বৈধতা বিচার:-তর্কসংগ্রহ
তর্কসংগ্রহ হতে বৈধতা বিচার
বৈধতা বিচার ১) বহ্নিরনুষ্ণো দ্রব্যত্বাৎ:-
এই অনুমান পক্ষ = বহ্নি, সাধ্য = অনুষ্ণত্ব হেতু = দ্রব্যত্ব। এখানে পক্ষ বহ্নিতে দ্রব্যত্ব হেতুর দ্বারা সাধ্য অনুষ্ণত্বকে সিদ্ধ করতে হবে। কিন্তু প্রত্যক্ষের দ্বারাই বহ্নিতে সাধ্যাভাবেই অর্থাৎ অনুষ্ণতার অভাব উষ্ণতাই প্রমাণিত হয়। তাই এখানে বাধিত হেত্বাভাস হয়েছে। এর লক্ষণ হল- ” যস্য সাধ্যাভাবঃ প্রমাণন্তরেণ নিশ্চিতঃ স বাধিতঃ।”
এছাড়া এই অনুমানে ব্যভিচার দোষও প্রমাণ করা যায়। কারণ দ্রব্যত্ব হেতুটি সাধ্যাধিকরণে বা অনুষ্ণতার অধিকরণে যেমন থাকে তেমনি সাধ্যাভাবাধিকরণে অর্থাৎ উষ্ণতার অধিকরণেও তেমনি থাকে। তাই এখানে সাধারণ সব্যভিচার হেত্বাভাস হয়েছে। এর লক্ষণ হল- ” সাধ্যাভাববৎবৃত্তিঃ সাধারনঃ অনৈকান্তিকঃ।”
বৈধতা বিচার ২) জলমুষ্ণং দ্রব্যত্বাত্ :-
আলোচ্য অনুমানটি পক্ষ – জল, সাধ্য -উষ্ণ এবং হেতু হল দ্রব্যত্বাত্। এখানে হেতু (দ্রব্যত্ব) পক্ষে (জলে) সাধ্যের উষ্ণতা প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু এখানে প্রত্যক্ষের দ্বারাই জলেতে সাধ্যাভাব অর্থাৎ উষ্ণতার অভাব ও অনুষ্ণতা প্রমাণিত হয়। তাই এখানে বাধিত হেত্বাভাস হয়েছে। আচার্য অন্নংভট্ট এর লক্ষণ প্রসঙ্গে বলেছেন- “যস্য সাধ্যাভাবঃ প্রমাণান্তরেণ নিশ্চিতঃ স বাধিতঃ”।
অনুরূপ:- “শর্করা লবণাক্ত কর্তৃকত্বাৎ
মণো বিভু স্পর্শরহিতত্বাৎ
আকাশবত।”
বৈধতা বিচার ৩) মনো বিভূ স্পর্শরহিতত্বাৎ আকাশবত্:-
এই অনুমানটিতে মন পক্ষ, বিভু- সাধ্য, স্পর্শরহিতত্বহেত্ব এবং আকাশবত্ দৃষ্টান্ত। উক্ত অনুমানে মন রূপ পক্ষে সাধ্যাভাব অর্থাৎ বিভুত্বের অভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই এখানে বাধিত হেত্বাভাস হয়েছে – ” যস্য সাধ্যাভাবঃ প্রমাণান্তরেণ নিশ্চিত স বাধিতঃ।” আবার উক্ত অনুমানটিতে স্পর্শরহিতত্ব হেতুটি পক্ষ-মনে, সাধ্য বিভুত্বের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চায়। কেননা, স্পর্শরহিত দ্রব্য মাত্রই বিভু হয়। আবার ” মণোন বিভু, অনুপরিমাণত্বাৎ পরমানুবত্ ” – এই অনুমানে অনু পরিমাণত্ব হেতুটা মনরূপ পক্ষে, সাধ্য বিভুর অনস্তিত্বকেই প্রমাণ করতে চাইছে। তাই এখানে স্পর্শরহিতত্ব হেতুটি অনুপরিমাণত্ব হেতুর প্রতিপক্ষ। তাই এখানে সওপ্রতিপক্ষ হেত্বাভাস হয়েছে। এর লক্ষণ হল- “সাধ্যভাবসাধকহেত্বন্তরং বিদ্যতে স সৎপ্রতিপক্ষঃ।”
বৈধতা বিচার ৪) গগনারবিন্দং সুরভি অরবিন্দত্বাৎ:-
