স্বপ্নবাসবদত্তম্ নাটক হতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নাট্যাংশের বঙ্গানুবাদ দেওয়া হল ।
স্বপ্নবাসবদত্তম্ নাটক হতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নাট্যাংশের বঙ্গানুবাদ
১) উদয়নবেন্দুসবর্ণাবাসবদত্তাবলৌ বলস্য ত্বাম্।
পদ্ভাবতীর্নপূর্ণৌ বসন্তকস্রৌ ভুজৌ পাতাম।।”
বঙ্গানুবাদ:- উদয়নকালীন নূতন চন্দ্রের ন্যায় বর্ণযুক্ত, মদ্যপানহেতু বলান্বিত, লক্ষ্মীর আবির্ভাবে সমৃদ্ধশালী, বসন্তাগমে বিশেষ মনোহর বলরামের বাহুদ্বয় তোমাকে রক্ষা করুক।
২) “ভৃত্যৈর্মগধরাজস্য স্নৈগ্ধৈঃ কন্যানুগামিভিঃ
ধৃষ্টমুতসার্যতে সর্বস্তপোবনগতো জনঃ।।”
বঙ্গানুবাদ:- মগধরাজের কন্যা অনুগামী বিশ্বস্তরক্ষা ভৃত্যগন তপোবন হতে ধৃষ্টতা সহকারে সকল লোককেই সরিয়ে দিচ্ছে।
৩) ধীরস্যাশ্রমসংশ্রিতস্য বসতস্তুষ্টস্য বন্যৈঃ ফলৈঃ মানার্হস্য জনস্য বল্কলবতস্ত্রাসঃ সমুত্ পাদ্যতে। উতসিক্তো বিনয়াদপেতপুরুষো ভাগ্যৈশ্চলৈর্বিস্মিতঃ কোঅয়ং ভো নিভৃতং তপোবনমিদং গ্রামীকরোত্যাজ্ঞয়া।।
বঙ্গানুবাদ:- প্রাজ্ঞ, আশ্রমবাসী, বন্যফলে সন্তুষ্ট হয়ে জীবনযাপনকারী, বল্কলধারী, মাননীয় লোকের ত্রাস সৃষ্টি করা হচ্ছে কেন? ওহে, কে এই গর্বিত, অবিনয়ী ব্যাক্তি, চঞ্চল ভাগ্যলাভে মত্ত হয়ে, আজ্ঞা প্রদান করে, নিভৃত এই তপোবনটিকে গ্রামে পরিণত করছে?
৪) “পূর্বং ত্বয়াপ্যভিমতং গতমেবমাসী
চ্ছ্লাঘ্যং গমিষ্যসি পুনর্বিজয়েন ভর্ত্তুঃ।
কালক্রমেন জগতঃ পরিবর্ত্তমানা
চক্রারপঙক্তিরিব গচ্ছতি ভাগ্যপঙক্তিঃ।।”
বঙ্গানুবাদ:- ইতিপূর্বে আপনারও এইরূপ ইপ্সিত ও সম্মানজনক গমনাগমন ছিল। স্বামীর বিজয় লাভের পর পুনরায় সেরূপ সম্মানজনক অবস্থা ফিরে পাবেন। জগতে কালক্রমে ভাগ্যচক্র অর সমূহের মতো পরিবর্তিত হয়ে থাকে অর্থাৎ ঘুরতে থাকে।
৫) পরিহরতুভবান্ নৃপাপবাদ্যং ন পরুষমাশ্রমবাসিষুপ্রযোজ্যম্ নগর পরিভবান্ বিমোক্তুমেতে বনমভিগম্য মনস্বিনো বসন্তি।।
বঙ্গানুবাদ :- রাজার যাতে অপবাদ( নিন্দা) হয় তুমি তা পরিহার কর। আশ্রম বাসিদের প্রতি কর্কশ ব্যবহার প্রয়োগ করা উচিত নয়।
