অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকের প্রথম অঙ্ক বর্ণনা। অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকের প্রথম অঙ্কের সংক্ষিপ্ত বিষয় গুলি তুলে ধরা হয়েছে , নান্দী কাকে বলে প্রভৃতি ।
অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ প্রথম অঙ্ক সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
নান্দী কাকে বলে
” আশীর্বচনসংযুক্তা স্তুতির্যস্মাৎ প্রযুজ্যতে।
দেবদ্বিজনৃপাদীনাং তস্মান্নান্দীতি সংঞ্জিতা।।”
অর্থাৎ দেব, দ্বিজ, নৃপ প্রমুখ গনের আশীর্বাদযুক্ত স্তুতিই হল নান্দী। নান্দীতে মঙ্গলসূচক – শঙ্খ, চন্দ্র, পদ্ম, শ্বেতপদ্ম ইত্যাদির বর্ণনা থাকে।
‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্‘ নাটকের নান্দী শ্লোকটি পত্রাবলী শ্রেনীর।
অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকের নান্দী শ্লোকটি পাঠ করেন সূত্রধার। সূত্রধারই হলেন নাট্যপরিচালক।
অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ প্রথম অঙ্ক অভিনয় কাল ও গীতের বর্ণনা
অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকটি গ্রীষ্মঋতুতে বিদ্বান এবং রসোজ্ঞ দর্শকে পরিপূর্ণ রঙ্গমঞ্চে প্রথম অভিনীত হয়।
অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকে দুটি গীতের প্রয়োগ আছে। সূত্রধারের অনুরোধে প্রথম গানটি গেয়েছেন তাঁর স্ত্রী নটী। দ্বিতীয় গানটি গেয়েছেন মহারাজ দুষ্যন্তের বিরহিনী পত্নী হংসপদিকা। এই দুটি গানেরেই ভাষা প্রাকৃত।
সূত্রধারের মতে, অভিনয়ের মাধ্যমে বিদগ্ধ দর্শকদের সন্তুষ্ট করতে পারলেই অভিনয় স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করা হয়-
‘বলবতপি শিক্ষিতানাম্ আত্মপ্রত্যয়ং চেতঃ।’
নাটকের শুরুতেই দেখা যায় দক্ষযজ্ঞ শেষ করে শিব যেমন পিনাক হাতে পলায়মান যক্ষকে অনুসরন করেছিলেন, দুষ্যন্তও তেমনি ধনুতে শরযোজনা করে পলায়মান হরিণকে ধাওয়া করেছেন-
‘মৃগানুসারিনং সাক্ষাৎ পশ্যামীব পিণাকিনম্’।
সারথি হৃত যখন হরিণটিকে অনুসরন করতে করতে দুষ্যন্তের রথ চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মনে হচ্ছিল রথের বাহন ঘোড়াগুলো সূর্য এবং ইন্দ্রের ঘোড়াদের থেকেও দ্রুত দৌড়াচ্ছে। গতির তীব্রতায় যা ছোটো তা হঠাৎ বড়ো হয়ে উঠছে, বিচ্ছিন্ন বস্তুও সংযুক্তের মতো দেখাচ্ছে, বাঁকা জিনিসেও সোজা দেখাচ্ছে, মুহূর্তের জন্যও কোনো কিছু দূরে থাকছে না, পাশেও থাকছে না, সব কিছু দূরে থাকছে না, পাশেও থাকছে না, সব কিছু ক্ষণকালের মধ্যেই পিছনে চলে যাচ্ছে।
রাজা দুষ্যন্ত যখন হরিণটি তীর নিক্ষেপ করতে উদ্যত হলেন ঠিক সেই সময় আশ্রয়বাসী তাপস বৈখানস্ বলে উঠলেন –
