ভর্তৃহরির মত অনুযায়ী দ্বিবিধধ্বনি ও তাদের স্বরূপ নির্ণয় কর। ধ্বনিবাদের স্বরূপ উপস্থাপন করে প্রকারভেদ আলোচনা কর।
বাক্যপদীয় অনুসারে ভর্তৃহরির মত অনুযায়ী দ্বিবিধধ্বনি ও তাদের স্বরূপ নির্ণয়, ধ্বনিবাদের স্বরূপ উপস্থাপন করে প্রকারভেদ আলোচনা
উ:- আচার্য ভর্তৃহরির মতে, ধ্বনি দু’প্রকার -এক প্রাকৃত দুই বৈকৃত। এই দুই ধ্বনির প্রভেদ বোঝাবার জন্য ভর্তৃহরি আচার্য ব্যাড়ির একটি শ্লোক প্রমাণরূপে উপস্থাপিত করেছেন। সংগ্রহকার ব্যাড়ির শ্লোকটি হল-
” শব্দস্য গ্রহণে হেতুঃ প্রাকৃতো ধ্বনিরিষ্যতে।
স্থিতিভেদে নিমিত্তত্বং বৈকৃতঃ প্রতিপদ্যতে।।”
অর্থাৎ প্রাকৃত ধ্বনি শব্দের (অর্থাৎ স্ফোটের ) গ্রহণ বা অভিব্যাক্তির প্রতি কারণ। কিন্তু প্রাকৃত ধ্বনির দ্বারা অভিব্যক্ত শব্দের স্থিতির ভেদ (দ্রুতা মধ্যমা-বিলম্বিতা রূপ ত্রিবিধ বৃত্তিভেদ) বৈকৃত ধ্বনিবশতঃ হয়ে থাকে। যেমন- হ্রস্ব অকার স্থান করণাভিঘাত সঞ্জাত যে ধ্বনিত দ্বারা অভিব্যক্ত হয়, সেটি প্রাকৃত ধ্বনি।
কিন্তু সেই অভিব্যক্ত হ্রস্ব অকার যখন চিরস্থায়ী বা স্বল্পস্থায়ী রূপে প্রতীয় হয়, তখন তার এই স্থিতিকালের ভেদ বৈকৃতধ্বনি নিবন্ধন সংঘটিত হয় এবং সেই বৈকৃত ধ্বনি শব্দের অভিব্যক্তির উত্তরভাবী। প্রাকৃতধ্বনি শব্দের পূর্বভাবী, এবং শব্দের অভিব্যাক্তির প্রতি অপরিহার্য এবং সেই প্রকৃতিরূপ স্ফোটে তাদাত্ম্য সম্বন্ধে বর্তমান বলে তাকে প্রাকৃত বলে নির্দেশ করা হয়। অপরপক্ষে বৈকৃত ধ্বনি শব্দের অভিব্যক্তির উত্তরকালে জন্মলাভ করে এবং স্ফোট এরূপ সংজ্ঞা হয়। সুতরাং বৈকৃতধ্বনির দ্বারা স্ফোটের অভিব্যক্তির কোনোও রূপ তারতম্য সংঘটিত হয় না। কেবলমাত্র স্ফোটের স্থায়িত্বের হ্রাস বৃদ্ধির তারতম্য উপলব্ধির সেটি নিমিত্তমাত্র। বৈকৃত ধ্বনি নিবন্ধন শব্দের উপলব্ধিকালের বৃদ্ধি ঘটে থাকে। কিন্তু স্ফোটরূপ শব্দের কোনোওরূপ বৃদ্ধি বা হ্রাস হয় না। কেননা, হ্রস্ব অকার বৈকৃতধ্বনিবশতঃ দ্রুত, মধ্যম বা বিলম্বিত যে কোনও বৃত্তি আশ্রয় করে উচ্চারিত হোক না কেন, সর্বত্রইতা একই অকার- এরূপ প্রত্যভিজ্ঞান বা অভেদানুসন্ধান ঘটে। সুতরাং, বৈকৃত ধ্বনির কাল স্ফোট শব্দে আরোপিত হতে পারে না, কেন না বৈকৃতধ্বনি প্রাকৃতধ্বনির ন্যায় স্ফোটের সঙ্গে অবিভক্তভাবে প্রতীত হয় না, স্ফোট থেকে স্বতন্ত্ররূপে ভাসমান হয়।
প্রাকৃতধ্বনির প্রচয়াপচয় তদব্যঙ্গ্য স্ফোটে তাদাত্ম্য সম্বন্ধে আরোপিত হয়ে থাকে এবং অকারাদি স্ফোটও হ্রস্ব-দীর্ঘ-প্লুতরূপে ভিন্নকালরূপে উপলব্ধ হয়ে থাকে। ব্যঞ্জক প্রাকৃত ধ্বনির সঙ্গে ব্যঙ্গ্য স্ফোটের ব্যতিরেক বা ভেদ আদৌ গৃহীত হতে পারে না। সুতরাং ব্যঞ্জকের কাল স্ফোটেরই কাল বলে ব্যকরণশাস্ত্রে নিশ্চিত হয়। বৈকৃত ধ্বনির ক্ষেত্রে তা হয় না। প্রাকৃত ও বৈকৃত ধ্বনি সম্পর্কে আচার্য ভর্তৃহরির কারিকাদুটি হল-
“প্রাকৃতস্য ধ্বনেঃ কালঃ শব্দস্যেত্যুপর্চ্যতে।” (বাক্যপদীয় ১/৭৬)
“শব্দস্যোর্ধ্বমভিব্যক্তের্বৃত্তিভেদে তু বৈকৃতাঃ।
ধ্বনয়ঃ সমুপোঅন্তে স্ফোটাত্মা তৈর্ন ভিদ্যতে।।”(বাক্যপদীয়১/৭৭)
বৈকৃত ধ্বনির দ্বারা স্ফোটের অভিব্যক্তির ঘটে না। প্রাকৃতধ্বনির দ্বারা স্ফোট অভিব্যক্ত হবে অভিব্যক্ত হবার পরই কেবল বৈকৃত ধ্বনির দ্বারা তার উপলব্ধিকালের বা স্থিতির বৈলক্ষণ্য সাধিত হয় মাত্র। কিন্তু যেহেতু বৈকৃত ধ্বনি, যা প্রকৃতি ধ্বনির উত্তরকালভাবী, তা কখনও অভিব্যক্ত স্ফোটের সঙ্গে অভিন্নরূপে প্রতীত হয় না এবং স্ফোটের সহিত তার ব্যতিরেক বা ভেদ স্পষ্টই উপলব্ধ হয়।