হরিনামামৃত ব্যাকরণ সম্পর্কে যা জানো লেখ।
হরিনামামৃত ব্যাকরণ সম্পর্কে যা জানো লেখ।
ভূমিকা:- অপাণিনীয় ব্যাকরণ গ্রন্থগুলির মধ্যে হরিনামামৃত ব্যাকরণ একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাকরণ গ্রন্থ।
হরিনামামৃত ব্যাকরণের রচয়িতা
বাংলার গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের সংস্কৃত ব্যাকরণের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হল এই হরিনামামৃত ব্যাকরণ। এই একই নামে দুটি ব্যাকরণগ্রন্থ আছে। বেলভাকার-এর মতে, একটির রচয়িতা মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য দেবের কৃপ্রাধান্য প্রখ্যাত বৈষ্ণবাচার্য শ্রীরূপ গোস্বামী এবং অপরটির রচয়িতা হলেন শ্রীরূপেরই ভাইপো শ্রীজীব গোস্বামী। আবার কোনো কোনো পন্ডিতের মতে, একটির রচয়িতা শ্রীসনাতন গোস্বামী এবং অন্যটির শ্রীজীব গোস্বামী। যাই হোক শ্রীজীবই হয়তো প্রথমে এটিকে ছোট করে লিখে পরে আবার বড় আকার দান করেছেন। অতএব এব্যাপারে মতভেদ থাকায় বড় আকার দান করেছেন। অতএব, এ ব্যাপারে মতভেদ থাকায় এখানে শ্রীজীবের কথা নিয়েই মূলতঃ আলোচনা করা হচ্ছে।
হরিনামামৃত ব্যাকরণ গ্রন্থকারের পরিচয়
শ্রীজীবও, রূপ – সনাতনের মতোই শ্রীচৈতন্যদেবের মতালম্বী বৈষ্ণব ছিলেন। তিনিও একাধারে ভক্ত ও পন্ডিত ছিলেন। ব্যাকরণ গ্রন্থ ছাড়াও তিনি গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনের ভক্তি রসাত্মক কাব্যাদি রচনা করেছিলেন। তাঁর ওই ধরনের রচনা গুলির মধ্যে ষট্সন্দর্ভ, গোলাপচম্পূ প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
হরিনামামৃত ব্যাকরণ গ্রন্থটির রচনাকাল
শ্রীচৈতন্যদেবের( খ্রিঃ ১৪৮৬- খ্রিঃ ১৫৩৩) প্রায় সমকালীন হওয়ায় বলা যায় যে, শ্রীজীব খ্রিষ্ট্রীয় ষোড়শ শতকেই এই ব্যাকরন রচনা করেছিলেন।
হরিনামামৃত ব্যাকরণ গ্রন্থটির বিষয়বস্তু
হরিনামামৃত ব্যাকরণের বিষয়বস্তু মোট সাতটি প্রকরণে বিভক্ত- সংজ্ঞা, সন্ধি প্রকরণ, বিষ্ণুপদ- প্রকরণ, আখ্যাত- প্রকরণ, কারক-প্রকরণ
, কৃদন্ত প্রকরণ, সমাস প্রকরণ এবং তদ্ধিত প্রকরণ। বৃহৎ সংস্করণটিতে মোট ৩১৯২টি সূত্র আছে, আর লঘু সংস্করণটিতে আছে ৭৫৭টি সূত্র।
লঘু সংস্করণে একটি প্রাকৃত পাদও আছে। গ্রন্থটিতে লাঘবের দিকে না তাকিয়ে হরিভক্তির দিকেই বেশি দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাকরণে ব্যবহৃত সংখ্যা গুলির দিকে তাকালেই সেকথার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন – বামন = হ্রস্ব, ত্রিবিক্রম = দীর্ঘ, বিষ্ণু=ভক্তি, বহুব্রীহি=বিভক্ত, পীতাম্বর=বহুব্রীহি, বিষ্ণু = আগম প্রভৃতি। শুধুমাত্র সংজ্ঞার ক্ষেত্রেই নয়, উদাহরণের ক্ষেত্রেও বিষ্ণুর নাম ব্যবহার করা দিকেই গ্রন্থাগারের ঝোঁক দেখা যায়।
হরিনামামৃত ব্যাকরণ গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য
গ্রন্থখানির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি সাম্প্রদায়িক ব্যাকরন। কারণ গৌড়ীয় বৈষ্ণব নামক একটি ধর্ম সম্প্রদায়ের সঙ্গে এর নিবিড় যোগ রয়েছে।
হরিনামামৃত ব্যাকরণ গ্রন্থটির টিকা সমূহ
এই ব্যাকরণের ওপর খুব বেশি টিকা ব্যাখ্যাদি রচিত হয়নি। শ্রীজীব গোস্বামী নিজেই ব্যাকরণের একটি বৃত্তি রচনা করে গেছেন। এছাড়া হরেকৃষ্ণ আচার্যের বালতোষণী, গোপিচরণ দাসের ‘তদ্ধিততোদ্দিপনী’ প্রভৃতি দু-একটি টীকা-টিপ্পনীর দেখা মেলে।
হরিনামামৃত ব্যাকরণের মূল্যায়ন :-
পরিশেষে বলা যায় যে, বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের জন্য রচিত সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ গুলির মধ্যে ‘হরিনামামৃত’ ব্যাকরণেরও একটি বিশিষ্ট আসন আছে। ড. বেলভালকার প্রমুখ পণ্ডিতগণ এই ব্যাকরটিকে “Later sectarian schools of Sanskrit grammar ‘ -এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন।