তর্কসংগ্রহ হতে বায়ু সম্পর্কে টিকা লেখ ।
টিকা বায়ু – তর্কসংগ্রহ
বায়ু:- তর্কসংগ্রহকার অন্নংভট্ট তাঁর তর্কসংগ্রহ গ্রন্থে নটি দ্রব্যের আলোচনা করেছেন। এই নটি দ্রব্যের মধ্যে তিনি পৃথিবী প্রভৃতি আলোচনার পর বায়ুর লক্ষণ করেছেন। তা হল –
“রূপরহিতস্পর্শবান্ বায়ুঃ”।
অর্থাৎ যে দ্রব্য রূপরহিত ও স্পর্শ বিশিষ্ট তার নাম হলো না বায়ু –
” রূপরহিতত্বে সতি স্পর্শবত্ত্বম্।”
কিন্তু যদি ‘রূপরহিতত্বং বায়ুত্বম্’ – এইরূপ লক্ষণ করা হতো তাহলে কি অসুবিধা হত? এর উত্তরে অন্নংভট্ট বলেছেন আকাশ প্রভৃতিতে রূপ না থাকায় বায়ুর লক্ষণে অতি ব্যাপ্তি দোষ ঘটত। এইজন্য ‘স্পর্শবত্ত্বম্- অংশটি লক্ষণে যুক্ত করা হয়েছে। আকাশাদি প্রভৃতি স্পর্শবান না হওয়ায় অতি ব্যাপ্তি দোষ নিবৃত্তি হল। আবার তারা বলেছেন ‘স্পর্শবত্বং বায়ুত্বম্’ এরূপ লক্ষণ করা হলে কি ক্ষতি হতো। এর উত্তরে বলা যায় জল ও তেজে স্পর্শ থাকায় বায়ুর লক্ষণে অতিব্যাপ্তি দোষ ঘটত। এজন্য শ্লোকে রূপরহিতত্বম্ যুক্ত করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো প্রাণ বায়ুর আবির্ভাব কোথায় হয়, এর উত্তরে বলা হয়েছে শরীরের অভ্যন্তরে প্রাণের আবির্ভাব হয়। এই একই প্রাণবায়ু হৃদয়াদি স্থানভেদে প্রাণ, অপ্রাণ ইত্যাদি নামে অভিহিত হয়।
স্পর্শ থেকে অনুমান প্রমাণ দ্বারা বায়ুর অস্তিত্ব বোঝা যায়। যেমন-
“যোঅয়ং বায়ৌ বাতি সতি অনুষ্ণাশীতস্পর্শো ভাসতে, সঃ স্পর্শঃ ক্বচিদাশ্রিতঃ গুণত্বাৎ রূপবৎ।”
অর্থাৎ এই যে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে এর দ্বারা অনুষ্ণাশীতস্পর্শ অনুভূত হচ্ছে। এই স্পর্শের নিশ্চয়ই কোনো না কোনো অাশ্রয় আছে, কারণ এটি একটি গুন যেমন রূপ। এই আশ্রয়টি পৃথিবী হতে পারে না। কারণ যে পৃথিবীতে উদ্ভূত স্পর্শ থাকে সেই পৃথিবীতে উদ্ভূত রূপও থাকে । স্পর্শাশ্রয়ের কোনো রূপ নাই। জল এবং তেজও এইরূপ স্পর্শের আশ্রয় হতে পারে না। কেননা, এই স্পর্শটি অনুষ্ণাশীত।
কেননা, এই স্পর্শটি অনুষ্ণাশীত। আকাশ কাল দিক ও আত্মাতেও এই অনুষ্ণাশীত স্পর্শ থাকতে পারে না। যেহেতু এই চারটি বিভু দ্রব্য অর্থাৎ সর্বদা সর্বত্র বিরাজমান হওয়ায় এদের মধ্যে স্পর্শ থাকলে সর্বত্র তার উপলব্ধি হতো। মন ও স্থিত স্পর্শ অতীন্দ্রিয়। তাই স্পর্শের আশ্রয় রূপে বায়ুর অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়।
এখন আপত্তি হতে পারে, প্রত্যক্ষ স্পর্শের আশ্রয় হওয়ায় বায়ু প্রত্যক্ষ হোক, যেমন ঘট? এর উত্তরে বলা হয়েছে যে এরূপ অনুমানে উদ্ভূতরূপবত্বটি উপাধি রূপে বর্তমান থাকায়, আপত্তিটি ঠিক নয়। কারন যেখানে যেখানে দ্রব্যত্বে বহিরিন্দ্রিয় প্রত্যক্ষত্ব আছে সেখানে সেখানেই অবশ্যই উদ্ভূতরূপবত্ত্ব আছে। তাই ঘটাদিতে সাধ্যের ব্যপকত্ব আছে। উদ্ভূত স্পর্শাশ্রয়ত্ব পক্ষরূপ বায়ুতে থাকায় এবং সেখানে উদ্ভূতরূপটি না থাকায় উদ্ভূত রূপবত্ত্ব উপাধি হেতুর অব্যাপক হয়েছে। অতএব রূপ না থাকায় বায়ু হল অপ্রত্যক্ষ।
বায়োবীয় শরীর বায়ুলোকে অবস্থিত। ভূপৃষ্ঠ থেকে অন্তরীক্ষ লোকটি বায়ুদেবতার নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে বায়ুলোক নামে খ্যাত। ভূত, প্রেতাদি বায়োবীয় শরীরধারী। স্পর্শানুভবের জন্য যে ইন্দ্রিয়ের সাহায্য লাগে তাকে বলা হয় ত্বক-
” ইন্দ্রিয়ং স্পর্শগ্রাহকং ত্বক্ সর্বশরীরবর্ত্তি।”
বায়োবীয় শরীর এবং ত্বকেন্দ্রিয় শরীর এবং ত্বকেন্দ্রিয় ছাড়া বায়ুর দ্বারা বৃক্ষাদির যে কম্পন, তাকে বলা হয় বায়োবীয় বিষয়
” বিষয়ো বৃক্ষাদিকম্পন হেতুঃ।”
এরপর অন্নংভট্ট বায়ুর অস্তিত্ব প্রমান করেছেন। বায়ুর কোনো চক্ষুগ্রাহ্যরূপ নেই। তাই অনুমান প্রমাণের দ্বারা অন্নংভট্ট বায়ুর অস্তিত্ব সাধন করেছেন। স্পর্শ একটি গুন এই স্পর্শের সাহায্যেই বাযুর প্রত্যক্ষ হয়।
এটিই হল বায়ু সম্বন্ধে আলোচনা।