বঙ্গানুবাদ কর শিশুপালবধম্ মহাকাব্যের কয়েকটি শ্লোক ।
শিশুপালবধম্ মহাকাব্য হতে বঙ্গানুবাদ
১) যিযক্ষমানেনাহূতঃ পার্থেণাম বিদ্বন্মূরম্।
অভিচৈদ্যং প্রতিষ্ঠাসুরাসীত্ কার্যদ্বয়াকুলঃ।।
বঙ্গানুবাদ:- তারপর যজ্ঞ করতে ইচ্ছুক যুধিষ্ঠিরের দ্বারা (যজ্ঞে) নিমন্ত্রিত হয়ে এবং চেদিরাজের ( শিশুপাল ) বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করতে ইচ্ছুক হয়ে মুরের (সেই নামধারী অসুরের ) শত্রু (শ্রীকৃষ্ণ) এই কার্যদুটির ( যজ্ঞে যাওয়া ও যুদ্ধ করা) কোনটি সম্পাদন করবেন, তা স্থির করতে না পেরে আকুল বা হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেন।
২) সার্দ্ধমুদ্ধসীরিভ্যামথাসাবাসদত্ সদঃ।
গুরুকাব্যানুগাং বিভ্রচ্চান্দ্রীমভিনভঃ শ্রিয়ম্।।
বঙ্গানুবাদ:- বৃহস্পতি ও শুক্র আকাশে চন্দ্রকে অনুসরণ করলে যেমন শোভা হয় তেমন শোভাধারন করে শ্রীকৃষ্ণ তারপর উদ্ভব ও বলরামের সঙ্গে সভাগৃহে ( মন্ত্রণাগৃহে) গমন করলেন।
৩) জাজ্বল্যমান জগতঃ শান্তয়ে সমুপেয়ুষী।
ব্যদ্যোতিষ্ঠ সভাবেদ্যামসৌ নরশিখিত্রয়ী।।
বঙ্গানুবাদ:- পৃথিবীর শান্তির জন্য সম্মিলিত উজ্জ্বল অগ্নিস্বরূপ সেই তিন মনুষ্য সভা বেদীতে শোভা পাচ্ছিলেন।
৪) রত্নস্তম্ভেষু সংক্রান্ত প্রতিমাস্তে চকাশিরে
একাকিনোঅপি পরিতঃ পৌরুষেয়বৃতা ইব।
বঙ্গানুবাদ :- তারা (তিনজন ) একাকী হলেও রত্ন স্তম্ভে তাদের প্রতিবিম্ব পতিত হওয়ার ফলে তারা চারিদিকে পুরুষদের দ্বারা পরিবেষ্টিত রূপে প্রতিভাত হলেন।
৫) অধ্যাসামাসুরুত্তুঙ্গহেমপীঠানি যান্যমী
তৈরুহে কেসরিক্রান্তত্রিকূটশিখরোপমা।।
বঙ্গানুবাদ:- তাঁরা সভাগৃহে তিনটি উচ্চ সুবর্ণাসনে উপবেশন করলেন, যেন তিনটি সিংহ ত্রিকূট পর্বতের তিনটি শিখরে সমাসীম হল।
৬) গুরুদ্বয়ায় গুরুণোরুভয়োরথ কার্য্যয়োঃ
হরির্বিপ্রতিষেধং তমাচচক্ষে বিচক্ষণঃ।
বঙ্গানুবাদ:- এরপর কুশরী বক্তা শ্রীকৃষ্ণ দুই গুরুজনের (উদ্ভব ও বলরাম ) কাছে গুরুতর কার্যদ্বয়ের বিরোধের কথা বললেন।
৭) দ্যোতিতান্তঃ সভৈঃ কুন্দকুডমলাগ্রদতঃ স্মৈতৈঃ।
স্নপিতেবাভবত্তস্য শুদ্ধবর্ণা সরস্বতী।।
বঙ্গানুবাদ:- তাঁর কুন্দকুঁড়ির অগ্রভাগের মতো দন্তের হাসি সভাগৃহের অভ্যন্তর ভাগকে উদ্ভাসিত করল, সেই হাসির ছটায় তাঁর শুদ্ধাক্ষরযুক্ত বাক্য যেন স্নাত হয়েই প্রকাশিত হল।
৮) ভবদ্ গিরামবসর প্রদানায় বচাংসি নঃ।
পূর্বরঙ্গপ্রসঙ্গায় নাটকীয়স্য বস্তুনঃ।।
বঙ্গানুবাদ:- আপনাদের দুজনকে কথা বলার অবসর দেওয়ার জন্যই আমাকে কথা বলতে হচ্ছে, নাট্য বিষয়ের অবতারণার জন্যই পূর্ব রঙ্গের প্রবর্তনা হয়।
৯) করদীকৃতভূপালো ভ্রাতৃভির্জিত্বরৈর্দিশাম্।
