কাদম্বরী হতে ছোট প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হল। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর গুলি কাদম্বরী হতে নিম্নরূপ –
কাদম্বরী হতে ছোট প্রশ্ন ও উত্তর – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1) কাদম্বরী কোন শ্রেনীর গদ্যকাব্য? এই কাব্যের নায়ক ও নায়িকা কে?
উ:- বানভট্ট রচিত কাদম্বরী গদ্যকাব্যটি কথাকাব্য শ্রেনীর রচনা। সাহিত্য দর্পনকার আচার্য বিশ্বনাথ তার ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে কথাকাব্যের লক্ষণ প্রসঙ্গে বলেছেন-
“কথায়াং সরসং বস্তু গদ্যৈরেববিনির্মিতম্।”
অর্থাৎ কথা নামক গদ্যকাব্যে সরস গদ্যের বর্ণনা থাকে। এর কোনো অংশে আর্য্যা ছন্দে আবার কোথাও বক্র ও অপরবক্র নামক ছন্দে থাকবে যা আমাদের কাদম্বরী কাব্যের লক্ষণ সংগত।
কাদম্বরী কাব্যের নায়ক উজ্জয়িনীর যুবরাজ চন্দ্রাপীড় এবং নায়িকা গন্ধর্বরাজ চিত্ররথের কন্যা কাদম্বরী।
২ ) ‘কাদম্বরী রসজ্ঞানামাহারোঅপি ন রোচতে’ – উক্তিটি বিচার কর।
উ:- মহাকবি বানভট্ট রচিত ‘কাদম্বরী’ কথাকাব্যের অনতর্গত ‘শুকনাসোপদেশঃ’ থেকে উক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
কাদম্বরী গদ্যকাব্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। কাব্য ও মহাকাব্যের যাবতীয় গুন ও উৎকর্ষ কদম্বরীতে পরিলক্ষিত হয়। কবি বাণ এই প্রসঙ্গে বলেছেন-
‘ রসেন শয্যাং স্বয়মভ্যুপাগতা কথা জনস্যাভিনবাবধূরিব।’
অর্থাৎ সুস্পষ্ট মধুরালাপে ও হাবভাবে অত্যন্ত শয্যায় উপস্থিতা নববধূর মতো মানুষের হৃদয়ে কৌতুহলবশতঃ সমধিক অনুরাগ সৃষ্টি করে। তাই কাদম্বরী পাঠে সুরাপানে মত্ত ব্যাক্তির মত পাঠকের আহারেও রুচি থাকে না। কাদম্বরীর পাঠক এমনিই রসে ডুবে থাকে যে আহার গ্রহণের কথাই ভুলে যায়, যেন তাদের আহার, তৃষ্ণাদি সবই কাদম্বরীর রসে রসান্বিত।
৩) মহতীয়ং খল্বনর্থ পরম্বরা – এখানে উল্লিখিত অনর্থ পরম্পরা কি কি?
উ:- মহাকবি বানভট্ট রচিত ‘ কাদম্বরী’ কথা কাব্যের অন্তর্গত ‘শুকনাসোপদেশঃ’ থেকে উক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য পংক্তিটিতে অনর্থপরম্পরা বলতে
‘ গর্ভেশ্বরত্বম্’ ‘অভিনব যৌবনত্বম্’ ‘অপ্রতিরূপত্বম্’ এবং ‘অমানুষ শক্তিত্বম্’ এই চারটিকে বলা হয়েছে।
পন্ডিত বিষ্ণুশর্মার মতে-
” যৌবনং ধনসম্পত্তিঃ প্রভুত্বমবিবেকিতা একৈকমপ্যনর্থায় কিমযত্রচতুষ্টয়ম্।” অর্থাৎ যৌবন, ধনসম্পদ, প্রভুত্ব ও বিবেকহীনতার এক একটিই বিপদের আশ্রয়। যেখানে উক্ত চারটি দোষ একত্রে উপস্থিত হয় সেখানে তো বিপদের সীমা থাকেনা।
৪) ‘কাদম্বরী’ শব্দের অর্থ কী?
