ঈশোপনিষদের বিষয়বস্তু

ঈশোপনিষদ সম্পর্কে তথ্য ও ঈশোপনিষদের বিষয়বস্তু বিবৃত করা হল। ঈশোপনিষদ হতে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্তর দেওয়া হল। ঈশোপনিষদ হতে মন্ত্রগুলির বাখ্যা দেওয়া হল ।

ঈশোপনিষদের বিষয়বস্তু বিবৃত কর

প্রথমেই ঈশোপনিষদ সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জেনে নিই । প্রথমে ঈশোপনিষদের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হল ।

ঈশোপনিষদের বিষয়বস্তু প্রথম পর্ব

ব্রহ্ম সত‍্যং জগন্মিথ‍্যা জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ’- অর্থাৎ ব্রহ্ম সত‍্য জগৎ মিথ্যা জীব এবং ব্রহ্ম ভিন্ন নয- এটাই উপনিষদের মূল তত্ত্ব। এই তত্বের উপলব্ধির মধ্য দিয়ে ব্রহ্ম সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে অবিদ‍্যাগ্রস্ত জগত থেকে জীবের মুক্তি ঘটে।

সুতরাং উপনিষদ সমূহের মুক্তির উপায় যে ব্রহ্মজ্ঞান তা যুক্তিসহ সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে।উপনিষদ সমূহে ব্রহ্ম জ্ঞান লাভের উপায় রুপে কর্ম ও জ্ঞান এই দুটি পথের নির্দেশ করা হয়েছে। কেননা কর্মের দ্বারা চিত্তশুদ্ধি ঘটলেই জীবের জ্ঞানমার্গ এ অধিকার জন্মায়।

জ্ঞান মার্গে জীবের একত্বে  বহু দর্শন বহুত্বে একদর্শনে ব্রহ্ম জ্ঞান লাভ সম্ভব হয। আবার শুধু কর্মের দ্বারা শুধু জ্ঞানের দ্বারা ব্রম্ভ জ্ঞান লাভ সম্ভব হয় না বলে উপনিষদ সমূহে এককমার্গের নিন্দার  মাধ্যমে তাদের সহাবস্থানের প্রশংসা তুলে ধরা হয়েছে আবার শুধু সহাবস্থানের দ্বারা নয়। ব্রহ্মজ্ঞানের  জন্য ভক্তিরও প্রয়োজন।

তাই উপনিষদ সমূহের ব্রম্ভ জ্ঞান লাভের উপায় রূপে ব্রহ্ম বা  আত্মার স্বরূপ জ্ঞান ও কর্ম মার্গের প্রশংসা  এককমার্গেরর নিন্দা উভয়মার্গের সহাবস্থানের প্রশংসা আত্মজ্ঞানীর স্বরূপ এবং ভক্তি প্রভৃতি বিষয় গুলি সংক্ষেপে অথবা বিস্তৃতভাবে আলোচিত হয়েছে।

১৮টি মন্ত্রে রচিত স্বল্প আকৃতি বিশিষ্ট ঈশোপনিষদেও এই সমস্ত বিষয়গুলি যা অতি সংক্ষেপে অথচ যুক্তিসহকারে আলোচিত হয়েছে তা কিন্তু আধ্যাত্মিকতার বিচারে অপূর্ব। সমগ্র জগৎ পরমাত্মার দ্বারা পরিব্যাপ্ত সুতরাং স্থাবর জঙ্গমাত্মক পরিদৃশ্যমান জগতের সর্বত্রই তার অস্তিত্ব অনুভব যোগ্য।

এ জগতে জীবের প্রাপ্তব্য যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা ব্রম্ভ জ্ঞান ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না। এই ব্রম্ভ জ্ঞানে প্রতিবন্ধক হলো ধন-সম্পদ প্রভৃতির প্রতি আসক্তি।

ঈশোপনিষদের বিষয়বস্তু দ্বিতীয় পর্ব

তাই ঈশোপনিষদের বলা হয়েছে আসক্তির উৎস নিজের এবং অপরের যে ধন সম্পদ সমূহ তাকে বর্জনের  দ্বারাই এই ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করতে হবে- তেন ত‍্যক্তেন ভুঞ্জীষা মা গৃধঃ কস‍্যস্বিদ্ ধনম্’। কিন্তু সকলের পক্ষে ঐহিক ও পারত্রিক কামনা সহজে ত্যাগ করা সম্ভব হয় না।

এই ত্যাগের মাধ্যমে চিত্তশুদ্ধি ঘটলেই ব্রম্ভ জ্ঞান লাভের অধিকারী হওয়া যায়। সুতরাং যতদিন না চিত্তশুদ্ধি ঘটে ততদিন শাস্ত্রবিহিত অগ্নিহোত্রাদি কর্ম বা নিষ্কামকর্ম পালন করতে হবে। প্রয়োজন হলে একশত বছর বাঁচার ইচ্ছা পোষণ করতে হবে