বিমাপ্যস্থদলম্ভুষ্ণুরিজ্যায়ৈ তপসঃ সুতঃ।
বঙ্গানুবাদ :- ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির তাঁর ভ্রাতাদের সাহায্যে বিভিন্ন দিক জয় করে সমস্ত রাজাদের করদরূপে পরিণত করেছেন, সুতরাং তিনি যুধিষ্ঠির আমাদের ছাড়ায় রাজসূয় যজ্ঞ সম্পন্ন করতে সমর্থ হবেন।
১০) উত্তিষ্ঠমানস্তু পরো নোপক্ষ্যঃ পথ্যমিচ্ছতা।
সমৌ হি শিষ্টৈরাম্নাতৌ বর্তস্যন্তাবাময়ঃ স চ।।
বঙ্গানুবাদ:- যিনি নিজের হিত কামনা করেন তাঁর পক্ষে বৃদ্ধিশীল শত্রুকে উপেক্ষা করা উচিত নয়, কারণ শাস্ত্রজ্ঞগণ বৃদ্ধিশীল রোগ ও শত্রুকে সমান বলেছেন।
১১) ন দূয়ে সাত্বতীসূনুর্যন্মহ্যমপরাধ্যতি।
যত্তুদন্দহ্যতে লোকমদোদুঃখাকরোতি মাম্।।
বঙ্গানুবাদ:- (পিতৃষ্বসা) সাত্বতীর পুত্র (শিষুপাল ) যে আমার প্রতি অপরাধ করেছে এজন্য আমি পরিতাপ করি না, কিন্তু সে জগতের পীড়া উৎপাদন করছে এজন্যই আমার দুঃখ।
১২) মম তাবন্মতমিদং শ্রুয়তামঙ্গ বামপি।
জ্ঞাতসারো অপি খল্বেকঃ সন্দিগ্ধে কার্যবস্তুনি।।
বঙ্গানুবাদ:- এটাই আমার মত। আপনাদের দুজনেরও (মত) শুনব। বস্তুত যিনি সবই জানেন, তিনিও কার্যবিষয়ে একা যে সিদ্ধান্ত করেন, তাতে সন্দিহান হয়ে থাকেন।
১৩) যাবদর্থপদাং বাচমেবমাদায় মাধবঃ।
বিররাম মহীয়াংসঃ প্রকৃত্যা মিতভাষিণঃ।
বঙ্গানুবাদ:- এরূপ অর্থযুক্ত বাক্য বলে শ্রীহরি বিরত হলেন, কারন মহান্ লোকেরা স্বভাবতই মিতভাষী হয়ে থাকেন।
১৪) ততঃ সপত্নাপনয়স্মরণানুশয়স্ফুরা।
ওষ্ঠেন রামো রামোষ্ঠবিম্বচুম্বনচঞ্চুনা।।
বঙ্গানুবাদ:- তারপর শত্রর অপমান স্মরণে কম্পিত প্রিয়ার অধরবিম্বচুম্বনে চতুর বলরাম বলতে লাগলেন।
১৫) বিবক্ষিতামর্থবিদস্তৎক্ষণ প্রতিসংহৃতাম্।
প্রাপয়ন্ পবনব্যাধের্গিরমুত্তর পক্ষতাম্।।
বঙ্গানুবাদ:- কার্য্যাভিজ্ঞ উদ্ভব সে সময় বলতে ইচ্ছুক হলেও (বলরাম বলতে প্রবৃত্ত হওয়ার জন্য) তিনি তাঁর বক্তব্য স্থগিত রাখলেন। উদ্ভবের সেই বাক্য বলরামের বাক্যের উত্তরপক্ষে (সিদ্ধান্তপক্ষ) হয়ে দাঁড়াল।
১৬) ঘূর্ণয়ন্ মদিরাস্বাদমদপাটলিন্দ্যুতী।
রেবতীবদণোচ্ছিষ্টপরিপূততটে দৃশৌ।।
বঙ্গানুবাদ:- মদ্যের আস্বাদজনিত মত্ততার কারণে আরক্ত রেবতীর মুখের উচ্ছিষ্ট (মদ্যের দ্বারা) পবিত্রীকৃত চক্ষুদুটিকে ঘুরিয়ে বলরাম বলতে লাগলেন।
১৭) আশ্লেষলোলুপবধূস্তনকার্কশ্যসাক্ষিণীম্।
স্লাপয়ন্নভিমানোষ্ণৈর্বনমালাং মুখানিলৈঃ।।
বঙ্গানুবাদ:- আলিঙ্গনলুব্ধ বধূর স্তনকাঠিন্যের অনুভবকারিনী বক্ষে লম্বমান বনমালাকে অভিমানের উষ্ণ নিঃশ্বাসে ম্লান করে বলরাম বলতে লাগলেন।
১৮) দধত্ সন্ধ্যারুণব্যোমস্ফুরত্তারানুকারিনীঃ।
