ঈশোপনিষদ্ হতে ছোট সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
ঈশোপনিষদ্ হতে ছোট সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
১) ঈশোপনিষদ্ কোন বেদের অন্তর্গত? অথবা ঈশোপনিষদ্ কোন্ সংহিতার অন্তর্গত?
উ:- ঈশোপনিষদ শুক্লযজুর্বেদের অন্তর্গত। এবং এটি বাজসনেয়সংহিতার ৪০তম অধ্যায়।
২) ঈশোপনিষদের ঋষি হলেন? এতে পাঠ্যরূপে কতকগুলো মন্ত্র রয়েছে?
উ:- ঈশোপনিষদের ঋষি হলেন দধ্যঙ্ আথর্বন্। বাজসনেয় সংহিতার অন্তর্গত ঈশোপনিষদ থেকে মোট ১৮টি মন্ত্র আমাদের পাঠ্যরূপে নির্দিষ্ট আছে।
৩) উপনিষদ শব্দের অর্থ কী? এর সংখ্যা কত?
উ:- উপনিষদ শব্দের অর্থ হল ব্রহ্মবিদ্যা। অর্থাৎ যে বিদ্যার সাহায্যে ব্রহ্ম লাভ করা যায়।
উপনিষদের সঠিক সংখ্যা (মন্ত্র) নির্নয় করা যায় না। এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন মত প্রকাশ করেন। যেমন – বেদের শাখার সংখ্যা অনুসারে উপনিষদের শাখা ১১৩১টি হতে পারে। আবার কারো মতে উপনিষদের সংখ্যা ৩০০টি বা ১৪০টি বা ১০৮টি। তবে এদর মধ্যে ভাব ও ভাষার গাম্ভীর্য অনুসারে ১৪টি উপনিষদকে প্রামাণিক বলা হয়।
৪) উপনিষদের নামান্তর কী?
উ:- উপনিষদের নামান্তর হল বেদান্ত। বেদের অন্তিম ভাগ উপনিষদ রূপে পরিচিত। প্রতিটি বেদ সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ এই চার ভাগে বিভক্ত।
৫) ঈশোপনিষদের নামান্তর কি?
উ:- ঈশোপনিষদের নামান্তর হল বাজসনেয়সংহিতোপনিষদ্ এবং ঈশাবাস্যোপনীষদ্ বা মন্ত্রোপনিষদ্।
৬) ঈশোপনিষদ কে বাজসনেয় সংহিতোপনিষদ্ বলা হয় কেন?
উ:- ঈশোপনিষদ্ টি শুক্লযজুর্বেদীয় বাজসনেয় সংহিতার অন্তর্গত বলে একে বাজসনেয়সংহিতোপনিষদ্ বলা হয়। অপরদিকে, ঈশাবাস্যমিদংসবংম্ মন্ত্র দ্বারা ঈশোপনিষদ্ গ্রন্থটি আরম্ভ করা হয়েছে বলে এই উপনিষদের আর এক নাম ঈশাবাস্যোপনিষদ্।
৭) ঈশোপনিষদ্ নামকরণের কারণ কি?
উ:- ঈশ্ অর্থাৎ পরমেশ্বর। এই ঈশ্ শব্দের দ্বারা উপনিষদটি শুরু হয়েছে বলে এর নাম ঈশোপনিষদ। যথা এই উপনিষদের প্রথম মন্ত্র-
” ঈশাবাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ জগৎ
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্যস্বিৎধনম্।।”
অর্থাৎ ঈশ্বর দ্বারা আচ্ছাদিত। সুতরাং আত্মজ্ঞান ঈশোপনিষদের প্রতিপাদ্য হওয়ার কারণেও ঈশোপনিষদ্ নামকরণ সার্থক হয়েছে।
৮) তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথাঃ – মন্ত্রাংশটির অর্থ লিখ।
উ:- উপরিউক্ত মন্ত্রটি ঈশোপনিষদের শুক্লযজুর্বেদের বাজসনেয় সংহিতার অন্তর্গত।
যেহেতু ঈশ্বর জাগতিক বস্তুসকলকে আচ্ছাদিত করে আছেন, তাই বাহ্য বস্তু পরিত্যাগের মাধ্যমে আত্মাকে পালন বা রক্ষা করবে। আত্মা সর্বব্যাপী এরূপ চিন্তা করবে।
৯) মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ধনম্ মন্ত্রটির তাৎপর্য বা অর্থ কী?
