ঋকবেদের প্রথম মন্ডলের ৩৫ তম সূক্তকে অবলম্বন করে সবিতা দেবীর স্বরূপ প্রদর্শন কর। সবিতা দেবী ঋকবেদের সৌরদেবমন্ডলীর অন্তর্গত দেবতা। সবিতা দেবীর স্বরূপ প্রদর্শন করা হল ।
সবিতা দেবীর স্বরূপ প্রদর্শন
অবস্থান | ঋকবেদের প্রথম মন্ডলের ৩৫ তম সূক্ত |
ঋষি | বিশ্বামিত্রের পুত্র মধুচ্ছন্দা |
ছন্দ | প্রথম ও নবম মন্ত্র- জগতী অবশিষ্ট মন্ত্রগুলি- ত্রিষ্টুপ্ |
দেবতা | অগ্নি |
মন্ত্রসংখ্যা | ৯টি |
সবিতা দেবীর স্বরূপ
ভূমিকা :- ঋকবেদের সৌরদেবমন্ডলীর অন্তর্গত মহত্তর ভূমিকা সম্পন্ন দেবতা হলেন সবিতা। সবিতা শব্দটি সূ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয়েছে। সূ ধাতুর অর্থ তিন প্রকার – প্রেরন করা,উৎপন্ন করা এবং নিষ্কাশন করা।প্রথম অর্থটি সবিতার ক্ষেত্রে সমধিক প্রযোজ্য। তিনি প্রজাপতি রূপে জগত প্রসবিতা-‘দিবো ধর্তা ভুবনস্য প্রজাপতিঃ।’ ঋগ্বেদে সূর্য এবং সবিতা অভিন্ন। উদয়ের পূর্বের সূর্যকে সবিতা এবং উদয় থেকে অস্ত পর্যন্ত সময়কে বলা হয় সূর্যই। প্রভাতকালীন সূর্যের বর্ণ স্বর্ণাভ বলে বলে ঋকবেদের প্রথম মন্ডলের ৩৫তম সূক্তে সবিতাকে হিরণ্যাক্ষ, হিরণ্যহস্ত,হিরণ্যপাণি বলে অভিহিত করা হয়েছে।
সবিতা দেবী সূক্তের ঋষি ছন্দ দেবতা :-
ঋকবেদের প্রথম মন্ডলের ৩৫ তম সূক্তটি একাদশ মন্ত্রের সমাহার। প্রথম ও নবম মন্ত্রের ছন্দ হল জগতী। অবশিষ্ট মন্ত্রগুলির ছন্দ হল ত্রিষ্টুপ্। একাদশ মন্ত্রের দেবতারূপে সবিতা নির্দিষ্ট হয়েছেন। তবে প্রথম মন্ত্রের ক্ষেত্রের প্রতীকরূপে অগ্নি, মিত্রাবরুণ, রাত্রি ও সবিতা -এই চার দেবতা লিঙ্গোক্তদেবতারূপেও সূচিত হন।
সবিতার স্বরূপ :-
সবিতা সূক্তে সবিতার যে স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে তা নিম্নে বর্ণিত হল-
সবিতা দেবী সচেতনকারিণী
” অন্ধকার পূর্ণ অন্তরীক্ষ লোক দিয়ে নিরন্তর ভ্রমণ করে দেব ও মনুষ্যকে সচেতন করে।
ঋষির দৃষ্টিতে –
” আ কৃষ্ণেন রজসা বর্তমানো নিবেশয়ন্নমৃতং মর্ত্যং চ।
হিরণ্যয়েন সবিতা রথেনা দেবো যাতি ভুবনানি পশ্যন্।।”
সবিতা দেবী পাপবিনাশিনী :-
দেব সবিতা অধোগামী মার্গ দিয়ে গমন করেন। তিনি ঊর্ধ্বগামী পথ দিয়ে যান। অর্চনা ভাজন সেই দেব দুটি শ্বেত অশ্বের দ্বারা গমন করেন।তিনি সমস্ত পাপ বিনাশ করতে করতে দূর দেশ থেকে আগমন করেন।
ঋষির দৃষ্টিতে –
” যাতি দেবঃ প্রবতা যাত্যুদ্বতা যাতি শুভ্রাভ্যাং যজতো হরিভ্যাম্।
আ দেবো যাতি সবিতা পরাবতোঅপ বিশ্বা দুরিতা বাধমান।।”
সবিতা দেবী তমঃ নাশিনী :-
যজনীয় ও বিচিত্র রশ্মি যুক্ত সবিতা জগৎসমূহের অন্ধকার বিনাশার্থে তেজ ধারণ করে নিকটস্থ সুবর্ণ বিচিত্রিত স্বর্ণশঙ্কু যুক্ত বৃহৎ রথে আরোহন করেন।
সবিতা দেবী জ্যোতিঃপুঞ্জের নেত্রী :-
গ্রহ, চন্দ্র, নক্ষত্র প্রভৃতি জ্যোতিপুঞ্জ সবিতৃদেবকে অবলম্বন করে বিদ্যমান থাকে।
সবিতা দেবী ত্রিলোকব্যাপিনী :-
