শাসন রচনার উদ্দেশ্য গুলি কয়েকটি ও কী কী? ব্যাখ্যা কর।অর্থশাস্ত্র অনুসারে শাসন রচনার উদ্দেশ্য (B.A. Hons and Pass The purpose of writing governance according to the Arthashastra )
অর্থশাস্ত্র অনুসারে শাসন রচনার উদ্দেশ্য গুলি কয়টি ও কী কী? ব্যাখ্যা কর।
উঃ- অর্থশাস্ত্রকার আচার্য কৌটিল্যের মতে, রাজার নির্দেশ,আদেশ যখন লিখিতভাবে প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে শাসন বা লেখপত্র বলা হয়। রাজকার্য নির্বাহের জন্য এই শাসন বা লেখপত্রের উপর নির্ভর করতে হয়। রাজলেখ বা শাসনের বিষয়বস্তু অনুসারে তেরোটি ভাগ করা হয়েছে।
অর্থশাস্ত্র অনুসারে শাসন রচনার উদ্দেশ্যগুলি
শাসন রচনার উদ্দেশ্যগুলি হল –
১)নিন্দা,২)প্রশংসা,৩)আখ্যান,৪)প্রত্যাখ্যান,৫)অর্থনা,৬)পৃচ্ছা,৭)উপালম্ভ,৮)প্রতিষেধ,৯)চোদনা,১০)সান্ত্ব,১১)
অভ্যবপত্তি,১২)অভিভৎসনা,১৩)অনুনয়।
নিম্নে এগুলি ব্যাখ্যা করা হল-
১) নিন্দাঃ-
কোনো ব্যাক্তির বংশ,শরীর ও কার্যসম্বন্ধে দোষের বর্ণনাই হল নিন্দা।
অর্থশাস্ত্র কার কৌটিল্য নিন্দা প্রসঙ্গে বলেছেন-“অভিজন শরীরকর্মণাং দোষবচনং নিন্দা‘।
২) প্রশংসাঃ-
কোন ব্যক্তির বংশ,শরীর ও কার্য সম্বন্ধে গুণের বর্ণনায় প্রশংসা।
অর্থশাস্ত্রকার কৌটিল্য প্রশংসা প্রসঙ্গে বলেছেন-“গুনবচনমেতেষামেব প্রশংসা ‘।
৩) আখ্যানঃ-
কোনো কাজ কিভাবে করতে হবে তার বর্ণনা বা ব্যাখ্যা করার নাম হল আখ্যান।
তাই কৌটিল্য বলেছেন- “এবম্ ইত্যাখ্যানম্‘।
৪) প্রত্যাখ্যানঃ-
আপনার প্রাপ্য বস্তুকে দেব না’-এরূপ কোনো প্রাপক ব্যাক্তির বস্তু না দেওয়ার জন্য যে আচরণ লক্ষ্য করা যায়,তার নাম প্রত্যাখ্যান।
তাই কোটিল্য বলেছেন- ন প্রযচ্ছাম ইতি প্রত্যাখ্যানম্‘।
৫) অর্থনাঃ-
সন্ধিস্থাপন বা অন্য কোনো কারণে সৈন্য ও অর্থ প্রেরণ করুন এইরূপ চাওয়াকে বা এক কথায় প্রার্থনা করাকে অর্থনা বলা হয়।
অর্থশাস্ত্রকার কৌটিল্য বলেছেন-“দেহীত্যর্থনা।’
৬) পৃচ্ছাঃ-
কোন কাজ কিভাবে করতে হবে তা জিজ্ঞাসা করার নামেই হল পৃচ্ছা।
তাই কোটিল্য বলেছেন-“কথমেতদিতি পৃচ্ছা‘।
৭) উপালম্ভঃ-
একাজ আপনার যোগ্য নয় এরূপ কোন ব্যক্তির প্রতি মৃদু তিরস্কার মূলক বক্তব্যকে বলে উপালম্ভ।
অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্য করতে বলেছেন- “অননুরূপং ভবত ইত্যুপালম্ভঃ।’
৮) প্রতিষেধঃ-
এ কাজ করিও না এই রূপ অকার্য বৃত্তি থেকে কার্যকে বিরত রাখার জন্য যে প্রেরণা দান করা হয় তার নাম প্রতিষেধ।
অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্য বলেছেন-” মা কার্ষীঃ ইতি প্রতিষেধঃ।’
৯) চোদনাঃ-
এ কাজ করা হোক এরূপ কার্যের প্রতি প্রেরনা দানই হল চোদনা শব্দের মূল অর্থ।