উ:- উদ্ধৃত অংশটি ঈশোপনিষদের শুক্লযজুর্বেদের বাজসনেয় সংহিতার অন্তর্গত।
জগতের সকর পদার্থই ঈশ্বর দ্বারা আচ্ছাদিত বলে আত্মাতিরিক্ত পৃথক বস্তু না থাকায় কারও ধনসম্পদে আকাঙ্ক্ষাই থাকতে পারে না। যখন সকল সম্পদই আত্মা তখন কে কার ধন গ্রহণ করবে? অর্থাৎ সবই আত্মাময় বলে ঐক্য বুদ্ধি হওয়ায় কারও সম্পদ সংগ্রহে আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে না।
১০) ন কর্ম লিপ্যতে নরে- মন্ত্রাংশটির তাৎপর্য কি?
উ:- উদ্ধৃত মন্ত্রাংশটি ঈশোপনিষদের শুক্লযজুর্বেদের বাজসনেয় সংহিতার অন্তর্গত।
জগতের সকল পদার্থই ঈশ্বর দ্বারা আচ্ছাদিত বলে আত্মাতিরিক্ত পৃথক বস্তু না থাকায় কারও ধনসম্পদে আকাঙ্ক্ষাই থাকতে পারে না। যখন সকল সম্পদই আত্মা তখন কে কার ধন গ্রহণ করবে? অর্থাৎ সবই আত্মাময় বলে ঐক্য বুদ্ধি হওয়ায় কারও সম্পদ সংগ্রহে আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে না।
১১) ন কর্ম লিপ্যতে নরে- মন্ত্রাংশটির তাৎপর্য কি?
উ:- উদ্ধৃত মন্ত্রাংশটি ঈশোপনিষদের শুক্লযজুর্বেদের বাজসনেয় সংহিতার অন্তর্গত।
অগ্নিহোত্রাদি যজ্ঞানুষ্ঠান দ্বারা পিতৃলোক প্রাপ্তি হয়। এই পিতৃলোক থেকে পুনরায় প্রাপ্তি হয়। এই পিতৃলোক থেকে পুনরায় সংসারে আসতে হয় বলে কর্মফলত্যাগ পূর্বক অর্থাৎ আসক্তিরহিত হয়ে মানুষকে কর্ম করার উপদেশ বেদ দিয়েছেন। অনাসক্ত কর্মীর ক্রমশ চিত্তশুদ্ধি হয়ে সংসার বীজ নষ্ট হয়। কর্মফলেষু ন রমত ইতি নরঃ’ মানুষ কর্মফলে আনন্দিত হয় না বলে নর নামে অভিহিত।
১২) ঈশোপনিষদের কয়টি শাখা ও প্রতিশাখার মন্ত্রসংখ্যা কত?
উ:- ঈশোপনিষদে দুইটি শাখা পাওয়া যায়। যথা- i) কান্ব শাখা
ii) মাধ্যন্দিন শাখা।
কান্ব শাখায় মোট ১৮টি এবং মাধ্যন্দিন শাখায় মোট ১৭টি মন্ত্র আছে।
১৩) প্রধান প্রধান উপনিষদগুলি মধ্যে কোন উপনিষদ অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন?
