বৈদিক সংকলন হতে বিনিয়োগ ব্যাখ্যাগুলি নিম্নে দেওয়া হল ।
বেদ – বৈদিক সংকলন – বিনিয়োগ ব্যাখ্যা
বৈদিক সংকলন হতে বিনিয়োগ ব্যাখ্যাগুলি
বিনিয়োগ ব্যাখ্যা ১.0) অগ্নিমীলে ইতি সূক্তং প্রাতরনুবাক আগ্নেয়ে ক্রতৌ বিনিযুক্তম্।।
অনুবাদ:- অগ্নিমীলে ইত্যাদি নয়টি ঋকসমন্বিত সম্পূর্ণ সূক্তটি প্রাতরনুবাকের অন্তর্গত আগ্নেয়ক্রতুতে পাঠ করতে হবে।
টীকা:- প্রাতরনুবাক:- অগ্নিষ্টোম সোমযাগের পঞ্চম দিনে সোমলতা থেকে রস নিষ্কাশন করে সেই রস দেবতাদের উদ্দেশ্যে আহুতি দেওয়া হয়। উক্ত দিবসের নাম সুত্যাদিবস। সেই সুত্যাদিবসের পূর্বরাত্রির শেষার্ধে পাখি ডাকিবার পূর্বেই হোতা মন্ত্রপাঠ করে যে স্তুতি করেন, তার নাম প্রাতরনুবাক। এই সময় অগ্নি,ঊষা ও অশ্বিদ্বয় – এই তিন দেবতার উদ্দেশ্যে স্তুতি পাঠ করা হয়।
আগ্নেয়ক্রতু:- এই অনুষ্ঠানে প্রত্যেক দেবতার উদ্দেশ্যে গায়ত্রী প্রভৃতি সপ্তছন্দোযুক্ত অনেক মন্ত্রপাঠের বিধান আছে এবং অগ্নির স্তুতিতে যে মন্ত্রগুলি পঠিত হয় সেই মন্ত্রগুলি আগ্নেয়ক্রতু নামে প্রসিদ্ধ। ক্রতু শব্দটি এখানে স্তববাচক যজ্ঞবাচক নয়।
বিনিয়োগ ব্যাখ্যা ১.১ ) “তত্র অগ্নিমীলে ইতি সূক্তং প্রাতরনুবাক আগ্নেয়ে ক্রতৌ বিনিযুক্তম্।”
আলোচ্য পঙক্তিটি ঋকবেদের প্রথম মন্ডলের প্রথম সূক্তের বিনিয়োগ ভাষ্য রূপে পণ্ডিত প্রবর সায়ণাচার্য কর্তৃক উক্ত হয়েছে।
অগ্নিমীলে এই প্রথম মন্ডলের সূক্তটি প্রাতরনুবাকে আগ্নেয় ক্রতুতে প্রযুক্ত হবে। এই হল সায়ণ ভাষ্যের তাৎপর্য। প্রাতরনুবাক সোমযাগের একটি অনুবাক। কিন্তু এটি কোনো যজ্ঞকর্মের নাম নয়। সোমযাগে সমীলতার রস নিষ্কাশন করে সেই রস দেবতাদের উদ্দেশ্যে আহুতি প্রদান করা হয়। সোমযাগ একাহ, দ্ব্যহ, ত্র্যহ, পঞ্চাহ, ষড়হ প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকারের হয়। একাহ অর্থাৎ একদিনসাধ্য সোমযাগের প্রকৃতি পূর্বে আরও চারদিন নানা প্রকারের প্রস্তুতিমূলক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
পঞ্চমদিনে সোমলতার রস নিষ্কাশনরূপ সবনকর্ম করা হয় বলে ঐ দিনটিকে সুত্যা বা সবনদিন বলা হয়। এই সুত্যাদিনের পূর্বরাত্রির শেষ প্রহরে পাখিদের কূজন আরম্ভ হওয়ার পূর্বে অধ্বর্যু কর্ত্তৃক অনুজ্ঞা প্রাপ্ত হয়ে হোতা এবং তার সহকারীরা অগ্নি, ঊষা ও অশ্বিদ্বয় – এই তিন দেবতার উদ্দেশ্যে সূর্যদ্বয়ের পূর্ব পর্যন্ত মন্ত্র পাঠ করা হয়। হোতাকর্তৃক পঠনীয় এই মন্ত্রকে প্রাতরনুবাক বলে। প্রাতঃকালে অনুচ্যতে অর্থাৎ পঠিত – “প্রাতর্বৈ স তৎ দেবেভ্যোঅন্বব্রবীদ্ যৎ প্রাতরন্বব্রবীত্তৎ প্রতারনুবাকস্য প্রতারনুবাকত্বম্।”
