যাজ্ঞবল্ক্যসংহিতা ব্যবহারাধ্যায় সাধারন ব্যবহার মাতৃকা প্রকরণম্ ব্যাখ্যা -6
যাজ্ঞবল্ক্যসংহিতা ব্যবহারাধ্যায় সাধারন ব্যবহার মাতৃকা প্রকরণম্ ব্যাখ্যা -6
শ্রুতার্থস্যোত্তরং লেখং পূর্বাবেদকসন্নিধৌ।
ততোঅর্থী লেখয়েৎ সদ্যঃ প্রতিজ্ঞাতার্থসাধনম্।।
অনুবাদ
অর্থীর আবেদন শুনে প্রত্যর্থীর জবাবটি অর্থীর সামনেই লিখতে হবে। অর্থীও তৎক্ষণাৎ আবেদনের স্বপক্ষে প্রমাণ লেখাবেন।
উৎস / প্রসঙ্গ
আচার্য যাজ্ঞবল্ক্য রচিত যাজ্ঞবল্ক্যসংহিতার ব্যবহারাধ্যায়ে ব্যবহারদর্শন প্রসঙ্গে রাজার কর্তব্য সম্পর্কে আলোচ্য শ্লোকটির অবতারনা করা হয়েছে। চতুস্পাদ ব্যবহারের স্বরূপ নির্ণয় প্রসঙ্গে।
ব্যাখ্যা
ব্যবহারের চারটি পাদ হল ভাষাপাদ, উত্তরপাদ, ক্রিয়াপাদ, সাধ্যপাদ। ব্যবহারের নিয়মানুযায়ী কোনো বাদী বিবাদীর বিরুদ্ধে প্রাড্ বিবাকের কাছে অভিযোগ জানালে যদি অভিযোগটি যথাযথ বলে বিবেচিত হয় তাহলে রাজা মুদ্রাদির দ্বারা নোটিশ করে বিবাদীকে বিচার সভায় ডেকে পাঠান্। প্রত্যর্থীর সামনে অর্থী আর বক্তব্যটি লিখিত আকারে পেশ করে।
এই লিখিত পত্রে বাদী-বিবাদীর নাম পিতার নাম জাতি সাল তারিখ সঠিক উল্লেখ থাকতে হবে-
‘ সমামাসতদর্ধাঅর্নামজাত্যাদিচিহ্নিতম্।’
মূল আবেদনের বিষয়বস্তুর সাথে লেখ্য পত্রটির বিষয়বস্তু হুবহু মিল থাকবে। এই লেখ্যপত্রকে ভাষাপাদ বলে।
অর্থীর এই অভিযোগটি শুনে প্রত্যর্থী অর্থীর সামনেই তার উত্তরটি লেখাবে। একে বলা হয় উত্তরপাদ। প্রত্যর্থীর জবাব শুনে অর্থী তার প্রতিজ্ঞাটি প্রমাণ করার জন্য প্রমাণাদি প্রদর্শন করবে। এটাই ব্যবহারের নিয়ম। উত্তরের লক্ষণ বলতে গিয়ে আচার্য বিজ্ঞানেশ্বর তার মিতাক্ষরায় বলেছেন-
“পক্ষস্য ব্যাপকং সারম্ অসন্দিগ্ধম্ অনাকুলম্ অব্যাখ্যাম্যমিত্যেতদ্ উত্তরং তদ্বিদো বিদুঃ।”
এই উত্তরটি চার প্রকার হয়। যথা সৎপ্রতিপত্তি, মিথ্যা, প্রত্যবস্কন্দন ও পূর্বন্যায়। সৎ প্রতিপত্তির স্বরূপ কেউ কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ বলল, ও আমার কাছে একশত টাকা ধার নিয়েছে। উত্তরে বিবাদী বলেন হ্যাঁ আমি ওর কাছে একশত টাকা ধার নিয়েছি। মিথ্যা উত্তরটি হবে না ধার নিইনি- অভিযোগের অস্বীকারই মিথ্যা উত্তর। মিথ্যা উত্তরের চারটি ভেদ আছে। যেমন এটি মিথ্যা, আমি এটি জানিনা,আমি সেখানে ছিলাম না, আমি ঘটনার সময় জন্মায়নি। প্রত্যস্কন্দন হল কারণ যুক্ত উত্তর। যেমন- আমি নিয়েছি, কিন্তু ফিরিয়ে দিয়েছি বা দানরূপে নিয়েছি ধাররূপে নয়। পূর্বন্যায় হল এ বিষয়ে পূর্বে অভিযুক্ত হয়ে আমি জিতেছি এবং বাদী পরাজিত হয়েছে।
প্রত্যর্থীর জবাবটি শুনে অর্থী প্রতিজ্ঞাত বিষয়ে প্রমাণাদি লেখাবে। সদ্য পদটির প্রয়োগ হেতু প্রমাণ লেখার কাজে বিলম্ব করা যাবে না। পূর্বন্যায় উত্তরে প্রত্যর্থীই অর্থী হয়ে যায়, তাই তাকেই প্রমাণ লেখাতে হয়। সত্য উত্তরে প্রমাণ লেখানোর প্রয়োজন হয় না। সে সকল ক্ষেত্রে উত্তরের সঙ্গে সঙ্গেই মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
এটাই শ্লোকের তাৎপর্য।