দ্বিষদ্ দ্বেষোপরক্তাঙ্গসঙ্গিনীঃ স্বেদবিপ্রুষঃ।।
বঙ্গানুবাদ:- শত্রুর প্রতি ক্রোধে বলরাম আরক্ত অঙ্গে স্বেদবিন্দু ধারণ করেছিলেন। সন্ধ্যারাগে রঞ্জিত আকাশে তারকার অনুকরণ করেছিল এই স্বেদবিন্দুগুলি।
১৯) প্রোল্লসৎকুন্ডলপ্রোতপদ্মরাগদলত্বিষা
কৃষ্ণোত্তরাসঙ্গরুচং বিদধচ্চৌতপল্লবীম্।।
বঙ্গানুবাদ:- উজ্জ্বল কুন্তলে খচিত পদ্মরাগমণিখন্ডের দীপ্তির দ্বারা তাঁর নীল উত্তরীয়ের দীপ্তিকে তিনি কৃষ্ণলোহিতরূপে পরিণত করেছিলেন।
২০) ককুদ্ মিকন্যাবক্ত্রান্তর্বাসলব্ধাধিবাসয়া
মুখামোদং মদিরয়াকৃতানুব্যাধমুদ্বমন্।।
বঙ্গানুবাদ:- ককুদমিকন্যা অর্থাৎ রেবতী কর্তৃক পূর্বেই পীত মদ্য তাঁর (রেবতীর ) মুখের গন্ধে সুবাসিত হয়েছিল, সেই মদ্যসুরভি বক্তুকাম বলরামের মুখ থেকে নির্গত হল।
বৃহতসহায়ঃ কার্য্যান্তং ক্ষোদীয়ানপি গচ্ছতি।
সম্ভূয়াম্ভোধিমভ্যেতি মহানদ্যা নগাপগাঃ।।
বঙ্গানুবাদ:- অতি ক্ষুদ্র ব্যাক্তি ও মহতের সাহায্যে কার্যসিদ্ধি করতে পারে। পার্বত্য ক্ষুদ্র নদী বড় নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে।
অনুৎসূত্র পদন্যাসা সৎবৃত্তি সন্নিবন্ধনা।
শব্দবিদ্যেব নো ভাতি রাজনীতিরপস্পশা।।
বঙ্গানুবাদ:- সূত্রের প্রতিপদের অর্থবোধক ন্যাসগ্রন্থযুক্ত, উৎকৃষ্টবৃত্তিগ্রন্থ সমন্বিত ও উপাদেয় মহাভাষ্যযুক্ত ব্যাকরণশাস্ত্র পস্পশা নামক ভূমিভাষ্য ছাড়া যেমন শোভা পায়না, তেমনি রাজনীতি শাস্ত্র অনুসারে চালিত হয়েও ভৃত্য অমাত্যদের যথোচিত বেতন দিয়েও নিযুক্ত লোকদের কাজের শেষে চিরস্থায়ী ভূমিদান প্রভৃতি করেও যদি চর নিযুক্ত করা না হয়, তাহলে শোভা পায় না।
বিরোধিবচসো মূকান্ বাগীশানপি কুর্বতে।
জড়ানপ্যনুলোমার্থান্ প্রবাচঃ কৃতিনাং গিরঃ।
বঙ্গানুবাদ:- কৃতী ব্যক্তিদের বাক্য বিরুদ্ধবাদী বাগ্মীদের মুখ বা বাক্যহীন করে, আর অনুকূলভাষীবা স্বপক্ষবাদী জড় বা মন্দবুদ্ধি ব্যাক্তিদের বক্তা করে তোলে।
তৃপ্তিযোগঃ পরেনাপি মহিম্না ন মহীয়সাম্।
পূর্ণশ্চন্দ্রোদয়াকাঙ্খী দৃষ্টান্তোঅত্রমহার্ণবঃ।।
বঙ্গানুবাদ:- প্রভৃত ঐশ্বর্যের দ্বারা পরিপূর্ণ হলেও মহাপুরুষেরা কখনই তৃপ্তিবোধ করেন না। পরিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও চন্দ্রের উদয়কামী মহাসমুদ্র এ বিষয়ে দৃষ্টান্ত।
- শিশুপালবধম্: শ্লোক সংস্কৃত ব্যাখ্যা
- শিশুপালবধম্: বঙ্গানুবাদ
- মাঘে সন্তি ত্রয়ো গুনাঃ – ব্যাখ্যা কর
- শিশুপালবধম্ মহাকাব্য: উদ্ধবের চরিত্র বিশ্লেষণ
- শিশুপালবধম্ মহাকাব্য: উদ্ধবের উক্তি সংক্ষেপে বর্ণনা
- মাঘে সন্তি ত্রয়োগুণাঃ- এই উক্তিটি আলোচনা কর
- মাঘে সন্তি ত্রয়ো গুণাঃ – উক্তিটির যথার্থতা