এই বুৎপত্তি অনুসারে প্রতারনুবাকে তিনজন দেবতার উদ্দেশ্যে মন্ত্রপাঠ করা হয়। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে- “ইমে বৈ দেবাঃ প্রাতর্যাবাণো যদগ্নিরুষা অশ্বিনৌ চেতি।” প্রাতরনুবাকে দেবতাত্রয়ভেদে বিভাগত্রয় কল্পিত হয়। যেমন- আগ্নেয় ক্রতু, উষস্যক্রতু ও আশ্বিনক্রতু। অর্থাৎ অগ্নিদেবতাবিষয়ক মন্ত্রসমূহ উষস্য ক্রতু ইত্যাদি। অতএব, বিনিয়োগ বাক্যটির এরূপ অর্থ- প্রাতরনুবাকে অগ্নিদেবতার উদ্দেশ্যে মন্ত্রপাঠের সময় ‘অগ্নিমীলে’ এই গায়ত্রীচ্ছন্দোযুক্ত সূক্তটি হোতাকর্ত্তৃক পঠনীয়। সমগ্র সূক্তটি পাঠ করার জন্য এটি সূক্ত বিনিয়োগ নামে পরিচিত।
বিনিয়োগ ব্যাখ্যা ২) অগ্নীষোমপ্রণয়ন উপত্বাগ্নে ইত্যাদিকোঅনুবচনীয়স্তৃচঃ।
অনুবাদ:- অগ্নীষোমপ্রণয়ন করার সময় উপত্বাগ্নে ইত্যাদি তৃচ (পরপর তিনটি ঋক বা মন্ত্র) অনুবচনীয় রূপে পাঠ করতে হয়।
টীকা:- অগ্নীষোমপ্রণয়ন:- অগ্নিষ্টোম সোমযাগে পঞ্চদিন সাধ্য। পঞ্চমদিনেই আসল অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু তাহার পূর্বে চারদিন ধরে আরও অন্যান্য অনুষ্ঠান চলতে থাকে। চতুর্থদিনে অগ্নীষোমপ্রণয়ন কর্মের অনুষ্ঠান হয়। দ্বিতীয় দিনে সোম ক্রয় করে সোমের জন্য নির্দিষ্ট আসনে সোমকে রাখা হয়। চতুর্থদিনে ঐ সোমকে ঐষ্ঠিক বেদিতে এবং আহ্বণীয় থেকে অগ্নি এনে আগ্রনীধ্রীয় ধিষ্ণ্যে স্থাপন করার নাম অগ্নীষোমপ্রণয়ন।
তৃচ:- পরপর তিনটি ঋক্ বা মন্ত্রকে একত্রে তৃচ বলা হয়।
অধ্বর্যু যখন এই অগ্নি ও সোমকে আনয়ন করেন। তখন অধ্বর্যু হোতাকে মন্ত্রপাঠ করার নির্দেশ দেন। হোতা তখন অধ্বর্যুর পশ্চাতে পশ্চাতে গমন করে ‘উপত্বাগ্নে’ থেকে আরম্ভ করে পরপর তিনটি ঋক্ অনুবচনরূপে পাঠ করেন।
বিনিয়োগ ব্যাখ্যা ৩) আশ্বিনস্তৃচঃ প্রাতরনুবাকস্য আশ্বিনে ক্রতৌ বিনিযুক্তঃ।
অনুবাদ:- অশ্বিনা ইত্যাদি থেকে শুরু করে পরপর তিনটি বাক অশ্বিদয়ের উদ্দেশ্যে প্রাতরনুবাকের আশ্বিনক্রতুতে পাঠ করতে হবে।
টীকা:- প্রাতরনুবাক:- অগ্নিষ্টোম সোমযাগের পঞ্চম দিনে সোমলতা থেকে রস নিষ্কাশন করে সেই রস দেবতাদের উদ্দেশ্যে আহুতি দেওয়া হয়। উক্ত দিবসের নাম সুত্যাদিবস। সুত্যাদিবসের পূর্বরাত্রির শেষার্ধে পাখি ডাকিবার পূর্বে হোতা মন্ত্র পাঠ করে যে স্তুতি করেন তার নাম প্রাতরনুবাদ। এই সময় অগ্নি, ঊষা ও অশ্বিদ্বয় -এই তিন দেবতার উদ্দেশ্যে স্তুতি পাঠ করা হয়।
আশ্বিনক্রতু :- এই অনুষ্ঠানে প্রত্যেক দেবতার উদ্দেশ্যে গায়ত্রী প্রভৃতি সপ্তছন্দোযুক্ত অনেক মন্ত্রপাঠের বিধান আছে এবং অশ্বিদ্বয়ের স্তুতিতে মন্ত্রগুলি পঠিত হয়, সেই মন্ত্র গুলি আশ্বিনক্রতু নামে প্রসিদ্ধ। ক্রতু শব্দটি এখানে স্তুতিবাচক, যজ্ঞবাচক নয়।
