বাণভট্ট ছিলেন খ্রিষ্টাব্দ সপ্তম শতাব্দীর ভারতীয় সংস্কৃত পণ্ডিত। সংস্কৃত গদ্য সাহিত্যে মহাকবি হলেন বানভট্ট । এখানে গদ্য সাহিত্যে বানভট্টের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হল। বানভট্ট রচিত দুটি গ্রন্থের নাম ও আলোচনা করা হল।
সংস্কৃত গদ্য সাহিত্যে বানভট্টের অবদান
গদ্য সাহিত্যে বানভট্টের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হল ও বানভট্ট রচিত দুটি গ্রন্থের নাম করো ।
জন্ম | ৬০৬ খ্রিস্টাব্দ |
পিতার নাম | চিত্রভানু |
মাতার নাম | রাজদেবী |
মৃত্যু | ৬৪৭ খ্রিস্টাব্দ |
রচনা | কাদম্বরী ও হর্ষচরিত |
পেশা | রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি |
বানভট্ট
সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে মহাকবি কালিদাসের পরবর্তী যুগে যে সমস্ত কবিগনের নাম শ্রদ্ধাসহকারে স্মরণ করা যায়, বানভট্ট ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম । মহাকবি কালিদাস যেমন সংস্কৃত পদ্য কাব্যের জতে তুঙ্গে অধিষ্ঠিত, বানভট্টও তেমনি গদ্যকাব্যের জতে স্বমহিমায় মণ্ডিত। সমালোচক গনের মতে, গদ্যই কবি প্রতিভার কষ্ঠীপাথর-“গদ্যং কবীণাং নিকষং বদন্তি।” বানভট্ট সেই পরীক্ষায় অসাধারন কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।
বানভট্ট রচিত গ্রন্থের পরিচিতি
বানভট্ট সংস্কৃত সাহিত্য জগতকে দুটি গদ্য কাব্য উপহার দিয়েছেন। যথা-
- (¡) “হর্ষচরিত” নামক আখ্যায়িকা শ্রেনীর গদ্যকাব্য
- ii ) “কাদম্বরী” নামক বিখ্যাত কথা শ্রেনীর কাব্য ।
অর্থাৎ বানভট্ট রচিত দুটি গ্রন্থের নাম হল – কাদম্বরী ও হর্ষচরিত ।
আপনি এই পোস্ট টি দেখতে পারেন বানভট্ট রচিত হর্ষচরিত গদ্য কাব্য (টীকা)
বানভট্ট রচিত হর্ষচরিত গ্রন্থের পরিচয়
বানভট্টের “হর্ষচরিত” আখ্যায়িকার নিয়ম অনুসারে আটটি উচ্ছ্বাসে বিভক্ত । ঐতিহাসিক পটভূমিকাকে ভিত্তি করে রচিত।
হর্ষচরিত গ্রন্থের উৎস
বানভট্ট ইতিহাস প্রসিদ্ধ সম্রাট হর্ষবর্ধনের সভাকবি ছিলেন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তার কাব্যে তিনি হর্ষবর্ধনের রাজবংশের মহিমাই কীর্তন করেছেন।
হর্ষচরিত গ্রন্থের বিষয়বস্তু
হর্ষচরিত-এর প্রথম আড়াই উচ্ছ্বাসে বানভট্ট নিজের বংশাবলীর পরিচয় দিয়েছেন। এরপর চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ উচ্ছ্বাসে বর্ণিত হয়েছে থানেশ্বর রাজ প্রভাকরবর্ধনের কাহিনী। তার দুই পুত্র রাজ্যবর্ধন এবং হর্ষবর্ধন। কন্যার নাম ছিল রাজ্যশ্রী। রাজ্যশ্রীর সঙ্গে গ্রহবর্মার বিবাহ হলে মালবরাজ গ্রহবর্মাকে হত্যা করে রাজ্যশ্রীকে অপহরণ করেন।
এরপর মালবরাজের বিরূদ্ধে যুদ্ধ যাত্রায় গমন করে রাজ্যবর্ধন নিহত হন। সপ্তম উচ্ছ্বাসের বিষয় হর্ষবর্ধনের যুদ্ধযাত্রা। যাত্রা পথে তিনি জানতে পারেন ভগিনী রাজ্যশ্রী মালবরাজের কারাগার থেকে পলায়ন করেছেন। অষ্টম উচ্ছ্বাসে দেখা যায় এক বৌদ্ধ ভিক্ষুক দিবাকর মিত্র হর্ষবর্ধনকে রাজ্যশ্রীর খোজ দেন। পরিশেষে রাজ্যশ্রীকে উদ্ধার করে নিজের শিবিরে ফিরে আসেন।
বানভট্ট রচিত কাদম্বরী গ্রন্থের পরিচয়
“কাদম্বরী” বানভট্টের সর্বশ্রেষ্ট কথা শ্রেনীর কাব্য। কাব্যটি দুটিভাগে বিভক্ত। যথা:- ¡) পূর্বভাগের রচয়িতা হলেন- বানভট্ট এবং ¡¡) উত্তরভাগের রচয়িতা বানভট্টের পুত্র ভূষনভট্ট। “কাদম্বরী” শব্দের অর্থ হল- সুরা। সুরার মাদকতায় মানুষ যেমন আনন্দে আত্মহারা হন, “কাদম্বরী” পাঠ করে পাঠচিত্তও আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে। তাই বলা হয়-“কাদম্বরী রসজ্ঞানামাহারোপি ন রোচতে।”
কাদম্বরী গ্রন্থের উৎস