এই মনস্বিগণ নগর সুলভ অবমাননা পরিহার করার জন্যই বনে এসে বাস করছেন।
৬) তীর্থোদকানি সমিধঃ কুসুমানি দর্ভান্
স্বৈরং বনাদুপনয়ন্তু তপোধনানি।
ধর্মপ্রিয়া নৃপসুতা নহি ধর্মপীড়া-
মিচ্ছেত্ তপস্বিষু কুলব্রতমেতদস্যাঃ।।
বঙ্গানুবাদ:- এই তপোবন থেকে তপস্বিদের ইচ্ছামত পুণ্যসলিল, যজ্ঞকাষ্ঠ, ফুল ও কুশ সংগ্রহ করুন। কেননা ধর্মানুরাগিনী রাজকন্যা তপস্বিগনের ধর্মাচরনে কোনপ্রকার বিঘ্নসৃষ্টি করতে চান না, এটাই এঁর বংশপরম্পরার নীতি।
৭) প্রদ্বেষো বহুমানো বা সংকল্পাদু জায়তে।
ভর্ত্তৃদারাভিলাষিত্বাদস্যাং মে মহতী স্বতা।।
বঙ্গানুবাদ :- বিদ্বেষ বা সমাদর মনের ভাব থেকেই উৎপন্ন হয়। যেহেতু আমি এঁকে প্রভুর পত্নীরূপে পেতে ইচ্ছা করছি তাই এঁর প্রতি আমার বিশেষ আত্মীয়তা জন্মেছে।
৮) কস্যার্থঃ করসেন কো মৃগয়তে বাসো যথা নিশ্চিতম্
দীক্ষাং পারিতবান্ কিমিচ্ছতি পুনর্দেয়ং গুরো যদ্ ভবেত্।
আত্মানুগ্রহমিচ্ছতীহ নৃপজা ধর্মাভিরামপ্রিয়া
যদ্ যস্যাস্তি সমীপ্সিতং বদতু তত্ কস্যাদ্য কিংদীয়তাম।।
বঙ্গানুবাদ :- কার কলসের প্রয়োজন আছে? কে মনের মত বস্ত্র ইচ্ছা করেন? বিধিবৎ দীক্ষা গ্রহণের পর গুরুদক্ষিণা দেওয়ার জন্য কি কি চান? আমাদের ধর্মানুরাগিনী রাজকন্যার নিজের ধর্মোন্নতির ইচ্ছা পূরণে যার যা প্রার্থনা আছে বলুন, আজ কাকে কি দিতে হবে?
৯) কার্যং নৈবার্থে র্নাপি ভোগৈ র্ন বস্ত্রৈঃ নাহ্যং কাষায়ং বৃত্তিহেতোঃ প্রপন্ন।
ধারা কন্যেয়ং দৃষ্টধর্মপ্রচারা শক্তা চারিত্রং রক্ষিতুং মে ভগিন্যাঃ।।
বঙ্গানুবাদ:- আমার অর্থের বা ভোগের বা বস্ত্রের প্রয়োজন নাই। আমি জীবিকার জন্যও কাষায় বস্ত্র ধারণ করিনি, এই বুদ্ধিমতী রাজকন্যা ধর্ম প্রচার জানেন, ইনি আমার ভগিনীর চরিত্র রক্ষা করতে সমর্থা হবেন।
১০) সুখমর্থো ভবেদ্ দাতুং সুখং প্রাণাঃ সুখং তপঃ
সুখমন্যদ্ ভবেদ্ সর্ব্যং দুঃখং ন্যাসস্য রক্ষণম্।।
বঙ্গানুবাদ:- অর্থ দান করা সুখকর, প্রাণ এবং তপস্যার ফল দান কারও সুখকর। অন্য সব কিছুই সুখে দান করা যায়। কিন্তু গচ্ছিত দ্রব্যের রক্ষণ কষ্টদায়কই হয়।
