সম্প্রদান:- পাণিনীর ব্যাকরণে সম্প্রদান একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ হল দান করা। অর্থাৎ সম্প্রদান কথাটির মধ্যে দা ধাতু প্রযুক্ত হওয়ায় দান ক্রিয়ার কর্ম বলে অভিহিত হয়েছে। তাই পাণিনীএ বিষয়ে সূত্র করেছেন-
‘কর্মণা যমভিপ্রেতি স সম্প্রদানম্।’
দান করার প্রধান লক্ষ্য হল যে দান গ্রহণ করে বা গ্রহীতা তাকেই সম্প্রদান শব্দের দ্বারা সূচিত করা হয়। সূত্রে প্রৈতি শব্দের দ্বারা প্রকৃষ্ট গমনের মধ্য দিয়ে প্রকৃষ্ট দানেই সূচিত করা হয়েছে। তাই সম্প্রদান শব্দটির অর্থ হল প্রকৃষ্ট দান অর্থাৎ সম্যক প্রদান। প্রকৃষ্ট দান বলতে আমরা বুঝি নিজের সত্ত্ব ধ্বংস করে অপরের সত্ত্ব বস্তুর প্রতিষ্ঠিত করা। তাই দাতা স্বেচ্ছায় কোনো বস্তু দান করলে গ্রহীতা যদি স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে তবে সেই দানকে আমরা সম্প্রদান বলে থাকি। জোর করে কোন দান করা বা গ্রহণ করাকে সম্প্রদান বলে অভিহিত করা হয় না। যে দান গ্রহীতা নিজের ইচ্ছায় গ্রহণ করে তবেই সেখানে সম্প্রদান হয়। এবং সেই সম্প্রদানে চতুর্থী বিভক্তি হয়ে থাকে। উদাহরণ- ব্রাহ্মণায় বস্ত্রং দদাতি নৃপঃ। এই বাক্যে রাজা বস্ত্রের উপর থেকে নিজের অধিকার পরিত্যাগ করার পর সেই বস্তুতে ব্রাহ্মণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য ব্রাহ্মণায় পদে চতুর্থী বিভক্তি প্রাপ্ত হয়েছে।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নিজের স্বত্ব পরিত্যাগ না হওয়ার জন্য দা ধাতুর প্রয়োগ থাকলেও সেই দানের ক্ষেত্রে সম্প্রদান হয় না এবং সেখানে চতুর্থী বিভক্তিও হয় না।
যেমন- রজকস্য বস্ত্রং দদাতি। এখানে রজকস্য পদে সম্প্রদানে চতুর্থী না হয়ে শেষে ষষ্ঠী হয়েছে। কিন্তু মহাভাষ্যকার নাগেশ প্রভৃতি বৈয়াকরণ সম্প্রদানের লক্ষণটিকে আরও ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করেন। তাদের মতে সূত্রলক্ষণে শুধু কর্মণী আছে দানস্য কর্মণা নেই। অতএব তারা ক্রিয়ামাত্রস্য কর্মণা এরূপ মনে করে থাকেন।
অর্থাৎ শুধু দান ক্রিয়ার কর্ম নয়, সকর্মক ক্রিয়ামাত্রেরই কর্মের প্রধান লক্ষ্য যে সে সম্প্রদান। যাই হোক নিজের স্বত্ব পরিত্যাগ করে অপরের স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত করার রূপ যে দান তার যে কর্ম তাকেই আমরা সম্প্রদান বলে থাকি।
সম্প্রদানে চতুর্থী বিভক্তি ছাড়াও অন্যত্রে অন্যান্য বিভক্তি হয়-
- ১) প্রীতি বিধানের উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করা হলে সেই কাজের দ্বারা যাহার প্রীতি বিধান করা হয় সেও সম্প্রদান হয়। বার্তিক হল- ‘ক্রিয়য়া যমভিপ্রৈতি সোঅপি সম্প্রদানম্।’
যেমন- পিতা পুত্রায় ক্রিড়ণেকম। - ২) স্পৃহ্ ধাতুর যোগে কর্তায় ইপ্সিত বস্তু সম্প্রদান কারক হয়। সূত্র হল – স্পৃহেরীপ্সিতঃ।
যেমন- বালকঃ পুষ্পেভ্যঃ স্পৃহয়ন্তি। - ৩) রুচ্যর্থক ধাতুর প্রয়োগে যে ব্যাক্তি প্রীতি লাভ করে তা সম্প্রদান কারক হয়। সূত্র হল – রুচ্যর্থানাং প্রীয়মাণঃ।
যেমন- শিশবে রোচতে মোদকঃ। - ৪) ক্রুধ এবং দ্রুহ ধাতুর যোগে দ্বিতীয়া এবং চতুর্থী বিভক্তি হয়। যেমন- প্রভুঃ ভৃত্যং প্রক্রুদ্ধতি। সূত্র হল ‘ক্রুধদ্রুহেরূপসৃষ্টয়ো কর্ম।
আবার প্রভুঃ ভৃত্যায় প্রক্রুদ্ধতি। সূত্র হল ‘ক্রুধদ্রুহেষ্যাসূয়ার্থানাং যং প্রতি কোপঃ - ৫) পরি-কৃ ধাতুর যোগে নির্দিষ্ট কালের জন্য ভাড়া করা অর্থে করণ কারক বিকল্পে সম্প্রদান কারক হয়। সূত্র হল- ‘পরিক্রয়ণে সম্প্রদানমন্যতরস্যাম্’।
যেমন- শতায় শতেন পরিক্রীতঃ সঃ।