গুনাঢ্যের বৃহৎকথা অবলম্বনে রচিত সোমদেবের ” কথাসরিৎসাগর ” নামক গ্রন্থটি হল-“কাদম্বরী” কাব্যের উৎসভূমি।
কাদম্বরী গ্রন্থের বিষয়বস্তু
খাচায়বদ্ধ একটি শুকপাখিকে নিয়ে এক চন্ডালকন্যা মাতঙ্গিনী একদিন বিদিশার রাজা শূদ্রকের সভায় উপস্থিত হয়। “কাদম্বরী” কাব্যের বক্তা ঐ শুকপাখিটি মানুষের ভাষায় কথা বলে রাজাকে জানান তার পূর্বজন্মের কথা।
“কাদম্বরী” কাব্যের প্রেমকাহিনী তিনজন্ম ধরে আবর্তিত হয়েছে। শুকপাখিটি রাজাকে জানায়- উজ্জয়িনীতে তারাপীড় নামে এক রাজা ছিলেন। তারাপীড়ের পুত্র চন্দ্রাপীড়। রাজার বিশ্বস্ত মন্ত্রীর নাম ছিল শুকনাস। তার পুত্র বৈশম্পায়ণ চন্দ্রাপীড়ের অন্তরঙ্গ বন্ধু। ইহজন্মে তারা বিদিশার রাজা শূদ্রক এবং শুকপাখিরূপে জন্মগ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ, শূদ্রক ছিলেন পূর্বজন্মে উজ্জয়িনীর রাজপুত্র চন্দ্রাপীড় এবং শুকপাখিটি ছিল মন্ত্রী শুকনাসের পুত্র বৈশম্পায়ণ। রাছপুত্র চন্দ্রাপীড়ের সাথে গান্ধর্ব রাজকন্যা কাদম্বরী এবং বৈশম্পায়ণের সঙ্গে মহাশ্বেতার প্রণয়কাহিনী এই গ্রন্থটির বিষয়বস্ত। এ জন্ম এবং বিগত দুই জন্মের কাহিনী নিয়ে রচিত হওয়ায়আখ্যান ভাগটি বেশ জটিল।
প্রমথ চৌধুরী তার “পত্রলেখা” কবিতায় লিখেছেন- “চন্দ্রাপীড় মুগ্ধনেত্রে হেরে কাদম্বরী রক্তাম্বরে রাখ তুমি হৃদয় সম্বরী।।”
কাদম্বরী সম্পর্কে সংস্কৃত প্রবাদ
কাদম্বরী রসজ্ঞানাং আহারোপি ন রোচতে।
গদ্য সাহিত্যে বানভট্টের অবদান / মূল্যায়ণ
বিগদ্ধ প্রাচীন সমালোচকগন বানের রচনায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও সাধারন পাঠকবর্গের নিকট বানের রচনা এক দুর্গম অরন্যের মতো। বানভট্ট তার কাব্যের মধ্যে জগৎ এবং জীবনকে যেন দুচোখ ভোরে দেখেছেন। বিশ্বপ্রকৃতির রূপ-রস-শব্দ-গন্ধ-স্পর্শ তার অনুভবের তুলিতে শুধু চিত্রিতই হয়নি প্রাণবন্তও হয়ে উঠেছে।
ঐতিহাসিক পটভূমিকাকে অবলম্বন করে কাব্যরচনার প্রয়াস “হর্ষচরিত”-ই প্রথম। “কাদম্বরী” গদ্যকাব্যটিতে প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয় আবেগ এবং প্রকৃতির মধুর বর্ণনা সুনদরভাবে ফুটে উঠেছে।
কবিগুরু বলেছেন-
“সমস্ত “কাদম্বরী” কাব্যটি যেন একটি চিত্রশালা।”
চরিত্র -চিত্রনে, বাক্ চাতুর্যে, পর্যবেক্ষন শক্তি, চিত্রগ্রাহীবুদ্ধি এবং অলংকারের সমন্বয়ে বানভট্ট যথার্থই বলেছেন –
“বানস্তু পঞ্চানন:”।
জীবনের এমন কোনো তত্ত্ব বা তথ্য যা কবির সুদূর প্রসারী প্রতিভার রশ্মিতে ধরা পড়েনি।
তাইতো কথিত হয়-
সংস্কৃত গদ্য সাহিত্যে মহাকবি বানভট্ট সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য (FAQ)
রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি ছিলেন ।
রাজা হর্ষবর্ধনের (৬০৬-৬৪৭ খ্রি.)সভাকবি ছিলেন বাণভট্ট , সুতরাং ঐ সময় হর্ষচরিত রচিত হয়।
কাদম্বরী কাব্যের নায়ক চন্দ্রাপীড়, নায়িকা কাদম্বরী ।
বানভট্ট রচিত দুটি গ্রন্থের নাম হল – কাদম্বরী ও হর্ষচরিত ।
সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট গুলি দেখুন
- ১. ভাস সমস্যা
- ২. পুরাণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য বিস্তারিত জানুন
- ৩. গীতিকাব্য সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ
- ৪. সংস্কৃত গদ্যসাহিত্যের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা
- ৫. সংস্কৃত সাহিত্যে ঐতিহাসিক কাব্য সম্বন্ধে নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ
- ৬. প্রহসন সাধারন তথ্য
- ৭. সমাজ ও সাহিত্যে মহাভারতের প্রভাব
- ৮. রামায়ণ ও মহাভারতের পোর্বাপর্য বিচার
তথ্য সুত্র – বাণভট্ট – উইকিপিডিয়া