সংস্কৃত ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সন্ধি । সন্ধির জ্ঞান ছাড়া ব্যাকরণের জ্ঞান সম্পূর্ণ হয় না । সন্ধি তিন প্রকার – স্বরসন্ধি , ব্যাঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গ সন্ধি । সংস্কৃত স্বরসন্ধি মনে রাখার কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হল ।
নিম্নে সংস্কৃত স্বরসন্ধি সম্পর্কে আলোচনা করা হল। স্বরসন্ধির নিয়ম গুলি সহজ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে । যাতে সহজে স্বরসন্ধি সম্পর্কে সঠিক ধারণা জন্মায় । স্বর সন্ধি পড়ার আগে সন্ধি সম্পর্কে আগে পড়ুন –
সংস্কৃত স্বরসন্ধি বা ‘অচ্’ সন্ধি কাকে বলে ?
স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিলনকে স্বরসন্ধি বলে। এর অন্য নাম ‘অচ্‘ সন্ধি।
স্বরসন্ধির নিয়ম -১
অ-কার কিংবা আ-কারের পর অ-কার অথবা আ-কার থাকলে উভয়ে মিলে আ-কার হয়। আ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।
অ + অ = আ | নীল + অম্বরম্ = নীলাম্বরম্ |
অ + আ = আ | হিম + আলয় = হিমালয়ঃ |
আ + অ = আ | বিদ্যা + অর্ণবঃ = বিদ্যার্ণবঃ |
আ + আ = আ | মহা +আশয়ঃ = মহাশয়ঃ |
স্বরসন্ধির নিয়ম – ২
হস্ব ই-কার বা দীর্ঘ ঈ-কারের পর হ্রস্ব ই-কার কিংবা দীর্ঘ ঈ-কার থাকলে উভয় মিলে দীর্ঘ ঈ-কার হয়। দীর্ঘ ঈ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।
ই + ই = ঈ | কবি + ইন্দ্ৰঃ = কবীন্দ্রঃ |
ই + ঈ = ঈ | গিরি + ঈশঃ = গিরীশঃ |
ঈ + ই = ঈ | মহী + ইন্দ্ৰঃ = মহীন্দ্রঃ |
ঈ + ঈ = ঈ | লক্ষ্মী + ঈশঃ = লক্ষ্মীশঃ |
স্বরসন্ধির নিয়ম – ৩
হ্রস্ব উ-কার কিংবা দীর্ঘ ঊ-কারের পর হ্রস্ব উ-কার কিংবা দীর্ঘ ঊ-কার থাকলে উভয় মিলে দীর্ঘ ঊকার হয়। দীর্ঘ-উ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যথা
উ + উ = ঊ | বিধু + উদয়ঃ = বিধূদয়ঃ |
উ + ঊ = ঊ | লঘু + ঊর্মিঃ = লঘূর্মিঃ |
ঊ + উ = ঊ | বধূ + উৎসবঃ = বধূৎসবঃ |
ঊ + ঊ =ঊ | ভূ + ঊর্ধ্বম = ভূর্ধ্বম্ |
স্বরসন্ধির নিয়ম – ৪
অ- কার কিংবা আ-কারের পর হ্রস্ব ই-কার কিংবা দীর্ঘ ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে এ-কার হয়। একার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।
অ + ই = এ | দেব + ইন্দ্ৰঃ = দেবেন্দ্রঃ |
আ + ই = এ | মহা + ইন্দ্রঃ = মহেন্দ্রঃ |
অ + ঈ = এ | গণ + ঈশঃ = গণেশঃ |
আ + ঈ = এ | রমা + ঈশঃ = রমেশঃ |
স্বরসন্ধির নিয়ম – ৫
অ-কার কিংবা আ-কারের পর হ্রস্ব উ- কার কিংবা দীর্ঘ ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ও-কার হয়। ওকার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যথা
অ + উ = ও | সূর্য + উদয় = সূর্যোদয়ঃ |
আ + উ = ও | গঙ্গা + উদকম্ = গঙ্গোদকম্ |
অ + ঊ = ও | পর্বত + ঊর্ধ্ব = পর্বতোর্ধ্ব |
আ + ঊ = ও | গঙ্গা + ঊর্মিঃ = গঙ্গোর্মিঃ |
স্বরসন্ধির নিয়ম – ৬
৬। অ-কার কিংবা আ-কারের পর ঋ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ‘অ’ হয়। অ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় ও র্ (রেফ্) হয়ে পরবর্ণের মস্তকে যায়। অর্থাৎ অর্ হয়
অ + ঋ = অর্ | দেব + ঋষিঃ = দেবর্ষিঃ |
