শ্রীমদ্ভগবদগীতা সম্পর্কে কিভাবে ৫ নম্বর এর টীকা লেখা যায় তা তুলে দ্ধরা হল । শ্রীমদ্ভগবদগীতা বা গীতা কি ? (টীকা) শ্রীমদ্ ভাগবত গীতা – সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস । গীতার আঠারোটি অধ্যায়ের নাম ও গীতার বাণী সংস্কৃত তুলে ধরা হল ।
শ্রীমদ্ভগবদগীতা টিকা
গীতার রচয়িতা | শ্রী কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেব |
গীতার অপর নাম | যোগশাস্ত্র |
গীতার অধ্যায় | ১৮ টি |
গীতার শ্লোক সংখ্যা | ৭০০ টি (মতান্তরে ৭৪৫ ) |
গীতা শব্দের অর্থ | গান |
শ্রীমদ্ভগবদগীতা বা গীতার কি?
শ্রী কৃষ্ণদ্বৈপায়ন রচিত মহাভারতের ভীষ্ম পর্বের 25 হতে 42 তম অধ্যায় শ্রীমদ্ভগবদগীতা নামে পরিচিত। গীতা ভীষ্ম পর্বের অন্তর্গত হলেও বর্তমানে এটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ রূপে স্বীকৃত। ” গীতা” ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ নি:সৃতবানী। ” গীতা”-র একটি অধ্যায়কে যোগ বলা হয়। তাই গীতার আর এক নাম “যোগশাস্ত্র”।
শ্রীমদ্ভগবদগীতা উদ্ভবের কারণ / পূর্বকথা
কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে যে দাঁড়িয়ে তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন দেখলেন শত্রুপক্ষের আত্মীয় ও পরিবারবর্গ। এদের সঙ্গে যুদ্ধ করার কথা ভেবে অবসন্ন হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে উজ্জীবিত করার জন্য যে উপদেশ দেন তাই গীতা।
গীতার গ্রন্থ বিন্যাস –
গীতার আঠারোটি অধ্যায় 745 শ্লোক উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে এর শ্লোক সংখ্যা 700। তাই একে সপ্তসতী বলা হয়।
গীতার আঠারোটি অধ্যায়ের নাম
অধ্যায় ক্রমিক | অধ্যায় নাম | শ্লোক সংখ্যা |
---|---|---|
প্রথম অধ্যায় | অর্জুন-বিষাদ যোগ | ৪৬ |
দ্বিতীয় অধ্যায় | সাংখ্য যোগ | ৭২ |
তৃতীয় অধ্যায় | কর্মযোগ | ৪৩ |
চতুর্থ অধ্যায় | সন্ন্যাস যোগ | ৪২ |
পঞ্চম অধ্যায় | কর্ম সন্ন্যাস যোগ | ২৯ |
ষষ্ঠ অধ্যায় | আত্মসংযম যোগ | ৪৭ |
সপ্তম অধ্যায় | জ্ঞানবিজ্ঞান যোগ | ৩০ |
অষ্টম অধ্যায় | অক্ষরব্রহ্মযোগ | ২৮ |
নবম অধ্যায় | রাজবিদ্যারাজগুহ্য যোগ | ৩৪ |
দশম অধ্যায় | বিভূতি যোগ | ৪২ |
একাদশ অধ্যায় | বিশ্বরূপদর্শন যোগ | ৫৫ |
দ্বাদশ অধ্যায় | ভক্তি যোগ | ২০ |
ত্রয়োদশ অধ্যায় | ক্ষেত্রজ্ঞ যোগ | ৩৫ |
চতুর্দশ অধ্যায় | গণত্রয়বিভাগ যোগ | ২৭ |
পঞ্চদশ অধ্যায় | পুরুষোত্তম যোগ | ২০ |
ষোড়শ অধ্যায় | দৈবাসুরসংপদ্বিভাগ যোগ | ২৪ |
সপ্তদশ অধ্যায় | শ্রদ্ধাত্রয় বিভাগ যোগ | ২৮ |
অষ্টাদশ অধ্যায় | মোক্ষ-সন্ন্যাস যোগ | ৭৮ |
শ্রীমদ্ভগবদগীতার বিষয়বস্তু
শ্রীকৃষ্ণ বীরের ধর্ম আত্মার স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যে উপদেশ দেন তাই গীতার বিষয়বস্তু। ভারতীয় আধ্যাত্মতাবাদের মূল তত্ত্ব নিহিত আছে। গীতার মর্মবানী তিনটি। যথা:-
- (i)আত্মার অবিনশ্বরত্ব।
- (ii)নিষ্কাম কর্মযোগ
- (iii)ঈশ্বরের নিকট পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ।
কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান এবং তিনি সর্ব রূপে বিরাজিত এ কথাই গীতাতে প্রচারিত।
গীতার শিক্ষনীয় বিষয়
ধর্মে উদারতা, কর্মে নিষ্ক্রিয়তা, জীব সেবা, স্বধর্ম পালন -এই উদার সর্বজনীন সার্বভৌম উপদেশই শিক্ষনীয় বিষয়।’যত মত তত পথ’ এই বাণী ও গীতাতে পাই। গীতায় বিভিন্ন মত ও পথের সত্যতা ও স্বাধীনতা স্বীকার করা হয়েছে। অতএব, গীতা এক মহত্তম অখন্ডতার আদর্শ, এক সমস্তকে মস্তকে ধারন করা সমন্বয়ের বানী। এই হল গীতার পরম শিক্ষনীয় বিষয়।
গীতার মর্মবানী কি ?
