তর্কসংগ্রহ হতে আকাশ সম্পর্কে টিকা লেখ ।
তর্কসংগ্রহ হতে আকাশ সম্পর্কে টিকা
আকাশ:- সাত প্রকার পদার্থের মধ্যে গুনাদির আশ্রয় হওয়ায় দ্রব্যই প্রধান। এজন্য পদার্থের মধ্যে দ্রব্য কে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্নংভট্ট দ্রব্যকে লক্ষিত করে বলেছেন-
“দ্রব্যত্বজাতিমত্ত্বং গুণবত্ত্বং বা দ্রব্যসামান্য লক্ষণম্।”
অর্থাৎ জাতিমান অথবা গুনমান পদার্থই দ্রব্য। এই দ্রব্য নয় প্রকার। ক্ষিতি অপ্ তেজ ব্যোম কাল দিক আত্মা ও মন-
“তত্র দ্রব্যাণি পৃথিব্যপ্তেজোবায়্বাকাশকালদিগাত্মমনাংসি নবৈব।”
এই নববিধ দ্রব্য প্রমান সিদ্ধ। পৃথিবী জল, তেজ, বায়ু প্রত্যক্ষ সিদ্ধ। আকাশ কাল দিক আত্মা ও মন এই পাঁচটি অনুমেয় পদার্থ।
নববিধ দ্রব্যের মধ্যে আকাশ হল পঞ্চবিধ দ্রব্য। ন্যায় বৈশেষিক মতে, আকাশ পঞ্চভূত দ্রব্যের অন্যতম। শ্রবণেন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিশেষগুন শব্দ আকাশে থাকে বলে আকাশকে ভূত দ্রব্য বলা হয়েছে। যা শব্দ নামক গুন উৎপন্ন করে বা শব্দের সমবায়ী কারন হয় তাকে আকাশ বলে।
তর্কসংগ্রহকার অন্নংভট্ট এর লক্ষণ প্রসঙ্গে বলেছেন-
“শব্দগুনকম্ আকাশম্।”
এই লক্ষণে শব্দ পৃথকভাবে উল্লিখিত হয়নি। কারন শব্দ আকাশের বিশেষ গুন তা বোঝানোর জন্য এই গুন শব্দের প্রয়োগ করা হয়েছে। তাই টীকাকার নীলকণ্ঠ বলেছেন –
“আকাশে শব্দ এব বিশেষগুনঃ ইতি সূচনায়।”
আকাশ শব্দগুনের অধিকরণ বা আশ্রয়। শব্দ আকাশে সমবেত। শব্দের প্রত্যক্ষ হয়। কিন্তু আকাশ অপ্রত্যক্ষ। আকাশের অস্তিত্ব অনুমানের দ্বারা সিদ্ধ। শব্দ একটি বিশেষ গুন। গুন দ্রব্য ছাড়া থাকতে পারে না। শব্দাশ্রয়ত্ব রূপেই আকাশের অস্তিত্ব স্বীকার্য। সুতরাং শব্দাশ্রয়ত্ব রূপেই আকাশের অস্তিত্ব স্বীকার্য। সংখ্যা, পরিমাণ, পৃথকত্ব সংযোগ, বিভাগ আকাশের সামান্য গুন। আকাশের সামান্য ও বিশেষ উভয় গুন থাকে। আকাশের বিশেষ গুন শব্দ। কোন বিশেষ গুন, দিক, কাল ও মনে থাকেনা।
সুখ-দুঃখাদি আত্মার গুনগুলি শ্রবণেন্দ্রিয় গ্রাহ্য নয়। অতএব, পৃথিবী আদি আটটি দ্রব্যের অতিরিক্ত আকাশ নামক দ্রব্যই শব্দ গুনটি সমবায় সম্বন্ধে থাকে।
আকাশ এক, বিভু ও নিত্য। অন্নংভট্ট দীপিকায় বলেছেন-
সর্বমূর্তদ্রব্যসংযোগিত্বং বিভুত্বম্।”
আকাশ এক। যেহেতু আকাশ যে নানা তাতে কোনো প্রমাণ নেই। আকাশ এক বলে সর্বত্র শব্দের উপলব্ধ হয়। আকাশ বিভু অর্থাৎ পরম মহৎ পরিমাণ বিশিষ্ট। তাই আকাশ সর্বব্যাপী। আকাশের বিভুত্বের অর্থ হল সকল মূর্ত দ্রব্যের সংযোগী হওয়া। পৃথিবী, জল,বায়ু,তেজ ও মন মূর্ত দ্রব্য। আকাশে সকল মূর্ত দ্রব্যের সংযোগ থাকে। আকাশ বিভূ বলে নিত্য হয়। আর এই আকাশ নিত্য বলে উৎপত্তি বা বিনাশ হয় না। শরীর ইন্দ্রিয় ও বিষয়ভেদে পৃথিবাদি পৃথক হলেও আকাশ আত্মার মতো এক ও নিত্য। তাই এর কোন বিভাগ নেই।
আকাশ একটিমাত্র বলে এর শরীরাদি ভেদ নেই। কিন্তু আকাশ আমাদের কর্ণ বিবরের উপাধি বিশিষ্ট হলে শ্রবণেন্দ্রিয়ের প্রয়োজন হয়। প্রত্যেকটি বিশেষ গুন এক একটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। প্রত্যেকটি বিশেষ গুন এক একটি ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য হয়, যেমন গন্ধ ঘ্রাণেন্দ্রিয় দ্বারা গৃহীত হয়। রস রসনেন্দ্রিয় দ্বারা, তেমনি শব্দটি শ্রবনেন্দ্রিয় দ্বারা গৃহীত হয়। অন্য ইন্দ্রিয়ের দ্বারা নয়। তাই শ্রবণেন্দ্রিয়ই আকাশ নামে পরিচিত।