মুণ্ডকোপনিষদ্ -এ বর্ণিত আত্মার স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা কর। অথবা আত্মতত্ত্ব লাভের উপায় বর্ণনা কর।
মুণ্ডকোপনিষদে বর্ণিত আত্মার স্বরূপ অথবা আত্মতত্ত্ব লাভের উপায়
উ:- উপনিষদ গুলি প্রাচীন ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ গৌরব। আর্য ঋষিগন এই উপনিষদ গুলির মধ্যে তাদের বিজ্ঞান চেতনার অপূর্ব মন্ত্রজাল প্রকাশ করেছেন। শ্রীমান শংকরাচার্য বলেছেন- জীবঃ ব্রহ্মৈব না পরঃ- হঠাৎ সকল উপনিষদ গুলির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল জীবাত্মা ও পরম আত্মার মধ্যে ঐক্য স্থাপন। উপনিষদে বর্ণিত বিদ্যা ব্রহ্মবিদ্যা নামে পরিচিত। আমাদের পাঠ্যাংশ মুণ্ডকোপনিষদ্-এ আমরা সেই ব্রহ্মবিদ্যা লাভের উপায় এবং আত্মার স্বরূপ সম্পর্কে জানতে পারি।
অজ্ঞানতার অন্ধকারে আচ্ছন্ন জীব নিজ নিজ কর্মফল ভোগ করে। তারা নিজের স্বরূপ জানতে পারে না। জীবাত্মা এবং পরমাত্মা একই দেহে পরস্পর সখ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বাস করে। কিন্তু জীব পরমাত্মার উপস্থিতি বুঝতে না পেরে কেবলমাত্র সংসার বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে। পরমাত্মা তথা ব্রহ্ম সকল গুণের অতীত। পরম আত্মার সঙ্গে জীব যখন নিজের সম্বন্ধ স্থাপন করতে পারে, তখনই জীবের সকল কামনার- বাসনার অবসান ঘটে।
সূর্য, চন্দ্র ইত্যাদি জ্যোতিষ্ক পদার্থ গুলিও সেই পরমাত্মাকে প্রকাশ করতে পারেনা। কারন এই সমস্ত জ্যোতিষ্ক পদার্থ গুলি পরমাত্মার জ্যোতিতেই প্রকাশমান। –
” ন তত্র সূর্যো ভাতি ন চন্দ্রতারকং
নেমাঃ বিদ্যুতো ভান্তি কুতোঅয়মগ্নিঃ।
তমেব ভান্তমনুভাতি সর্বং
তস্য ভাসা সর্বমিদং বিভাতি।।”
অর্থাৎ এই পরমাত্মার দীপ্তিতেই সকল জগত প্রকাশ পায়।
এই বিশ্ব সংসারে প্রতিটি জীবের মধ্যেই আত্মা বিরাজমান। জীবের মৃত্যু ঘটে, কিন্তু আত্মার নয়। আত্মা অবিনাশী। জীবের মৃত্যুর পর আত্মা জড়দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহ লাভ করে। এই আত্মা সর্বদা মহৎ এবং অচিন্ত্য –
” বৃহচ্চ তৎ দিব্যম্ অচিন্ত্যরূপম্”।
আত্মা অতিসূক্ষ্ম পদার্থ থেকেও সূক্ষ্মতর। আত্মা অজ্ঞানীদের কাছে দূর থেকে অতি দূরে। আবার জ্ঞানীদের কাছে অতিনিকটে অবস্থান করে-
” সূক্ষ্মাচ্চ তৎ সূক্ষ্মতরং বিভাতি
দূরাৎ সুদূরে তৎ ইহ অন্তিকে চ।”
জ্ঞানী ব্যাক্তিরা আত্মার স্বরূপ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করলেও অজ্ঞানীরা জানে না সকলের হৃদয়গুহায় আত্মা বিরাজমান।
এই আত্মাকে চোখ দিয়ে দেখা যায় না, অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলির দ্বারাও আত্মাকে উপলব্ধি করা যায় না, এমনকি তপস্যার দ্বারাও আত্মাকে জানা সম্ভব নয়-
“ন চক্ষুষা গৃহ্যতে নাপি বাচা
নান্যৈর্দেবৈস্তপসা কর্মণা বা।।”
একমাত্র আত্ম জিজ্ঞাসার দ্বারাই এই আত্মাকে লাভ করা যায়। সকল প্রকার কামনা বাসনা পরিত্যাগ করে বিষয়াসক্তি শূণ্য হয়ে আত্মতত্ত্বকে একমাত্র বরণীয় বা গ্রহণীয় মনে করলেই জীবাত্মা পরমাত্মার সান্নিধ্য লাভ করতে সক্ষম হয়।