আত্মার অবিনশ্বরত্ব, নিস্কাম কর্মযোগ ও ঈশ্বরে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ- এই তিনটিই গীতার মর্মবানী, গীতায় জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তির সমন্বয় সাধিত হয়েছে।
গীতা মহাভারতের অংশ না কি স্বতন্ত্র গ্রন্থ ?
ঐতিহ্য অনুসারে গীতা মহাভারতের ভীষম পর্বের অন্তর্গত, তাই মহর্ষি বেদব্যাস এর রচয়িতা । কিন্তু বিষয়বস্তুর বিচারে এবং স্বয়ং গীতার সাক্ষ্য অনুসারে গীতা উপনিষদ জাতীয় গ্রন্থ এবং তার প্রতিপাদ্য ব্রহ্মবিদা, যোগশাস্ত্র প্রভৃতি (প্রতি অধ্যায়ের শেষে আছে “ইতি শ্রীমদভগবদগীতাসু উপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে…..)। এদিক থেকে অনেকে গীতাকে স্বতন্ত্র গ্রন্থের মর্যাদা দিতে চান। তাঁদের মতে, গীতা একটি প্রাচীন অথবা অর্বাচীন (পরবর্তী) উপনিষদ, কিংবা ভাগবত দর্শন ও ধর্মসাধনার বিবিধ তত্ত্বের সংকলন এবং পরবর্তীকালে ভাগবত সম্প্রদায়ের দ্বারা মহাভারতের মধ্যে সংযোজিত, অন্তর্ভাবিত। এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কঠিন ।
মূল্যায়ন
গীতা দার্শনিক কাব্য হিসেবে সমগ্র জগতের সমাদৃত। হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ রূপে পঠিত হয়। গীতাকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ বলা হয়।”শ্রীমদভাগবদগীতা” ভারতীয়দের শ্রেষ্ট দর্শন শাস্ত্র। পৃথিবীর প্রায় ৩৬টি ভাষায় গীতার অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।শঙ্করাচার্য, মাধবাচার্য, শ্রীধরস্বামী প্রমুখ পন্ডিতগন গীতার উপর বহুভাষ্য ও টীকা রচনা করেছেন। আধুনিককালেও বালগঙ্গাধরতিলক, ঋষি অরবিন্দ এবং মহাত্মাগান্ধীর ব্যাখ্যাও উল্লেখযোগ্য। সকল শাস্ত্রের সার সংগ্রহ করেই “শ্রীমদভাগবদগীতা”-র সৃষ্টি হয়েছিল। ভারতীয় অন্যান্য ধর্ম শাস্ত্রে মোক্ষপ্রাপ্তির উপায়ের কথাতে আপাত বিরোধ বর্তমান। কিন্তু গীতা সেই সমস্ত বিরোধের অবসান ঘটিয়ে সমস্ত মত-পথের সমন্বয় সাধন করেছেন। এইজন্য গীতার জনপ্রিয়তা। দেশ ওকালের গন্ডি অতিক্রম করে গীতা বিশ্বমানের সামগ্রী হয়ে উঠেছে।
আরো পড়ুন – গীতার প্রথম অধ্যায় অর্জুন-বিষাদ যোগ
শ্রীমদ্ভগবদগীতা বা গীতা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য (FAQ)
গীতার রচয়িতা হলেন ব্যাসদেব ।