উ:- প্রধান প্রধান উপনিষদগুলির মধ্যে ঈশোপনিষদের গুরুত্ব সর্বাপ্রেক্ষা অধিক। কারণ সমস্ত উপনিষদ গুলির মধ্যে এই ঈশোপনিষদটি শুক্ল যজুর্বেদের বাজসনেয় সংহিতার অন্তর্গত। অন্যান উপনিষদগুলি বেদের ব্রাহ্মণ ভাগের অন্তর্গত।
১৪) ঈশোপনিষদের একজন টীকাকারের নাম লিখ।
উ:- ঈশোপনিষদের একজন অন্যতম প্রসিদ্ধ টীকাকার হলেন দার্শনিক প্রবর অদৈত্য বেদান্তের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমতস্বামী পরমহংস পরিব্রাজক শঙ্করাচার্য।
১৫) ঈশোপনিষদের প্রথম মন্ত্রটি বেদের কোন কান্ডের অন্তর্গত। কারন এখানে ঈশ্বরের সর্বব্যতিত্ব বর্ণনা করে জ্ঞানতত্ত্বই প্রতিপাদিত হয়েছে।
১৬) অন্ধং তম বলতে কি বোঝানো হয়েছে?
উ:-অন্ধং তম বলতে অজ্ঞানরূপ অন্ধকারকে বোঝানো হয়েছে। যারা অবিদ্যা বা কর্মমার্গের উনাসনা করে তারা গভীর অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। তাই এই কর্মমার্গকে অন্ধং তম বলা হয়েছে।
১৭) আত্মহনো কথার অর্থ কি? কে মন অপেক্ষা বেগবান? অথবা, কীভাবে তারা নিজেদের হত্যা করে?
উ:- প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি ঈশোপনিষদের শুক্লোযজুর্বেদের বাজসনেয় সংহিতার অন্তর্গত।
অজ্ঞান আবরণে আবৃত্ত ব্যাক্তির কাছে আত্মার স্বরূপ অবিজ্ঞাত অর্থাৎ আত্মা যেন তার কাছে হত বা মৃত। তাই আত্মস্বরূপে অনভিজ্ঞ ব্যাক্তিকেই আত্মহনঃ বলা হয়। সুতরাং অজ্ঞান বা অবিদ্যার দ্বারা তারা নিজেদের হত্যা করে।
ব্রহ্ম বা আত্মাকেই মন অপেক্ষা বেগবান বলা হয়েছে।
১৮) অসূর্যা নাম তে লোকাঃ– মন্ত্রাংশে লোকাঃ ও অসূর্যা পদদুটির অর্থ কী?
উ:- প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি ঈশোপনিষদের শুক্লোযজুর্বেদের বাজসনেয় সংহিতার অন্তর্গত।
ঈশোপনিষদে উল্লিখিত অসূর্যা শব্দের অর্থ অসুরোচিত অর্থাৎ আত্মস্বরূপে জ্ঞানের অভাব।
লোকাঃ শব্দের অর্থ জন্মসমূহ। শঙ্করাচার্যের মতে-
‘লোক্যন্তে দৃশ্যতে ভুজ্যন্তে ইতি জন্মানি।’
অর্থাৎ কর্মফলানুসারে যেখানে কর্মফলের ভোগ হয় তাই হল লোক বা জন্ম।
১৯) ঈশোপনিষদে উল্লিখিত বায়ু ও অনিল পদদুটির অর্থ কী?
উ:- ঈশোপনিষদে উল্লেখিত বায়ু শব্দের দ্বারা প্রাণবায়ু বা অজ্ঞানাত্মক কারণ শরীরকে বোঝানো হয়েছে।
অনিল শব্দের দ্বারা সূক্ষ্ম শরীর বা সপ্তদশ অবয়াত্মক শরীরকে বোঝানো হয়েছে।
২০) উপনিষদ শব্দের অর্থ কী?
উ:- উপ- নি -সদ্ ধাতুর উত্তর ক্বিপ্ প্রত্যয় করে উপনিষদ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে। সার অর্থ ব্রহ্মজ্ঞান, আবার জন্মমৃত্যুর কারণ অবিদ্যাকে নিঃশেষে জীর্ণ করে যে বিদ্যা ব্রহ্মসমীপে জীবকে নিয়ে যায় সেই বিদ্যাই উপনিষদ।
ঈশোপনিষদ্ হতে ছোট সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর (পার্ট -২ )
২১) উপনিষদের মূল বিষয় কী?
