অক্ষসূক্তের বর্ণনা অনুযায়ী অক্ষক্রীড়কের দুর্দশাগ্রস্তের চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে । অক্ষসূক্ত অনুযায়ী অক্ষগুলি কিসের তৈরি? অক্ষসূক্তটি কোন মন্ডলের অন্তর্গত? অক্ষসূক্তের বর্ণনা অনুযায়ী অক্ষক্রীড়া অক্ষক্রীড়ককে কীভাবে দুর্দশাগ্রস্ত করে তুলেছে, তার চিত্র অঙ্কন কর।
অক্ষসূক্ত অনুযায়ী অক্ষগুলি কিসের তৈরি? অক্ষসূক্তটি কোন মন্ডলের অন্তর্গত? অক্ষসূক্তের বর্ণনা অনুযায়ী অক্ষক্রীড়া অক্ষক্রীড়ককে কীভাবে দুর্দশাগ্রস্ত করে তুলেছে, তার চিত্র অঙ্কন কর।
উঃ- অক্ষসূক্ত অনুযায়ী অক্ষগুলি বিভীদক বা বহেড়া কাঠের তৈরি।
অক্ষসূক্তটি ঋকবেদের দশমমন্ডলের অন্তর্গত ৩৪তম সূক্ত।
প্রাচীনকালে বিনোদনের একটি অন্যতম মাধ্যম ছিল অক্ষক্রীড়া। কিন্তু অক্ষক্রীড়া ছিল সমাজে এক দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক ক্রীড়া।
অক্ষক্রীড়ার জন্য প্রয়োজনীয় ঘুটিগুলি তৈরি করা হত অত্যন্ত বায়ুযুক্ত দেশে জাত বিভীদক বা বহেড়া কাঠ থেকে।
অক্ষক্রীড়কের দুর্দশাগ্রস্ত
এখানে ঋষি ঔলুষ কবষ অক্ষক্রীড়া কেমন করে একজন অক্ষক্রীড়ককে দুর্দশাগ্রস্ত করে তুলতো, তার চিত্র সুন্দরভাবে তাঁর অক্ষসূক্তে তুলে ধরেছেন।
অক্ষক্রীড়ায় নিয়োজিত হওয়ার পর একজন কিতবের মন সোমরস পানের মতোই মত্ত হয়ে পড়ত পাশার ছকে ঘুটিগুলি নিক্ষিপ্ত করার পূর্বে।
সোমরস পান করলে মানুষ যেমন মত্ত হয়ে পড়ত এবং তার কর্তব্য কর্ম থেকে বিরত হত তেমনি কিতবেরা নিজের মন ও প্রাণ অক্ষক্রীড়ার দিকে নিয়োজিত করায় ধীরে ধীরে সর্বহারা হয়ে পড়ত।
এমনকি মহাজনের কাছে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করে সেই অর্থকে অক্ষক্রীড়ায় প্রযুক্ত করত এবং বারবার জেতার আশায় থাকলেও বারবার বিফল হয়ে পড়তো ফলে তার ঋণের বোঝা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে পড়তো।
যা পরিশোধের জন্য মহাজন’ তার বাড়িতে এলে তার পরিবারের লোকেরা অর্থাৎ পিতা-মাতা ও ভ্রাতারা বলতো আমরা একে চিনি না তোমরা একে নিয়ে যাও। ফলে অক্ষক্রীড়ায় পরাজিত কিতব সংসার থেকেও বিচ্যুত হয়ে পড়তো। এমনকি জয়ী মিত্রবর্গেরাও তাকে ঘৃণা করতো।
এছাড়াও ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় অন্যেরা তার পতিব্রতা স্ত্রীকে স্পর্শ করতে ভয় পেত না। ফলে তার শাশুড়ি তাকে নিন্দা করতো ও তার পতিব্রতা স্ত্রীর কাছ থেকেও সামান্য
অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়ে পড়তো। কিন্তু অক্ষক্রীড়ার থেকে মনকে ঘরাতে পারতো না।তাই রাত্রিবেলায় অপরের গৃহে চুরি করতে যেত এবং সেই চুরি করা অর্থও পুনরায় জেতার আশায় অক্ষক্রীড়ায় নিয়োজিত করত এবং পুনরায় বিফলহত।
ফলে একজন কিতব আশাহত হয়ে পড়তো এবং তখন কিতব ঠিক করতো আর পাশা খেলবো না।
এই বলে পরাজিত মিত্রদের থেকেও দূরে সরে যেত।
কিন্তু যখনই পাশার ছকে ঘুটিগুলি পড়ে শব্দ করত, সেই শব্দ শুনে পুনরায় স্বৈরিনী নারীর মতোই পাশার ছকের দিকে এগিয়ে যেত এবং তার পন ভঙ্গ হত।
তারপর সমাজস্থ অপরাপর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক দেখে অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে পড়ত।
অক্ষক্রীড়কের অন্তিম পরিণতি
তারপর থেকে সর্বহারা,ঋনভারে জর্জরিত কিতব ঠিক করতো আর পাশা খেলব না এবং অপর কিতবের উদ্দেশ্যে সতর্কবানী করে জানাও-
“অক্ষৈমা দিব্যঃ কৃষিমিৎ কৃষস্ব বিত্তে রমস্ব বহু মন্যমানঃ।
তত্র গাবঃ কিতব তত্র জায়া তন্মৈ বিচষ্টে সবিতায়মর্যঃ।।’
অর্থাৎ আর পাশা খেলনা তার পরিবর্তে কৃষিকাজ কর, নিজের যেটুকু ধন আছে তা নিয়েই আনন্দ কর,তবেই সর্বদা সুখ বজায় থাকবে।
এইভাবে ঋষি ঔলুষ কবষ তাঁর অক্ষসূক্তে একজন অক্ষক্রীড়ককে অক্ষক্রীড়া কিভাবে দুর্দশাগ্রস্ত করে তুলতো, তার সুন্দর চিত্র এখানে তুলে ধরেছেন।