কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র মন্ত্রাধিকার অনুসারে -মন্ত্রনার জন্য কি ধরনের স্থান নির্দেশ করা হয়েছে ? কৌটিল্য কীভাবে তার পূর্বসূরীদের মত খন্ডন করেছেন?
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র মন্ত্রাধিকার
মন্ত্রনার জন্য কি ধরনের স্থান নির্দেশ করা হয়েছে ?
উঃ- কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র-এ মন্ত্রাধিকার নামে পঞ্চদশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে- মন্ত্রনার স্থান নির্দিষ্ট এবং সুরক্ষিত হবে, কোনো কথা বাইরে শোনা যাবেনা।
আচার্য কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র -এ মন্ত্রাধিকার নামে পঞ্চদশ অধ্যায়ে রাজার মন্ত্রণা বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। আচার্য কৌটিল্য তার পূর্বসূরিরা মন্ত্রণা বিষয়ে যে অভিমত প্রকাশ করেছেন তা উল্লেখ করে,শেষে তাদের মতের দোষ দেখিয়ে মন্ত্রণাবিষয়ে নিজের মতটি যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। নিম্নে তা আলোচনা করা হল-
কৌটিল্য কীভাবে তার পূর্বসূরীদের মত খন্ডন করে মন্ত্রনা সম্পর্কিত নিজমত প্রতিষ্ঠিত করেছেন?
আচার্য ভরদ্বাজ বা দ্রোণাচার্যের অভিমত
মন্ত্রীদের সংখ্যাধিক্য মন্ত্র রক্ষার পরিপ্রেক্ষী। তাই মন্ত্রণা বিষয়ে আচার্য ভরদ্বাজ বলেছেন রাজার একাকী মন্ত্রণা করা উচিত কেননা মন্ত্রীদেরও নিজ সহায়ক মন্ত্রী আছে আবার সেই মন্ত্রীদেরও নিজ সহায়ক মন্ত্রী থাকে,কাজেই মন্ত্রী পরাম্পরার মাধ্যমে মন্ত্র প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তিনি বলেছেন-
গুহ্যমেকোমন্ত্রয়েতেতি।
আচার্য বিশালাক্ষের অভিমতঃ-
আচার্য বিশালাক্ষ ভরদ্বাজের মত স্বীকার করেননা। তার মতে কোন মানুষই একাকী নির্ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে না।তিনি বলেছেন-
ন একস্য মন্ত্রসিদ্ধি অস্তি ইতি।
রাজকার্য যেহেতু প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ও অনু মেয়ের উপর নির্ভরশীল এবং মন্ত্রীদের সহায় সাধ্য,সেহেতু রাজার একার পক্ষে সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অসম্ভব।
তাই বিশালাক্ষের মতে, রাজার জ্ঞান বুদ্ধদের সঙ্গে মন্ত্রনা করা উচিৎ। কাউকে অবজ্ঞা না করে সকলের অভিমত শোনা উচিৎ। এমনকি বালকের কখনও যদি যুক্তিযুক্ত হয়, তাহলে সেকথাও গ্রহন করা উচিৎ।
আচার্য পিশুনের অভিমত
আচার্য পিশুন পরাশরের মত স্বীকার করেন না। তাঁর মতে, যে কার্যে যারা পটু এবং মন্ত্রনা বিষয়ে নিপুন বলে রাজার অভিপ্রেত এবং বিশ্বস্ত তাদের সঙ্গেই রাজা মন্ত্রনা করবেন-
তস্মাৎ কর্মসু যে যেষ্বভিপ্রেতাস্তৈঃ সহ মন্ত্রয়েৎ।'
তাহলে মন্ত্রজ্ঞান এবং মন্ত্রগুপ্তিরক্ষা উভয়ই সম্পন্ন হবে।
আচার্য কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র মন্ত্রাধিকার অনুসারে কীভাবে তার পূর্বসূরীদের মত খন্ডন করেছেন
আচার্য কৌটিল্য মনে করেন, পিশুনের মতটি গ্রহনযোগ্য নয়। কারন, তার মতে এটি অনাবস্থা দোষে দুষ্ট-
নেতি কৌটিল্যঃ।অনাবস্থা হ্যেষা'।
যদি রাজা কেবলমাত্র একজন মন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রনা করেন, তবে কঠিন কার্যসমূহ নির্ধারণের সময় তিনি কার্য নিশ্চয় করতে পারবেন না। এছাড়াও একজন মন্ত্রী হলে তিনি নিজের ইচ্ছানুযায়ী অভিমত ব্যক্ত করতে পারেন।
যদি দুজন মন্ত্রীর সঙ্গে রাজা মন্ত্রনা করেন,তবে তারা উভয়ে মিলিতভাবে রাজাকে বশে আনতে পারেন অথবা তারা পরস্পর বিপরীত মত পোষন করে রাজার কার্যহানি ঘটাতে পারে। তাই মন্ত্রীর সংখ্যা যদি তিন বা চারজন হয়, তাহলে এসব বিপদ ঘটেনা, কার্যসিদ্ধি ও মন্ত্রগুপ্তিও রক্ষা হয়।
কৌটিল্য তাঁর ব্যাপক অভিজ্ঞতা থেকে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, মন্ত্রীপরিষদের সংখ্যা নিরুপনের ক্ষেত্রে রাজা দেশ,কাল ও কার্যের বিচার করে একজন অথবা দুজন মন্ত্রীর সাথে কিংবা একাকী নিজের সামর্থ্য এবং প্রয়োজন অনুসারে মন্ত্রীসংখ্যা নির্দিষ্ট করবেন-
"দেশকালকার্যবশেন ত্বেকেন সহ দ্বাভ্যামেকো বা যথাসামর্থ্যং মন্ত্রয়েৎ।'
অর্থশাস্ত্র হতে অন্যন্য টীকাগুলি দেখতে ক্লিক করুন
অর্থশাস্ত্র হতে অন্যন্য প্রশ্ন ও উত্তর গুলি দেখুন (Arthashastra Sanskrit Hons Pass Notes)
- কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র অনুসারে দূতএর প্রকারভেদ দূতের সংজ্ঞা ও কার্যাবীল লেখ?
- অর্থশাস্ত্র অনুসারে শাসন রচনার উদ্দেশ্যগুলি কয়টি ও কী কী? ব্যাখ্যা কর।
- কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র মন্ত্রাধিকার অনুসারে রাজলেখের দোষ ও গুণ
- রাজলেখ বলতে কী বোঝ? রাজলেখ কয় প্রকার ও কী কী?
- পদ কাকে বলে? পদ কয় প্রকার ও কী কী?
- উপায় কয়টি ও কী কী?
- কৌটিল্যের মতে দূতের গুনাবলী কি কি? পররাষ্ট্রে দূতের কার্যাবলী আলোচনা কর ।
- কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র মন্ত্রাধিকার অনুসারে মন্ত্রনার স্থান ও কৌটিল্য কীভাবে তার পূর্বসূরীদের মত খন্ডন করেছেন ।