আকাশের পদ্মটি সুরভিযুক্ত যেহেতু তাতে পদ্মত্ব আছে। উক্ত অনুমান বাক্যটিতে গগনার বিন্দ-পক্ষ, সুরভি -সাধ্য এবং অরবিন্দত্বাৎ হেতু হয়েছে। কিন্তু এখানে হেতুটি যে পক্ষে আশ্রিত হবে সেই পক্ষটি যদি অসিদ্ধ হয় তাহলে হেতুটির পক্ষে থাকা সম্ভব হবে না। পক্ষধর্মতা জ্ঞান থেকেই সাধ্য সিদ্ধ হয়। এখানে পক্ষ গগনারবিন্দটি অস্তিত্ব বিহীন বা অলীক। কারণ আকাশে কখনও পদ্ম বিকাশিত হয় না। অতএব, হেতুটির পক্ষ বা আশ্রয় অসিদ্ধ অর্থাৎ অবাস্তব হওয়ায় এটি অনুমিতি উৎপাদনে ব্যর্থ বলে এখানে আশ্রয়াসিদ্ধ হেত্বাভাস দোষ হয়েছে। এর লক্ষণ হল- ” পক্ষতাবচ্ছেদকাভাবকত্বই আশ্রয়াসিদ্ধ।”
বৈধতা বিচার ৫) শশশৃঙ্গং কোমলং শশাঙ্গত্বাত্:-
আলোচ্য অনুমানে শশশৃঙ্গ হল পক্ষ, কোমলত্ব হল সাধ্য এবং শশাঙ্গত্ব হল হেতু। এটা দেখানো হয়েছে। প্রদত্ত অনুমানে শশাঙ্গত্ব হেতুটি পক্ষ শশশৃঙ্গে বিদ্যমান আছে। কিন্তু শশশৃঙ্গ এই পক্ষটির বাস্তবে অস্তিত্ব নেই। শশের কোনো শৃঙ্গ থাকেনা। অতএব, এই অনুমানে পক্ষধর্মতার অভাবে আশ্রয়টি (পক্ষ) অসিদ্ধ হওয়ায় এখানে আশ্রয়াসিদ্ধ হেত্বাভাস হয়েছে। এর লক্ষণ হল- ” পক্ষতাবচ্ছেদকাভাবকত্বই আশ্রয়াসিদ্ধঃ।”
বৈধতা বিচার ৬) পর্বতো বহ্নিমান অভিধেয়ত্বাৎ/পর্বতোবহ্নিমান প্রমৃয়ত্বাৎ :-
এই অনুমানে পক্ষ- পর্বত, সাধ্য – বহ্নি এবং হেতু অভিধেয়ত্ব। এখানে পক্ষ পর্বতে অভিধেয়ত্ব হেতুর দ্বারা সাধ্য বহ্নিকে সিদ্ধ করতে হবে। সাধ্য এবং হেতু অর্থাৎ বহ্নি এবং অভিধেয়ত্ব ধর্ম পর্বত রূপ পক্ষে থাকে। কিন্তু অভিধেয়ত্ব হেতুটি সপক্ষে যেমন থাকে তেমনি বিপক্ষেও থাকে। অতএব, হেতুটি উভয় পক্ষে থাকায় সাধারন সব্যভিচার দোষে দুষ্ট হয়েছে। এর লক্ষণ হল- “সাধ্যাভাববৎবৃত্তিঃ সাধারনঃ অনৈকান্তিকঃ।”
বৈধতা বিচার ৭) সর্বমনিত্যং প্রমেয়ত্বাৎ:-
এখানে প্রমেয় হওয়ায় সকল বস্তুই অনিত্য। উক্ত অনুমান বাক্যটিতে সর্ব পক্ষ, অনিত্যম্- সাধ্য এবং প্রমেয়ত্বাৎ হেতু দেখানো হয়েছে। কিন্তু এখানে হেতুর কোন সপক্ষ বা বিপক্ষ সম্ভব না হওয়ায় এখানে অনুপসংহারী সব্যভিচার হেত্বাভাস দোষ হয়েছে। এর লক্ষণ হল- ” অন্বয়ব্যতিরেক দৃষ্টান্তরহিতঃ অনুপসংহারী।”
বৈধতা বিচার ৮) শব্দো নিত্যং শব্দত্বাৎ:-
আলোচ্য অনুমানে পক্ষ -শব্দ, সাধ্য নিত্যত্ব এবং হেতু হল শব্দত্ব। শব্দত্ব হেতুর দ্বারা শব্দ নিত্য এটা প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু এখানে শব্দত্ব হেতুটি পক্ষ শব্দ ব্যতীত সপক্ষ, বিপক্ষ আর কোথাও থাকে না। তাই এখানে অসাধারন সব্যভিচার হেত্বাভাস হয়েছে। এর লক্ষণ হল-