উ:- আত্মবিদ্যা ও ব্রহ্মবিদ্যা উপনিষদের মূল বিষয়। যার দ্বারা এই জগতের সৃষ্টি, স্থিতি লয় হয়ে থাকে, তাই ব্রহ্ম। ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা। জীব (জীবাত্মা) ও ব্রহ্ম (পরমাত্মা ) এর মধ্যে কোনো ভেদ নেই। তাই ব্রহ্মকে জানতে হবে। উপনিষদের অপর নাম বেদান্ত।
২২) কোন উপনিষদ বেদের মন্ত্রভাগের সঙ্গে যুক্ত?
উ:- শুক্লযজুর্বেদের বাজসনেয়ী সংহিতার অন্তিম অর্থাৎ চত্বারিংশৎ অধ্যায়ের নাম ঈশোপনিষদ্। তাই এর অপর নাম সংহিতোপনিষদ্ বা বাজসনেয়ী সংহিতোপনিষদ্।
২৩) ব্রহ্মকে ‘মনসো জীবয়ঃ’ – বলা হয়েছে কেন?
উ:- ব্রহ্ম বিভু বা সর্বময়। অন্যপক্ষে মন হল অনুপরিমাণ ও গতিশীল। মুহূর্তে ব্রহ্মলোক পর্যন্ত মন উপস্থিত হতে পারে – এই উপলব্ধিতে মন্ত্রাংশে মন উপস্থিত হতে পারে-
এই উপলব্ধিতে মন্ত্রাংশে মন অপেক্ষা গতিশীলতার আরও।
২৪) তেন ত্যক্তেন ভূঞ্জীথাঃ – কথাটি ব্যাখ্যা কর।
উ:- মন্ত্রাংশটির অর্থ হল বাসনা ত্যাগের দ্বারা আত্মাকে পালন বা রক্ষা করবে।
২৫) মা গৃধঃ কস্যাস্বিদধনম্ -অংশটির অর্থ কি?
উ:- এখানে ধন শব্দটির দ্বারা ভোগসাধন দ্রব্যমাত্র উপলক্ষণ। ভোগের সাধন কোনো দ্রব্যের আকাঙ্ক্ষা করো না- এটাই এই মন্ত্রাংশের তাৎপর্য।
২৬) অসূর্যা লোকাঃ – এই বাক্যাংশের তাৎপর্য কি?
উ:- অসুরেরা শাস্ত্রবিহিত কর্মানুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটায় বলে আত্মজ্ঞানহীন অবস্থায় তমো গুনের আশ্রয়ে তারা থাকে। তাই অসুরদের বাসযোগ্য লোক বা স্থান অন্ধকারাচ্ছন্ন। এই লোকেই আত্মজ্ঞানহীন মানুষেরা মরণের পর আশ্রয় নেয়।
২৭) অমৃত বলতে কি বোঝ?
উ:- মরণরাহিত্য অর্থটি অমৃত শব্দে পাই। জন্মমরণরূপ সংসারচক্রে অনাগমনকে অমৃতশব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে।
২৮) অবিদ্যা শব্দের অর্থ কী?
উ:- বিদ্যা থেকে ভিন্ন হল অবিদ্যা। অর্থাৎ বিদ্যা বা দেবতা উপাসনা থেকে ভিন্ন এমন শাস্ত্র বিহিত কর্মকে অবিদ্যা বলা হয়েছে।
২৯) আত্মহনঃ শব্দটিতে কি বোঝানো হয়েছে?
উ:- যেসব জীব আত্মানুসন্ধানে রত নন তারা আত্মঘাতী হন, আত্মাই পরম শ্রেয়। তাকে যারা জানে না, তারা সংসারচক্রে আবিষ্ট হয়ে আত্ম জ্ঞানশূণ্য হয়ে আত্মঘাতী হয়।
৩০) অপঃ ও মাতরিশ্বা বলতে কি বোঝ?
উ:- অপঃ – কর্মগুলি। মাতরিশ্বা হল বায়ু। অপঃ জল হলেও কর্ম অর্থে এখানে প্রযুক্ত। বায়ু কর্মগুলিকে ধারন করে। কারন শরীরের দ্বারা যে সমস্ত কর্ম করি, তা প্রাণবায়ুর সাহায্যে করতে সমর্থ হই।
৩১) সম্ভূতি শব্দটির অর্থ কী?
