও প্রভাব কয়েকটি সংস্কৃত নাটকে পরিদৃষ্ট হয়। সেগুলি হল- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্(শকুন্তলার আংটি) , বিক্রমোর্বশীয়ম্(সঙ্গমনমনি ও পুরূরবা-পুত্রা আয়ূর দ্বারা প্রযুক্ত শর), শ্রীহর্ষের রত্নাবলী (কন্ঠহার ), ভবভূতির মালতীমাধব(মালা) এবং বিশাখদত্তের মুদ্রারাক্ষস(মুদ্রা)।
৩৩) প্রস্তাবনা কি ? সংস্কৃত নাটকে প্রস্তাবনা কয় প্রকার ?
উঃ=> নাটকের শুরুতে সূত্রধারের সঙ্গে নটী, বিদূষক প্রভৃতির কথাবার্তার মাধ্যমে যেখানে নাটকের নাম, নাট্যকারের নাম, দর্শক-প্রশংসা প্রভৃতি সূচিত হয়, সেই অংশকে প্রস্তাবনা বলে।
সংস্কৃত নাটকে প্রস্তাবনা পাঁচপ্রকার। যথা- উদঘাত্যক, কথোদঘাত, প্রয়োগাতিশয়, প্রবর্তক ও অবলগিত।
৩৪) পতঞ্জলির মহাভাষ্যে যে দুটি নাটকের উল্লেখ পাওয়া যায়, তাদের নাম উল্লেখ কর।
উঃ=> পতঞ্জলির (৫০ খৃঃ পূর্বাব্দ) মহাভাষ্যে আমরা দুটি সংস্কৃত নাটকের অভিনয়ের উল্লেখ পাই। সেই দুটি নাটক হল “বলিবন্ধন” ও “কংসনিধন”।
৩৫) কীথ এবং ম্যাক্সমূলার -এর মতে, সংস্কৃত নাটকের বীজ কি ?
উঃ=> পন্ডিতপ্রবর কীথ এবং ম্যাক্সমূলারের মতে, বৈদিক সংবাদযুক্তগুলি সংস্কৃত নাটকের বীজস্বরূপ । সেরূপ কয়েকটি সংবাদসূক্ত হল – যমযমী(ঋ.সং.১০.১০), পুরূরবা -ঊর্বশী(১০.৯৫), বিশ্বামিত্র-শুতুদ্রু-বিপাশা প্রভৃতি।
একই সঙ্গে চক্ষু ও কর্নের আনন্দবিধান করে বলে নাটক দৃশ্যকাব্য নামে পরিচিত। অর্থাৎ রঙ্গমঞ্চে যা দর্শন ও শ্রবণ করা যায় তাই দৃশ্যকাব্য ।
অভিনেতা-অভিনেত্রীর উপর নাট্যচরিত্রের রূপের আরোপ ঘটে, নাট্যচিত্রিত চরিত্রের চলন, বলন, ভাবাদি অভিনেতা-অভিনেত্রীর দ্বারা রূপায়িত হয় বলে দৃশ্যকাব্যকে রূপক বলা হয়।
কালিদাস তাঁর “মালাবিকাগ্নিমিত্রম্”(১.৪) নাটকে বলেছেন, নাটক হল ( শৃঙ্গার,বীর প্রভৃতি) রসের আশ্রয় এবং এখানে ত্রিগুনের(সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ) প্রভাবজাত লোকচরিত্র প্রত্যক্ষগোচর হয়।