বিনিয়োগ ব্যাখ্যা ৪) অগ্নিষ্টোমে বৈশ্বদেবশস্ত্রে সুরূপকৃত্নুমৃতয় ইতি ধায্যা।
অনুবাদ:- সুরূপকৃত্নমৃতয়ে ইত্যাদি মন্ত্রটি বা ঋকটি অগ্নিষ্টোমযাগে বৈশ্বদেবশস্ত্রে ধায্যা রূপে পঠিত হয়।
টীকা:- অগ্নিষ্টোম :- সকল সোমযাগের প্রকৃতি অগ্নিষ্টোম, একে জ্যোতিষ্টোমও বলা হয়। সোমযাগে সোমলতার রসই মুখ্য আহুতি দ্রব্য। সোমযাগে যে বারটি স্তোত্র গীত হয়, তার শেষ স্তোত্রটির নাম অগ্নিষ্টোম।
বৈশ্বদেবশস্ত্র:- ঋকমন্ত্রের আবৃতির মাধ্যমে কোন দেবতার স্তুতিকে শস্ত্র বলা হয়। এই মন্ত্র কেবল আবৃত্তি করা হয়, গান করা হয় না। অগ্নিষ্টোম বা জ্যোতিষ্টোম যাগে ১২টি স্তোত্র ও ১২টি শস্ত্র নিবেদিত হয়। প্রাতঃসবনে ৫টি, মাধ্যন্দিনসবনে ৫টি ও তৃতীয়সবনে ২টি শস্ত্র মিলিত হয়ে ১২টি শস্ত্র হয়। তৃতীয়সবনে যে দুটি শস্ত্র থাকে তাদের মধ্যে একটি হল বৈশ্বদেবশস্ত্র এবং অন্যটি হলো অগ্নিমারুত শস্ত্র।
ধায্যা:- ধ্যাযা শব্দটির বুৎপত্তি হল -‘ধায়তে স্থাপ্যতে অনয়া ইতি ধায্যা, প্রক্ষেপনীয় ইতি অর্থঃ’ । অর্থাৎ, দুটি সূক্তের মধ্যে পাঠ্যঋককে ধায্যা বলা হয়। বৈশ্বদেবশস্ত্রমধ্যে এই ঋকটি ধায্যারূপে পঠিত হয়।
বিনিয়োগ ব্যাখ্যা ৫) ” অভিপ্লবষড়অস্য মধ্যবর্তিষৃকথ্যেষু তৃতীয়সবনে মৈত্রাবরুণস্যাগ্নে যং যজ্ঞমিত্যাদিকো বৈকল্পিকোঅনুরূপস্তৃচঃ।।”
অনুবাদ:- অভিপ্লবষড়অযাগের মধ্যবর্তী উক্থ্যসমূহে তৃতীয়সবনে ‘অগ্নে যং যজ্ঞম্’ ইত্যাদি তৃচ মৈত্রাবরুন নামক ঋত্বিক্ বিকল্পে অনুরূপরূপে পাঠ করবেন।
টীকা:- অভিপ্লবষড়হ:- ছয়দিন ধরে যে সোমযাগের অনুষ্ঠান করা হয় তার নাম ষড়হ যাগ। এই যাগ প্রধানত দ্বিবিধ অভিপ্লবষড়হ ও পূষধ্যষড়হ। ষড়হযাগগুলি অহীননামক সত্রযাগের অন্তর্ভুক্ত। দুর্দিন থেকে বারদিনের মধ্যে যে সোমযাগগুলি অহীন বলা হয়। অভিপ্লবষড়হযাগে প্রথম দিনে অগ্নিষ্টোমসংস্থাক জ্যোতিষ্টোম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে যথাক্রমে উকথ্যসংস্থাক- গোষ্টোম, আয়ুষ্টোম এবং অন্তিমদিনে আবার অগ্নিষ্টোম সংস্থাক জ্যোতিষ্টোমযাগের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
উক্থ্যস্তোত্রের দ্বারা যে সোমযাগের সমাপ্তি ঘটে, তার নাম উক্থ্যসংস্থাক সোমযাগ।
উক্থ্যসংস্থাক অনুষ্ঠানসমূহের তৃতীয়সবনে পাঁচটি শস্ত্র পঠিত হয়। তাদের মধ্যে আবার মধ্যে আবার একটি শস্ত্র মৈত্রাবরুন পাঠ করেন।