” সর্বসপক্ষবিপক্ষব্যাবৃত্তঃ পক্ষমাত্রবৃত্তিঃ অসাধারনঃ। ” হেতুটি সপক্ষ, বিপক্ষ কোথাও যদি না থাকে, কেবলমাত্র পক্ষে থাকে তাহলে অসাধারন সব্যভিচার হেত্বাভাস হয়।
বৈধতা বিচার ৯) মনুষ্যঃ বুদ্ধিমান্ মনুষ্যত্বাত্:-
এই অনুমানটিতে পক্ষ- মনুষ্য, সাধ্য -বুদ্ধিমান এবং হেতু হল মনুষ্যত্বাত্। এখানে মনুষ্যত্ব রূপ হেতুটা কেবলমাত্র পক্ষে থাকে (মনুষ্যে থাকে), মনুষ্যাতিরিক্ত সপক্ষ বা বিপক্ষ থাকে না বলে এখানে অসাধারন সব্যভিচার হেত্বাভাস হয়েছে। এর লক্ষণ হল- “সর্বসপক্ষবিপক্ষব্যাবৃত্তঃ পক্ষমাত্রবৃত্তিঃ অসাধারনঃ।” হেতুটি সপক্ষ, বিপক্ষ কোথাও যদি না থাকে, কেবলমাত্র পক্ষে থাকে তাহলে অসাধারন সব্যভিচার হেত্বাভাস হয়।
বৈধতা বিচার ১০) শব্দোগুনঃ চাক্ষুষত্বাৎ:-
আলোচ্য উদাহরণে শব্দ হল পক্ষ, গুন সাধ্য এবং চাক্ষুষত্ব হল হেতু। এখানে চাক্ষুষত্ব হেতুটি পক্ষ শব্দতে স্বরূপত অসিদ্ধ। কারন চক্ষুরিন্দ্রিয়গ্রাহ্যত্ব শব্দে নেই, শব্দ কেবলমাত্র শ্রবণেন্দ্রিয়গ্রাহ্যই হয়। অতএব, এখানে স্বরূপাসিদ্ধ হেত্বাভাস হয়েছে। এর লক্ষণ হল- ” স্বরূপসির্দ্ধিনাম পক্ষে হেত্বভাবঃ।”
বৈধতা বিচার ১১) মণিময়ো গিরি বহ্নিমান ধূমবত্বাৎ
উ:- কাঞ্চণময় পর্বতো বহ্নিমান ধূমবত্ত্বাৎ। এই অনুমানে পক্ষ পর্বত, কাঞ্চনময় পক্ষরূপ পর্বতের বিশেষণ, সাধ্য বহ্নি এবং হেতু ধূমবত্ব। এখানে পক্ষপর্বতে ধূমবত্ব হেতুর দ্বারা সাধ্যবহ্নিকে সিদ্ধ করতে হবে। কিন্তু হেতুটি যে পক্ষে আশ্রিত হবে সেই পক্ষটি যদি অসিদ্ধ হয় তাহলে হেতুটির পক্ষে থাকা সম্ভব হবে না। পক্ষধর্মতা জ্ঞান থেকেই সাধ্যসিদ্ধ হয়। এখানে পক্ষ কাঞ্চনময় পর্বতটি অস্তিত্ব বিহীন বা অলীক। অতএব, হেতুটির পক্ষ বা আশ্রয় অসিদ্ধ অর্থাৎ অবাস্তব হওয়ায় এটি অনুমিতি উৎপাদনে ব্যর্থ বলে এখানে আশ্রয়াসিদ্ধ হেত্বাভাস হয়েছে। এর লক্ষণ হল- ” পক্ষতাবচ্ছেদকাভাবকত্বই আশ্রয়াসিদ্ধ।”
বৈধতা বিচার ১২) তর্কসংগ্রহ দুর্বোধঃ শাস্ত্রত্বাৎ
উ:- আলোচ্য অনুমানে পক্ষ তর্কসংগ্রহ, সাধ্য দুর্বোধ্যত্ব এবং হেতু শাস্ত্রত্ব। এখানে পক্ষ তর্কসংগ্রহে শাস্ত্রত্ব হেতুর দ্বারা সাধ্য দুর্বোধ্যত্বকে সিদ্ধ করতে হবে। এখানে শাস্ত্রত্ব হেতুটি দুর্বোধ্যত্বরূপে সাধ্যের অধিকরনে যেমন আছে তেমনি সাধ্যের অনাধিকরনেও আছে। তাই এখানে সাধারন অনৈকান্তিক হেত্বাভাস হয়েছে। এর লক্ষণ হল- ” সাধ্যাভাববৎ বৃত্তিঃ সাধারনঃ অনৈকান্তিকঃ।”