উ:- কাদম্বরী শব্দের অর্থ সুরা। সুরা পানে মানুষ যেমন আত্মহারা হয়, তেমনি কাদম্বরী পাঠরূপ রসাস্বাদনের পাঠক বর্গেরাও আত্ম বিস্মৃত হয়।
কদম্ব পুষ্পজাত মধুকে কাদম্ব বলে। সুতরাং কাদম্ব বলে। সুতরাং,কাদম্ব বলতে সুরাকে বোঝায়। কাদম্ব + দা + ড + ঙীপ্ করে গঠিত কাদম্বরী শব্দের অর্থ হয় যে নায়িকা সুরা পানে নায়ককে মত্ত করে তুলেছে।
৫) বানভট্টের বংশ পরিচয় দাও।
উ:- বানভট্ট স্বয়ং পৌরাণিক ধারা অনুসরন করে সৃষ্টিকর্ত্তা ব্রহ্মা থেকে নিজের বংশ পরিচয় লিপিবদ্ধ করে গেছেন। যথা- ব্রহ্মা থেকে কুবের। কুবেরের চারপুত্রের অন্যতম পশুপতির পুত্র অর্থপতি। অর্থপতির এগার মতান্তরে সাত পুত্রের অন্যতম চিত্রভানুর ঔরসে রাজ্যদেবীর গর্ভে বাণের জন্ম। চিত্রভানুর ঔরসে রাজ্যদেবীর গর্ভে বানের জন্ম।
বাণের বংশক্রম
|
ব্রহ্মা
|
পুলহ
|
বাৎস্য
|
কুবের অচ্ছ্যত – ঈশান – হর – পশুপতি
|
অর্থপতি
|
চিত্রভানু
|
বানভট্ট।
৬) শুকনাস কেন চন্দ্রাপীড়কে উপদেশ দিয়েছিলেন?
উ:- যুবরাজ চন্দ্রাপীড় সদ্য গুরু গৃহ প্রত্যাগত অতএব বিদ্বান্, বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান ও অত্যন্ত বিনয়ী নবযুবক ছিলেন। রাজ্যাভিষেকের পূর্বে তিনি বৃদ্ধ ও বিচক্ষণ মন্ত্রী শুকনাসের নিকট উপস্থিত হলে, মহামন্ত্রী শুকনাস চন্দ্রাপীড়কে বিনয়ী জেনেও আরও অধিকতর বিনয়ী হওয়ার জন্য রাজসিংহাসনে আরোহণের সম্ভাব্য বিপদের বিষয়ে সতর্ক করার উপদেশ দিয়েছিলেন।
৭) ‘বিরলা হি তেষামুপদেষ্টারঃ’ – মন্তব্যটির তাৎপর্য ব্যক্ত কর।
উ:- মহাকবি বানভট্ট রচিত কাদম্বরী নামক কথাকাব্য থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে।
মহামন্ত্রী শুকনাশ গুরুর উপদেশের প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যাখ্যা করে বলেছেন চন্দ্রাপীড়ের কাছে। গুরুর সৎ উপদেশ রাজাদের সব দিক থেকে মঙ্গলদায়ক হলেও এরূপ সৎ উপদেশ দাতা উপদেশক বিরল অর্থাৎ সহজে পাওয়া যায় না। শিষ্য থাকা সত্ত্বেও সৎগুরুর অভাব অর্থাৎ সংখ্যাল্পতা ব্যক্ত করা হয়েছে।
৮) কাদম্বরী কাব্যের উৎস কি? এই কথাংশের বক্তা কে?
উ:- কাদম্বরী কাব্যের উৎস গুণাঢ্য রচিত বৃহৎকথা নামক গল্পগ্রন্থ।
বিদিশাধিপতির শূদ্রকের সম্মুখে বৈশম্পায়ণ নামে এক শুকপাখি এই কথাংশের বক্তা।
৯) শুকনাশ কে ছিলেন? তিনি কাকে উপদেশ দিয়েছিলেন?