উ:- সম্ভূতি যা সম্ভূত বা উৎপন্ন হয়। এই অর্থে সমস্ত উৎপদ্যমান কার্যবস্তুই সম্ভূতি। কিন্তু ঈশোপনিষদে আদিকার্য হিরণ্যগর্ভ বা কার্যব্রহ্মকে সম্ভূতি বলা হয়েছে।
৩২) তিনটি প্রধান উপনিষদের নাম লেখ।
উ:- তিনটি প্রধান উপনিষদ হল-
i) কঠ উপনিষদ,
ii) কেন উপনিষদ ও
iii)বৃহদারণ্যক উপনিষদ।
৩৩) হিরণ্ময়েন পাত্রেন বলতে কী বোঝ?
উ:- হিরণ্ময়পাত্র বলতে এখানে হিরণ্যসদৃশ জ্যোতির্ময় সুখমন্ডলের কথা বলা হয়েছে। আদিত্য বা সূর্য ব্রহ্মের প্রতীক। ব্রহ্মের কাছে উপনীত হওয়ার পথ ও জ্যোতির্ময় সূর্যমন্ডলের দ্বারা আবৃত। মূল্যবানসম্পদ পাত্র বিশেষের দ্বারা আচ্ছাদিত ও সংরক্ষিত থাকে বলে জ্যোতির্ময় সুখমন্ডলকে হিরণ্ময় পাত্র বলা হয়েছে।
৩৪) পূষণের কাছে মূমূর্ষূ ব্যাক্তির অন্তিম প্রার্থনা কি?
উ:- ব্রহ্মের স্বরূপ দর্শনে ইচ্ছুক মূমূর্ষূ ব্যাক্তির পূষণ বা সূর্যের কাছে অন্তিম প্রার্থনা তিনি যেন ব্রহ্মের দ্বারা খুলে দেন। তাঁর কৃপায় আদিত্যমণ্ডলে অবস্থিত পুরুষকে অভিন্নরূপে জানা যায়। তাঁর প্রাণবায়ু মহাবায়ুতে মিশে যায়। স্থূলশরীর ভষ্মীভূত হয় এবং পূর্বানুষ্ঠিত কর্ম যেন তাঁর স্মৃতিপথে উদিত হয়।
৩৫) বিনাশ শব্দের অর্থ কী?
উ:- বিনাশ কথাটির সাধারন অর্থ হল ধ্বংস। কিন্তু শঙ্করাচার্যের মতে, ধর্মবিশিষ্ট কার্য বা হিরণ্যগর্ভ। আচার্য ব্রহ্মানন্দের মতে বিনাশের অর্থ হল কারণ।
৩৬) ঈশোপনিষদে কোন তত্ত্ব বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে?
উ:- ঈশোপনিষদে বিদ্যা ও অবিদ্যার সমুচ্চয় (সংযোগ বা একসঙ্গে) তত্ত্ব বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে।
৩৭) অসম্ভূতি শব্দটির অর্থ কী?
উ:- ন সম্ভূতিঃ = অসম্ভূতি অর্থাৎ কার্য নয়। এর অর্থ হল কারণ। সম্ভূতি থেকে ভিন্ন এইরূপ নঞ্ তৎপুরুষ সমাসে অসম্ভূতি পদটির সৃষ্টি। প্রকৃতি, কারণ, অবিদ্যা, অব্যকৃত, শক্তি, মায়া, অজ্ঞান, তম প্রভৃতি দ্বারা অসম্ভূতিকে বোঝানো হয়। অসম্ভূতি কামনা ও কর্মের বীজস্বরূপ।
৩৮) যস্তেদ্বেদোভয়ং সহঃ -এখানে যঃ এবং উভয়ং বলতে কি বোঝানো হয়েছে?