১১) পদ্মাবতী নরপতের্মহিষী ভবিত্রী
দৃষ্টা বিপত্তিরথ যৈঃ প্রথমং প্রদিষ্টা।
তত্ প্রত্যয়াত্ কৃতমিদং ন হি সিদ্ধবাক্যা-
ন্যুতক্রম্য গচ্ছতি বিধিঃ সুপরীক্ষিতানি।।”
বঙ্গানুবাদ:- যাঁরা প্রথমে পদ্মাবতী রাজা উদয়নের মহিষী হবেন, এরূপ ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন, তাঁরা নিশ্চয়ই এও জানতেন যে এই বিপদও আসন্ন। সেই সিদ্ধবাক্যকে বিশ্বাস করে আমি এরূপ করেছি, কেননা ভাগ্য কখনও সুপরীক্ষিত সিদ্ধবাক্যকে উল্লঙ্ঘন করে না।
১২) বিস্রধ্বং হরিণাশ্চরন্ত্যিচকিতা দেশাগতপ্রত্যয়া
বৃক্ষাঃ পুষ্পফলৈঃ সমৃদ্ধবিভবাঃ সর্বেদয়ারক্ষিতাঃ।
ভূয়িষ্টং কপিলানি গোকুলধনান্যক্ষেত্রবতো দিশো
নিঃসন্দিগ্ধমিদং তপোবনময়ং ধুমৌহি বহ্বাশ্রয়ঃ।।
উ:- এখানে নিজের দেশ মনে করে হরিণেরা বিশ্বস্তভাবে অচঞ্চল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বৃক্ষসমূহ অতিযত্নে পালিত হওয়ায় ফল-ফুলে সমৃদ্ধিলাভ করেছে। অধিকাংশ গরুগুলো কপিলবর্ণের দেখা যাচ্ছে। মাঠগুলো অকর্ষিত, বহুস্থান থেকে ধূম উদগত হচ্ছে। অতএব নিশ্চই এটি আশ্রম।
১৩) নৈবেদানীং তাদৃশাশ্চক্রবাকা নৈবাপ্যন্যে স্ত্রীবিশেষৈঃ বিযুক্তা
ধন্যা সা স্ত্রী যাং তথা বেত্তি ভর্তা ভর্তৃস্নেহাৎ সা হি দগ্ধাপ্যদগ্ধা।।
বঙ্গানুবাদ:- এখন তাঁর মতো বিলাপরত চক্রবাক্ অথবা প্রিয়তমা বিযুক্ত অন্য কেউ নাই। স্বামী যাকে এত ভালোবাসে সেই স্ত্রী ভাগ্যবতী। প্রকৃতপক্ষে স্বামীর এরূপ প্রেমের কারণে বাসবদত্তা আজ অগ্নিদগ্ধা হয়েও অদগ্ধা।
১৪, ১৫ নেই
১৬) খগা বাসোপেতাঃ সলিলমবগাঢ়ো মুনিজনঃ।
প্রদীপ্তোঅগ্নির্ভাতি, প্রবিচরতি ধুমো মুনিবনম্
পরিভ্রষ্টৌ দুরাদ্ রবিরপি চ সংক্ষিপ্তকিরণোঃ
রথং ব্যাবৃত্তাসো প্রবশতি শনৈরস্তশিখরম্।।
বঙ্গানুবাদ:- পাখীরা বাসায় ফিরে এসেছে, মুনিরা জলে স্নান করছেন, অগ্নি চতুর্দিকে প্রদীপ্ত হয়ে শোভা পাচ্ছে। তপোবনের সর্বত্র ধূম সঞ্চালিত হচ্ছে। উচ্চস্থান থেকে ক্ষীনতেজা সূর্য ও পতিত হয়ে নিজের রথ ফিরিয়ে ধীরে ধীরে অস্তাচলে প্রবেশ করছেন।