যখন একাধিক দিবস ধরে সোমযাগ অনুষ্ঠিত হয় তখন পূর্বাপর দিবসগুলিতে অনুষ্ঠেয় ক্রিয়াসমূহের ধারা রক্ষা করবার জন্য অনুরূপ তৃচ্ পাঠ করা হয়। সেই আগামী দিবসের পাঠ্য স্তোত্রিয় তৃচকে অদ্য অনুরূপ তৃচ্ বলা হয়। স্তোত্রিয়ের সদৃশ বলে, এর নাম অনুরূপ তৃচ্।
মৈত্রাবরুন:- বৈদিক যজ্ঞানুষ্ঠানে হোতা, উদগাতা, অধ্বর্যু এবং ব্রহ্মা এই চারজন প্রধান পুরোহিতের হোতার সহকারী ঋত্বিক। ইনি সোমযাগে নির্দিষ্ট শস্ত্র পাঠ করেন।
সবন:- সোমযাগের পঞ্চমদিনে সোমরস নিষ্কাশন করে সোমরসের যে আহুতি দেওয়া হয়, তার নাম সবন। এই অনুষ্ঠান ঐদিন তিনবার অনুষ্ঠিত হয়। প্রাতঃকালে যে সবনের অনুষ্ঠান হয়। তার নাম মাধ্যন্দিন সবন বা সবন এবং তৃতীয়সবন।
৫.২) ” অভিপল্লবষড়হস্য মধ্যবর্তিষূকথ্যেষু তৃতীয়সবনে মৈত্রাবরূণস্য ‘অগ্নে যং যজ্ঞম্ ‘ ইত্যাদিকো বৈকল্পিকোঅনুরূপ স্তৃচঃ।।”
উ:- সোমলতা রস নিষ্কাশন পূর্বক সেই রস আহুতি দ্বারা যে যাগের অনুষ্ঠান করা হয়, তাকে সোমযাগ বলে। যতদিন ধরে সোমযাগে অনুষ্ঠান করা হয় সেই দিনের সংখ্যা অনুসারে সোমযাগকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। সোমযাগের প্রথম চার দিন দীক্ষনীয়েষ্টি প্রভৃতি অপ্রধান যাগের অনুষ্ঠানের পর একদিন সোমাহুতি পূর্বক যাগ হলে তাকে একাহ সোমযাগ বলে। এইভাবে সোমরস দ্বারা ছয়দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হলে তাকে ষড়হ সোমযাগ বলে। অনুষ্ঠানের প্রকারভেদে এই ষড়হ সোমযাগ আবার দুই প্রকার। যথা- i) অভিপ্লবষড়হ এবং ii) পৃষ্ঠ্যষড়হ।
সোমযাগের সমাপ্তির অনুষ্ঠানটিরও আবার প্রকারভেদ আছে। সেখানে যে সাতটি সংস্থার অনুষ্ঠান হয় তাদের মধ্যে অগ্নিষ্টোম, উকথ্য, ষোড়শী ও অতিরাত্র এই চারটি সংস্থা হল প্রধান। সোমযাগে সোমরস নিষ্কাশনের সময় যে নির্দিষ্ট সংখ্যক শাস্ত্র ও স্তোত্র পাঠ করা হয় তাদের সংখ্যাভেদের উপর এই সমস্ত সংস্থাভেদ নির্ভর করে। যেমন অগ্নিষ্টোম সংস্থার সোমাভিষবকালে বারোটি স্তোত্রগান ও বারোটি শস্ত্র পাঠ করা হয়। আবার উকথ্য সংস্থার সোমযাগে পনেরোটি স্তোত্রগান ও পনেরোটি শস্ত্রপাঠ করা হয়।
অভিপ্লব নামক সোমযাগানুষ্ঠানে প্রথম ও ষষ্ঠদিনে অগ্নিষ্টোম নামক সোমযাগের মতো অনুষ্ঠান করা হয়। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত উকথ্য নামক সোমযাগের মতো অনুষ্ঠান হয়। প্রত্যেক সোমযাগেই প্রাতঃ , মধ্যাহ্ন এবং অপরাহ্ণ তিনবার সোমলতার রস নিষ্কাশন করা হয়। এই রস নিষ্কাশন কর্মকে সবনকর্ম বলে। তদনুসারে তিনটি সবন কর্মের নাম প্রাতঃসবন, মাধ্যন্দিন সবন এবং সায়ংসবন। সবনকর্মের সময় উদগাতা এবং তার সহকারীরা শস্ত্র পাঠ করেন।