আ + ঋ = অর্ | মহা + ঋষি = মহর্ষিঃ |
ব্যতিক্রম : ‘ঋত’ শব্দের ক্ষেত্রে ‘অর্’ না হয়ে ‘আর্’ হয়। যেমন :
- ক্ষুধা + ঋত = ক্ষুধার্ত
- পিপাসা + ঋত = পিপাসার্ত
- শীত + ঋত = শীতার্ত
- বেদনা + ঋত = বেদনার্ত
- ব্যথা + ঋত = ব্যথার্ত
স্বরসন্ধির নিয়ম – ৭
৭। অ-কার কিংবা আ-কারের পর এ-কার কিংবা ঐ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঐ-কার হয়। ঐ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যথা
অ + এ = ঐ | এক + একম্ = একৈকম্ |
আ + এ = ঐ | সদা + এব = সদৈব |
অ + ঐ = ঐ | মত + ঐক্যম্ = মতৈক্যম্ |
আ + ঐ = ঐ | মহা + ঐশ্বর্য = মহৈশ্বর্য |
স্বরসন্ধির নিয়ম – ৮
৮। অ-কার কিংবা আ-কারের পর ও-কার কিংবা ঔ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঔ-কার হয়। ঔ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যথা
অ + ও = ঔ | জল + ওঘঃ = জলৌঘঃ |
আ + ও = ঔ | মহা + ওষধি = মহৌষধিঃ |
অ + ঔ = ঔ | গত + ঔৎসুক্যম্ = গতৌৎসুক্যম্ |
আ + ঔ = ঔ | মহা + ঔদার্য = মহৌদার্য |
স্বরসন্ধির নিয়ম – ৯
৯। অসমান স্বরবর্ণ পরে থাকলে অর্থাৎ হ্রস্ব ই-কার বা দীর্ঘ ঈ-কার ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণ পরে থাকলে ই-কার বা ঈ-কার স্থানে য হয়। য পূর্ববর্ণে এবং পরবর্তী স্বর য-কারে যুক্ত হয়। যথা
ই /ঈ + অ = ই/ঈ স্থানে য | যদি + অপি = যদ্যপি |
ই /ঈ + আ = ই /ঈ স্থানে যা | অতি + আচারঃ = অত্যাচারঃ |
ই /ঈ + উ = ই /ঈ স্থানে যু | অভি + উদয়ঃ = অভ্যুদয়ঃ |
ই /ঈ + ঊ = ই /ঈ স্থানে যূ | প্রতি + ঊষ = প্রত্যূষ |
ই /ঈ + এ = ই/ঈ স্থানে যে | প্রতি + একম্ = প্রত্যেকম্ |
ই /ঈ + ঐ = ই/ঈ স্থানে যৈ | অতি +ঐশ্বর্যম্ =অতৈশ্বর্যম্ |
স্বরসন্ধির নিয়ম – ১০
১০। হ্রস্ব উ-কার কিংবা দীর্ঘ ঊ-কার ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণ পরে থাকলে উ বা উ-কার স্থানে বৃ হয়। ব পূর্ববর্ণে ও পরবর্তী স্বরবর্ণ বৃ-কারে যুক্ত হয়। যথা
উ/ঊ + অ = উ/ঊ স্থানে ব | অনু + অয়ঃ = অন্বয়ঃ |
উ/ঊ + আ = উ/ঊ স্থানে বা | সু + আগতম্ = স্বাগতম্ বধূ + আদিঃ = বধ্বাদিঃ |
উ/ঊ + ই = উ/ঊ স্থানে বি | মধু + ইদম্ = মধ্বিদম্ পূ + ইত্র = পবিত্র |
উ/ঊ + ঈ = উ/ঊ স্থানে বী | |
উ/ঊ + এ = উ/ঊ স্থানে বে | অনু + এষণম্ = অন্বেষণ |
উ/ঊ + ঐ = উ/ঊ স্থানে বৈ |
স্বরসন্ধির নিয়ম – ১১
১১। ঋ ভিন্ন স্বরবর্ণ পরে থাকলে ‘ঋ’ স্থানে র হয়। ঋ, র-ফলা হয়ে পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় এবং পরের স্বর রফলাযুক্ত বর্ণের সাথে মিলিত হয়। যথা
ঋ + অ = ঋ স্থানে র | পিতৃ + অনুমতিঃ = পিত্ৰনুমতিঃ |
ঋ + আ = ঋ স্থানে র | পিতৃ + আদেশঃ = পিত্রাদেশঃ |
ঋ + ই = ঋ স্থানে র | পিতৃ + ইচ্ছা = পিত্রিচ্ছা |
স্বরসন্ধির নিয়ম – ১২
১২। স্বরবর্ণ পরে থাকলে পদান্তে অবস্থিত এ-কার স্থানে ‘অয়’, ঐ-কার স্থানে ‘আয়’, ও-কার স্থানে ‘অব এবং ঐ-কার স্থানে ‘আ’ হয়। যথা
এ + স্বরবর্ণ = এ স্থানে অয়্ | শে + অনম্ = শয়নম্ |
ঐ + স্বরবর্ণ = ঐ স্থানে আয়্ | গৈ + অকঃ = গায়কঃ |
ও + স্বরবর্ণ = ও স্থানে অব্ | পো + ইত্র = পবিত্র |
ঔ + স্বরবর্ণ = ঔ স্থানে আব্ | পাে + অনঃ = পবনঃ নৌ + ইকঃ = নাবিকঃ |