উ:- শুকনাস ছিলেন উজ্জয়িনীর মহারাজা তারাপীড়ের বিশ্বস্ত প্রধানমন্ত্রী।
রাজ্যাভিষেকের প্রাক্কালে উপস্থিত বিনয়ী যুবরাজ চন্দ্রাপীড়কে প্রধানমন্ত্রী শুকনাস উপদেশ দিয়েছিলেন।
১০) “অতিগহনং তমো যৌবনপ্রভবম্’- কে কাকে একথা বলেছে?
উ:- মহাকবি বানভট্ট রচিত কাদম্বরী নামক কথাকাব্য থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী শুকনাস যৌবনকালের ভয়াবহতা উপদেশ দানকালে যৌবরাজ্যে নব অভিষিক্ত চন্দ্রাপীড়কে এই কথাটি বলেছিলেন। যৌবন থেকে উৎপন্ন অন্ধকার অর্থাৎ যৌবনের অহংকার অতিগহণ অর্থাৎ ঘনান্ধকারপূর্ণ। কারণ যৌবনমদ সূর্য্যালোকে দূরীভূত হয় না, মনির প্রভায় কিংবা প্রদীপের আলোকেও অপসারিত হয় না।
১১) ‘অয়ঞ্চ তে কালঃ প্রতাপমারোপয়িতুম্ ‘- কোন্ প্রসঙ্গে একথা বলা হয়েছে?
উ:- মহাকবি বানভট্ট রচিত কাদম্বরী নামক কথাকাব্য থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যাভিষেকের প্রাক্কালে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকারের উদ্দেশ্যে আগত বিনয়ী যুবরাজ মন্ত্রী শুকনাস যৌবনমদ ও চঞ্চলা লক্ষ্মী অর্থাৎ ধন সম্পদের অহংকার ও রাজাদের কর্তব্য বিষয়ে বহুবিধ উপদেশ দান প্রসঙ্গে উক্ত উক্তিটি করেছেন। উক্তিটির তাৎপর্য হলো শুকনাসের মতে এখন চন্দ্রাপীড়ের পরাক্রম প্রদর্শনে যথোপযুক্ত সময়। কারণ পরাক্রমশালী নরপতি গনের আদেশ ঈশ্বর আজ্ঞার মত সকলে মান্য করে। পরাক্রমী না হলে সেইরূপ রাজ আদেশ সর্বত্র অমান্য হয়ে থাকে। তখন দুর্বল অপরাক্রমী রাজা রাজত্বই চলে যেতে পারে।তাই পরাক্রম প্রদর্শনের জন্য মহামন্ত্রী শুকনাসের সর্বশেষ উপদেশটি হল চন্দ্রাপীড় যেন সিংহাসন রূঢ় হয়ে দ্বিগ্বিজয় বাহির হন। কারণ এই সময়টি পরাক্রম প্রদর্শনে উপযুক্ত সময়।
১২) চন্দ্রাপীড় কে ছিলেন?
উ:- চন্দ্রাপীড় ছিলেন উজ্জয়িনীর মহারাজা তারাপীড়ের একমাত্র পুত্র। শাপভ্রষ্ট চন্দ্রদেব তারাপীড়ের ঔরসে মহারাণী বিলাসবতীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই চন্দ্রাপীড়ই পরবর্তী জন্মে বিদিশাধিপতি শূদ্রক হয়ে জন্মেছেন। আবার এই চন্দ্রাপীড়েই কাদম্বরী কথাকাব্যের নায়ক এবং এই চন্দ্রাপীড়ই পরবর্তীকালে উজ্জয়িনীর রাজপদে পিতার স্থানে অভিষিক্ত হন।
১৩) নাল্পমপ্যুপদেষ্টারঃ- সন্ধি বিচ্ছেদ কর।
উ:- ন + অল্পম্ + অপি +উপদেষ্টারঃ।
১৪) কাদম্বরীর দুই জন টিকাকারের নাম লেখ।
উ:- জীবানন্দ বিদ্যাসাগর ও মহামহোপাধ্যায় হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ-কল্পলতা।
১৫) কাদম্বরী কে?
