সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসের শ্রেষ্ট মহাকাব্য রামায়ণ। এই রামায়ণের রচনাকাল নিয়ে অনেক মতভেদ আছে । নিম্নে রামায়ণের রচনাকাল কি তা আলোচিত হল।
রামায়ণের রচনাকাল
সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে রামায়ণের রচনাকাল নিয়ে অনেক মতভেদ আছে । নিম্নে রামায়ণের রচনাকাল আলোচনা করা হল।
রামায়ণের রচনাকাল ভূমিকা
সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসের গ্রন্থগুলির রচনাকার নির্ণয় করা দুরূহ। রচনাকাল নির্ণয় করতে হলে প্রথমত রচনাকারের আবির্ভাব কালকে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সংস্কৃত সাহিত্যে শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য রামায়ণ-এর রচয়িতা আদি কবি বাল্মিকী। কিন্তু বাল্মীকির আবির্ভাব কাল সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ তথ্য পাইনি। সুতরাং তাঁর রচিত মহাকাব্যের রচনাকাল নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। তাই কতকগুলি তথ্যাদি ও অনুমানের উপর নির্ভর করতে হয়।
কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে বাল্মিকী রচিত মূল রামায়ণের সঙ্গে অনেক প্রক্ষিপ্ত অংশ সংযোজন ঘটেছে। সুতরাং এই নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে নানান বিতর্ক রয়েছে। তবে কতকগুলি যুক্তি ও তদ্যাদির দিকে আলোকপাত করা যেতে পারে-
১) রামায়ণের রচনাকাল বিষয়ে আদিকবি আখ্যা
বাল্মিকী যেহেতু আদিকবি। সুতরাং, তাঁর রচিত রামায়ণ আদিকাব্য নামে পরিচিত। অতএব, রামায়ণ মহাভারত রচনার পূর্বে রচিত হয়েছিল।
২) বৈদিক সাহিত্য
বেদে কোথাও রামায়ণের উল্লেখ নেই। সুতরাং রামায়ণ বৈদিক যুগের পরবর্তী সময়ে রামায়ণের রচনাকাল।
৩) রামায়ণের রচনাকাল ঐতিহাসিক বিবরণ
মেগাস্থিনিসের বিবরণ হতে জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে(৩৫০খ্রীঃ পূঃ) পাটলিপুত্র গুপ্ত সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। কিন্তু রামায়ণে এই প্রসিদ্ধ নগরীর উল্লেখ নেই।
৪) অপাণিনীয় প্রয়োগ
পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী রচনার পর তার ব্যাকরণকে বাদ দিয়ে কোনো কবি গ্রন্থ রচনা করতে পারেননি। কিন্তু রামায়ণে অনেক স্থানে পাণিনীর ব্যাকরণ মানা হয়নি। সুতরাং রামায়ণ পাণিনীর ঐ গ্রন্থ রচনার পূর্বেই রামায়ণের রচনাকাল।
৫) বৌদ্ধজাতক
রামায়ণে মিথিলা ও বিশালা নামে দুটি নগরের উল্লেখ আছে। কিন্তু বুদ্ধের সময় দুটি একত্রিত হয়ে বৈশালী নামে পরিচিত। সুতরাং রামায়ণ বুদ্ধ যুগের পূর্বে রচিত হয়েছিল। এছাড়া রামায়ণে দশরথের রাজধানী অযোধ্যা কিন্তু বৌদ্ধ ও জৈন যুগে এর নাম ‘সাকেত’।সুতরাং বলা যেতে পারে রামায়ণের রচনাকাল বুদ্ধযুগের পূর্বে।
৬) যবন শব্দ ব্যবহার
রামায়ণে যবন শব্দটি দুবার ব্যবহার হয়েছে। সুতরাং অনেকে মনে করেন রামায়ণ গ্রীক আক্রমনের পর রচিত হয়েছে। কিন্তু ওয়েবারের মতে এই মত যথার্থ নয়। কারণ যবন শব্দ যত বৈদেশিকজাতি ভারত আক্রমণ করেছিল তাদের সবাইকে বোঝায়। সুতরাং তাঁর মতে, রামায়ণ গ্রীক আক্রমণের পূর্বে রামায়ণের রচনাকাল।
৭) জৈন ও বৌদ্ধ সাহিত্য
জৈন বৌদ্ধ সাহিত্যে রামায়ণের বিভিন্ন কাহিনী চিত্রিত। জৈন কবি বিমলসূরির রামোপাখ্যান ও বৌদ্ধ জাতক দশরথ জাতকের কথা সর্বাজ্ঞে উল্লেখযোগ্য। সুতরাং রামায়ণ জৈন ধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম প্রতিষ্ঠার পূর্বে রামায়ণের রচনাকাল।
৮) পালি ভাষা
ইয়াকোবি (jacobi) মনে করে পালি ভাষা বৌদ্ধ যুগে কথ্য ভাষা ছিল। সুতরাং তখন রামায়ণ রচিত হলে তা পালি ভাষায় রচিত হতো, কিন্তু তা হয়নি। সুতরাং রামায়ণ বৌদ্ধযুগের পূর্ববর্তী।
রামায়ণের রচনাকাল পর্যালোচনা
উপরিউক্ত যুক্তিগুলি পর্যালোচনা করে বলা যায়, মূল রামায়ণ খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর পূর্বেই রচিত হয়েছিল। উইন্টারনিথস্ (winternitz) এর মতে,
“It is probable that the original Ramayana was composed in the third century B.C by valmiki.”
বর্তমানে আমরা যে রামায়ণ মহাকাব্যটিকে পায় তাতে অনেক প্রক্ষিপ্ত অংশ সংযোজিত হয়েছে। সুতরাং খ্রিস্টপূর্ব খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক হতে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের মধ্যে প্রক্ষিপ্ত অংশগুলি সংযোজিত হয়ে মূল রূপ পরিগ্রহ করে।
বাল্মীকি রামায়ণের রচনাকাল আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী।
রামায়ণের রচয়িতা হলে আদি কবি বাল্মীকি ।
রামায়ণ শর্ট প্রশ্ন এবং উত্তর-সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস পড়ুন।