অভিপ্লব নামক সোমযাগানুষ্ঠানে প্রথম ও ষষ্ঠদিনে অগ্নিষ্টোম নামক সোমযাগের মতো অনুষ্ঠান করা হয়। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত উকথ্য নামক সোমযাগের মতো অনুষ্ঠান হয়। প্রত্যেক সোমযাগেই প্রাতঃ , মধ্যাহ্ন এবং অপরাহ্ণ তিনবার সোমলতার রস নিষ্কাশন করা হয়। এই রস নিষ্কাশন কর্মকে সবনকর্ম বলে। তদনুসারে তিনটি সবন কর্মের নাম প্রাতঃসবন, মাধ্যন্দিন সবন এবং সায়ংসবন। সবনকর্মের সময় উদগাতা এবং তার সহকারীরা শস্ত্র পাঠ করেন। অভিপ্লবষড়হের মধ্যবর্তী দিন চতুষ্টয়ে যে উকথ্য নামক সোমসংস্থার অনুষ্ঠান হয় সেখানে পনেরোটি স্তোত্র পাঠ করা হয়। শস্ত্রগুলির মধ্যে হোতা প্রতিসবনে দুটি করে মোট ছয়টি এবং মিত্রাবরুন প্রভৃতি তিনজন সহকারী প্রাতঃসবন ও সায়ংসবনে একটি করে শস্ত্র পাঠ করায় আরো ছয়টি শস্ত্র পঠিত হয়। উকথ্য নামক সোমযাগে এই বারটি শস্ত্র পাঠের পর আরও তিনটি শস্ত্র পড়া হয়। এইভাবে মোট পনেরটি শস্ত্র পাঠ নিষ্পন্ন হয়। যখন গবাময়ম প্রভৃতি অনেক দিনে সাধ্য সোমযাগের অঙ্গ রূপে অভিপ্লব প্রভৃতি যাগের অনুষ্ঠান হয়, তখন মৈত্রাবরুণ প্রভৃতি ঋত্বিকেরা নিজ নিজ শাস্ত্র পাঠ করেন। সেইসময় উদগাতা নামক সামবেদীয় ঋত্বিক যে ঋক্ ত্রয়কে পরেরদিন সামরূপে গান করবেন সেই তৃচকে ঋগ্বেদীয় পুরোহিত পাঠ করেন। পরের দিনের স্তোত্রের তৃচকে ঋগ্বেদীয় পুরোহিত পূর্বদিন পাঠ করেন বলে একে অনুরূপ বলে।
অভিপ্লব ষড়হের উকথ্য যাগে তৃতীয় সবনে মৈত্রাবরুন নামক পুরোহিতের অনুরূপ তৃচ পাঠের সময় বিকল্প দুটি তৃচের বিধান দেখা যায়। তার একটি হল অগ্নেযম্ থেকে পরপর তিনটি। এইজন্য সায়ণ একে বৈকল্পিক অনুরূপ তৃচ্ বলেছেন।
বিনিয়োগ ব্যাখ্যা ৬) মিত্রং হুবে ইতি মৈত্রাবরুণস্তৃচো গবাময়ন আরম্ভনীয়ে চতুর্বিংশেঅনানি প্রাতঃসবনে মৈত্রাবরুনস্য স্তোত্রিয়ঃ।
অনুবাদ:- মিত্রংহুবে ইত্যাদি মিত্রাবরুণ দেবতা সম্বন্ধীয় তৃচ গবাময়ন সত্রযাগের আরম্ভনীয় চতুর্বিংশ দিবসে প্রাতঃসবনে মৈত্রাবরুন নামক ঋত্বিক্ স্তোত্রিয়রূপে পাঠ করবেন।
টীকা:- গবাময়ন:- সত্রনামক সোমযাগসমূহের প্রকৃতি গবাময়ন। এই গবাময়ন সত্র ৩৬১ দিনে (১৮০+১+১৮০) সম্পন্ন হয় বলে, একে সাংবৎসরিক সত্রও বলা হয়। এই গবাময়ন সত্র তিনটি পক্ষে বিভক্ত- পূর্বপক্ষ(১৮০ দিন), উত্তরপক্ষ (১৮০ দিন) ও মধ্যবর্তী (১দিন) দিনটির নাম বিষুবদিবস। পূর্বপক্ষের ১৮০ দিনে যে পদ্ধতিতে অনুষ্ঠানক্রমে অনুষ্ঠিত হয়, উত্তরপক্ষের ১৮০ দিনে তার বিপরীতক্রমে অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে।