উ:- বিদ্যা বা দেবতা জ্ঞান এবং অবিদ্যা বা কর্মের একত্র অনুষ্ঠানকারী ব্যাক্তিকে এখানে যঃ শব্দের দ্বারা বোঝানো হয়েছে।
অপরদিকে, উভয়ং বলতে বিদ্যা বা দেবতাজ্ঞান এবং অবিদ্যা বা কর্ম এই দুটিকে বোঝায়।
৩৯) তদ্দূরে তদন্তিকে- কাকে দূরবর্তী ও নিকটবর্তী বলা হয়েছে? এরূপ বলার কারণ কি?
উ:- এখানে পরমাত্মা ব্রহ্মকে একইসঙ্গে দূরবর্তী ও নিকটবর্তী বলা হয়েছে।
আত্মজ্ঞানলাভকারী ব্যাক্তির কাছে আত্ম নিকটবর্তী কারণ তিনি ব্রহ্মসান্নিধ্য লাভ করতে পারেন। অপরদিকে, আত্মজ্ঞানহীন বা অজ্ঞানাবৃত ব্যক্তিরা ব্রহ্মের সান্নিধ্য লাভ করতে না পারায় তাদের কাছে এই পরমাত্মা দূরবর্তী।
৪০) সম্ভূত্যামৃতমশ্নুতে – এখানে সম্ভূতি ও অমৃত শব্দের অর্থ কী?
উ:- আলোচ্য মন্ত্রে সম্ভূতি শব্দের অর্থ অসম্ভূতি অর্থাৎ প্রকৃতি আর অমৃত শব্দের অর্থ কৈবল্যরূপসুখ।
৪১) প্রেত্যাভিগচ্ছন্তি- এখানে প্রেত্যশব্দের অর্থ কী? কারা প্রেতলোকে প্রবেশ করে?
উ:- প্র -ই+ ল্যপ্ = প্রেত্য। প্র-মানে প্রকৃষ্টরূপে। ইত্য মানে গমনের পর জগৎকে ছেড়ে যাওয়াই হল প্রকৃষ্ট গমন।
আত্মঘাতী ব্যাক্তিই মৃত্যুর পর অন্ধকারাচ্ছন্নলোকে গমন করে অর্থাৎ বারবার জন্মমৃত্যুর চক্রে আবর্তিত হয়।
৪২) ঈশোপনিষদের শান্তিপাঠ অংশে তিনবার শান্তিশব্দ উচ্চারণের অর্থ কী?
উ:- ঈশোপনিষদের শান্তিপাঠ অংশে তিনবার শান্তিশব্দ উচ্চারণের দ্বারা আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক এই তিনপ্রকার বিঘ্ন নিবারণের কথা বলা হয়েছে।
রোগ ব্যাধি হল আধ্যাত্মিক বিঘ্ন।
বিদুৎ-বজ্রপাত হল অধিদৈবিক বিঘ্ন এবং গৃহপতন,ভৌতিক বিকার প্রভৃতি হল আধিভৌতিক বিঘ্ন
ঈশোপনিষদ্ হতে অন্যান্য প্রশ্ন উত্তর
- ঈশোপনিষদ্ ছোট সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- বিদ্যা ও অবিদ্যা বলতে কি বোঝ? আত্মজ্ঞান লাভের জন্য এই দুই এর সম্বন্বয় কিভাবে হয়?
- উপনিষদ বলতে কী বোঝ? ঈশোপনিষদে আত্মার স্বরূপ কীভাবে বিবৃত হয়েছে তা আলোচনা কর।
- ঈশোপনিষদে বর্ণিত তত্ত্বজ্ঞানে কর্মের ভূমিকা
- ঈশোপনিষদের বিষয়বস্তু
- ঈশোপনিষদ সংস্কৃত মন্ত্র ব্যাখ্যা-(1-4)
- ঈশোপনিষদ মন্ত্র বাখ্যা-(5-7)
- ঈশোপনিষদ সংস্কৃত মন্ত্র বাখ্যা-(8-10)
- ঈশোপনিষদ মন্ত্র বাখ্যা-(11-13)
- ঈশোপনিষদে প্রতিপাদিত শিক্ষনীয় বিষয় আলোচনা