ঋকবেদ অবলম্বন করে বরুণ দেবতার স্বরূপ আলোচনা কর ।
বরুণ দেবতার স্বরূপ আলোচনা কর
ভূমিকা :- ঋকবেদের প্রধান দেবতাদের মধ্যে একজন বিশিষ্ট দেবতা হল বরুণ। তিনি রাত্রিকালীন সূর্য। ঋগ্বেদের একক দেবতারূপে মাত্র ১২টি সূক্তে এবং মিত্রের সঙ্গে যুগল দেবতারূপে আরও প্রায় ২৪টি সূক্তে স্তুত হয়েছেন। তিনি ইন্দ্রের সমকক্ষ। তিনি ন্যায়ধর্মের রক্ষক। বরুণকে সকলে ভয় করে এবং পাপমুক্তির জন্য তাঁর স্তুতি করে। ঋকবেদের সপ্তম মন্ডলের ছিয়াশিতম সূক্তে বরুণের স্বরূপ ফুটে উঠেছে।
বরুণ সূক্তের ঋষি, দেবতা, ছন্দ :-
বরুণ সূক্তটি আটটি মন্ত্রের সমাহার। এই সূক্তের ঋষি হচ্ছেন বসিষ্ট, বরুন হচ্ছেন দেবতা এবং ত্রিষ্টুপ্ ছন্দ।
বরুন দেবতার স্বরূপ :-
এই সূক্তে বরুন দেবতার যে স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে, তা নিম্নে বর্ণিত হয়েছে-
বরুণ দেবতা সকলের বিস্তারক :-
বরুনদেব দ্যাবাপৃথিবীকে বিস্তীর্ণ করে নির্দিষ্ট স্থানে স্থিত করেছেন। গগন, আদিত্য ও দর্শনীয় নক্ষত্র পুঞ্জকে দ্বৈতভাবে প্রেরণ করেন এবং ভূমিকেও বিস্তারিত করে রেখেছেন। ঋষি দৃষ্টিতে-
” ধীরা ত্বস্য মহিনা জনূংষি বি যস্তস্তম্ভ রোদসী চিদুর্বী।
প্র নাকমৃষ্বং নুনুদে বৃহন্তং দ্বিতা নক্ষত্রং পপ্রথচ্চ ভূম।।”
বরুণ দেবতা অমিতসুখদায়ী:-
বরুনদেব অমিত সুখপ্রদায়ী। তাই আমরা সুন্দর মনোবিশিষ্ট হয়ে অমিতসুখপ্রদায়ী বরুন দেবকে অভিলোকন করতে পারে।
বরুণ দেবতা উত্তরদানে অপারগ:-
পাপহেতু পাশবদ্ধ হয়ে পাপের বিষয় ঋষি বরুনের নিকট নিবেদন করেছেন। কিন্তু ক্রোধবদ্ধ বরুন কোনোরকম প্রশ্নের উত্তরদানে অপারগ।
ঋষির দৃষ্টিতে –
” পৃচ্ছে তদেনো বরুণ দিদৃক্ষূপো এমি চিকিতুষো বিপৃচ্ছম্।
সমানমিন্মে কবয়শ্চিদাহুরয়ং অ তুভ্যং বরুণো হৃণীতে।।”
দুর্ধর্ষ ও তেজস্বী বরুণ দেবতা :-
বরুন হলেন দুর্ধর্ষ ও তেজস্বী। অপরাধস্থালনের জন্য বরুণদেবের উদ্দেশ্যে স্তুতিও প্রদর্শিত হয়েছে।
পাপ থেকে মুক্তি দানকারী বরুণ দেবতা :-
সকল পাপের অপনোদনের নিমিত্ত বরুণরাজের নিকট প্রার্থনা জ্ঞাপন করা হচ্ছে। পাপের উৎপত্তির কারণস্বরূপ দৈবশক্তি, বিবিধ প্রমাদ,মদ্যপান, ক্রোধ এবং অবিবেচনাকে দেখানো হয়েছে।
ঋষির দৃষ্টিতে –
” ন স স্বো দক্ষো বরুণ ধ্রুতিঃ সা সুরা মন্যুবিভীদকো অচিত্তিঃ।
অস্তি জ্যায়ান্ কনীয়স উপারে স্বপ্নশ্চনেদনৃতস্য প্রযোতা।।”
কামনাবর্ষী ও জগতের পালক বরুণ দেবতা :-
অভীষ্ট কামনাবর্ষী, জগতের পালক দানদিগুনসমন্বিত বরুনদেব অনুগ্রহে পাপরহিত অবস্থায় পর্যাপ্তভাবে আমরা তাঁর পরিচর্যা করব।
কল্যানকারী:- মঙ্গলকারী বরুনের উদ্দেশ্য নিবেদিত স্তোত্র সর্বত্র সন্নিবিষ্ট থাকে। মঙ্গলবানীর সহায়ে সকলের রক্ষণের বিষয় নিবেদিত হয়। ঋষির দৃষ্টিতে-
” অয়ং সু তুভ্যং বরুণ স্বধাবো হৃদি স্তোম উপশ্রিতশ্চিদস্তু।
শং নঃ ক্ষেমে শমু যোগে নো অস্তু যূয়ং পাত স্বস্তিভিঃ সদানঃ।।”
উপসংহার:-
বিশাল বিশ্বের অধীশ্বর দ্যুলোক, গগন ও পৃথিবীলোকের কর্তারূপে বরুণ স্তুত হয়। অপরাধ ও পাপের কোনো ক্ষমা নেই। ইনি মঙ্গলদায়ী ও পাপের নিরাকরনকারী। ক্রোধবশতঃ সমস্ত পাপ নাশ করেন। ইনি বলশালী, দুর্ধর্ষ ও তেজস্বী। এখানে পাপের অনুশোচনা ও পুণ্যলাভের আকাঙ্ক্ষা বিশেষভাবে লক্ষিত হয়েছে।