আর্যভট্ট ও ভারতীয় গনিত

এখানে আর্যভট্ট ও ভারতীয় গনিত সম্পর্কে সমস্ত তথ্য (aryabhatta in bengali)একটি পোস্ট এর আকারে পরিবেশন করা হয়েছে । postটি হল আর্যভট্ট ভারতীয় গনিতের এক অবিস্মরণীয় নাম। আর্যভট্ট নিয়ে কিংবদন্তী আলোচনা করা হল । আর্যভট্ট কে ছিলেন .

আর্যভট্ট ও ভারতীয় গনিত

আর্যভট্ট নিয়ে প্রাক কথন


বিহারের রাজধানী পাটনার প্রাচীন কালে নাম ছিল কুসুমপুর।

সেখান থেকে কিছু দূরে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়,সেই সময় এই বিশ্ববিদ্যালয় ছিল জ্ঞানের পীঠস্থান। সেখানে শুধু যে ধর্মশাস্ত্র পড়ানো হত তা নয়,ব‍্যবহারিক বিজ্ঞানের শিক্ষাদানের ও ঢালাও ব‍্যবস্থা ছিল।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছেই খাগোল মানমন্দির যেমন নির্জন তেমনি মনোরম স্থান।

আজ খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় পাঁচ শত বৎসর পরে (499 খ্রিস্টাব্দে র 21শে মার্চ) এখানে মস্ত জনসমাবেশ হয়েছে।

এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকেই ভারতীয় জোতির্বিজ্ঞানী গন আকাশ নিরীক্ষণ করছেন গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান জানার জন‍্য।

আর্যভট্ট নিয়ে কিংবদন্তী

আজ এখানে কৌতুহলী জনতার উপচেপড়া ভিড়, কারন তারা শুনেছেন আজ এক তরুণ বিজ্ঞানী এক নতুন ধারণা র গোড়াপত্তন করবেন। সকাল থেকেই চলছে পুরোহিতদের বৈদিক মন্ত্র পাঠ, যা আকাশে বাতাসে মুখরিত হয়ে উঠছে, গড়ে উঠেছে এক গম্ভীর পরিবেশ ।

ধীরে ধীরে এক 23 বর্ষীয় তরুণ বিজ্ঞানী উচ্চ আসনে বসলেন ,যিনি আজকের অনুষ্ঠানের কেন্দবিন্দু। জনতার মধ্যে চরম বিস্ময়ের সৃষ্টি হল- ইনি কি সেই জোতির্বিদ যিনি নতুন পথের পথিক।

জোতির্বিদ একটি ডেস্কের উপর রাখা কাগজ ও কলমের উপর পবিত্র জল ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন ।

তখন সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন।পবিত্র মন্ত্র উচ্চারণ করে মাথার সূর্য কে লক্ষ্য করে কলম হাতে তিনি গ্রন্থের প্রথম অক্ষর টি লিখলেন, তখন সমবেত মানুষ গন সবাই তাঁর উপর পুষ্প বৃষ্টি করছিল।

আজ আমাদের আলোচনা এই তরুণ গনিতজ্ঞ কে নিয়ে

এই তরুণ বিজ্ঞানীর নাম আর্যভট্ট (aryabhatta ) ।আর এই দিনই তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ আর্যভট্টিয় রচনা শুরু করেছিলেন।

তাঁর এই নতুন চিন্তাধারা সেইদিন শুধু নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অধ্যাপকদের আলোড়িত করেছিল তা নয় ,সমগ্র ভারতীয় বিজ্ঞানে ঐ তরুণ বিজ্ঞানির জেহাদ ও প্রচীন ব্রাক্ষন‍্য মতবাদ কে অস্বীকার করে তার এই নতুন চিন্তা ধারা প্রচার করেছিল।

তিনিই সর্বপ্রথম প্রমাণ করেছিলেন পৃথিবী গোল এবং বলেছিলেন পৃথিবী তার নিজের অক্ষের চারিদিকে আবর্তিত হচ্ছে ফলে দিন ও রাত্রি হচ্ছে।আর্যভট্টের জন্মসাল নিয়ে কোনো দ্বিমত না থাকলেও তার জন্মস্থান নিয়ে সুবিশেষ কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।