চতুর্বিংশদিবস:- সংবৎসরসাধ্য সত্রযাগে দ্বিতীয় দিন। ঐ দিন সোমপ্রয়োগে চতুর্বিংশস্তোম গীত হয় বলে ঐদিনের অনুষ্ঠানের নাম চতুর্বিংশ। চতুর্বিংশ দিবসে হোত্রকগন ষড়হস্তোত্রিয় তৃচ পাঠ করেন। মিত্রংহুবে- ইত্যাদি তৃচ্ ষড়হস্তোত্রিয়ে মৈত্রাবরুন নামক ঋত্বিক পাঠ করেন।
প্রাতঃসবন:- সোমযাগের পঞ্চমদিনে সোমরস নিষ্কাশন করে সোমরসের যে আহুতি দেওয়া হয়,তার নাম সবন। এই অনুষ্ঠানে ঐদিন তিনবার অনুষ্ঠিত হয়। প্রাতঃকালে যে সবনের অনুষ্ঠান হয়, তার নাম প্রাতঃসবন।
মৈত্রাবরুন:- বৈদিক যজ্ঞানুষ্ঠানে হোতা, উদগাতা, অধ্বর্যু এবং ব্রহ্মা – এই চারজন প্রধান পুরোহিতের প্রত্যেকের তিনজন করে সহকারী থাকে। মৈত্রাবরুন হোতার সহকারী ঋত্বিক্। ইনি সোমযাগে নির্দিষ্ট শস্ত্র পাঠ করেন।
বিনিয়োগ ব্যাখ্যা ৭) বায়ব্য তৃচে প্রথমা গ্রহায্যনদ্রবায়বস্যৈকা পুরোঅনুবাক্যা।
অনুবাদ:- যাগ-যজ্ঞাদি ক্রিয়ার সঙ্গে (ঋগ্বেদের) মন্ত্রের সম্বন্ধকে বলা হয় বিনিয়োগ। বিনিয়োগ তিন প্রকার-
i) সূক্ত বিনিয়োগ ( একটি সমগ্র সূক্তের বিনিয়োগ),
ii) তৃচাদি বিনিয়োগ (পরপর তিনটি ঋকমন্ত্রের বিনিয়োগ),
iii) ঋক বিনিয়োগ (একটি ঋকের বিনিয়োগ)। আচার্য সায়ন ‘পাবকা নঃ সরস্বতী’ ইত্যাদি মন্ত্রের বিনিয়োগে উপরিউক্ত বাক্যটি বলেছেন।
অনুবাদ:- বায়ব্য তৃচের মধ্যে ” বায়বায়াহি দর্শতে” ইত্যাদি প্রথম বাক্যটি বায়ু দেবতার উদ্দেশ্যে পুরোঅনুবাক্যা মন্ত্ররূপে পাঠ করা হয়।
টীকা:- বায়ব্যতৃচ:- পরপর তিনটি ঋক বা মন্ত্র কে একত্রে তৃচ বলা হয়। বায়ু দেবতার উদ্দেশ্যে যে তিনটি ঋক্ পাঠ করা হয়, তাদেরকে একত্রে বায়ব্য তৃচ্ বলা হয়।
পুরোঅনুবাক্যা:- যাগীয় দেবতাকে অনুকূল করবার জন্য যে মন্ত্রসমূহ পঠিত হয় সেই মন্ত্রসমূহকে অনুবাক্যা মন্ত্র বলা হয়। এর অপর নাম পুরোঅনুবাক্যা। অধ্বর্যু দ্বারা প্রেরিত হয়ে হোতা আহুতি দেওয়ার পূর্বে এই অনুবাক্যা মন্ত্র পাঠ করেন।
বিনিয়োগ ব্যাখ্যা ৮) সারস্বতে তৃচে বা প্রথমা সান্বারম্ভনীয়েষ্টৌ সরস্বত্যাঃ পুরোঅনুবাক্যা।
অনুবাদ:- অন্বারম্ভনীয়েষ্টি যাগে সারস্বত তৃচের মধ্যে ‘পাবকা নঃ সরস্বতী’ ইত্যাদি প্রথম ঋকটি চরু আহুতি দেওয়ার সময়ে সরস্বতী দেবীর উদ্দেশ্যে পুরোঅনুবাক্যা মন্ত্ররূপে পাঠ করা হয়।
টীকা:- সারস্বততৃচ:- পরপর তিনটি ঋক্ বা মন্ত্রকে একত্রে তৃচ্ বলা হয়। সরস্বতী দেবীর উদ্দেশ্যে যে তিনটি ঋক্ পাঠ করা হয়। তাদেরকে একত্রে সারস্বত তৃচ বলা হয়।
পুরোঅনুবাক্যা:- যাগীয় দেবতাকে অনুকূল করবার জন্য যে মন্ত্রসমূহ পঠিত হয়, সেই মন্ত্র সমূহকে অনুবাক্যা মন্ত্র বলা হয়। এর অপর নাম পুরোঅনুবাক্যা। অধ্বর্যু দ্বারা প্রেরিত হয়ে হোতা আহুতি দেওয়ার পূর্বে এই অনুবাক্যা মন্ত্র পাঠ করেন।