“ভো! ভো রাজন্ আশ্রম মৃগঃ অয়ং ন হন্তব্যঃ ন হন্তব্যঃ।”
বৈখানস্ রাজার রথের সামনে এসে এই কথাটি বলেছিলেন।
বৈখানস্ রাজা দুষ্যন্তকে হরিণটিকে মারতে নিষেধ করে বলেছেন-
” ন খলু ন খলু বানঃ সন্নিপাত্যেঅয়মস্মিন্
মৃদুনি মৃগশরীরে তুলরাশি ইব অগ্নিঃ।”
অর্থাৎ তুলারাশিতে আগুন দেওয়া যেমন ঠিক নয়, তেমনই রাজার বানও মৃগদেহে আঘাতের যোগ্য নয়। এখানে তুলারাশি পদটির পাঠান্তর হল পুষ্পরাশি।
“আর্তত্রানায় বঃ শস্ত্রং ন প্রহর্তুমনাগসি” –
এই কথাটি অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকের প্রথম অঙ্কে বৈখানস্ মহারাজ দুষ্যন্তকে বলেছিলেন। কথাটির অর্থ হল- রাজাদের অস্ত্র আর্তদের রক্ষা করার জন্য, নিরাপরাধকে মারার জন্য নয়।
নাটকের প্রথম অঙ্কে বৈখানস্ রাজা দুষ্যন্তকে চক্রবর্তী পুত্র লাভের আশীর্বাদ করেছিলেন-
‘ পুত্রমেবং গুনোপেতং চক্রবর্তিনম্ আপ্নুহি।’
বৈখানস্ মহারাজ দুষ্যন্তকে মালিনী নদীতীরে কুলপতি কণ্বের আশমটি দেখিয়ে দেন। তিনিই রাজাকে আশ্রমে আতিথ্য গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান।
মহারাজ দুষ্যন্ত কিছু চিহ্ন দেখে বুঝে ছিলেন আশ্রমটি নিকটেই আছে। যেমন –
- i) গাছের নীচে পড়ে আছে শুকপাখির মুখ থেকে ঝড়ে পড়া নীবার ধানের কনা।
- ii) রথের শব্দশুনেও নির্ভয়ে হরিণদের বিচরণ।
- iii) জলাশয়ের পথে কলশির প্রান্ত থেকে ঝরাপড়া জলের দাগ।
কণ্বের আশ্রমে প্রবেশ করার সময় দুষ্যন্তের দক্ষিমবাহু স্পন্দিত হয়েছিল। পুরুষদের দক্ষিণবাহু স্পন্দনের ফল স্ত্রীরত্নলাভ। এরপরেই রাজা শকুন্তলা ও তার সখীদের বার্তালাভ শুনতে পান। আড়াল থেকে তিনি ভাবেন-
‘অহো মধুরমাসাং দর্শনম্।’
আশ্রম কন্যাদের দেখে রাজা চিন্তা করলেন, অরণ্য ললিতা আশ্রম কন্যারা রাজ অন্তঃপুরীকাদের থেকেও সুন্দরী। তাদের আশ্রমের কঠিন কাজে নিযুক্ত দেখে রাজা চিন্তা করলেন মহর্ষি কণ্ব শকুন্তলাকে দিয়ে আশ্রমের কাজ করিয়ে ঠিক করছেন না-
‘অসাধুদর্শী খলু তত্রভবান্ কশ্যপঃ য ইমাম্ আশ্রমধর্মে নিযুঙক্তে।’
সখীদের মুখে শকুন্তলার জন্মবৃত্তান্ত জেনে রাজা দুষ্যন্ত জানতে পারলেন শকুন্তলা কোনো মানবীর কন্যা নয়, কারন, দৈবিক প্রভাব ছাড়া এই রকম আলোক সামান্যরূপ হতে পারেনা-
‘ ন প্রভাতরলং জ্যোতিরূদেতি বসুধাতলাৎ।”
‘চীনাংশুকমিব কেতো প্রতিবাতং নিয়মানস্য ‘-
এই উক্তিটি প্রথম অঙ্কের শেষে রাজা দুষ্যন্ত করেছিলেন। যখন তিনি আশ্রম থেকে ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন শকুন্তলাকে ছেড়ে যেতে তার মন চাইছিল না। একটি পতাকা দন্ডকে এগিয়ে নিয়ে গেলে বায়ু বলে পতাকাটি যেমন পিছনে থাকে, তেমনই রাজা দেহ আশ্রম ছেড়ে এগিয়ে চলেছে, কিন্তু তার মন পড়ে রইল শকুন্তলার কাছেই।