আর্যভট্টের জন্ম

কেউ কেউ মনে করেন তিনি কুসুমপুরে(অধুনা পাটনা) জন্মগ্রহণ করেছিলেন ,আবার কেউ মনে করেন তার জন্ম হয়েছিল অশ্মকা(যা আজকের মহারাষ্ট্র নামে পরিচিত) নামক জায়গায়।তবে তার জীবনের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত হয়েছিল কুসুমপুরে।

তিনি কুসুমপুরে আর্যভ নামে পরিচিত ছিলেন।তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।

প্রচীন ভা্রতীয় গনিতের ইতিহাসে আর্যভট্টের হাত ধরেই স্বর্ন যুগের সূচনা হয়েছিল। আর্যভট্টের কাজে দশমিক পদ্ধতির পূর্ণ ব‍্যবহার লক্ষ‍্য করা যায়।তিনি সংখ্যা উপস্থাপন এর জন্য একটি নিজস্ব পদ্ধতি তৈরী করেছিলেন। যেখানে সংখ্যা কে শব্দের আকারে উপস্থাপন করা হত।ব‍্যাঞ্জনবর্ন গুলো কে ব‍্যবহার করতেন বিভিন্ন অঙ্ক হিসাবে এবং স্বরবর্ণ গুলো অঙ্ক গুলো র অবস্থান বোঝানোর জন্য ব‍্যবহার করতেন।আর্যভট্ট স্থানীয় মান ও শূন্য সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন।

আর্যভট্ট ভারতীয় গনিতের অবিস্মরণীয় নাম

বীজগনিতের বীজ কে ভারতীয় গনিতে রোপন করেন আর্যভট্টই। তিনিই বীজগনিতের প্রথম প্রবক্তা। একাধিক অজানা রাশি সংবলিত সমীকরণ । (যা সাধারণ ভাবে ডায়োফ‍্যান্টাইন সমীকরণ নামে পরিচিত) সমাধান করার সুন্দর পদ্ধতি ব‍্যাখা করেছিলেন। গনিত ও জোতির্বিজ্ঞানে আর্যভট্ট এমন সব জিনিস ব‍্যবহার করেছেন মা আমাদের অভিভূত না করে পারে না।জ্যামিতি, পরিমিতি, বর্গমূল,ঘনমূল,সমান্তর প্রগতি, নানান তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। ত্রিকোনমিতির মূলভিত্তি অর্থাৎ ত্রিকোনমিতিক অনুপাত অর্থাৎ সাইন, কোসাইন প্রভৃতি এইসব বিশ্ব গনিতের ভান্ডারে আর্যভট্ট ই প্রথম দিয়ে গিয়েছন আর্যভট্ট এর আর এক উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হল পাই এর মান নির্নয়।তিনি একশোর চেয়ে চার বেশিকে আট গুন করে তার সঙ্গে বাষট্টি হাজার যোগ করে পাওয়া ফলটী বিশ হাজার একক ব‍্যাসের বৃত্তের পরিধির আসন্ন মান নির্দেশ করে


আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগের এক ভারতীয় বিজ্ঞানীর গননার ফলের সাথে আধুনিক গননার নেই বললেই চলে।

আর্যভট্টিয় গ্রন্থে গানিতিক ফল ও সিদ্ধান্ত গুলো অতিসংক্ষিপ্ত আকারে লেখা।

এগুলোর অনুধাবনের জন্যে নানান ভাষ‍্যকারের শরনাপন্ন হতে হয়।

আর্যভট্ট ভারতীয় গনিতের উজ্জ্বল তম জ‍্যোতিষ্কদের মধ্যে অন্যতম।তাঁকে শ্রদ্ধা ও সন্মান জানাতে ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহের নাম দেওয়া হয়েছিল আর্যভট্ট।

আর্যভট্ট কে ছিলেন ?

প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত গণিতবিদ ।

আর্যভট্ট রচিত গ্রন্থের নাম লিখ ?

আর্যভট্ট রচিত গ্রন্থের নাম আর্যভট্টীয়’ ।

আর্য ভট্ট সম্পর্কে  তথ‍্যসূত্র

1)উইকিপিডিয়া
2)কয়েক জন গনিতবিদের জীবন কথা।

আরো পড়ুন – বৈদিক সাহিত্যের ইতিহাস

Comments