এভাবে শাস্ত্রবিহিত কর্ম বা নিষ্কাম কর্ম পালনে জীব কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ হয় না বরং চিত্তশুদ্ধি দ্বারা তার মুক্তির পথ প্রশস্ত হয।অবিদ্যা গ্রস্ত বিষয়ে আসক্ত আত্মজ্ঞানহীন লোকেরা বিষয়সুখ অনুভব করতে করতে নিরন্তন জন্ম-মৃত্যুর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অন্ধকার রূপ দুঃখময় অসূর্যলোকে  প্রবেশ করে।

পরম আত্মা এক এবং গতিহীন হয়ে মন অপেক্ষা গতিশীল পূর্বগামী একে ইন্দ্রিয় গুলি প্রকাশ করতে পারে না এই আত্মার স্থির থেকেও সর্বব্যাপী হওয়ায় সমস্ত ধাবমান পদার্থ কে অতিক্রম করে এই পরমাত্মার শক্তিতে শক্তিমান হয়ে বায়ু জল প্রভৃতি দেবতারা নিজ নিজ কর্ম সম্পাদন করে।

আত্মা শরীর আশ্রিত হওয়াই স্থূল বুদ্ধিদের  কাছে গতিশীল সূক্ষ্ম বুদ্ধিদের কাছে তা গতিহীন হয়ে উঠেছে। এই আত্মা আত্মজ্ঞান হীনের কাছে দূরে এবং আত্মজ্ঞানীর কাছে নিকটে অবস্থান করে।

এবং তা সকলের অন্তরে এবং বাহিরে অবস্থান করে যিনি আত্মদর্শী তিনি সমস্ত জীবের মধ্যে নিজেকে এবং নিজের মধ্যে সমস্ত জীব কে দর্শণ করে শোকমোহাদিহীন এবং হিংসা দ্বেষাদিধীন হন। 

শুধু কর্মানুষ্ঠানের দ্বারা আত্মজ্ঞান লাভের পরিবর্তে জীব গ্রহনান্ধকার রূপ সংসার বন্ধন দশা প্রাপ্ত হয় আবার শুধু দেবতা উপাসনার দ্বারা জীব মূল লক্ষ্য লাভে বঞ্চিত হয়ে পূর্বাপেক্ষা ঘোরতর।

সংসার বন্ধন দশা লাভ করে কিন্তু যিনি কর্ম ও জ্ঞানের সহানুষ্ঠান করেন তিনি কর্মের দ্বারা জাগতিক মৃত্যুর কারণ সমূহকে জ্ঞানের দ্বারা অমৃতত্ব লাভ করেন।

তাই ঈশোপনিষদে বলেছে- অবিদ‍্যয়া মৃত‍্যুং তীর্ত্বা বিদ‍্যয়ামৃতমশ্নুতে।’ এইভাবে সম্ভূতি ও অসম্ভূতি এই উভয়ের যুগপৎ অনুষ্ঠানের দ্বারা জীব সমান ফল লাভ করে।

ঈশোপনিষদের বিষয়বস্তু তৃতীয় পর্ব


      সত্য স্বরূপ পরমাত্মা প্রবেশদ্বার সূর্য রশ্মি দ্বারা আবৃত দেখে মুমুক্ষু তা উন্মোচনের জন্য সূর্যের কাছে প্রার্থনা জানায় কারণ রশ্মিজাল উন্মোচিত হলে মুমুক্ষু পরমাত্মার কল্যাণময় রূপ দেখতে সমর্থ হবে।

মুমুক্ষুর অন্তিমকালে সূর্যদেবকে এরূপ প্রার্থনা জানিয়ে বলে যে তাঁর স্থূল শরীর ভস্মীভূত  হবে। প্রাণবায়ু অমৃতময় মহাবায়ুতে বিলীন হবে শুভাশুভ সমস্ত কর্মের সাক্ষী অগ্নিদেব তার পাপসমুহকে ক্ষমা করে তাকে কল্যাণ  পথে নিয়োগ করুন।

ঈশোপনিষদ হতে গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট গুলি

ঈশোপনিষদ হতে মন্ত্রগুলির বাখ্যাগুলি পড়ুন

1. ঈশোপনিষদ মন্ত্র বাখ্যা-(1-4)
2. ঈশোপনিষদ মন্ত্র বাখ্যা-(5-7)
3.ঈশোপনিষদ মন্ত্র বাখ্যা-(8-10)
4. ঈশোপনিষদ মন্ত্র বাখ্যা-(11-13)
ঈশোপনিষদ হতে মন্ত্রগুলির বাখ্যা
Comments