৯ )আধানে তৃতীয়াষ্টৌ প্রথমাজ্যভাগস্যানুবাক্যাঃ –
বিনিয়োগ কথাটির অর্থ হল বিশেষ রূপে নিয়োগ বা প্রয়োগ। মন্ত্রের দ্বারা যজ্ঞে বিশেষ বিশেষ কর্ম সাধারন হল বিনিয়োগ-
‘ অনেনেদং তু কর্তব্যং বিনিয়োগঃ প্রকীত্তিতঃ’।
দুই প্রকার বিনিয়োগ রয়েছে-
- i) সামান্য বিনিয়োগ,
- ii) বিশেষ বিনিয়োগ।
নির্দিষ্ট শাস্ত্র নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে যাগযজ্ঞাদিতে সমগ্র সংহিতার বিনিয়োগকে সামান্য বিনিয়োগ বলে। অপরপক্ষে সুক্ত বা মন্ত্র সমষ্টির বিনিয়োগকে বিশেষ বিনিয়োগ বলে। এই বিশেষ বিনিয়োগ তিন প্রকার। যথা-
- i) সুক্ত বিনিয়োগ:- একটি সমগ্র সুক্তের বিনিয়োগকে সুক্ত বিনিয়োগ বলে।
- ii) তৃচ্ বিনিয়োগ :- পরস্পর তিনটি ঋকমন্ত্রের বিনিয়োগকে তৃচ্ বিনিয়োগ বলে।
- iii) ঋক্ বিনিয়োগ:- একটি ঋকমন্ত্রের বিনিয়োগকে ঋক্ বিনিয়োগ বলে।
উৎস:- ঋকবেদ সংহিতার প্রথম মন্ডলের প্রথম অনুবাকের প্রথম সূক্তের অন্তর্গত তৃতীয় মন্ত্র-‘অগ্নিনা রয়িমশ্নবত্’ এর বিনিয়োগ প্রসঙ্গে ভাষ্যকার সায়ণাচার্য আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। ভাষ্যবাক্যের অর্থ হল- তৃতীয় পবমানেষ্টির অন্তর্গত প্রথম আজ্যভাগের অনুবাক্যরূপে ‘অগ্নিনা রয়িমশ্নবত্’ ইত্যাদি তৃতীয় মন্ত্রটি অগ্ন্যাধানকালে পঠিত হবে।
সকল শ্রৌতকর্মের অনুষ্ঠানে গার্হপত্য, আহবনীয় ও দক্ষিণাগ্নি এই তিন ধরনের শ্রৌতাগ্নির প্রয়োজন হয়। এই কারনে শ্রৌতকর্ম করতে ইচ্ছুক যজমান প্রথমে বৈদিক প্রকৃয়া অনুযায়ী সমন্ত্রক অরণিমন্থন করে অগ্নি নিষ্পাদন করবেন। এইভাবে মন্ত্র উচ্চারণ সহযোগে অরণীদ্বয় ঘর্ষনের দ্বারা যাজ্ঞিকদের মধ্যে আধান কর্ম নামে পরিচিত। ব্রাহ্মণাদি বর্ণভেদে অগ্ন্যাধানের কাল নির্দিষ্ট রয়েছে। বলা হয়েছে বসন্তে ব্রাহ্মণেরা, গ্রীষ্মে ক্ষত্রিয়েরা, শরৎকালে বৈশ্যরা এবং বর্ষাকালে শূদ্ররা অগ্নির আধান করবেন। সপত্নীক যজমানের কেবলমাত্র বৈদিক কর্মের অধিকার আছে।
এই আধান কর্মের সমাপ্তি হয় তিনটি বিকল্পের দ্বারা। এই তিনটি বিকল্প হল- পূর্ণাহুতির দ্বারা অথবা হোমের দ্বারা অথবা ইষ্টিকর্মের দ্বারা। শেষোক্ত পক্ষে অর্থাৎ ইষ্টির দ্বারা আধানকর্মের সমাপ্তি করতে হলে মোট তিনটি ইষ্টির অনুষ্ঠান করতে হয়। এই তিনটি ইষ্টিতে দেবতা যথাক্রমে অগ্নি পবমান, অগ্নি পাবক, অগ্নিশূচি। তৃতীয় ইষ্টিতে শূচি নামক অগ্নির উদ্দেশ্যে যাজ্ঞানুষ্ঠানে দুবার আজ্য অর্থাৎ ঘৃত আহুতি প্রদান পূর্বক যাগ করা হয়। একে বলে আজ্যভাগ। প্রথম আজ্যভাগে অগ্নি দেবতার উদ্দেশ্যে আহুতি দেওয়া হয়, দ্বিতীয় আজ্যভাগে সোমদেবতার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম আজ্যভাগে ‘অগ্নিনা রয়িমশ্নবৎ’ এই ঋকমন্ত্রটি অনুবাক্যারূপে পঠিত হয়। এটাই আলোচ্য বিনিয়োগ বাক্যের অর্থ।