গীতা শব্দের অর্থ গান । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বলে, কথিত বলে তা “গীতা” (গৈ+ক্ত= গান বা কীর্তিত হয়েছে এই অর্থে গীত>গীতা, বানী বা বাক্ স্ত্রীলিঙ্গ বলে তার বিশেষনরূপে “গীতা” শব্দটিও স্ত্রীলিঙ্গে ব্যবহৃত।)
বর্তমানে প্রচলিত মহাভারতের ভীষ্ম পর্বের ২৫-৪২ তম অধ্যায় পর্যন্ত অংশটি “গীতা বা শ্রীমদ্ভগবদগীতা” নামে পরিচিত।
মহাভারতের যুদ্ধে অর্জুন যখন প্রতিপক্ষরূপে নিজেরই আত্মীয় ও গুরুজনদের দেখে যুদ্ধ করতে অসম্মত হন, তখন পান্ডবদের পরামর্শদাতা, আত্মীয় ও বন্ধু বাসুদেব কৃষ্ণ তাঁকে যুদ্ধে উৎসাহ দেওয়ার জন্য যে সমস্ত উপদেশ প্রদান করেন, সেই উপদেশের সংকলনই গীতা।
উ :- গীতা মহাভারতের ভীষ্ম পর্বের ২৫-৪২ তম অধ্যায় পর্যন্ত অংশটি “গীতা বা শ্রীমদ্ভগবদগীতা” নামে পরিচিত।
মহাভারতের ভীষ্ম পর্বের ২৫-৪২ তম অধ্যায়
Vyasa
মহাভারতের ভীষ্মপর্বের ২৫-৪২ তম অধ্যায় পর্যন্ত অংশটিই গীতা বা ভগবদগীতা ।
এই গীতায় ১৮ টি অধ্যায় ও ৭০০ শ্লোক আছে। তাই গীতা “সপ্তশতী” নামেও পরিচিত।
গীতার জনপ্রিয়তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরবর্তীকালে বিভিন্ন ভারতীয় দর্শন সম্প্রদায় গীতা নাম দিয়ে নিজ নিজ ধর্ম ও সম্প্রদায়ের কথা প্রচার করেছে। সেরকম কয়েকটি গ্রন্থ হল- রামগীতা,শিবগীতা, শম্ভূগীতা, কপিলগীতা, শক্তিগীতা, গনেশগীতা, নারদগীতা, ভক্তিগীতা, পান্ডবগীতা, গুরুগীতা, পঞ্চদশীগীতা প্রভৃতি।
এই গীতার অধ্যায়গুলি “যোগ” নামে পরিচিত। এক একটি অধ্যায়ে এক একটি বিষয় আলোচিত।
গীতাকে প্রধানতঃ জ্ঞান, কর্ম, ভক্তি ও অন্যান্য দার্শনিক বিষয় আলোচিত হলেও তার গূঢ়ার্থ অপূর্ব কাব্যধর্মী ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। গীতার ভাষা সরল। একাদশ অধ্যায়টি (বিশ্বরূপদর্শনযোগ) মহৎ কবিকল্পনার শ্রেষ্ট নিদর্শন । তাই গীতার দার্শনিক মূল্য ও কাব্যমূল্য অস্বীকার করা যায় না। পাশ্চাত্য দার্শনিক হুমবোল্ট গীতাকে বিশ্বসাহিত্যের “Only truly philosophical poem”(একমাত্র যথার্থ দার্শনিক কবিতা ) রূপে উল্লেখ করেছেন।
- [pdf] Gita-The Complete Argument by Sai R. Vaidyanathan (e-Book)
- (Pdf) সম্পূর্ণ বাংলা গীতা | Bengali Gita Pdf Download
- Modern Sanskrit Literature: Traditions and Innovations Hardcover
- Adhunik Sanskrit Sahitya Paperback
- (pdf) sunāma: beautiful Sanskrit names pdf Paperback – 28
- Manu Sanhita (Bengali) Hardcover
- Modern Sanskrit Literature Hardcover by H. L. Shukla (Author)