গভীর কম্পন বিশিষ্ট প্রাণ দাতা সুন্দরগমন উক্ত সূর্যরশ্মি অন্তরীক্ষাদি তিন লোক ব্যাপ্ত করে আছে।
সবিতা দেবী সবকিছুর প্রকাশিকা :-
সবিতা পৃথিবীর অষ্টদিক প্রকাশিত করেছেন। তিনি প্রাণিবৃন্দকে, তিন জগৎ এবং সপ্তসিন্ধুও প্রকাশিত করেছেন।
ঋষির দৃষ্টিতে-
” অষ্টৌ ব্যখ্যৎ ককুভঃ পৃথিব্যাস্ত্রী ধন্ব যোজনা সপ্ত সিন্ধন্।
হিরণ্যাক্ষঃ সবিতা দেব আগাদ্ দধদ্রত্বা দাশুষে বার্যানি।।”
হিরণ্যপানি ও রোগনাশকারী সবিতা দেবী :-
হিরণ্য বা সুবর্ণ প্রদান করতে প্রসারিত হস্ত বিশিষ্ট বিবিধরূপধারী সবিতৃদেব দ্যুলোক ও পৃথিবীলোকে গমন করেন। উদিত হয়ে এই দেব রোগ নাশ করেন।
হর্ষপ্রদাতা ও ধনবতী সবিতা দেবী :-
হিরণ্য হস্ত প্রাণ চৈতন্য স্বরূপ, সুনেতা, হর্ষপ্রদাতা ও ধনবান সবিতা কর্মদেশের অভিমুখ হয়ে আসুক এই প্রার্থনা।
ঋষির দৃষ্টিতে-
” হিরণ্যহস্তো অসুরঃ সুনীথঃ সুমৃলীকঃ স্ববাঁ যাত্বর্বাঙ্।
অপ সেধনক্ষসো যাতুধানানস্থাদ্দেবঃ প্রতিদোষং গৃণানঃ।।”
সবিতা দেবী ধূলিরহিত পদবিশিষ্টা :-
সবিতার পথসমূহ পূর্ব সিদ্ধ, ধূলিরহিত ও অন্তরীক্ষলোকে সুর্নির্মিত। সেই সুগম পথ দিয়ে এসে তিনি আমাদের রক্ষা করেন।
সবিতা দেবীর স্বরূপ / মহিমা
উপসংহার:- ঊষাকে অবলম্বন করেই প্রাদুর্ভাব হয় সবিতার। উৎপত্তি এবং অবসানের মূলেই সবিতৃদেবের আবির্ভাব ও তিরোভাব রয়েছে। এখানেই এঁর মহিমা পরিব্যপ্ত আছে।
আরো পড়ুন –
সবিতৃসূক্ত হতে মন্ত্র বাখ্যা
“আ কৃষ্ণেন রজসা বর্তমানো নিবেশয়ন্নমৃতং মর্ত্যং চ।
হিরণ্যয়েন সবিতা রথেনা দেবো যাতি ভুবনানি পশ্যন্।”
অনুবাদ:- অন্ধকার পূর্ণ অন্তরীক্ষ লোক দিয়ে নিরন্তর ভ্রমণ করে দেব ও মনুষ্যকে সচেতন করে, দেব সবিতা ভুবন সমুদায় দেখতে দেখতে হিরণময়রথে আমাদের নিকট আগমন করেন।
উৎস:- অয়ম্ মন্ত্রঃ ঋগ্বেদস্য প্রথমমন্ডলস্য সবিতৃসূক্তে আম্নাতঃ।
ঋষিঃ দেবতা ছন্দঃ চ :- অস্য মন্ত্রস্য হিরণ্যস্তূপঃ ঋষিঃ, সবিতা দেবতা, ত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ চ।
প্রসঙ্গ:- অস্মিন্ মন্ত্রে ঋষিঃ হিরণ্যস্তূপঃ সবিতুঃ স্বরূপম্ প্রকাশয়তি।
অন্বয়:- অস্য মন্ত্রস্য অন্বয়ঃ যথা সবিতা কৃষ্ণেন রজসা বর্তমানঃ অমৃতং মর্ত্যং চ নিবেশয়ন্ হিরণ্যয়েন রথেনা ভুবনানি পশ্যন্ দেবঃ আ যাতি।
সায়ণভাষ্যম্:- সায়ণাচার্যঃ ইমম্ এবম্ ব্যাখ্যাতবান্ সবিতা সূর্যঃ কৃষ্ণেন রজসা কৃষ্ণবর্ণেন লোকেন। আ বর্তমানঃ পুনঃ পুনরাগচ্ছন্ অমৃতং দেবং মর্ত্যং মনুষ্যং চ নিবেশয়ন্ স্বস্বস্হানে অবস্থাপয়ন্। সবিতাঃ দেবঃ ভুবনানিসর্বান্ লোকান্ পশ্যন্ অবেক্ষমানঃ প্রকাশয়ন্নিত্যর্থঃ। হিরণ্যয়েন সুবর্ণনির্মিতেন রথেনা আ যাতি অস্মৎসমীপমাগচ্ছতি।
সরলার্থ:- অস্য মন্ত্রস্য সরলার্থঃ যথা কৃষ্ণবর্ণেন মার্গেন পুনঃ পুনঃ ভ্রমিত্বা দেবান্ মনুষ্যান্ চ সচেতনম্ কৃত্বা সবিতা লোকান্ প্রকাশয়ন্ সুবর্ণনির্মিতেন রথেন অস্মাকম্ সমীপম্ আগচ্ছতি ইতি শিবম্।