তাই কৌটিল্য বলেছেন-“ইদং ক্রিয়তাম্ ইতি চোদনা’।
১০) সান্ত্বঃ-
আমার যে দ্রব্য আপনারও সেই দ্রব্য, আমিও যে আপনিও সে- এইরূপ নিজের প্রতি মনোভাব সৃষ্টি করার জন্য যে অপরকে এইরূপ বক্তব্য প্রেরণ করা হয় তার নাম সান্ত্ব।
তাই কৌটিল্য বলেছেন-“ যোঅহং স ভবান্ মম যদ্ দ্রব্যং,তদ্ ভবত ইত্যুপগ্রহ’।
১১) অভ্যবপত্তিঃ-
কারও বিপদ কালে সাহায্যদানের নাম হল অভ্যবপত্তিঃ।
তাই কৌটিল্য বলেছেন-” ব্যসন সাহায্যমভ্যবপত্তিঃ।’
১২) অভিভৎর্সনাঃ-
কোনও কাজ করলে তা পরবর্তী সময়ে যে কি প্রকার দোষযুক্ত হতে পারে এরূপ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পূর্ব থেকে কোন ব্যক্তিকে ভয় দেখানোর নাম হল অভিভৎর্সনা।
অর্থশাস্ত্রকার বলেছেন- “সদোষমায়তিপ্রদর্শনমভিভৎর্সনম্’।
১৩) অনুনয়ঃ-
অনুনয় বলতে বিশেষ প্রকার অনুরোধ কে বোঝায়। অনুনয় আবার তিন প্রকার। যথাক্রমে-
a)অর্থকরন নিমিত্তক অনুনয়ঃ–
কোন একটি অবশ্যম্ভাবী কার্য থেকে বিরত থাকা কোনো ব্যক্তিকে সেই কার্য করার জন্য যে অনুরোধ করা হয় তার নাম অর্থকরন নিমিত্তক অনুনয়।
b) অতিক্রম নিমিত্তক অনুনয়ঃ–
কোন একটি কার্য করা উচিত ছিল কিন্তু তা না করার জন্য যদি কোন ব্যক্তি রাগান্বিত হন তার রাগ প্রশমণের জন্য যে অনুরোধ করা হয়,তার নাম অতিক্রম নিমিত্তক অনুনয়।
c) পুরুষাদিব্যসন নিমিত্তক অনুনয়ঃ–
ব্যসন বিপত্তির কারণে ঘটা অনুনয়কে পুরুষাদিব্যসন নিমিত্তক অনুনয় বলে।
সুতরাং রাজলেখ বা শাসন রচনার জন্য এই 13 প্রকার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য রাখা বাঞ্চনীয়। তবেই রাজা বিভিন্ন প্রকার কার্যসিদ্ধি করতে সক্ষম হবেন,তা অর্থশাস্ত্রকার কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে বলেছেন।
অর্থশাস্ত্র হতে অন্যন্য টীকাগুলি দেখতে ক্লিক করুন
অর্থশাস্ত্র হতে অন্যন্য প্রশ্ন ও উত্তর গুলি দেখুন (Arthashastra Sanskrit Hons Pass Notes)
- কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র অনুসারে দূতএর প্রকারভেদ দূতের সংজ্ঞা ও কার্যাবীল লেখ?
- অর্থশাস্ত্র অনুসারে শাসন রচনার উদ্দেশ্যগুলি কয়টি ও কী কী? ব্যাখ্যা কর।
- কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র মন্ত্রাধিকার অনুসারে রাজলেখের দোষ ও গুণ
- রাজলেখ বলতে কী বোঝ? রাজলেখ কয় প্রকার ও কী কী?
- পদ কাকে বলে? পদ কয় প্রকার ও কী কী?
- উপায় কয়টি ও কী কী?
- কৌটিল্যের মতে দূতের গুনাবলী কি কি? পররাষ্ট্রে দূতের কার্যাবলী আলোচনা কর ।
- কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র মন্ত্রাধিকার অনুসারে মন্ত্রনার স্থান ও কৌটিল্য কীভাবে তার পূর্বসূরীদের মত খন্ডন করেছেন ।