ঈশোপনিষদে প্রতিপাদিত শিক্ষনীয় বিষয় আলোচনা কর(Isponishad Shiksha Topics Discussion)।
ঈশোপনিষদে প্রতিপাদিত শিক্ষনীয় বিষয়
উপনিষদের মূলমন্ত্র
ব্রহ্ম সত্যং জগন্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ। অর্থাৎ ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা।জীব এবং ব্রহ্ম অভিন্ন নয় এটাই উপনিষদের মূলমন্ত্র। এই তত্বের উপলব্ধির মাধ্যমে ব্রহ্ম সাক্ষাৎকারে জীবের অবিদ্যাগ্রস্ত এই জগত থেকে মুক্তি ঘটে। উপনিষদ সমূহের ব্রহ্ম জ্ঞান লাভের উপায় রূপে জ্ঞান ও কর্ম এই দুটি পথ এর উপদেশ তুলে ধরা হয়েছে।
উপনিষদের আলোচ্য বিষয়বস্তু
কর্মের দ্বারা চিত্তশুদ্ধি ঘটলেই জ্ঞানমার্গের অধিকারী হয় এবং জ্ঞানের দ্বারায় জীবের মুক্তি ঘটে। উপনিষদ গুলিতে এই উভয় মার্গের যেমন প্রশংসা করা হয়েছে তেমনি এদের একক মার্গের নিন্দার মাধ্যমে তাদের সহাবস্থানের প্রশংসা তুলে ধরা হয়েছে এছাড়া উপনিষদে আত্মজ্ঞান আত্মদর্শীর স্বরূপ,ভক্তি প্রভৃতি বিষয়ে অবতারণা করা হয়েছে উপনিষদের আলোচ্য বিষয়বস্তু গুলির মধ্য দিয়েই তার শিক্ষাকে সুকৌশলে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
ঈশোপনিষদে শিক্ষনীয় বিষয়
বাজসনেয়ী সংহিতার অন্তর্গত হলো ঈশোপনিষদ।মাত্র 18 টি মন্ত্রে এই উপনিষদ রচিত। এই 18 টি মন্ত্রে উপরের বিষয়গুলি সংক্ষেপে অথচ যুক্তিসহকারে যেভাবে আলোচিত হয়েছে তার মধ্যেই তার শিক্ষণীয় বিষয় গুলি সুকৌশলে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
ঈশোপনিষদে বিষয় আলোচনা
এই ঈশোপনিষদের প্রথম মন্ত্রে বলা হয়েছে ব্রহ্ম আত্মারূপে জগতের চরাচর সমস্ত প্রাণীর মধ্যে বিরাজমান তাই তিনি সর্বব্যাপী। সর্বব্যাপী ব্রম্ভ জ্ঞান ছাড়া জীবের মুক্তি সম্ভব নয় আবার ত্যাগ ছাড়া এই জ্ঞান লাভও সম্ভব নয়।
ঈশোপনিষদে শিক্ষা
- তাই সমস্ত মুমুক্ষু জীবের উদ্দেশ্যে এই উপনিষদের শিক্ষা হল-” তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীষা মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্বমম্ ‘ অর্থাৎ ত্যাগ এর দ্বারা ভোগ করো এবং নিজের ও অপরের ধন সম্পদের প্রতি আকাঙ্ক্ষা বর্জন করো। কিন্তু সকল মানুষের পক্ষেই এই আকাঙ্ক্ষা সহজে ত্যাগ করা সম্ভব নয়।
- তাই আকাঙ্ক্ষা ত্যাগের জন্য ঈশোপনিষদ শাস্ত্রবিহিত কর্ম বা নিষ্কাম কর্ম পালনের শিক্ষা দিয়েছে। এবং বলেছে যতদিন না চিত্ত শুদ্ধি হয় ততদিন এই কর্ম পালন করতে হবে প্রয়োজনে একশত বছর বেঁচে থাকার ইচ্ছা পোষণ করতে হবে- কুর্বন্নেবেহ কর্মাণি জিজীবিষেচ্ছতং সমাঃ।
- কিন্তু সংশয় হলো আসক্তির বসে মানুষ কর্ম করে এবং কর্ম করতে করতে কর্মের বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে ফলে ভোগবাসনা নিবৃত্তি পরিবর্তে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায় কর্ম সম্বন্ধে এই সংশয় দূর করতে গিয়ে ঈশোপনিষদ শিক্ষা দিয়ে বলেছে যে- এবং ত্বয়ি নান্যথেতোঅস্তি ন কর্ম্ম লিপ্যতে নরে।
- শাস্ত্রবিহিত কর্ম ছাড়া ভোগবাসনা ত্যাগের আর অন্য কোন পথ নেই আবার যারা আত্মজ্ঞান বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন পার্থিব জীবনের চরম প্রাপ্তি বলে মনে করে সে সব আত্মজ্ঞানহীনদের শিক্ষা দিতে গিয়ে এই উপনিষদ বলেছে যে মৃত্যুর পর এসব লোকেরা নিরন্তন জন্ম-মৃত্যুর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অশেষ দুঃখ যন্ত্রণা ভোগ করে এদের দুঃখ ভোগের কখনো নিবৃত্ত হয় না।
অর্থাৎ শুধু কর্ম মার্গ আশ্রয়ের ফল হয় গহন অন্ধকাররূপ ঘোরতর সংসার বন্ধনদশা এবং কর্ম কে বাদ দিয়ে শুধু জ্ঞানমার্গ আশ্রয়ের ফল হয় ততোধিক ঘোরতর সংসার বন্ধনদশা।
ঈশোপনিষদ মূল লক্ষ্য
এভাবে পৃথক পৃথকভাবে কর্ম ও জ্ঞানের শিক্ষা দিয়ে ঈশোপনিষদ মূল লক্ষ্য লাভের আশ্রয়রূপে এই উভয় মার্গের সহানুষ্ঠানের শিক্ষা দিয়ে বলেছে।
ঈশোপনিষদ-এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয়
সুতরাং উপনিষদ এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ব্রম্ভ জ্ঞান। ঈশোপনিষদ অতি সংক্ষেপে অথচ গুরুত্ব সহকারে এই ব্রম্ভ জ্ঞান লাভের উপায় সমূহের শিক্ষা দিয়েছে এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে এক এবং বহু,কর্ম ও জ্ঞান, বিদ্যা ও অবিদ্যা, সম্ভূতি এবং অসম্ভূতি প্রভৃতি আপাত বিরুদ্ধ বিষয় সমূহেরও শিক্ষা দিয়ে বৈদান্তিক সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে নিয়েছে।
ঈশোপনিষদ হতে গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট গুলি
ঈশোপনিষদ হতে মন্ত্রগুলির বাখ্যাগুলি পড়ুন
ঈশোপনিষদ মন্ত্র বাখ্যা-(1-4) |
ঈশোপনিষদ মন্ত্র বাখ্যা-(5-7) |
ঈশোপনিষদ সংস্কৃত মন্ত্র বাখ্যা-(8-10) |
ঈশোপনিষদ মন্ত্র বাখ্যা-(11-13) |