যজ্ঞে আহুতি প্রদানের উদ্দেশ্যে অধ্বর্যু নামে ঋত্বিক্ যখন দ্রব্য গ্রহণ করেন তখন তারই দ্বারা আদিষ্ট হয়ে হোতৃনামক ঋত্বিক যে মন্ত্র পাঠ করেন তাকেই অনুবাক্যা মন্ত্র বলা হয়। আশ্বলায়ন তার শ্রৌতসূত্র গ্রন্থে বিভিন্ন যাগে ঋকবেদীয় মন্ত্রের বিনিয়োগ সূত্র দ্বারা নির্দেশ করেছেন।
১০) তস্মিন্ সূক্তে প্রথমায়া ঋচো দ্বিতীয়স্যাং পবমানেষ্টৌ স্বিষ্টকৃতো যাজ্যাত্বেন বিনিয়োগঃ।
ঋকবেদের প্রথম মন্ডলের প্রথম সূক্তের প্রথম ঋকটির বিনিয়োগ সম্বন্ধে ভাষ্যকার সায়ণাচার্য কর্তৃক আলোচ্য বাক্যটি উক্ত হয়েছে। বিনিয়োগ বাক্যের অর্থ অগ্নি সূক্তের প্রথম ঋকটি ‘অগ্নিমীলে’ ইত্যাদি প্রতীক বিশিষ্ট ঋকমন্ত্রটি দ্বিতীয় পবমানেষ্টিতে স্বিষ্টকৃদযাগের যাজ্যামন্ত্ররূপে হোতার দ্বারা পঠিত হবে।
সকল শ্রৌতকর্মের অনুষ্ঠানে গার্হপত্য, আহবনীয় ও দক্ষিণাগ্নি এই তিন ধরনের শ্রৌতাগ্নির প্রয়োজন হয়। এই কারনে শ্রৌতকর্ম করতে ইচ্ছুক যজমান প্রথমে বৈদিক প্রকৃয়া অনুযায়ী সমন্ত্রক অরনিমন্থন করে অগ্নি নিষ্পাদন করবেন। এইভাবে মন্ত্রোচ্চারণ সহযোগে অরনিদ্বয় ঘর্ষনের দ্বারা অগ্ন্যুৎপাদন এবং নির্দিষ্ট কুন্ডে সংস্থাপন যাজ্ঞিকদের মধ্যে আধানকর্ভ নামে পরিচিত। এই আধান কর্মের সমাপ্তি হয় তিনটি বিকল্পের দ্বারা । অথবা হোমের দ্বারা অথবা ইষ্টি কর্মের দ্বারা। শেষোক্ত পক্ষে অর্থাৎ ইষ্টির দ্বারা আধান কর্মের সমাপ্তি করতে হলে মোট তিনটি ইষ্টির অনুষ্ঠান করতে হয়। এই তিনটি ইষ্টিতে দেবতা যথাক্রমে অগ্নিপবমান, অগ্নিপাবক এবং অগ্নিশুচি। এই তিনটি বাক্যের দ্বারা চিহ্নিত তিনটি ইষ্টি যাগকে পরমানেষ্ট বলা হয়। ব্রীহি, যব প্রভৃতি ঔষধিজাত দ্রব্যের দ্বারা কিংবা দধি, ছানা, দুগ্ধ প্রভৃতির দ্বারা অনুষ্ঠেয়মান যজ্ঞকে ইষ্টি বলে। যদিও এখানে প্রথম পবমানেষ্টি দেবতা অগ্নি পবমান, অন্যদুটি নয় তবুও তিনটি ইষ্টি এই পবমানেষ্টিরূপে যাজ্ঞিক প্রসিদ্ধ বতর্মান।
দ্বিতীয় পবমানেষ্টিতে প্রধান দেবতা অগ্নি পাবকের উদ্দেশ্যে হবির্দ্রব্য আহুতি দেওয়ার পর অবশিষ্ট যাগকে স্বিষ্টকৃতো যাগ বলা হয়। প্রধান যাগের অবশিষ্ট হবিঃ দ্বারা এই যাগ করা হয় বলে যাগটির এরূপ নামকরণ।
হোতা নামক ঋত্বিক যে মন্ত্র পাঠ করেন তাকেই যাজ্যামন্ত্র বলে। এই যজ্ঞের হবি প্রদানকালে পঠিত হয় তাই ‘ অগ্নিমীলে পুরোহিতং ‘ মন্ত্রটি যাজ্যা।