উ:- কাদম্বরী ছিলেন কৈলাস পর্বতবাসী গান্ধর্বরাজ চিত্ররথের অপূর্ব সুন্দরী লাবণ্যময়ী কন্যা। তিনি ছিলেন অচ্ছোদসরোবর প্রান্তে নির্জন শিবালয়ের তপস্বিনী মহাশ্বেতার প্রিয় সখি ও বান্ধবী। হেমকূট পর্বতে মহাশ্বেতার অনুরোধে যুবরাজ চন্দ্রাপীড় উপস্থিত হলে সেখানে কাদম্বরীর সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং উভয়ে পরস্পর অনুরক্ত হন। চন্দ্রাপীড় পত্রলেখাকে কাদম্বরীর কাছে রেখে রাজ্যে ফিরে এসেছিলেন। শেষে চন্দ্রাপীড় ও কাদম্বরীর মিলন হয়েছিল।
কাদম্বরী ছিলেন ‘কাদম্বরী’ কথাকাব্যের মুগ্ধানায়িকা।
১৬) ‘ অপরিণামোপশমো দারুণো লক্ষ্মীমদঃ’ কে কোন প্রসঙ্গে কথাটি বলেছেন? লক্ষ্মীমদঃ বলতে কি বোঝ?
উ:- মহামন্ত্রী শুকনাস রাজ্যাভিষেকের প্রাককালে উপস্থিত যুবরাজ চন্দ্রাপীড়কে উপদেশ দেওয়ার সময় এই কথাটি বলেছেন। এখানে ‘লক্ষ্মীমদঃ’ বলতে বিপুল ধনসম্পত্তি থাকার ফলে উৎপন্ন মত্ততাকে বোঝান হয়েছে। এই মত্ততার উপশম হয় না বলে একে দারুন অর্থাৎ ভয়ঙ্কর বলেছেন কবি।
১৭) শুকনাস শব্দের অর্থ কী?
উ:- শুকনাস শব্দের অর্থ হল উন্নত নাসাবংশ যার।
১৮) কাদম্বরী ব্যতীত বানভট্টের রচিত অন্যগ্রন্থের নাম কী? সেটি কোন্ শ্রেনীর গদ্যকাব্য?
উ:- কাদম্বরী ব্যতীত বানভট্টের রচিত অন্যগ্রন্থের নাম হল হর্ষচরিত। সেটি আখ্যায়িকা শ্রেনীর গদ্যকাব্য।
১৯) কাদম্বরী কাব্যের কয়টি ভাগ ও কী কী?
উ:- কাদম্বরী কাব্যের দুটি ভাগ। যথা-
i) পূর্বভাগ ও ii) উত্তরভাগ। উত্তরভাগের রচনা করেন বাণের পুত্র ভূষণভট্ট।
২০) কাদম্বরীর রচয়িতা কে? তিনি কার প্রেরণায় এই গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন?
উ:- কাদম্বরী নামক কথাকাব্যের রচয়িতা হলেন মহাকবি বাণভট্ট।
তিনি মহারাজ হর্ষবর্ধনের প্রেরণায় এই গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।
২১) “অমৃতসহোদরাপি কটূরসবিপাকা” – কে, কার উদ্দেশ্যে এইকথা বলা হয়েছে?
উ:- মহাকবি বানভট্ট রচিত কাদম্বরী কথাকাব্য থেকে আলোচ্য উক্তিটি দুটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন শুকনাস।
তিনি চন্দ্রাপীড়ের উদ্দেশ্যে এইকথা বলেছেন।
আরো পড়ুন – কাদম্বরী সম্পর্কে পোস্টগুলি
- কাদম্বরী: শুকনাসোপদেশঃ( সংস্কৃত ব্যাখ্যা)
- কাদম্বরী: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- ‘কাদম্বরী’ কথা না আখ্যায়িকা
- কাদম্বরী: চন্দ্রাপীড়ের প্রতি শুকনাসের উপাদেশাবলী
- বানভট্টকে অনুসরন করে মহাশ্বেতার রূপ বর্ণনা কর
- বাণভট্ট রচিত কাদম্বরী কথা না আখ্যায়িকা আলোচনা কর
- বানোচ্ছিষ্টং জগৎ সর্বম্ – ব্যাখ্যা কর
- বাণোছিষ্টং জগৎ সর্বম্- কাদম্বরী পাঠ্যাংশের অনুসারে বর্ননা